শেয়ারবাজার সংকট-চাই সমন্বিত ও প্রণোদনামূলক উদ্যোগ

শেয়ারবাজারে আস্থাটাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ শেয়ারবাজার এখন আস্থাহীনতার চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার নানা উদ্যোগ নিলেও বাজার এখনও ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসেনি এবং কবে সুলক্ষণ দেখা যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর ফলে শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক, পেশাদার ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজারের ওপর আস্থা স্থাপন করতে পারছেন না। সৃষ্টি হয়েছে বাজারে তারল্য


সংকট। এসব বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার পর পুনরায় প্রত্যাশিত বিনিয়োগ না করায় বাজারের ওপর আস্থাহীনতা কাটছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ধারণা যে অমূলক নয় সে ব্যাপারে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। তবে একই সঙ্গে বাজারে উত্থান-পতনের ধারাটা স্বাভাবিক নিয়ম মেনে চলেনি বলেও সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে_ এই মতকেও অস্বীকার করা যায় না। তাছাড়া এখানকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখনও বিনিয়োগের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অজ্ঞ হওয়ার কারণে তারা শেয়ার ম্যানিপুলেটরদের দ্বারা সহজেই প্রতারিত হয়ে দুর্বল ভিত্তির শেয়ারেও যাচাই-বাছাই না করে হুট করে বিনিয়োগ করে বসেন। তাদের স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে লাগামহীন লাভের আকাঙ্ক্ষা বাজারে অহেতুক তেজিভাব সৃষ্টিতে অবদান রাখে। আবার বাজার যখন দ্রুত পড়তে শুরু করে, তখন তারাই সর্বাগ্রে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন হুড়মুড় করে। বাজারের দ্রুত পড়তি ও আস্থাহীনতা সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অতিমুনাফার মানসিকতাও অবদান রাখে। গতকাল সমকালে 'সংকট কাটছে না শেয়ারবাজারে' শিরোনামের লিড নিউজটিতে বাজার সংকটের মূল কারণগুলো উদ্ঘাটনের চেষ্টা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কীভাবে বাজারে বিনিয়োগে ফিরিয়ে আনা যাবে, এ জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে সৃষ্ট নেতিবাচক ধারণা কীভাবে দূর করা যাবে সে সম্পর্কে ভাবনাচিন্তার যথেষ্ট উপাদান রিপোর্টটিতে রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঊর্ধ্বগতির জন্য যে সময় নেওয়া হয় পড়তির ক্ষেত্রে সময়টা অনেক কম হয় এবং এই প্রক্রিয়া ঘন ঘন ঘটার ফলে বাজারের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বাজার সম্পর্কে আস্থাহীনতা তখন চরম আকার নেয়। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটছে। বাজারের এই উড়নচণ্ডী অবস্থা দূর করা উচিত যথাসম্ভব কম সময়ের মধ্যে।
এ জন্য সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সুচিন্তিত এবং দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতেই। এসব পদক্ষেপের প্রধান লক্ষ্যই হবে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ফিরিয়ে আনা এবং বাজারের তারল্য সংকট দূর করা। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যেন বাজারে বিনিয়োগে পুনরায় উৎসাহিত হয় সে জন্য কিছু প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাজারের স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় না করা গেলে পুঁজিবাজারের জন্য বড় বড় ফান্ডের ঘোষণা বাজারকে স্থিতিশীল করা এবং আস্থাহীনতা দূর করায় সামান্যই অবদান রাখবে।
 

No comments

Powered by Blogger.