ভারতের অবস্থান অগ্রহণযোগ্য-‘অনিশ্চিত’ তিস্তা চুক্তি

তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত সরকারের যে অবস্থানের কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, তা এককথায় অগ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারত এখনই বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যাচ্ছে না। দেশটির এই অবস্থান বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ হিসেবেই বিবেচিত হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।


বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন করে গতি পায়। বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু নিষ্পত্তিতে দুই দেশের তরফে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর ও মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক আশাবাদের জন্ম দেয়। মনমোহনের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করা যায়নি, সেটা সবারই জানা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফে প্রতিশ্রুতি ছিল যে খুব শিগগির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এসব প্রতিশ্রুতি কি নিছকই কথার কথা ছিল?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের রাজ্যের পানির চাহিদা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় পানি দিতে নারাজ। একটি আন্তর্জাতিক নদীর ক্ষেত্রে কোনো দেশ বা দেশের কোনো রাজ্যের এ ধরনের অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। তিস্তার পানিতে এর অববাহিকার সব জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার রয়েছে, যা সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও স্বীকার করেছেন। এখন উজানের দেশ হিসেবে ভারত বা পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশে পানি দেবে না, এ ধরনের অন্যায্য আবদার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দুটি প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক নির্ভর করে পারস্পরিক আদান-প্রদান ও সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশের কাছে ভারতের চাওয়া ছিল দেশটির নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ ভারতের এই চাওয়া পূরণ করেছে। ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট-সুবিধাও পেতে চায়। এ ব্যাপারে সমঝোতা হলেও তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশও এ চুক্তি থেকে বিরত থাকে। ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের অন্যতম চাওয়াগুলোর একটি হচ্ছে যৌথ নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি। তবে এই চাওয়া ভারতের বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রানজিট চাওয়ার মতো বিষয় নয়, যৌথ নদীগুলোর পানিতে রয়েছে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। এখন তিস্তা চুক্তি না হওয়ার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যে নতুন গতি পেতে যাচ্ছিল, সেখানে বড় ধরনের হোঁচট খাওয়া।
ভারত সরকার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে অগ্রসর হতে পারছে না সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির নানা হিসাব-নিকাশের কারণে। কিন্তু এ কারণে প্রতিবেশী দেশকে পানি পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবেকেন? দেশের ভেতরের সমস্যা সমাধান করে বাংলাদেশের তিস্তার পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে অবিলম্বে তিস্তা চুক্তির উদ্যোগ ভারত সরকারকে নিতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.