আমৃত্যু লড়াইয়ে ছিলেন
জন্মস্থান সার্তেই জীবনের শেষ লড়াই লড়ে গেলেন কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি। আত্মসমর্পণ নয়, বিদেশে পালিয়ে যাওয়া নয় বরং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশের মাটিতেই লড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। গতকাল লিবিয়ার জাতীয় অন্তর্বর্তী পরিষদ (এনটিসি) গাদ্দাফিকে হত্যার খবর নিশ্চিত করে। ৪২ বছর ধরে লিবিয়ার একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন তিনি। আক্রমণাত্মক কথাবার্তা, ভিন্ন রকম জীবনযাপন, একগুঁয়েমি আর পোশাকের জমকালো রুচির কারণে বিশেষভাবে পরিচিত এই নেতা (৬৯) বরাবরই পশ্চিমা দেশের চক্ষুশূল ছিলেন। তিনিই ছিলেন আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা শাসক।
বিদেশ সফরের সময় উজ্জ্বল চুলের ইউক্রেনীয় সেবিকাদের সাহচর্য, অস্ত্রধারী নারী দেহরক্ষী এবং হোটেলের পরিবর্তে বেদুইন তাঁবু গেড়ে অবস্থান_সব কিছুই তাঁকে দিয়েছে একটা স্বতন্ত্র ও বৈচিত্র্যময় পরিচয়। গত আগস্টে বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে প্রবল লড়াইয়ে ত্রিপোলির পতন ঘটার পরও তিনি অস্ত্র ছেড়ে দেননি। অডিও বার্তায় বারবার লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন।
১৯৪২ সালে লিবিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের সার্তে এক যাযাবর গোত্রে গাদ্দাফির জন্ম। বেনগাজি ইউনিভার্সিটিতে ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও মাঝপথে তা বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজা ইদ্রিসকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন গাদ্দাফি। ভিন্নমতাবলম্বীদের কঠোরভাবে দমন করে খনিজ তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ার শাসনক্ষমতা ধরে রাখেন তিনি।
ক্ষমতা দখলের পর তিনি ইসলামঘেঁষা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্যবদ্ধ প্যান-আরব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দেওয়া তথ্যমতে, গাদ্দাফি শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য হাজার হাজার মানুষকে অবৈধভাবে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং বন্দি করে রাখেন। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে আরব বিশ্বের তৎকালীন বিবদমান দুই প্রতিপক্ষ মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সইয়ের ব্যাপারে তাদের মুখোমুখি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গাদ্দাফি।
তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে অত্যন্ত কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আরব দেশ তাঁর সমালোচনা করে। এ সময় থেকে তাঁর প্যান-আরব নীতি পরিবর্তিত হয়ে প্যান-আফ্রিকা পরিকল্পনায় রূপ নেয়। তাঁর ঐক্যবদ্ধ আফ্রিকা গঠনের উদ্যোগই পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান ইউনিয়নের জন্ম দেয়।
পশ্চিমা বিশ্ব অবশ্য বরাবরই গাদ্দাফিকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখে আসছে। কলাম্বিয়ার রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলাম্বিয়া (ফার্ক) এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইরিশ রিপাবলিকান আর্মিকে (আইআরএ) সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
১৯৮৬ সালে জার্মানির বার্লিনে একটি নাইটক্লাবে বোমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই সেনা নিহতের ঘটনায় লিবিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ সময় গাদ্দাফিকে 'পাগলা কুকুর'ও বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। সেনা হত্যার প্রতিশোধ নিতে ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান। এ হামলায় গাদ্দাফির পালিত মেয়েসহ ৩৫ জন লিবীয় নিহত হওয়ার দাবি করে ত্রিপোলি।
১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবির আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের প্যান অ্যাম এয়ারলাইনসের একটি জাম্বো জেট বিমানে বোমা বিস্ফোরণে ২৭০ জন নিহতের ঘটনায় গাদ্দাফির জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পরিকল্পনা করার জন্য অভিযুক্ত হন এক লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বহু বছর ধরে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। ফলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় লিবিয়াকে।
২০০৩ সালে গাদ্দাফি প্রশাসন বিমানে ওই বোমা হামলার দায় স্বীকার করে নেয়। নিহতদের স্বজনদের এক কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হন গাদ্দাফি। ফলে তাঁর প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ লিবিয়ার ওপর থেকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ফলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে লিবিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ায় লিবিয়ার অর্থনীতি বেশ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
