সুরমার খাল-সংঘর্ষ নয়, সম্প্রীতিই বয়ে আনুক
আমাদের দেশে তুচ্ছ কারণে দলবদ্ধ মারপিটের নজির বিরল নয়। ফুটবল খেলার মতো প্রীতিকর আয়োজনেও পান থেকে চুন খসা নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে টানা কয়েক দিন সংঘর্ষ চলার খবর মাঝে মধ্যেই সংবাদ শিরোনাম হয়। এ ক্ষেত্রে ন্যায্যতার চেয়ে নিজ জনপদের 'সম্মান' রক্ষাই মুখ্য বিবেচ্য হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ১৫ গ্রামের বাসিন্দার মধ্যে সংঘর্ষের চরিত্র যদিও একই; এর কারণ 'তুচ্ছ' নয়।
দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত দুই ইউনিয়নের সহস্রাধিক বাসিন্দার সংঘর্ষের জেরও স্বভাবত সামান্য হয়নি। সমকালের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে_ নিহত এক, আহত শতাধিক। পরদিন পর্যন্ত নিখোঁজ আরও যে চারজনের খোঁজে স্বজনরা নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছিল, তাদের ভাগ্যে শুভ কিছু ঘটেছে বলে মনে হয় না। জানা যাচ্ছে, ছাতকের কালারুকা ও কোম্পানীগঞ্জের ইছাকলস ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীর একটি প্রশাখায় মাছ ধরার অধিকার নিয়ে দুই পাড়ের কয়েক গ্রামের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত। একপক্ষ খালটিতে বাঁধ দিলে অপর পক্ষ তা মেনে নেয়নি। এটা ঠিক যে, স্থানীয় জনসাধারণ আইনের আশ্রয় নেওয়ার বদলে যেভাবে নিজেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু পুরো বিষয়টির দায় স্থানীয় প্রশাসন এড়াতে পারে না। প্রথমত, প্রবহমান খালে বেসরকারি উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি। অথচ ছয় মাস আগে নির্মিত বাঁধটি নিয়ে সেখানকার প্রশাসন উচ্চবাচ্য করেনি! দ্বিতীয়ত, দুই পাড়ের কয়েকটি গ্রামের মধ্যে বিবাদ ধূমায়িত হয়ে উঠলেও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার বিষয়টিও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার প্রমাণ। তৃতীয়ত, এ ধরনের জলাশয়ে কারা কীভাবে মাছ ধরতে পারবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট আইন ও বিধি রয়েছে। যে কেউ চাইলেই গায়ের জোরে বাঁধ দিয়ে কিংবা উন্মুক্ত জলাভূমি থেকে মাছ ধরতে পারে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে ভূমিকা প্রত্যাশিত, ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও তা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন সংশ্লিষ্ট সবার উচিত হবে, যত দ্রুত সম্ভব সেখানে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনা। আর ওই খালের মৎস্য আহরণ ব্যবস্থাকেও আইনি কাঠামোর আওতায় আনারও বিকল্প নেই। নদী ও খালের মতো সর্বসাধারণের সম্পত্তি যেন সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধিই বয়ে আনে, রক্তক্ষয় ও সংঘর্ষ নয়।
No comments