চরাচর-তক্ষক ভক্ষকদের কেরামতি

টিকটিকির চেয়ে একটু বড়, রংটাও ভিন্ন। টিকটিকির মতোই পোকামাকড় ধরে খায়। বাস করে বড় গাছের কোটরে, পরিত্যক্ত ঘরের দেয়ালের ফাঁকে। সরীসৃপ হলেও কুমির কিংবা সাপের মতো ভয়ংকর বা বিষাক্ত_কোনোটিই নয়। একেবারে নিরীহ। বড়জোর শান্ত বিকেল বা নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় কক-ক্কে, কক-ক্কে স্বরে কয়েকবার ডেকে ওঠে। তাই লোকে একে ডাকে কক্কা নামে। আসল নাম তক্ষক। বৈজ্ঞানিক নাম গেকো গেকো (Gecko Gecko)। বাংলাদেশে এটি


বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসেবে ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির বিলুপ্তি ত্বরান্বিত করতে ইদানীং একটি প্রতারকচক্র উঠেপড়ে লেগেছে।
প্রায় অসম্ভব কোনো কিছু নিয়ে ব্যবসা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। নিকট অতীতে সোনালি রঙের এক টাকার কয়েন নিয়ে ব্যবসা বেশ জমে উঠেছিল। বেরসিক পুলিশের হস্তক্ষেপে ব্যবসাটি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে মাটির নিচ থেকে পিলার তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। প্রতারকচক্র কৌশলে গুজব ছড়িয়েছিল, পিলারে মূল্যবান ম্যাগনেট আছে। দীর্ঘদিন স্থানে-অস্থানে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি, এমনকি রাস্তা কেটে পিলারের খোঁজ চলে। গত শতকের শেষ দশক কেটেছে মূল্যবান মূর্তির খোঁজে। এক টাকার কয়েনে স্বর্ণ, পিলারে ম্যাগনেট কিংবা মূল্যবান মূর্তি কেউ পেয়েছে কি না সে খবর জানা না গেলেও এতে অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব, রিক্ত, এমনকি বাস্তুহারা পর্যন্ত হয়েছে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে শক্তিশালী প্রতারকচক্রের প্রতারণার অভিনব ও সূক্ষ্ম কৌশলের কারণে। এর আগে যেসব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার সঙ্গে বর্তমান প্রতারণাটির একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পার্থক্য লক্ষণীয়। সেটি হলো, আগের প্রতারণাগুলো সংঘটিত হয়েছিল জড়বস্তু নিয়ে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, এবার যাকে ভিত্তি করে প্রতারণাটি সংঘটিত হচ্ছে, সেটি একটি প্রাণী। তক্ষক নামের এই প্রাণীটি এরই মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় (Vulturner) প্রাণীর তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে এই নিরীহ প্রাণীটির বিলুপ্তি আরো ত্বরান্বিত হবে। অথচ এই তক্ষক একটি পরিবেশবান্ধব প্রাণী। এটির দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১৭ সেন্টিমিটার। আমাদের দেশে প্রাপ্ত তক্ষকগুলোর সর্বোচ্চ ভর ১৭৫ গ্রাম। প্রতারকচক্রের ঘোষণা অনুযায়ী, একটি ৩০০ গ্রাম ভরের তক্ষকের মূল্য এক কোটি টাকা। কারণ হিসেবে তারা বলে থাকে, একটি ৩০০ গ্রাম বা তদূর্ধ্ব ভরের তক্ষকের শরীরে ইউরেনিয়াম থাকে। আর ইউরেনিয়াম অত্যন্ত মূল্যবান, এটি সবাই জানে। প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব বা প্রতারিত হতে যাচ্ছে এমন সব লোকও এটি জানে। কিন্তু তারা জানে না যে কোনো তক্ষকের ওজনই ৩০০ গ্রাম হয় না। কখনোই সম্ভব নয়। যেমনটি সম্ভব নয় তক্ষকের শরীরে ইউরেনিয়াম থাকা। কিন্তু সেই যে কথায় আছে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। চোরা ধর্মের কাহিনী শুনুক আর না-ই শুনুক, তক্ষক রক্ষায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা সরকার যথাযথ আইন প্রয়োগে ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো জনসচেতনতায় যথাযথ প্রচারে এগিয়ে আসবে_এটাই সবার কাম্য। তক্ষক রক্ষায় এর কোনো বিকল্প নেই।
সাইফুল ইসলাম খান

No comments

Powered by Blogger.