সাঈদীর আইনজীবীর দাবি-দাখিল করা ভিডিওর সঙ্গে অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা নেই
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী দাবি করেছেন, আলামত হিসেবে দাখিল করা একটি ভিডিওর (এনবিসির প্রতিবেদন) সঙ্গে আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। শুধু পরিবেশ ভারী ও আবেগ সৃষ্টি করতে মূল ভিডিওটি সম্পাদনা করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিনকে জেরার ষষ্ঠ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আইনগত মতামতে এই দাবি করেন। তবে হেলালউদ্দিন বলেন, আইনজীবীর এই মত সত্য নয়। এনবিসি (ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কোম্পানি) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি টেলিভিশন চ্যানেল।
সকালে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। মিজানুল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেকটি টিভি চ্যানেল সিবিএসের (কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সিস্টেম) প্রতিবেদন নিয়েও তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন। চ্যানেলটি কোন দেশ থেকে প্রচারিত হয়—এই প্রশ্নের জবাবে হেলালউদ্দিন বলেন, এটি তাঁর রেকর্ডে নেই, তাই বলতে পারবেন না। এ নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন কি না—মিজানুলের পাল্টা এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি তাঁর রেকর্ডে নেই। মিজানুল এই জবাবের বিরোধিতা করলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সহিদুর রহমান তদন্ত কর্মকর্তাকে সমর্থন করে বলেন, ‘রেকর্ডে না থাকলে তিনি বলবেন কীভাবে?’
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা আগে প্রশ্নের উত্তর দেবেন, পরে ব্যাখ্যা দেবেন। ট্রাইব্যুনাল উদাহরণ দিয়ে বলেন, তিন আর দুইয়ে কত হয়—এর উত্তর হবে পাঁচ। এটা ভুল না ঠিক, সেটা পরের বিষয়, কিন্তু রেকর্ডে নেই কোনো জবাব হতে পারে না।
পরে হেলালউদ্দিন বলেন, সিবিএস কোন দেশ থেকে প্রচারিত হয়, তা তিনি অনুসন্ধান করেননি। মিজানুল বলেন, ওই প্রতিবেদন ১৯৭২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত হয়েছে। হেলালউদ্দিন বলেন, না দেখে তিনি এটা বলতে পারবেন না। এই পর্যায়ে প্রতিবেদনটি দেখানো হলে তিনি জবাব দেন। ভিন্ন তারিখে প্রচারিত দুটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদন একসঙ্গে কীভাবে সংযুক্ত করা হলো? জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এটা তিনি বলতে পারবেন না। এর অনুসন্ধান করেছেন কি না—এই প্রশ্নেও তিনি না সূচক জবাব দেন। সিবিএসের ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক বা ভিডিও ধারণকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন কি না, এর জবাবে তিনি চেষ্টা করেননি বলে জানান।
মিজানুল পরে তদন্ত কর্মকর্তাকে বস্তু প্রদর্শনী-১১ হিসেবে দাখিল করা বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের ‘একুশের চোখ’ অনুষ্ঠানে সাঈদীকে নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনাকারী কে ছিলেন—এর জবাবে হেলালউদ্দিন বলেন, তিনি জানেন না। অনুষ্ঠানের পরিচালক, প্রযোজক কারা প্রভৃতি প্রশ্ন করা হলে তিনি ভিডিওটি দেখতে চান। ওই প্রতিবেদন দেখানো হলে তিনি এসব প্রশ্নের জবাব দেন। প্রতিবেদনটিতে এই মামলার সাক্ষী মানিক পসারি ও মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের সাক্ষাৎকার রয়েছে।
বিকেল চারটার দিকে মামলার কার্যক্রম রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন ১৪ মে: বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগের বিষয়ে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন ১৪ মে পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল আসামিপক্ষের আইনজীবী তারিকুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন মুলতবির আরজি জানান। তিনি বলেন, আসামিপক্ষের মূল আইনজীবী তাজুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়ায় ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননি। পরে ট্রাইব্যুনাল ১৪ মে পর্যন্ত কার্যক্রম মুলতবি করেন। শারীরিক কারণে জামিনে থাকা আলীম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ৭ মে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ দুপুরে ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান মামলাগুলোর অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
No comments