গাদ্দাফি নিহত-জীবিত ধরা পড়েছিলেন by নুরুল ইসলাম
অবশেষে জন্মশহর সিরতেতেই সাঙ্গ হলো লিবিয়ার ৪২ বছরের শাসক কর্নেল মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির জীবন। রাজধানী ত্রিপোলির ৪৬৩ কিলোমিটার পূর্বের এই উপকূলীয় শহরে গতকাল লিবিয়ার বর্তমান শাসক ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এনটিসি) যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন আরব শৌর্যবীর্যের প্রতীক এই নেতা। আহত অবস্থায় জীবিতই গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। গ্রেফতারের কিছুক্ষণ পর এনটিসি যোদ্ধাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এর মাধ্যমে লিবিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হলো তার ৪২ বছরের শাসনের।
আর কর্নেল গাদ্দাফির জন্মশহর দখলের মাধ্যমে ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪০ বর্গকিলোমিটারের গোটা লিবিয়া চলে এসেছে এনটিসির আওতায়। এনটিসির তথ্যমন্ত্রী আবদেল হাফিজ গোগা লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজিতে গতকাল স্থানীয় সময় বিকেলে গাদ্দাফির নিহত হওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে তুমুল যুদ্ধের পর গাদ্দাফির শেষ আশ্রয়স্থল সিরতে দখলের ঘোষণা দেন এনটিসির কমান্ডাররা। গতকালের এই যুদ্ধে গাদ্দাফির ছেলে মোতাসিম ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবু বকর ইউনুসও নিহত হন। এছাড়া গাদ্দাফির শাসনের অন্যতম কর্ণধার তার ছেলে সাইফ আল ইসলাম এনটিসি যোদ্ধাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বলে অসমর্থিত সূত্রে বলা হয়েছে। গাদ্দাফির স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। গত ২২ আগস্ট ত্রিপোলির বাব আল আজিজিয়া প্রাসাদ থেকে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর জন্মশহর সিরতেতে থেকেই এনটিসি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন কর্নেল গাদ্দাফি। ২২ আগস্টের পর আত্মগোপনে থেকে দফায় দফায় অডিওবার্তায় জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত এই শাসক। এই লড়াইয়ে তার সঙ্গে শামিল হতে লিবিয়ার জনগণের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। কথা রেখেছেন আরব এই নেতা। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেই দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার নিহত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে
এনটিসির তথ্যমন্ত্রী আবদেল হাফিজ গোগা বলেন, 'আমরা বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, বিপ্লবী যোদ্ধাদের হাতে গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এর মাধ্যমে লিবিয়ায় স্বৈরশাসন ও একনায়কত্বের অবসান হলো। ভাগ্যে যা লেখা ছিল গাদ্দাফির তাই হয়েছে।' এদিকে গাদ্দাফির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার ৫ ঘণ্টার মধ্যেও এ ব্যাপারে সরকারিভাবে মুখ খোলেনি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ন্যাটো অভিযানের প্রধান শরিক যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের এই নীরবতাকে রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। পরে বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১২টায় হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়, গাদ্দাফি যে নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে নিশ্চিত। পরে রাত ১২টার পর হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা এটাকে লিবিয়া বিপ্লবের প্রথম ধাপের পরিসমাপ্তি বলে অভিহিত করে বলেন, দেশটিতে এবার দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পালা। বিবৃতিতে ওবামা আরব বিশ্বের লৌহমানব ও স্বৈরশাসকদের হুশিয়ার করে বলেন, তাদের পতনও অনিবার্য।
