নরসিংদীর মেয়র নির্বাচন : মেজ ছেলে কামরুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা দিলেন লোকমানের মা

মেয়র পদে নরসিংদী পৌরসভার উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে নিহত লোকমানের পরিবার। নির্বাচনে লড়বেন লোকমানের ছোটভাই কামরুজ্জামান। গতকাল সকাল ১১টায় শহরের বাসাইল মহল্লায় নিজ ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তার নাম ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বিএনপি থেকে প্রার্থী দেয়া হচ্ছে না এ নির্বাচনে। ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২ দিন পর গতকাল দুপুরে


নিহত লোকমানের নিজ বাড়িতে তার মা মাজেদা বেগম বাসাইল এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে কামরুজ্জামানকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এ সময় নিহত লোকমানের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলী, ছোটভাই শামীম নেওয়াজসহ পরিবারের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বৃদ্ধা মাজেদা বেগম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০০৪ সালে পৌরবাসী আমার ছেলে লোকমান হোসেনকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেন। বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আমার প্রাণপ্রিয় ছেলে শত বছরের অবহেলিত
নরসিংদীকে সাজানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। মাত্র ৬ বছরে লোকমান শুধু চোখে পড়ার মতো উন্নয়নই করেনি। এ শহর থেকে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলের মাধ্যমে আপনাদেরও প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছিল। এরই ফলে গত ৭ মাস আগে শত ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েও আপনারা আবার তাকে বিপুল ভোটে মেয়র পদে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী করেন। কিন্তু আপনারা সে বিজয়ের স্বাদ পেতে না পেতেই গত ১ নভেম্বর অবৈধভাবে ক্ষমতাপিপাসু বিপথগামী একটি কুচক্রী মহল আবার নরসিংদীতে মাদক আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার লক্ষ্যে নির্দয়ভাবে তাকে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে গুলি করে। কেড়ে নেয় আমার বুকের ধন ও আপনাদের প্রিয়জন জনবন্ধু লোকমান হোসেনকে। আর এরই মধ্যে ৪৫ দিন অতিক্রান্ত হতে চলেছে, মনের শোক এখনও কাটেনি অনেকের। জীবদ্দশায় হয়তো এ শোক কাটবে কি-না তাও জানি না। কিন্তু সময় যে বসে থাকছে না।
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে। ১৯ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। নরসিংদীর সর্বস্তরের মানুষ আমার কাছে ও আমার পরিবারের কাছে দাবি রাখছে পরিবার থেকে প্রার্থী দেয়ার জন্য। লোকমান হোসেনের অসম্পন্ন স্বপ্নগুলো ও তার আদর্শে পথ চলে পৌরবাসীর আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে হবে।
এ সময় মেয়র মা আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমি আমার পরিবারের আরেক সদস্যকে হারাতে যদিও রাজি নই, কিন্তু নরসিংদীবাসীর চাওয়া-পাওয়াকে তো উপেক্ষা করতে পারি না। আপনাদের আহ্বানে তার ছোটভাই কামরুজ্জামানকে আপনাদের সেবা করার জন্য আজ থেকে আপনাদের হাতে অর্পণ করলাম। আমার দ্বিতীয় ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান আজ থেকে আপনাদের। মা হিসেবে আমি চাই আমার ছেলে আপনাদের সেবা করবে। এছাড়া আর কিছুই চাই না তার কাছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটাই মিনতি—আমার ছেলেকে আপনারা দেখে রাখবেন, দয়া করে আমার বুকে ফিরিয়ে দেবেন। আমার বিশ্বাস, কামরুজ্জামানও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একজন সৈনিক হয়ে নরসিংদী পৌরবাসীর উন্নয়নে ও সেবায় নিরসলভাবে কাজ করে যাবে এবং নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করবে।
এ বলে সবার কাছে তার ছেলে কামরুজ্জামানের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। নিহত মেয়রের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলীও দেবরের জন্য এলাকাবাসীর সমর্থন ও দোয়া চেয়ে বক্তব্য রেখেছেন। এ সময় বুবলী বলেন, আমার স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার গুরুদায়িত্ব পালন করবে আমার দেবর কামরুজ্জামান। আমার বিশ্বাস, সে দায়িত্ব পালনে সফল হবে। আপনারা তাকে সহযোগিতা করবেন নিহত মেয়রের স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
কামরুজ্জামানের ছোটভাই নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদী সরকারি কলেজের ভিপি শামিম নেওয়াজ বলেন, আমার বিশ্বাস বড়ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো মেজ ভাই কামরুজ্জামান যথাযথভাবে সমাপ্ত করবেন।
এদিকে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ সুলতান উদ্দিন মোল্লা এ নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামেননি তারা।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে আবদুল বাছেদ ভুঞা, আবুল হায়াত সরকার ও মোজাম্মেল হোসেন ভুঞার নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে। বাছেদ ভুঞা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময় লোকমান হোসেন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে বাছেদ রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও সম্প্রতি মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা শুনে অনেকেই তাকে নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা শুরু করেছেন। তবে এ ব্যাপারে আবদুল বাছেদ ভুঞা বলেন, দল থেকে মনোনয়ন পেলে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগ দল থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য ১৭ ডিসেম্বর জরুরি সভা ডেকেছে। এছাড়াও লোকমান বিরোধী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান মেয়র পরিবারের পক্ষ থেকে দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে প্রার্থী ঘোষণা করায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ১৭ তারিখের সভায় চূড়ান্ত হবে কে হচ্ছেন দলীয় প্রার্থী।
তবে মেয়র প্রার্থী কামরুজ্জামান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, স্থানীয় পৌরবাসী, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) ও কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের অনুরোধেই আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিছু লোক দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যারা নরসিংদী পৌরসভার উন্নয়ন চান ও নিহত লোকমান হোসেনের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান এবং তার অসমাপ্ত কাজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন চান, তারা এরই মধ্যে এ সাহসী ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.