পবিত্র কোরাআনের আলো-এতিম ও মিসকিনদের প্রতি সহমর্মী ও সদয় হওয়ার নির্দেশ

৭. লির্রিজা-লি নাসীবুম্ মিম্মা তারাকাল ওয়া-লিদা-নি ওয়ালআক্বরাবূনা ওয়া লিনি্নছা-য়ি নাসীবুম্ মিম্মা তারাকাল ওয়া-লিদা-নি ওয়ালআক্বরাবূনা মিম্মা ক্বাল্লা মিনহু আও কাছুরা; নাসীবাম্ মাফরূযা। ৮. ওয়া ইযা হাযারাল কি্বছমাতা ঊলুল ক্বুরবা ওয়ালইয়াতা-মা- ওয়ালমাছা-কীনু ফারযুক্বূহুম্ মিনহু ওয়াক্বূলূ লাহুম ক্বাওলাম্ মা'রূফা।


৯. ওয়ালইয়াখ্শাল্লাযীনা লাও তারাকূ মিন্ খালফিহিম যুর্রিয়্যাতান যিআ'-ফান খা-ফূ আ'লাইহিম; ফালইয়াত্তাক্বুল্লা-হা ওয়ালইয়াক্বূলূ ক্বাওলান ছাদীদা।
[সুরা : আন্ নিছা, আয়াত : ৭-৯]
অনুবাদ
৭. মাতা-পিতা বা আত্মীয়স্বজনের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে পুরুষদের জন্য অংশ রয়েছে, অনুরূপ মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নারীদের জন্যও অংশ রয়েছে, সেটা কম হোক বা বেশি। প্রত্যেকের জন্য অংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
৮. মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টনের সময় তার আপনজন, এতিম ও মিসকিনরা এসে হাজির হলে যদিও তারা কিছু পায় না, তবু তাদের কিছু দিয়ো। আর তাদের সঙ্গে ভালোভাবে কথাবার্তা বলো।
৯. মানুষের এতটুকু ভয় থাকা উচিত, যদি তারা মৃত্যুর সময় এ ধরনের দুর্বল সন্তানদের রেখে যায়, তাহলে এদের ব্যাপারে তারা ভীত শঙ্কিত থাকত। অতএব (এতিম ও দুর্বলদের ব্যাপারে) আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং এদের সঙ্গে ন্যায়নিষ্ঠ কথাবার্তা বলা উচিত।
ব্যাখ্যা
৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি ওয়ারিস ও উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিলিবণ্টনের মূলনীতি। এখানে খুব পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, পুরুষ এবং নারী যার যার মতো করে তাদের নির্ধারিত হিস্যা পাবে। পুরুষরা যেমন তাদের মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে হিস্যা পাবে, অনুরূপভাবে নারীরাও তাদের হিস্যা পাবে, নির্ধারিত হিস্যা কমবেশি হতে পারে। কোরআন মাজিদের এই আয়াত সে যুগে যে রকম সামাজিক পটভূমিতে নাজিল হয়েছে, তখন নারীদের হিস্যা পাওয়ার ঘোষণা ছিল রীতিমতো বৈপ্লবিক। সে যুগে নারীদের কোনো অধিকারই ছিল না। সামাজিক ব্যবস্থায় নারীদের নিরাপত্তা ছিল খুব নড়বড়ে এবং উপরন্তু তারা পুরুষের সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত হতো। এই অবস্থায় নারীদের সম্পত্তির হিস্যা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু কোরআনুল কারিমে নারীদের যে সম্পদের অধিকার দেওয়া হয়, তা আজও ঠিকমতো মুসলিম সমাজে বাস্তবায়িত হচ্ছে না_নারীর সামাজিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায়।
৮ নম্বর আয়াতে ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী না হওয়া আত্মীয়স্বজন ও গরিব-মিসকিনদের কিছু সম্পদ দান করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই দান অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্করা করতে পারবে তাদের নির্ধারিত হিস্যা থেকে। এ দান-খয়রাত ওয়াজিব নয়। বরং মোস্তাহাব। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পক্ষ থেকে তাদের অভিভাবকদের এ ধরনের দান করা উচিত হবে না।
এই আয়াতে শুধু দানের কথাই বলা হয়নি, বলা হয়েছে সুন্দর আচরণ করার কথা। ৯ নম্বর আয়াতে এই কথাটিই আরেকটা ভিন্ন আঙ্গিক থেকে বিস্তারিত করে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতিম ও মিসকিনদের প্রতি সদয় ও বিনম্র আচরণ করার কথা। সর্বোপরি বলা হয়েছে, সহমর্মিতার কথা। সহমর্মিতার মূল জায়গাটাকে স্পর্শ করা হয়েছে এই আয়াতে। কোনো ব্যক্তি যদি মৃত্যুর সময় নিজের এমন দুর্বল ও অসহায় সন্তান রেখে চলে যায়, তবে তার অবস্থাটা কেমন হয়? অন্যের বেলায়ও এ অবস্থাটা চিন্তা করে এতিম ও মিসকনদের প্রতি সদয় হতে বলা হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.