বাদ পড়ার আগে অনেক নাটক

সাম্প্রতিক সময়ে হাসতে ভুলে গেছে তাঁর ব্যাট। বরং বারংবার বিশ্বাসঘাতকতা করছে প্রত্যাশার সঙ্গে। ফলে আম-জনতার অনেকেরও আক্রোশের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন এ ব্যাটসম্যান। তাঁর জন্য হাহাকার করার লোক এখন খুঁজতে হবে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে। তাই বলে আশরাফুলের সঙ্গে এমনটা করবে বিসিবি! হোটেল থেকে এমনিভাবে 'বের' করে দেওয়া হবে সাবেক অধিনায়ককে!


চট্টগ্রাম টেস্টে ১ ও ০ রান করায় দ্বিতীয় টেস্টের জন্য দেওয়া নির্বাচকদের স্কোয়াডে ছিলেন না আশরাফুল। কিন্তু বিসিবি প্রেসিডেন্ট আ হ ম মোস্তফা কামালের অনুমোদন মেলেনি পরশু। এরই মধ্যে দল উঠে যায় হোটেলে। প্রথম টেস্টের স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে আশরাফুলও। কাল সকালে জাতীয় দলের সঙ্গে পুরোমাত্রায় অনুশীলনও করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে কোচ স্টুয়ার্ট ল বলে গেছেন, তাঁর জানা মতে আশরাফুল দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডে থাকছেন। কিন্তু বিকেল ৫টায় প্রিমিয়ার ক্রিকেটের দলবদল করতে আসার সময় অমোঘ সেই ফোনটা এল বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার সাবি্বর খানের কাছ থেকে। জানতে পারলেন, স্কোয়াডে থাকছেন না তিনি। অতএব ছেড়ে দিতে হবে হোটেল।
পরাজিত-হতাশ-বিষণ্ন আশরাফুল এভাবেই শিকার হলেন বিসিবির অপেশাদারিত্বের। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ককে এভাবে হোটেলে তুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলার দৃষ্টান্ত যে ক্রিকেট বোর্ডের সমন্বয়হীনতার চূড়ান্ত দলিল, সেটি নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। 'আমাদের কাজ দল দেওয়া, সেটি দিয়েছি। এখন বিসিবি যদি তা না প্রকাশ করে, আমরা কী করতে পারি'_হতাশার সুরে বলছিলেন প্রধান নির্বাচক আকরাম খান। এমনিতে বাংলাদেশের অনুশীলনে নির্বাচকদের অবধারিত উপস্থিতি থাকলেও কাল আসেননি তিন নির্বাচকের কেউই। রাগ-ক্ষোভ-অভিমান থেকেই হয়তো বা!
আশরাফুল এমন কিছুর আঁচ করলেও কাল প্র্যাকটিসে ছিলেন সিরিয়াস। হয়তো একুট বেশিই সিরিয়াস। নেটে তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় দিলেন বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ। ফিল্ডিংয়ে খাটলেন প্রচুর। হাসি-ঠাট্টায় বিষাদ আড়ালের চেষ্টাও কম করলেন না। হয়তো ভেবেছিলেন, শেষ পর্যন্ত হয়তো...। আর অনুশীলন শেষে কোচ স্টুয়ার্ট লও আশরাফুলের বাদ পড়ার খবরকে উড়িয়ে দিতে চাইলেন গুজব বলে, 'আমি যতটুকু জানি, ও স্কোয়াডে আছে। সে কারণেই অনুশীলনে এসেছে। হয়তো আশরাফুলের না থাকার খবরটি গুজব, উপমহাদেশের ক্রিকেটে যেমনটা প্রায়ই হয়ে থাকে।'
শেষ পর্যন্ত এটি গুজব থাকেনি। আশরাফুলকে সন্ধ্যায় ঠিকই ছেড়ে দিতে হয় হোটেল। এ নিয়ে হতাশাটা লুকোননি তিনি, 'আমাকে বলে দিলেই তো হতো। এখন হোটেলে উঠেছি, এক দিন পুরো সেশন প্র্যাকটিসও করলাম, তারপর এই! এতটা না করলেও হতো।' এক টেস্ট খেলানোর পর বাদ দেওয়া নিয়েও আক্ষেপ আছে তাঁর, 'গত এক-দেড় বছর ধরে এই তো হচ্ছে। আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করি, কয়েক দিন পরই আবার দলে ডেকে এনে এক-দুই ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দিয়ে দেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়ার পর কী দরকার ছিল আমাকে এত তাড়াতাড়ি ডাকার! আমি কী টেন্ডুলকার নাকি যে এক ম্যাচে মাঠে নেমেই সেঞ্চুরি করব!' পুরো দলের ব্যর্থতার দায় তাঁর কাঁধে চাপানো হয়েছে বলেও দাবি আশরাফুলের, 'যদি এমন হতো যে পুরো দলের সবাই তুখোড় ফর্মে আছে, সবাই সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি করছে_কেবল আমি রান পাচ্ছি না, তাহলে আমাকে বাদ দিলে বুঝতাম। এখন পুরো দলের ব্যাটিংই খারাপ হচ্ছে, অথচ সব দোষ পড়ছে আমার ঘাড়ে।'
আশরাফুল-নাটকের একটা পুনশ্চ এখানে দিতে হচ্ছে। নির্বাচকরা দল দেওয়ার প্রায় ২৮ ঘণ্টা পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াড আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি বিসিবি। কে জানে, বিসিবি প্রেসিডেন্টের কাঁচি-কলমে সেটি বদলে যায় কিনা!

No comments

Powered by Blogger.