ধরা পড়েছিলেন জীবিত
আল-অ্যারাবিয়া ও আলজাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও টেপে দেখা যায়, গ্রেফতার হওয়ার পর গাদ্দাফিকে জীবিত অবস্থায় হাঁটতে দেখা গেছে। এ সময় এনটিসি যোদ্ধারা তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তার মাথা, মুখমণ্ডল ও কাঁধ ছিল রক্তাক্ত। দৃশ্যত তিনি কাঁদার চেষ্টা করছিলেন। ভিডিও টেপে দেখা যায়, মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফটরত গাদ্দাফিকে ঘিরে আছে এনটিসি যোদ্ধারা। এক যোদ্ধা গাদ্দাফির মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে রাখে। তবে গাদ্দাফিকে টেনেহিঁচড়ে একটি গাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়ার আগে এই যোদ্ধা গুলি ছুড়েছে কি-না সেটা স্পষ্ট নয়। এ সময় এনটিসির যোদ্ধাদের গাদ্দাফি বলেন, 'আমাকে গুলি করো না, আমাকে গুলি করো না।' এনটিসি কর্মকর্তা আবদেল মজিদ এমলেগতা একটি গাড়িবহরে গাদ্দাফি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় ন্যাটোর বিমান হামলায় তিনি উভয় পায়ে এবং মাথায় আঘাত পান। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। গাদ্দাফিকে নিজ হাতে ধরার দাবি করেন এনটিসির এক যোদ্ধা। তিনি বলেন, ধরা পড়ার সময় গাদ্দাফির হাতে একটি সোনালি পিস্তল ছিল। এনটিসির সামরিক কমান্ডার আবদুল হাকিম বেলহাজ স্বীকার করেন, গাদ্দাফি আহত অবস্থায় জীবিতই ধরা পড়েন। পরে যোদ্ধাদের হেফাজতে তার মৃত্যু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্রিটেন বলেছে, তারা কোনো অবস্থায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করে না। গাদ্দাফির মৃত্যুর জন্য তাদের কোনো মায়াকান্নাও নেই। টেলিভিশনে আটক গাদ্দাফির জীবিত অবস্থার ছবি দেখে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বলেন, 'আমরা কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই সমর্থন করি না। কিন্তু গাদ্দাফির জন্য আমাদের কোনো দুঃখ নেই।'
মৃত্যুর সংবাদ যেভাবে এলো
গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকেলে বিবিসি, আলজাজিরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রথম খবর প্রচার করে, এনটিসি যোদ্ধাদের হাতে লিবিয়ার উপকূলীয় শহর সিরতের পতন হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই জানানো হয়, গাদ্দাফি গ্রেফতার হয়েছেন। তারও কিছুক্ষণ পর আলজাজিরা টেলিভিশন প্রথম খবর প্রচার করে, গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। বিবিসিসহ বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যম তখনও সংশয় প্রকাশ করে আসছিল, আসলেই গাদ্দাফি গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়েছেন কি-না। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনও তখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারছিল না গাদ্দাফি আসলেই গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়েছেন কি-না। পরে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে এনটিসির তথ্যমন্ত্রীর বরাতে সিএনএন, আলজাজিরা, এএফপিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম নিশ্চিত করে, গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করা গাদ্দাফির রক্তাক্ত মৃতদেহের ছবি দেখানো হয়। