কম দামে বিক্রি হচ্ছে পচা ইলিশ-ডিমওয়ালা মাছ ধরা বন্ধ করা যায়নি by শেখ শাফায়েত হোসেন

বাজারে ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি। এগুলোর অধিকাংশই ডিমওয়ালা। দামও প্রায় অর্ধেক। ডিমওয়ালা মাছ ধরার ওপর জারীকৃত নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে একসঙ্গে এত ইলিশের উপস্থিতিতে ক্রেতাদের মনে দেখা দিয়েছে সংশয়। তাদের অভিযোগ, কয়েক দিন আগের পচা ইলিশ বিক্রি করতেই দাম কম নেওয়া হচ্ছে।গতকাল রাজধানীর কয়েকটি মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। দাম যাচাই করে দেখা গেছে, ঢাকার পলাশী, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজারের প্রতিটি মাছের দোকানে ইলিশ মাছ প্রতি পিছ ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।


ঢাকার মাছ বাজারগুলোয় খুচরা পর্যায়ে ইলিশ মাছ কেজি দরে বিক্রি না হলেও ওজন করে দেখা গেছে, এক কেজি ইলিশের দাম পড়ছে ৪০০-৫০০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ তাঁরা বিক্রি করেছেন ৮০০-৯০০ টাকায়।
ভরা মৌসুমে ইলিশ প্রজনন ও ডিমওয়ালা মাছের সংরক্ষণে এ বছর সরকারিভাবে ৬ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ঈলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই সঙ্গে ওই সময় সারা দেশে ইলিশ মজুদ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ইলিশ ধরে মজুদ করে রাখেন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকে গত চার দিনে বাজারে এসব ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ বেশি বলেই বাজারে ইলিশের দাম অনেক কমে গেছে। কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা জিয়াউর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় অনেক ব্যবসায়ী মাছ ধরে মজুদ করে রেখেছিলেন। সেসব মাছই এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে পচা ইলিশের উপস্থিতি রয়েছে জানিয়ে জিয়া বলেন, 'এসব ইলিশ পাঁচ থেকে সাত দিন আগে ধরা হয়েছে। ঠিকমতো মজুদও করা হয়নি। এ কারণে মাছগুলো প্রায় পচে গেছে। কিন্তু কম দামে পেয়ে অনেকেই এসব ইলিশ কিনছেন।' ইলিশ মজুদের জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এসব পচা মাছ খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।'
পাইকারি মাছের আড়তদাররা জানান, অন্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাজারে ইলিশের সরবরাহ কয়েকগুণ বেশি। নাম গোপন রাখার শর্তে কারওয়ান বাজারের ডিআইটি মার্কেটের এক আড়তদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একশ্রেণীর অসাধু মৎসজীবী প্রতি রাতে গোপনে ইলিশ ধরেছেন। হিমাগারে ১১ দিন ধরে এসব মাছ মজুদ করে রেখেছিলেন তাঁরা। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুদকৃত মাছ বাজারে ছেড়েছেন। এসব মাছের মান খুবই খারাপ।' হিমাগারে ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় এসব মাছ প্রায় পচে গেছে বলে জানান তিনি।
গতকাল মাছ কিনতে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন একটি আউটসোর্সিং ফার্মের চাকরিজীবী ইশতিয়াক আহমেদ। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, 'ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আদতে কোনো লাভ হয়নি; বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সঠিক নজরদারির অভাবে গোপনে গোপনে ঠিকই মাছ ধরেছেন মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা। সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় পচে গেছে মজুদকৃত অসংখ্য ডিমওয়ালা ইলিশ। দাম কমিয়ে এসব ইলিশ এখন ক্রেতাদের গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।'
নিষেধাজ্ঞা জারি করেও ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধ করা যায়নি। এর কারণ হিসেবে মৎস্য আইনের সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করেন মৎস্য অধিদপ্তরের জাটকা সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক জাহিদ হাবিব। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ ধরার অপরাধে মৎস্য আইনে এক থেকে ছয় মাস জেল ও সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তিনি বলেন, 'লাখ লাখ টাকার মাছ ধরার অপরাধের তুলনায় এই শাস্তি একেবারেই নগণ্য। এ কারণে মৎস্যজীবীদের এ ধরনের অপরাধ থেকে কোনোভাবেই ফেরানো যাচ্ছে না।'
তিনি জানান, এ বছর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাছ ধরার অপরাধে ৪৭৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা থেকে আদায় হয়েছে ১২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। আটক করা হয়েছে ১২৪টি মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা, দুই কোটি মিটার জাল ও ২১৪ টন ইলিশ।
জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় মৎস্য আইনের সংশোধন প্রয়োজন উল্লেখ করে জাহিদ হাবিব বলেন, 'ইলিশ নিধনে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির বিধান করা হলে আর কেউই এই আইন অমান্য করার সহস পাবেন না।' এই আইনের সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.