ব্রোকারেজ হাউসগুলো আখের গোছাচ্ছে by তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু
শেয়ারবাজারের চরম মন্দায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসছেন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা। আর তাদের পোর্টফোলিও থেকে শেয়ারের 'ফোর্সড সেল' করে নিজেদের টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। বাজার মূলধন, শেয়ারের দর দুই-ই তলানিতে এসে ঠেকেছে। অথচ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলে চিহ্নিত বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, তহবিল গঠনকারী ব্যবস্থাপনা কম্পানিগুলো।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকগুলোর দৈনিক পাঁচ কোটি টাকা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কম্পানিগুলো চাইলে প্রতিদিন গড়ে দুই কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করতে পারে। বাজারে রয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। শুধু তারা বিনিয়োগ করলেই বাজারে দৈনিক লেনদেন হতো ৩০০ কোটি টাকার বেশি। ব্রোকারেজ হাউসগুলোই শেয়ারবাজারের সদস্য, তারাই বাজারে লেনদেনের মূল হোতা। অথচ বাজারের এ সংকটের সময় তারা দৃশ্যপটে নেই, বরং নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। এ পর্যবেক্ষণ বাজার বিশ্লেষকদের।
বিভিন্ন সূত্র মতে, শেয়ারবাজারের প্রধান দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে ফোর্সড সেল করে পতন আরো ত্বরান্বিত করেছে।
শীর্ষ পর্যায়ের এক মার্চেন্ট ব্যাংকার এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ফোর্স সেল গোপনে সব হাউসেই হচ্ছে। এটা বন্ধ করার কোনো আইন নেই। এসইসি মানবিক দিক বিবেচনা করে ফোর্স সেল না করার আদেশ দিয়েছে। কিন্তু হাউসগুলোর নিজেদের ব্যবসা ধরে রাখতে হলে এটা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন বাজারের ঊর্ধ্বগতিই ফোর্স সেল বন্ধ করার একমাত্র নিয়ামক।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেড় হাজার বিনিয়োগকারী শেয়ারের মূল্য মূলধনের নিচে চলে আসায় ফোর্সড সেলের শিকার হয়েছে। এদের বেশির ভাগই ব্রোকারেজ হাউসের বিনিয়োগকারী।
গত রবিবার দরপতনের সময় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে ফোর্সড সেলের ঘটনা ঘটেছে। ফোর্সড সেলের শিকার হ্যাক সিকিউরিটিজের ১০ বিনিয়োগকারী রবিবার দুপুরে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) গিয়ে লিখিতভাবে ফোর্সড সেলের ঘটনা ও এর সঙ্গে জড়িত রিসার্চ অ্যানালিস্ট মাহবুব সরোয়ারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দাখিল করেন। তাঁরা হলেন দেলোয়ার হোসেন, কাজী নাজমুল হক, মোস্তফা কামাল, তাইজুল ইসলাম, আবু নসরত জাভিউল্লাহ, কামরুজ্জামান, হাসান মেহেদী ও কামরুল হোসেন। হ্যাক সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আহমেদ আলী হাওলাদারের বিও অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩ নভেম্বর সিএমসি কামালের ২২ হাজার শেয়ার সেল করেছে, যার বাজারমূল্য আট লাখ ৯ হাজার ৯৩০ টাকা। কাশেম ড্রাই সেল ১৫ হাজার, যার বাজার মূল্য ৯ লাখ ৮২ হাজার ৬৫ টাকা। মোট ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৫ টাকা ফোর্সড সেল হয়েছে। এর মূলধন ছিল ৫০ লাখ টাকা। বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা ঋণ ছিল। এখন মূলধন ৩২ লাখ টাকা। ঋণ ৩১ লাখ টাকা। আহমেদ আলী জমি বিক্রি করে গত ২৭ অক্টোবর সাড়ে সাত লাখ টাকা জমা দেন। ওই টাকা জমা হওয়ার পরও ফোর্সড সেলের শিকার হন তিনি। বর্তমানে পুরোপুরি ফোর্সড সেল হলে তাঁর এক লাখ টাকা থাকবে। আহমেদ আলী হওলাদারের বিও অ্যাকাউন্ট নম্বর ৬৭৫৪০৫। ক্লায়েন্ট কোড-৫৪০৪৩। এসইসিতে জমা হওয়া অভিযোগ প্রসঙ্গে এসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, ফোর্সড সেল সংক্রান্ত একটি অভিযোগ এসইসিতে জমা হয়েছে।
এর আগেও এএনএফ ম্যানেজমেন্ট, লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ফোর্সড সেলের অভিযোগ ওঠে। গত সোমবার ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে এসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের কম্পানি রয়েছে ৩০টি। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২১, বীমা কম্পানি রয়েছে ৪৪ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে ৩৭টি। এসব প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ৩৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক। ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের সদস্য ২৩৮টি ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে ২২০টির রয়েছে স্টক ডিলার লাইসেন্স। এরা সবাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় থাকলেও নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, স্টক ব্রোকারদের ভূমিকার কারণেই বাজারের আজ এ অবস্থা। তাদের প্ররোচনায়ই মানুষ টাকা ধার করে না বুঝে শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। আজ তারা পুঁজি হারালেও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কোনো লোকসান নেই। '৯৬-তেও তারা লাভবান হয়েছে, এবারও।
চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে বিনিয়োগ করার মতো এখন আর কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসের সক্ষমতা নেই। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য নতুন করে ফ্রেশ ফান্ড সরবরাহ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ দিতে পারে। এটা হতে পারে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি বা ২০ কোটি টাকার মতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতি যে ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে বর্তমানে তারও প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারের ওপর। সে কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের।
শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজেদুল ইসলাম বলেন, এখন আর ফোর্সড দেওয়ার অবস্থায় নেই হাউসগুলো। কেন না, যে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকার বিপরীতে আরো এক লাখ টাকা মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার শেয়ারের দাম ৮০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। তার অ্যাকাউন্ট থেকে ফোর্সড সেল দিলে হাউস আরো ২০ হাজার টাকা পাবে ওই বিনিয়োগকারীর কাছে। কিন্তু নিজের এক লাখ টাকা হারিয়ে ওই বিনিয়োগকারীর আরো ২০ হাজার টাকা জোগাড় করার উপায় নেই। তিনি বলেন, ব্রোকারেজ ডিলারদেরও আর টাকা জোগাড় করার ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, একটি ব্রোকার ডিলারের এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষমতা ছিল। সব ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে যে বিনিয়োগ সক্ষমতা রয়েছে, একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সেই পরিমাণ ক্ষমতা ছিল। বর্তমানে হয়তো তাদের সে ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, এ সময় লাইফ ইনস্যুরেন্সগুলোর খাতের পড়ে থাকা অলস টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মার্জিন ঋণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার ওপর। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া ঋণের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকার ওপর। এই পরিমাণ টাকা শেয়ারবাজারে আটকে রয়েছে। অব্যাহত দরপতনে এই টাকা বের করারও সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে।
পুঁজিবাজারে বিপর্যয় সামাজিক অপরাধ বাড়িয়ে তুলছে
বিভিন্ন সূত্র মতে, শেয়ারবাজারের প্রধান দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে ফোর্সড সেল করে পতন আরো ত্বরান্বিত করেছে।
শীর্ষ পর্যায়ের এক মার্চেন্ট ব্যাংকার এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ফোর্স সেল গোপনে সব হাউসেই হচ্ছে। এটা বন্ধ করার কোনো আইন নেই। এসইসি মানবিক দিক বিবেচনা করে ফোর্স সেল না করার আদেশ দিয়েছে। কিন্তু হাউসগুলোর নিজেদের ব্যবসা ধরে রাখতে হলে এটা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন বাজারের ঊর্ধ্বগতিই ফোর্স সেল বন্ধ করার একমাত্র নিয়ামক।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেড় হাজার বিনিয়োগকারী শেয়ারের মূল্য মূলধনের নিচে চলে আসায় ফোর্সড সেলের শিকার হয়েছে। এদের বেশির ভাগই ব্রোকারেজ হাউসের বিনিয়োগকারী।
গত রবিবার দরপতনের সময় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে ফোর্সড সেলের ঘটনা ঘটেছে। ফোর্সড সেলের শিকার হ্যাক সিকিউরিটিজের ১০ বিনিয়োগকারী রবিবার দুপুরে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) গিয়ে লিখিতভাবে ফোর্সড সেলের ঘটনা ও এর সঙ্গে জড়িত রিসার্চ অ্যানালিস্ট মাহবুব সরোয়ারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দাখিল করেন। তাঁরা হলেন দেলোয়ার হোসেন, কাজী নাজমুল হক, মোস্তফা কামাল, তাইজুল ইসলাম, আবু নসরত জাভিউল্লাহ, কামরুজ্জামান, হাসান মেহেদী ও কামরুল হোসেন। হ্যাক সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আহমেদ আলী হাওলাদারের বিও অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩ নভেম্বর সিএমসি কামালের ২২ হাজার শেয়ার সেল করেছে, যার বাজারমূল্য আট লাখ ৯ হাজার ৯৩০ টাকা। কাশেম ড্রাই সেল ১৫ হাজার, যার বাজার মূল্য ৯ লাখ ৮২ হাজার ৬৫ টাকা। মোট ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৯৯৫ টাকা ফোর্সড সেল হয়েছে। এর মূলধন ছিল ৫০ লাখ টাকা। বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা ঋণ ছিল। এখন মূলধন ৩২ লাখ টাকা। ঋণ ৩১ লাখ টাকা। আহমেদ আলী জমি বিক্রি করে গত ২৭ অক্টোবর সাড়ে সাত লাখ টাকা জমা দেন। ওই টাকা জমা হওয়ার পরও ফোর্সড সেলের শিকার হন তিনি। বর্তমানে পুরোপুরি ফোর্সড সেল হলে তাঁর এক লাখ টাকা থাকবে। আহমেদ আলী হওলাদারের বিও অ্যাকাউন্ট নম্বর ৬৭৫৪০৫। ক্লায়েন্ট কোড-৫৪০৪৩। এসইসিতে জমা হওয়া অভিযোগ প্রসঙ্গে এসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, ফোর্সড সেল সংক্রান্ত একটি অভিযোগ এসইসিতে জমা হয়েছে।
এর আগেও এএনএফ ম্যানেজমেন্ট, লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ফোর্সড সেলের অভিযোগ ওঠে। গত সোমবার ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে এসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের কম্পানি রয়েছে ৩০টি। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২১, বীমা কম্পানি রয়েছে ৪৪ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে ৩৭টি। এসব প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ৩৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক। ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের সদস্য ২৩৮টি ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে ২২০টির রয়েছে স্টক ডিলার লাইসেন্স। এরা সবাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় থাকলেও নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, স্টক ব্রোকারদের ভূমিকার কারণেই বাজারের আজ এ অবস্থা। তাদের প্ররোচনায়ই মানুষ টাকা ধার করে না বুঝে শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। আজ তারা পুঁজি হারালেও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কোনো লোকসান নেই। '৯৬-তেও তারা লাভবান হয়েছে, এবারও।
চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে বিনিয়োগ করার মতো এখন আর কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসের সক্ষমতা নেই। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য নতুন করে ফ্রেশ ফান্ড সরবরাহ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ দিতে পারে। এটা হতে পারে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি বা ২০ কোটি টাকার মতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতি যে ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে বর্তমানে তারও প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারের ওপর। সে কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের।
শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজেদুল ইসলাম বলেন, এখন আর ফোর্সড দেওয়ার অবস্থায় নেই হাউসগুলো। কেন না, যে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকার বিপরীতে আরো এক লাখ টাকা মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার শেয়ারের দাম ৮০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। তার অ্যাকাউন্ট থেকে ফোর্সড সেল দিলে হাউস আরো ২০ হাজার টাকা পাবে ওই বিনিয়োগকারীর কাছে। কিন্তু নিজের এক লাখ টাকা হারিয়ে ওই বিনিয়োগকারীর আরো ২০ হাজার টাকা জোগাড় করার উপায় নেই। তিনি বলেন, ব্রোকারেজ ডিলারদেরও আর টাকা জোগাড় করার ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, একটি ব্রোকার ডিলারের এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষমতা ছিল। সব ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে যে বিনিয়োগ সক্ষমতা রয়েছে, একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সেই পরিমাণ ক্ষমতা ছিল। বর্তমানে হয়তো তাদের সে ক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, এ সময় লাইফ ইনস্যুরেন্সগুলোর খাতের পড়ে থাকা অলস টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মার্জিন ঋণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার ওপর। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া ঋণের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকার ওপর। এই পরিমাণ টাকা শেয়ারবাজারে আটকে রয়েছে। অব্যাহত দরপতনে এই টাকা বের করারও সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে।
পুঁজিবাজারে বিপর্যয় সামাজিক অপরাধ বাড়িয়ে তুলছে
No comments