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিনিধি জানান, সিরতে শহরে খাকি পোশাক পরা একটি মৃতদেহের চারদিকে ভিড় জমিয়েছে এনটিসি যোদ্ধারা। মৃতদেহের মুখ থেকে ঘাড় পর্যন্ত পুরোটাই রক্তাক্ত। এরপর এনটিসির যোদ্ধারা মৃতদেহটি টেনেহিঁচড়ে একটি পিকআপে তুলে নিয়ে যায়। মোবাইল ফোনে তোলা একটি স্থির ছবি প্রকাশ করেছে এএফপি। গাদ্দাফির মৃতদেহের প্রথম ছবি এটাই। এএফপির ফটোগ্রাফার ফিলিপ দেসমাজেস ছবিটি তুলেছেন। রক্তাক্ত ব্যক্তি যে গাদ্দাফি, ছবি দেখে তা সহজেই চেনা যায়। যদিও ছবিটি দেখে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না, গাদ্দাফি তখন জীবিত ছিলেন, নাকি এটাই মৃত গাদ্দাফির ছবি। বীভৎস ছবিটিতে দেখা যায়, গাদ্দাফির গোটা পোশাক রক্তাক্ত। এনটিসি যোদ্ধারা জানায়, গাদ্দাফিকে ধরা হয়েছে সিরতে শহরের একটি বড় কংক্রিটের পাইপের ভেতর থেকে। এনটিসির তথ্যমন্ত্রী জানান, 'সিরতে থেকে আমাদের কমান্ডাররা গাদ্দাফির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। সেখানে তুমুল লড়াইয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় আমাদের যোদ্ধারা প্রথমে তাকে আটক করে, পরে তার মৃত্যু হয়।' এনটিসির সামরিক প্রধান খলিফা থাফতার এএফপিকে বলেন, লিবিয়ার নতুন সরকারের যোদ্ধাদের হাতে গাদ্দাফির শেষ আশ্রয়স্থল সিরতের পতন ঘটেছে। সেখানে তুমুল লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন গাদ্দাফি। তার পক্ষে যারা লড়াই করেছেন তারাও হয় নিহত কিংবা গ্রেফতার হয়েছেন। এদিকে গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবরে লিবিয়ায় এনটিসির সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করে। উৎসব আনন্দে মেতে ওঠে ত্রিপোলি, বেনগাজি, মিসরাতাসহ বিভিন্ন শহরের জনগণ। গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবরকে লিবিয়ায় স্বৈরশাসনের যবনিকাপাত বলে অভিহিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব।
আরও যারা নিহত
মোহাম্মদ লেইস নামে এনটিসির আরেক কমান্ডার সিরতে থেকে জানান, 'গাদ্দাফির ছেলে মোতাসিমও সিরতেতে নিহত হয়েছেন। আমরা তাকে মৃতই পেয়েছি।' এ ছাড়া নিহত হয়েছেন গাদ্দাফির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবুবকর ইউনুস জাবার। এ দু'জনের মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে মিসরাতায় পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকরা জানান, আবুবকর ইউনুস সর্বশেষ লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। এনটিসির সামরিক প্রধান খলিফা হাফতার ত্রিপোলিতে এএফপিকে বলেন, গোটা লিবিয়া এখন গাদ্দাফিমুক্ত। গতকাল স্থানীয় সময় অপরাহ্নের দিকে সিরতের প্রধান সড়ক দিয়ে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত বাজিয়ে বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে এনটিসি যোদ্ধাদের পিকআপ, ট্রাক অতিক্রম করতে দেখা যায়। এ সময় যোদ্ধারা 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলে গোটা শহর। তাদের সামরিক যানে আরও বাজানো হচ্ছিল নতুন জাতীয় সঙ্গীত এবং অন্যান্য বিপ্লবী গান। এরই মধ্যে লিবিয়ার নতুন শাসক এনটিসির তরফে গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবর যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। তবে গাদ্দাফি সমর্থক এক টেলিভিশন চ্যানেলের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, গাদ্দাফি নিহত হননি। আল-লিবিয়া নামে ওই চ্যানেলটির ওয়েবসাইটে বলা হয়, ন্যাটোর চামচাদের পরিবেশিত এ খবর ভিত্তিহীন। ওয়েবসাইটটিতে দাবি করা হয়, গাদ্দাফি মুক্ত জীবনে আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। লিবিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তবে লিবিয়ার এনটিসি নেতারা বারবার বলে আসছিলেন, তারা লিবিয়ার মাটিতেই গাদ্দাফির বিচার করতে চান। গত ২২ আগস্ট ত্রিপোলি দখলের পর এনটিসির তরফে গাদ্দাফিকে জীবিত কিংবা মৃত ধরে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
লিবিয়া মুক্তির ঐতিহাসিক
ঘোষণা আজ