তবে ২০০৯ সালে অভিযুক্ত লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে গাদ্দাফির পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে যান গাদ্দাফি। তিনি এ অধিবেশনে ১৫ মিনিটের বদলে দেড় ঘণ্টা ভাষণ দেন, জাতিসংঘের নীতিমালার অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তুলনা করেন।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফির শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় গণ-আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু ওই গণ-আন্দোলনকে তেমন আমল না দিয়ে কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা চালান গাদ্দাফি। পরবর্তী সময়ে এ গণ-আন্দোলন গণবিদ্রোহে রূপ নেয়, যা দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। ন্যাটো জোট বিদ্রোহীদের সমর্থনে এগিয়ে আসে।
সূত্র : এএফপি, দ্য টেলিগ্রাফ।
১৯৪২ সালে লিবিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের সার্তে এক যাযাবর গোত্রে গাদ্দাফির জন্ম। বেনগাজি ইউনিভার্সিটিতে ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও মাঝপথে তা বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজা ইদ্রিসকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন গাদ্দাফি। ভিন্নমতাবলম্বীদের কঠোরভাবে দমন করে খনিজ তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ার শাসনক্ষমতা ধরে রাখেন তিনি।
ক্ষমতা দখলের পর তিনি ইসলামঘেঁষা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্যবদ্ধ প্যান-আরব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দেওয়া তথ্যমতে, গাদ্দাফি শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য হাজার হাজার মানুষকে অবৈধভাবে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং বন্দি করে রাখেন। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে আরব বিশ্বের তৎকালীন বিবদমান দুই প্রতিপক্ষ মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সইয়ের ব্যাপারে তাদের মুখোমুখি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গাদ্দাফি।
তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে অত্যন্ত কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আরব দেশ তাঁর সমালোচনা করে। এ সময় থেকে তাঁর প্যান-আরব নীতি পরিবর্তিত হয়ে প্যান-আফ্রিকা পরিকল্পনায় রূপ নেয়। তাঁর ঐক্যবদ্ধ আফ্রিকা গঠনের উদ্যোগই পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান ইউনিয়নের জন্ম দেয়।
পশ্চিমা বিশ্ব অবশ্য বরাবরই গাদ্দাফিকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখে আসছে। কলাম্বিয়ার রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলাম্বিয়া (ফার্ক) এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইরিশ রিপাবলিকান আর্মিকে (আইআরএ) সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
১৯৮৬ সালে জার্মানির বার্লিনে একটি নাইটক্লাবে বোমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই সেনা নিহতের ঘটনায় লিবিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ সময় গাদ্দাফিকে 'পাগলা কুকুর'ও বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। সেনা হত্যার প্রতিশোধ নিতে ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান। এ হামলায় গাদ্দাফির পালিত মেয়েসহ ৩৫ জন লিবীয় নিহত হওয়ার দাবি করে ত্রিপোলি।
১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবির আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের প্যান অ্যাম এয়ারলাইনসের একটি জাম্বো জেট বিমানে বোমা বিস্ফোরণে ২৭০ জন নিহতের ঘটনায় গাদ্দাফির জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পরিকল্পনা করার জন্য অভিযুক্ত হন এক লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বহু বছর ধরে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। ফলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় লিবিয়াকে।
২০০৩ সালে গাদ্দাফি প্রশাসন বিমানে ওই বোমা হামলার দায় স্বীকার করে নেয়। নিহতদের স্বজনদের এক কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হন গাদ্দাফি। ফলে তাঁর প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ লিবিয়ার ওপর থেকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ফলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে লিবিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ায় লিবিয়ার অর্থনীতি বেশ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
তবে ২০০৯ সালে অভিযুক্ত লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে গাদ্দাফির পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে যান গাদ্দাফি। তিনি এ অধিবেশনে ১৫ মিনিটের বদলে দেড় ঘণ্টা ভাষণ দেন, জাতিসংঘের নীতিমালার অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তুলনা করেন।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফির শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় গণ-আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু ওই গণ-আন্দোলনকে তেমন আমল না দিয়ে কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা চালান গাদ্দাফি। পরবর্তী সময়ে এ গণ-আন্দোলন গণবিদ্রোহে রূপ নেয়, যা দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। ন্যাটো জোট বিদ্রোহীদের সমর্থনে এগিয়ে আসে।
সূত্র : এএফপি, দ্য টেলিগ্রাফ।
No comments