জঘন্যতম অপরাধ-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত

র্বরতা বললেও যেন কম বলা হয়। একাত্তরের নৃশংসতার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। ঘটনায় ভুক্তভোগী স্ত্রী। মূল নায়ক স্বামী। ঘটেছে ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় রফিকুল নামের এক যুবকের আত্মীয়ের বাসায়। তিনি তাঁর স্ত্রীর হাতের পাঁচ আঙুল কেটে নেন চাপাতি দিয়ে। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়, পরিকল্পিতভাবে এবং স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করে। দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ফিরে তিনি স্ত্রীকে নিজের বোনজামাইয়ের বাসায় নিয়ে আসেন।


আর পরিকল্পনা করেন স্ত্রীর হাত কেটে নেওয়ার। স্ত্রীর চোখ বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে টেবিলের ওপর হাত বিছিয়ে দিতে বলে চাপাতির আঘাতে হাত কেটে ফেলতে পারেন যে মানুষ, তাঁকে পিশাচ বলতেও মন সাঁয় দেয় না। নরসিংদী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী হাওয়া আক্তার জুঁইয়ের এই পরিণতির পেছনে কাজ করেছে স্বামীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া। পঞ্চম শ্রেণী পাস মধ্যপ্রাচ্যে চাকরিরত এই রফিকুল চাননি তাঁর স্ত্রী আর লেখাপড়া করুক। স্ত্রী যখন তাঁর কথা শোনেননি, তখন তিনি সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলতে পারতেন। তিনি জুঁইকে তালাক দিয়ে নতুন করে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারতেন। প্রয়োজনে আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা নিতে পারতেন, যা আমাদের সমাজে সালিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে থাকে। কিন্তু তিনি এখানে ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁকে তাই কোনোভাবেই আর স্বাভাবিক মানুষের কাতারে ফেলা যায় না। আর স্ত্রী যদি অন্যায় আবদার করতেন, তাহলেও মনে প্রতিহিংসা জাগতে পারত। কিন্তু লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াটা কি অন্যায়? এমন ভালো কাজ করাটাকেও যিনি মেনে নিতে পারেননি, তাঁকে কি মানুষের কাতারে ফেলা যায়? মানুষ এতটা অমানুষ হতে পারে, এ ধরনের ঘটনার দিকে না তাকালে বোঝা যেত না। কয়েক মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরকে তাঁর স্বামী চোখে আঙুল ঢুকিয়ে অন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেই বর্বরতার পেছনে কাজ করেছিল ক্রোধ। ক্রোধ থেকে মানুষ অপরাধ করতে পারে। রুমানার স্বামীর ক্ষেত্রে ঘটেছিল তাই। কিন্তু রফিকুল নামের এই যুবক যা করেছেন তাকে ঠাণ্ডা মাথার খুনের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। এমন মানুষকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সামাজিকভাবে তাঁদের বিয়ে হলেও এখানে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যে শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যবধান, তা মানসিক বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে কি না মনস্তাত্তি্বক বিশ্লেষকরা এই সত্যতা যাচাই করতে পারেন। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও কি হাত কেটে কিংবা আঙুল কেটে তার সমাধান হতো? সুতরাং এর পেছনে আর কোনো কারণ কাজ করছে কি না তাও তলিয়ে দেখা দরকার। কিন্তু প্রকাশিত সংবাদ থেকে বোঝা যায়, ঘটনা ঘটানো হয়েছে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়। যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেও হয়তো জুঁই তাঁর আঙুল ফিরে পাবেন না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোনো জুঁইয়ের হয়তো এই পরিণতি ভোগ করতে হবে না_এটা অনুমান করা যায়। জুঁই যাতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেন সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.