লিবিয়ার বর্তমান শাসক এনটিসির প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আবদেল জলিল আজ গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসন থেকে লিবিয়ার মুক্ত হওয়ার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেবেন। একই সঙ্গে গাদ্দাফি আমলে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডেরও বর্ণনা তুলে ধরবেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় ত্রিপোলিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এনটিসির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল এ তথ্য জানান। মাহমুদ জিবরিল আরও বলেন, গাদ্দাফিসহ 'অশুভ ব্যক্তিদের' এই প্রিয় দেশটি থেকে ধ্বংস নিশ্চিত হওয়ার পর লিবিয়ার জনগণের এখন নতুন দেশ গঠনের পালা। ন্যাটোও আজ লিবিয়ায় তাদের ৬ মাসের সামরিক অভিযানের সমাপ্তির ঘোষণা দিতে পারে।
১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার পশ্চিমা মদদপুষ্ট রাজা ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখনকার তরুণ কর্নেল গাদ্দাফি দেশটির শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালের ৭ জুন সিরতে শহরের নিকটবর্তী এক বেদুইন তাঁবুতে তার জন্ম।
'স্বৈরাচারের পতন'
কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির নিহত হওয়ার ঘটনাকে এক স্বৈরাচারের পতন বলে অভিহিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেছেন, লিবিয়া এখন পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে। এটাকে তিনি লিবিয়া বিপ্লবের প্রথম অধ্যায়ের সফল পরিসমাপ্তি বলে অভিহিত করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, গাদ্দাফির মৃত্যুর ঘটনা লিবিয়ার ঐতিহাসিক উত্তরণ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, গাদ্দাফির মৃত্যু এক স্বৈরশাসকেরই পতন। এর মাধ্যমে লিবিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলো। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাল জুঁপে বলেন, লিবিয়ার মুক্তিতে সহায়ক ভূমিকার জন্য ফ্রান্স গর্ববোধ করে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি বলেন, গাদ্দাফির মৃত্যুর মাধ্যমে লিবিয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটল। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গাদ্দাফির মৃত্যু এক স্বৈরাচারের পতনেরই নামান্তর। পোল্যান্ড বলেছে, গাদ্দাফির মৃত্যু বিশ্বের সব একনায়কের জন্য সতর্কবার্তা। চেকস্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী পিটার নেকাস বলেন, গাদ্দাফির মৃত্যু লিবিয়ার জন্য প্রতীকী মাইলফলক। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি এটাকে লিবিয়ার জন্য বড় পদক্ষেপ উল্লেখ করে দেশটির নতুন শাসকদের প্রতি গণতান্ত্রিক সংস্কার জোরদার করার আহ্বান জানান।
পেন্টাগনের বক্তব্য
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন বলেছে, সিরতে শহরের বাইরে একটি ছোট গাড়িবহরের ওপর ন্যাটোর বিমান হামলা হয়েছিল। ওই গাড়িবহরে গাদ্দাফি ছিলেন কি-না সেটা স্পষ্ট নয়। গাড়িবহরটিকে লিবিয়ার নিরীহ জনসাধারণের জন্য হুমকি মনে করা হয়েছিল। কারা ওই গাড়িবহরে ছিল তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ন্যাটোর ওই হামলায় মার্কিন জঙ্গি বিমান অংশ নিয়েছিল কি-না তাও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি পেন্টাগন মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জন কিবরি।
এনটিসির তথ্যমন্ত্রী আবদেল হাফিজ গোগা বলেন, 'আমরা বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, বিপ্লবী যোদ্ধাদের হাতে গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এর মাধ্যমে লিবিয়ায় স্বৈরশাসন ও একনায়কত্বের অবসান হলো। ভাগ্যে যা লেখা ছিল গাদ্দাফির তাই হয়েছে।' এদিকে গাদ্দাফির মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার ৫ ঘণ্টার মধ্যেও এ ব্যাপারে সরকারিভাবে মুখ খোলেনি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ন্যাটো অভিযানের প্রধান শরিক যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের এই নীরবতাকে রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। পরে বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১২টায় হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়, গাদ্দাফি যে নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে নিশ্চিত। পরে রাত ১২টার পর হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা এটাকে লিবিয়া বিপ্লবের প্রথম ধাপের পরিসমাপ্তি বলে অভিহিত করে বলেন, দেশটিতে এবার দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পালা। বিবৃতিতে ওবামা আরব বিশ্বের লৌহমানব ও স্বৈরশাসকদের হুশিয়ার করে বলেন, তাদের পতনও অনিবার্য।
ধরা পড়েছিলেন জীবিত
আল-অ্যারাবিয়া ও আলজাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও টেপে দেখা যায়, গ্রেফতার হওয়ার পর গাদ্দাফিকে জীবিত অবস্থায় হাঁটতে দেখা গেছে। এ সময় এনটিসি যোদ্ধারা তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তার মাথা, মুখমণ্ডল ও কাঁধ ছিল রক্তাক্ত। দৃশ্যত তিনি কাঁদার চেষ্টা করছিলেন। ভিডিও টেপে দেখা যায়, মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফটরত গাদ্দাফিকে ঘিরে আছে এনটিসি যোদ্ধারা। এক যোদ্ধা গাদ্দাফির মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে রাখে। তবে গাদ্দাফিকে টেনেহিঁচড়ে একটি গাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়ার আগে এই যোদ্ধা গুলি ছুড়েছে কি-না সেটা স্পষ্ট নয়। এ সময় এনটিসির যোদ্ধাদের গাদ্দাফি বলেন, 'আমাকে গুলি করো না, আমাকে গুলি করো না।' এনটিসি কর্মকর্তা আবদেল মজিদ এমলেগতা একটি গাড়িবহরে গাদ্দাফি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় ন্যাটোর বিমান হামলায় তিনি উভয় পায়ে এবং মাথায় আঘাত পান। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। গাদ্দাফিকে নিজ হাতে ধরার দাবি করেন এনটিসির এক যোদ্ধা। তিনি বলেন, ধরা পড়ার সময় গাদ্দাফির হাতে একটি সোনালি পিস্তল ছিল। এনটিসির সামরিক কমান্ডার আবদুল হাকিম বেলহাজ স্বীকার করেন, গাদ্দাফি আহত অবস্থায় জীবিতই ধরা পড়েন। পরে যোদ্ধাদের হেফাজতে তার মৃত্যু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্রিটেন বলেছে, তারা কোনো অবস্থায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করে না। গাদ্দাফির মৃত্যুর জন্য তাদের কোনো মায়াকান্নাও নেই। টেলিভিশনে আটক গাদ্দাফির জীবিত অবস্থার ছবি দেখে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বলেন, 'আমরা কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই সমর্থন করি না। কিন্তু গাদ্দাফির জন্য আমাদের কোনো দুঃখ নেই।'
মৃত্যুর সংবাদ যেভাবে এলো
গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকেলে বিবিসি, আলজাজিরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রথম খবর প্রচার করে, এনটিসি যোদ্ধাদের হাতে লিবিয়ার উপকূলীয় শহর সিরতের পতন হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই জানানো হয়, গাদ্দাফি গ্রেফতার হয়েছেন। তারও কিছুক্ষণ পর আলজাজিরা টেলিভিশন প্রথম খবর প্রচার করে, গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। বিবিসিসহ বিভিন্ন পশ্চিমা গণমাধ্যম তখনও সংশয় প্রকাশ করে আসছিল, আসলেই গাদ্দাফি গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়েছেন কি-না। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনও তখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারছিল না গাদ্দাফি আসলেই গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়েছেন কি-না। পরে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে এনটিসির তথ্যমন্ত্রীর বরাতে সিএনএন, আলজাজিরা, এএফপিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম নিশ্চিত করে, গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করা গাদ্দাফির রক্তাক্ত মৃতদেহের ছবি দেখানো হয়। