দাম বাড়িয়েও দুধ পাচ্ছে না প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান by বরুন রায়
দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দুধ বিক্রি না করতে পেরে বছর খানেক আগেও খামারিরা ক্ষোভে-দুঃখে মহাসড়কে দুধ ঢেলে দিয়েছিলেন। অথচ সেই প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খামারিদের এখন দারুণ কদর। দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও প্রতিষ্ঠানগুলো পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চল থেকে প্রত্যাশিত দুধ সংগ্রহ করতে পারছে না। খামারগুলোতে দুধের উৎপাদন কমে যাওয়াতেই এ অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদামতো দুধ সংগ্রহ করতে না পারায় দেশের বিভিন্ন এলাকার দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত তরল দুধের সরবরাহ কমে গেছে।
অন্যদিকে দুধের দাম বেশি পেয়েও খামারিদের মুখে হাসি নেই। কারণ গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে দুধের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বেশি দামেও তাঁদের তেমন লাভ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা নিয়ে গড়ে ওঠা দেশের প্রধান দুগ্ধ উৎপাদনকারী অঞ্চলে লক্ষাধিক গরুর খামার রয়েছে।
প্রচুর পরিমাণে দুধ উৎপাদিত হওয়ায় এ অঞ্চল থেকে মিল্কভিটা, আড়ং দুধ, প্রাণ, ফার্মফ্রেস, অ্যামোমিল্ক, আফতাব, রংপুর ডেইরিসহ কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ লিটার তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে বিক্রি করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনা কমিয়ে দেওয়ায় প্রায় তিন বছর ধরে দুগ্ধশিল্পে সংকট চলে আসছিল।
কিন্তু এখন সে অবস্থা কাটতে শুরু করেছে। মাস তিনেক হলো প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খামারি ও দুধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো সংগ্রহমূল্য কয়েক দফায় প্রতি লিটার তিন থেকে সাড়ে চার টাকা বাড়িয়েছে। তার পরও তারা খামারিদের কাছ থেকে চাহিদামতো দুধ পাচ্ছে না।
প্রাণ দুধের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (বেড়া) রফিকুল ইসলাম জানান, গত এপ্রিল-মে মাসে তাঁরা পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চল থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক লিটার দুধ সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। অথচ এখন এর পরিমাণ কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার লিটারে। তিনি জানান, মাস তিনেক আগেও প্রতি লিটার ৩৪ দশমিক ২৫ টাকা দরে দুধ সংগ্রহ করা হতো। অথচ এখন দাম বাড়িয়ে ৩৮ টাকা ৬৫ পয়সা করা হলেও প্রত্যাশিত দুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
আড়ং দুধের (ব্র্যাক) বেড়া শীতলীকরণ ও সংগ্রহ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বকুল হোসেন বলেন, ‘আমরা এ কেন্দ্রে স্বাভাবিক অবস্থায় চার হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করতাম। অথচ এখন সর্বোচ্চ আড়াই হাজার লিটার সংগ্রহ করতে পারছি। ’
এদিকে খামারিরা জানান, বছরের এ সময়টায় কাঁচা ঘাস থাকে না বলে দুধের উৎপাদন এমনিতেই কমে যায়। তবে এবার উৎপাদন কমেছে সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে খামারিরা মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে গো-খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়াকেই দায়ী করছেন। খামারিরা জানান, গো-খাদ্যের উচ্চমূল্যের জন্য গাভিগুলোকে প্রয়োজনীয় খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর এতে উৎপাদন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম হচ্ছে।
বেড়া পৌর এলাকার আতাইকোলা গ্রামের খামারি আবদুর রউফ বলেন, ‘আমার খামারে নয়টা গাভি। আগে প্রতিদিন গড়ে দেড় শ লিটার দুধ পেতাম। অথচ এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ লিটারে। গরুর খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে প্রতি লিটার ৪০ টাকার ওপরে দিলেও আমাদের পোষায় না।’
বেড়ার পেঁচাকোলা গ্রামের খামারি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘দুধের দাম বাড়লে গো-খাদ্যের দামও বেড়ে যায়। তা ছাড়া এখন তারা (দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান) দাম বেশি দিলেও দুধের মৌসুমে দাম ও সংগ্রহের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।’
No comments