দেশপ্রেমের অগি্নপরীক্ষা by ফরহাদ জাকারিয়া
দেশের উন্নয়নের জন্য প্রকৃত দেশপ্রেমের বিকল্প নেই। তাই দেশ এবং নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের দাবির পক্ষে সঠিকভাবে কাজ করাই যুক্তিযুক্ত 'স্বদেশকে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ'_ এই বাণী থেকেই দেশকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে ইসলামের গুরুত্ব আরোপের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। যে কোনো ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশে ভালোবাসা দেখানো সহজ। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে ভালোবাসার অগি্নপরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমেই
ভালোবাসার গভীরতা প্রমাণিত হয়। মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা সে রকম গভীর হওয়া উচিত যে, গভীরতা পেরিয়ে শত্রুরা সামান্য কোনো ক্ষতিসাধন করতে না পারে। রাসূল (সা.)-এর জীবনে আমরা গভীর দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় তিনি বারবার জন্মভূমি মক্কার দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'হে মক্কা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছেড়ে আমি কখনোই যেতাম না।' তখন তাঁর চোখ থেকে পানি বের হচ্ছিল। হিজরত করার পর মদিনার প্রতিও তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল। মদিনাকে রক্ষা করার জন্য তিনি সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। পরে তিনি যখন মক্কা বিজয় করলেন জন্মভূমির স্পর্শ তাঁর হৃদয়ের সব বেদনা দূর হয়ে গিয়েছিল। এতদিন ধরে যারা নবীজির প্রতি জুলুম-অত্যাচার চালিয়েছিল তিনি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অপূর্ব ক্ষমার এই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নবীজির (সা.) পক্ষে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল কেবল মাতৃভূমির প্রতি তাঁর গভীর প্রেমের কারণে।
শুধু এটুকুই নয়। দেশকে ভালোবাসা এবং দেশের সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্য ত্যাগ স্বীকার করাকে রাসূল (সা.) অনেক উচ্চমর্যাদা দান করেছেন। দেশপ্রেমকে জাহান্নামের রক্ষাকবচ হিসেবে উল্লেখ করে রাসূল (সা.) বলেন, দুই ধরনের চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন কখনও স্পর্শ করবে না_ যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং যে চক্ষু আল্লাহর পথে (সীমান্ত) পাহারায় রাত কাটায়।- (তিরমিজি)
ইসলামী শরিয়ত এবং বাস্তবতা_ উভয় আলোকেই দেশপ্রেম কথাটির অর্থ ব্যাপক। দেশপ্রেম বলতে শুধু দেশের জন্য যুদ্ধ করা কিংবা সীমানা পাহারা দেওয়াই বোঝায় না। আরও ব্যাপকভাবে বলতে গেলে দেশের কল্যাণের নিমিত্তে কোনো কিছু করা অথবা কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকাও দেশপ্রেমের অন্তর্গত। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে যেসব দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তায় সেটা যথাযথভাবে পালন করা যেমন দেশপ্রেম, তেমনি রাষ্ট্র তার কল্যাণের নিমিত্তে যেসব ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয় সেসব কাজ থেকে বিরত থাকাও দেশপ্রেম। উদাহরণস্বরূপ আমাদের অনেকের মধ্যেই অপচয় এবং বিলাসী জীবনযাপন করার প্রবণতা দেখা যায়। দেশের কল্যাণচিন্তা করে এসব প্রবণতা পরিহার করে চলার মধ্যেও দেশপ্রেম নিহিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা মুখে দেশপ্রেমের যত কথা বলি কাজে তার প্রতিফলন খুব কম। আমাদের অন্তরের বিশ্বাস এবং মুখের কথায় এক ধরনের ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। আর এটা হয় বলেই নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করা সত্ত্বেও আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারছি না। আশানুরূপভাবে দেশের উন্নয়ন করতে পারছি না। ইসলামে এ ধরনের দ্বিমুখী প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্য প্রকৃত দেশপ্রেমের বিকল্প নেই। তাই দেশ এবং নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের দাবির পক্ষে সঠিকভাবে কাজ করাই যুক্তিযুক্ত। কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত সেই জাতির ভাগ্যের উন্নতি দান করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেরা চেষ্টা করে। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নতির জন্য আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত।
দেশপ্রেমের সঙ্গে স্বাধীনতা প্রত্যয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পরাধীন ব্যক্তি দেশপ্রেমিক হলেও তার মধ্যে সবসময় এক ধরনের অপ্রাপ্তির বেদনা থেকে যায়। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। স্বাধীনতা ছাড়া সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ তার জীবনের বিকাশ ঘটাতে পারে না। স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষা উভয়ের জন্যই দেশপ্রেম জরুরি।
fzakariabd@gmail.com
শুধু এটুকুই নয়। দেশকে ভালোবাসা এবং দেশের সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্য ত্যাগ স্বীকার করাকে রাসূল (সা.) অনেক উচ্চমর্যাদা দান করেছেন। দেশপ্রেমকে জাহান্নামের রক্ষাকবচ হিসেবে উল্লেখ করে রাসূল (সা.) বলেন, দুই ধরনের চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন কখনও স্পর্শ করবে না_ যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং যে চক্ষু আল্লাহর পথে (সীমান্ত) পাহারায় রাত কাটায়।- (তিরমিজি)
ইসলামী শরিয়ত এবং বাস্তবতা_ উভয় আলোকেই দেশপ্রেম কথাটির অর্থ ব্যাপক। দেশপ্রেম বলতে শুধু দেশের জন্য যুদ্ধ করা কিংবা সীমানা পাহারা দেওয়াই বোঝায় না। আরও ব্যাপকভাবে বলতে গেলে দেশের কল্যাণের নিমিত্তে কোনো কিছু করা অথবা কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকাও দেশপ্রেমের অন্তর্গত। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে যেসব দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তায় সেটা যথাযথভাবে পালন করা যেমন দেশপ্রেম, তেমনি রাষ্ট্র তার কল্যাণের নিমিত্তে যেসব ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয় সেসব কাজ থেকে বিরত থাকাও দেশপ্রেম। উদাহরণস্বরূপ আমাদের অনেকের মধ্যেই অপচয় এবং বিলাসী জীবনযাপন করার প্রবণতা দেখা যায়। দেশের কল্যাণচিন্তা করে এসব প্রবণতা পরিহার করে চলার মধ্যেও দেশপ্রেম নিহিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা মুখে দেশপ্রেমের যত কথা বলি কাজে তার প্রতিফলন খুব কম। আমাদের অন্তরের বিশ্বাস এবং মুখের কথায় এক ধরনের ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। আর এটা হয় বলেই নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করা সত্ত্বেও আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারছি না। আশানুরূপভাবে দেশের উন্নয়ন করতে পারছি না। ইসলামে এ ধরনের দ্বিমুখী প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্য প্রকৃত দেশপ্রেমের বিকল্প নেই। তাই দেশ এবং নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের দাবির পক্ষে সঠিকভাবে কাজ করাই যুক্তিযুক্ত। কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত সেই জাতির ভাগ্যের উন্নতি দান করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেরা চেষ্টা করে। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নতির জন্য আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত।
দেশপ্রেমের সঙ্গে স্বাধীনতা প্রত্যয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পরাধীন ব্যক্তি দেশপ্রেমিক হলেও তার মধ্যে সবসময় এক ধরনের অপ্রাপ্তির বেদনা থেকে যায়। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। স্বাধীনতা ছাড়া সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ তার জীবনের বিকাশ ঘটাতে পারে না। স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষা উভয়ের জন্যই দেশপ্রেম জরুরি।
fzakariabd@gmail.com
No comments