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিনিধি জানান, সিরতে শহরে খাকি পোশাক পরা একটি মৃতদেহের চারদিকে ভিড় জমিয়েছে এনটিসি যোদ্ধারা। মৃতদেহের মুখ থেকে ঘাড় পর্যন্ত পুরোটাই রক্তাক্ত। এরপর এনটিসির যোদ্ধারা মৃতদেহটি টেনেহিঁচড়ে একটি পিকআপে তুলে নিয়ে যায়। মোবাইল ফোনে তোলা একটি স্থির ছবি প্রকাশ করেছে এএফপি। গাদ্দাফির মৃতদেহের প্রথম ছবি এটাই। এএফপির ফটোগ্রাফার ফিলিপ দেসমাজেস ছবিটি তুলেছেন। রক্তাক্ত ব্যক্তি যে গাদ্দাফি, ছবি দেখে তা সহজেই চেনা যায়। যদিও ছবিটি দেখে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না, গাদ্দাফি তখন জীবিত ছিলেন, নাকি এটাই মৃত গাদ্দাফির ছবি। বীভৎস ছবিটিতে দেখা যায়, গাদ্দাফির গোটা পোশাক রক্তাক্ত। এনটিসি যোদ্ধারা জানায়, গাদ্দাফিকে ধরা হয়েছে সিরতে শহরের একটি বড় কংক্রিটের পাইপের ভেতর থেকে। এনটিসির তথ্যমন্ত্রী জানান, 'সিরতে থেকে আমাদের কমান্ডাররা গাদ্দাফির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। সেখানে তুমুল লড়াইয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় আমাদের যোদ্ধারা প্রথমে তাকে আটক করে, পরে তার মৃত্যু হয়।' এনটিসির সামরিক প্রধান খলিফা থাফতার এএফপিকে বলেন, লিবিয়ার নতুন সরকারের যোদ্ধাদের হাতে গাদ্দাফির শেষ আশ্রয়স্থল সিরতের পতন ঘটেছে। সেখানে তুমুল লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন গাদ্দাফি। তার পক্ষে যারা লড়াই করেছেন তারাও হয় নিহত কিংবা গ্রেফতার হয়েছেন। এদিকে গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবরে লিবিয়ায় এনটিসির সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করে। উৎসব আনন্দে মেতে ওঠে ত্রিপোলি, বেনগাজি, মিসরাতাসহ বিভিন্ন শহরের জনগণ। গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবরকে লিবিয়ায় স্বৈরশাসনের যবনিকাপাত বলে অভিহিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব।
আরও যারা নিহত
মোহাম্মদ লেইস নামে এনটিসির আরেক কমান্ডার সিরতে থেকে জানান, 'গাদ্দাফির ছেলে মোতাসিমও সিরতেতে নিহত হয়েছেন। আমরা তাকে মৃতই পেয়েছি।' এ ছাড়া নিহত হয়েছেন গাদ্দাফির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবুবকর ইউনুস জাবার। এ দু'জনের মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে মিসরাতায় পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকরা জানান, আবুবকর ইউনুস সর্বশেষ লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। এনটিসির সামরিক প্রধান খলিফা হাফতার ত্রিপোলিতে এএফপিকে বলেন, গোটা লিবিয়া এখন গাদ্দাফিমুক্ত। গতকাল স্থানীয় সময় অপরাহ্নের দিকে সিরতের প্রধান সড়ক দিয়ে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত বাজিয়ে বিজয়সূচক 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে এনটিসি যোদ্ধাদের পিকআপ, ট্রাক অতিক্রম করতে দেখা যায়। এ সময় যোদ্ধারা 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলে গোটা শহর। তাদের সামরিক যানে আরও বাজানো হচ্ছিল নতুন জাতীয় সঙ্গীত এবং অন্যান্য বিপ্লবী গান। এরই মধ্যে লিবিয়ার নতুন শাসক এনটিসির তরফে গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবর যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। তবে গাদ্দাফি সমর্থক এক টেলিভিশন চ্যানেলের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, গাদ্দাফি নিহত হননি। আল-লিবিয়া নামে ওই চ্যানেলটির ওয়েবসাইটে বলা হয়, ন্যাটোর চামচাদের পরিবেশিত এ খবর ভিত্তিহীন। ওয়েবসাইটটিতে দাবি করা হয়, গাদ্দাফি মুক্ত জীবনে আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। লিবিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তবে লিবিয়ার এনটিসি নেতারা বারবার বলে আসছিলেন, তারা লিবিয়ার মাটিতেই গাদ্দাফির বিচার করতে চান। গত ২২ আগস্ট ত্রিপোলি দখলের পর এনটিসির তরফে গাদ্দাফিকে জীবিত কিংবা মৃত ধরে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
