মুক্ত বাংলাদেশ
অন্ধকার রাত পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ মুক্ত! ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত রাজধানী! আজ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণের অনন্য এক দিন। নিষ্ঠুর-বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধ্বস্ত শহরের মানুষ নেমে আসে পথে। বাসে, ট্রাকে মানুষ নাচছে। এমনকি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কেও তারা উঠে পড়েছে। কণ্ঠে স্লোগান_ জয় বাংলা। লাল-সবুজ-সোনালি রঙের পতাকা আন্দোলিত হচ্ছে। এ পতাকা এতদিন লুকানো ছিল। যেমন লুকানো ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।
ঠিক এক বছর আগে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে বাঙালিরা সাধারণ নির্বাচনে মুজিবকে ম্যান্ডেট দিয়েছিল। কিন্তু গণরায় না মেনে পাকিস্তানি সৈন্যরা শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা। এক কোটি লোক আশ্রয় নেয় ভারতে। রাজপথে যারা নেমে এসেছে তাদের অনেকের সঙ্গে কয়েক মাস পর ফের দেখা। অনেকেই চোখের পানি ফেলছেন প্রিয়জনকে হারিয়ে। গৃহহারা মানুষের সংখ্যাও অনেক অনেক। এখন তাদের ঘর তুলতে হবে। দেশকে গড়ে তুলতে হবে।
হাজার হাজার মানুষের জয় বাংলা স্লোগানের মধ্য দিয়ে আজ ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করে। মেজর জেনারেল গন্দর্ভ নাগরার নেতৃত্বে ভারতীয় সৈন্য ও পূর্ব পাকিস্তানি গেরিলারা সকালে ঢাকার অদূরে একটি সেতুতে অভিযান চালায় এবং সেখানেই তারা জানতে পারে যে আত্মসমর্পণের প্রস্তাবে পাকিস্তানি সামরিক কমান্ড সম্মত হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে নাগরা পাকিস্তানের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, 'নিয়াজি ও আমি কলেজ জীবন থেকে বন্ধু।' ভারতীয় এই জেনারেল সেখান থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে যান ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবকে স্বাগত জানাতে। তিনি কলিকাতা থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় অবতরণ করেন। সে সময়ে মাত্র তিনজন ভারতীয় সৈন্য ছিলেন সেখানে। আর বিমানবন্দর রক্ষায় নিয়োজিত পাকিস্তানি সেনাদের জটলা ছিল রানওয়ের এক প্রান্তে, তাদের প্রস্তুতি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার। রাজপথে কয়েক ঘণ্টা ভারতীয় সৈন্যদের তুলনায় পাকিস্তানি সৈন্যদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। কয়েক স্থানে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাছে একজন ভারতীয় সেনা অফিসারের মৃত্যু হয়। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা উল্লসিত জনগণের সঙ্গে মিলে স্লোগান দিচ্ছে, ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। নাগরা ৯৫তম ব্রিগেডিয়ার এইচএস ক্লরকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পাঠালেন বিদেশিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে। রেডক্রসের অধীনে এ এলাকা নিরপেক্ষ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। উল্লসিত বাঙালিদের মধ দিয়ে ক্লারকে পথ করে নিতে হচ্ছিল। তাকে অনেকে গাঁদা ফুল উপহার দেয়। নাগরা ও ক্লার ৪ ডিসেম্বর সীমান্ত অতিক্রম করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর দিক দিয়ে ঢাকা পেঁৗছেন। কখনও তারা গরুর গাড়ি ব্যবহার করেছেন, ,কখনওবা হেঁটেছেন। নাগরা বলেন, পথে অনেক পাকিস্তানি সৈন্যের মৃতদেহ দেখেছেন। তাদের কবর দেওয়ার সময় আমাদের ছিল না। এটা দুঃখজনক। পথে পথে মানুষ আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। মেজর জেনারেল জ্যাকব বলেন, 'আশা করছি সবকিছু শান্তিপূর্ণ ও শান্ত রয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য, বেসামরিক নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি এবং তা রক্ষা করা হবে।'
স টাইম সাময়িকী, ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১
হাজার হাজার মানুষের জয় বাংলা স্লোগানের মধ্য দিয়ে আজ ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করে। মেজর জেনারেল গন্দর্ভ নাগরার নেতৃত্বে ভারতীয় সৈন্য ও পূর্ব পাকিস্তানি গেরিলারা সকালে ঢাকার অদূরে একটি সেতুতে অভিযান চালায় এবং সেখানেই তারা জানতে পারে যে আত্মসমর্পণের প্রস্তাবে পাকিস্তানি সামরিক কমান্ড সম্মত হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে নাগরা পাকিস্তানের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, 'নিয়াজি ও আমি কলেজ জীবন থেকে বন্ধু।' ভারতীয় এই জেনারেল সেখান থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে যান ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবকে স্বাগত জানাতে। তিনি কলিকাতা থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় অবতরণ করেন। সে সময়ে মাত্র তিনজন ভারতীয় সৈন্য ছিলেন সেখানে। আর বিমানবন্দর রক্ষায় নিয়োজিত পাকিস্তানি সেনাদের জটলা ছিল রানওয়ের এক প্রান্তে, তাদের প্রস্তুতি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার। রাজপথে কয়েক ঘণ্টা ভারতীয় সৈন্যদের তুলনায় পাকিস্তানি সৈন্যদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। কয়েক স্থানে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাছে একজন ভারতীয় সেনা অফিসারের মৃত্যু হয়। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা উল্লসিত জনগণের সঙ্গে মিলে স্লোগান দিচ্ছে, ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। নাগরা ৯৫তম ব্রিগেডিয়ার এইচএস ক্লরকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পাঠালেন বিদেশিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে। রেডক্রসের অধীনে এ এলাকা নিরপেক্ষ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। উল্লসিত বাঙালিদের মধ দিয়ে ক্লারকে পথ করে নিতে হচ্ছিল। তাকে অনেকে গাঁদা ফুল উপহার দেয়। নাগরা ও ক্লার ৪ ডিসেম্বর সীমান্ত অতিক্রম করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর দিক দিয়ে ঢাকা পেঁৗছেন। কখনও তারা গরুর গাড়ি ব্যবহার করেছেন, ,কখনওবা হেঁটেছেন। নাগরা বলেন, পথে অনেক পাকিস্তানি সৈন্যের মৃতদেহ দেখেছেন। তাদের কবর দেওয়ার সময় আমাদের ছিল না। এটা দুঃখজনক। পথে পথে মানুষ আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। মেজর জেনারেল জ্যাকব বলেন, 'আশা করছি সবকিছু শান্তিপূর্ণ ও শান্ত রয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য, বেসামরিক নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি এবং তা রক্ষা করা হবে।'
স টাইম সাময়িকী, ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১
No comments