সত্যকে অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করা যাবে না-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য

যখন দেশে প্রতিদিনই খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো বলে সাফাই গাওয়া সত্যকে অস্বীকারের শামিল। এতে অপরাধীরা আরও আশকারা পাবে। গত শুক্রবার উত্তরা রয়েল ক্লাবে স্কেটিং প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।


এর অবনতি ঘটেছে, এটা আমি স্বীকার করি না। কারণ, সে রকম অবনতি ঘটেনি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনিও পুরো সন্দেহমুক্ত নন। এ কারণেই হয়তো ‘সে রকম’ কথাটি জুড়ে দিয়েছেন। দেশবাসীর প্রশ্ন, আর কত অঘটন ঘটলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা স্বীকার করবেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিকে দাবি করছেন, বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে; অন্যদিকে বলছেন, সবকিছু ঠিক আছে। তাঁর এ বক্তব্য স্ববিরোধী। বিরোধী দল যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে ষড়যন্ত্রই করে থাকে, সরকারকে খোলাসা করে বলতে হবে তারা কোথায় কী করেছে, আর সরকারই বা সেসব মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে। ধোঁয়াশা কথায় কাজ হবে না। জনগণ শান্তিতে থাকতে চায়, রাস্তায় বের হওয়ার পর নিশ্চিত হতে চায় নিরাপদে ফের ঘরে ফিরতে পারবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অপরাধীদের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বললেও কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। তিনি যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, তখন বাস্তবে আমরা কী দেখছি? অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। অঘটন ঠেকাতে না পেরে ছুটছে এর পেছন পেছন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রেমকৃষ্ণকে খুন করে চাঁদাবাজেরা। এর আগে তারা ১০ লাখ টাকার চাঁদা চেয়ে টেলিফোনে হুমকি দিলে তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতিও কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলের ওপর চাপাতে চাইছেন?
চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও যশোরে বিএনপির নেতা হত্যার পেছনেও বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র খুঁজে লাভ নেই। অপরাধের ঘটনা যদি সরকার স্বীকারই না করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে কী করে? আগে তো অপরাধ স্বীকার করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সবাই ধোয়া তুলসীপাতা। তাঁদের কোনো গাফিলতি বা ব্যর্থতা নেই। পেশাদার অপরাধীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের যোগসাজশের বিষয়টি আর গোপন নয়।
সে ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা না করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালাতে হবে। সরকার পুলিশ বাহিনীকে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। এর পাশাপাশি তারা যাতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হয়, সে ব্যাপারেও সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতি দুরাশাই থেকে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.