লিবিয়া মুক্তির ঐতিহাসিক
ঘোষণা আজ
লিবিয়ার বর্তমান শাসক এনটিসির প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আবদেল জলিল আজ গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসন থেকে লিবিয়ার মুক্ত হওয়ার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেবেন। একই সঙ্গে গাদ্দাফি আমলে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডেরও বর্ণনা তুলে ধরবেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় ত্রিপোলিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এনটিসির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল এ তথ্য জানান। মাহমুদ জিবরিল আরও বলেন, গাদ্দাফিসহ 'অশুভ ব্যক্তিদের' এই প্রিয় দেশটি থেকে ধ্বংস নিশ্চিত হওয়ার পর লিবিয়ার জনগণের এখন নতুন দেশ গঠনের পালা। ন্যাটোও আজ লিবিয়ায় তাদের ৬ মাসের সামরিক অভিযানের সমাপ্তির ঘোষণা দিতে পারে।
১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার পশ্চিমা মদদপুষ্ট রাজা ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখনকার তরুণ কর্নেল গাদ্দাফি দেশটির শাসনভার গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালের ৭ জুন সিরতে শহরের নিকটবর্তী এক বেদুইন তাঁবুতে তার জন্ম।
'স্বৈরাচারের পতন'
কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির নিহত হওয়ার ঘটনাকে এক স্বৈরাচারের পতন বলে অভিহিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেছেন, লিবিয়া এখন পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে। এটাকে তিনি লিবিয়া বিপ্লবের প্রথম অধ্যায়ের সফল পরিসমাপ্তি বলে অভিহিত করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, গাদ্দাফির মৃত্যুর ঘটনা লিবিয়ার ঐতিহাসিক উত্তরণ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, গাদ্দাফির মৃত্যু এক স্বৈরশাসকেরই পতন। এর মাধ্যমে লিবিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলো। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাল জুঁপে বলেন, লিবিয়ার মুক্তিতে সহায়ক ভূমিকার জন্য ফ্রান্স গর্ববোধ করে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি বলেন, গাদ্দাফির মৃত্যুর মাধ্যমে লিবিয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটল। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গাদ্দাফির মৃত্যু এক স্বৈরাচারের পতনেরই নামান্তর। পোল্যান্ড বলেছে, গাদ্দাফির মৃত্যু বিশ্বের সব একনায়কের জন্য সতর্কবার্তা। চেকস্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী পিটার নেকাস বলেন, গাদ্দাফির মৃত্যু লিবিয়ার জন্য প্রতীকী মাইলফলক। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি এটাকে লিবিয়ার জন্য বড় পদক্ষেপ উল্লেখ করে দেশটির নতুন শাসকদের প্রতি গণতান্ত্রিক সংস্কার জোরদার করার আহ্বান জানান।
পেন্টাগনের বক্তব্য
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন বলেছে, সিরতে শহরের বাইরে একটি ছোট গাড়িবহরের ওপর ন্যাটোর বিমান হামলা হয়েছিল। ওই গাড়িবহরে গাদ্দাফি ছিলেন কি-না সেটা স্পষ্ট নয়। গাড়িবহরটিকে লিবিয়ার নিরীহ জনসাধারণের জন্য হুমকি মনে করা হয়েছিল। কারা ওই গাড়িবহরে ছিল তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ন্যাটোর ওই হামলায় মার্কিন জঙ্গি বিমান অংশ নিয়েছিল কি-না তাও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি পেন্টাগন মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জন কিবরি।
No comments