দুবাইয়ে হত্যার দায়ে বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আদালত এক বাংলাদেশিকে হত্যার দায়ে অন্য এক বাংলাদেশিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। গত বুধবার আদালত এ রায় দেন বলে কূটনৈতিক সূত্র জানালেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তির নাম প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করে। তাঁকে দূতাবাস থেকে প্রাপ্য সব সেবা ও সাহায্য দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশির বয়স ২৩ বছর, পেশায় গাড়িচালক। চাকরি দেওয়ার জন্য আর্থিক লেনদেনবিষয়ক বিরোধের জের ধরে তিনি অপর এক বাংলাদেশিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা করেন বলে দুবাইয়ের ফৌজদারি আদালতের রায়ে বলা হয়েছে।


মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি অপর এক বাংলাদেশিকে করনিকের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৬ হাজার দিরহাম (প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা) নিয়েছিলেন। কিন্তু করনিকের চাকরির বদলে নির্মাণ শ্রমিকের চাকরি দেওয়ায় ওই ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হন এবং অর্থ ফেরত চান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ ছিল।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাংলাদেশি গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিরোধ মীমাংসার জন্য অপর বাংলাদেশিকে নির্জন একটি স্থানে দেখা করতে বলেন। পাওনাদার বাংলাদেশি ওই স্থানে এলে তিনি তাঁকে পিটিয়ে আহত করে ফ্রিজিংসুবিধাযুক্ত কাভার্ড ভ্যানে চার ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে রাখেন। এরপর কাভার্ড ভ্যানের দরজা খুলে তিনি তাঁকে জীবিত দেখতে পান এবং সে সময় তিনি তাঁকে বুকে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে এবং গলা কেটে হত্যা করেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাংলাদেশি আদালতকে বলেছেন, হত্যার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। মাতাল অবস্থায় মারপিটের সময় কখন যে কী হয়ে গেছে তা তিনি বুঝতেই পারেননি। অন্যদিকে স্থানীয় পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর ওই বাংলাদেশি বলেছিলেন, গালি দেওয়ায় তিনি লাথি মেরেছিলেন। এরপর ওই বাংলাদেশি অচেতন হয়ে গেলে মারা গেছেন ভেবে তাঁকে কাভার্ড ভ্যানে রেখে দেন।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাংলাদেশিকে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সব ধরনের আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও তিনি পাবেন। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে 'রক্তমূল্য' দিয়ে ছয় বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে এনেছে। শারজায় এক পাকিস্তানিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হওয়ার পর তাঁদের এলাকার সংসদ সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট আদালতের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে আইন অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে আদালত নির্ধারিত এক কোটি টাকা 'রক্তমূল্য' দেওয়ার পর ওই ছয় বাংলাদেশি মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুদান হিসেবে তাঁদের এক কোটি টাকা দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য গত ৭ অক্টোবর সৌদি আরবের রিয়াদে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে আট বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তাঁদের রক্ষা করা যায়নি। জানা গেছে, সৌদি আরবের রিয়াদ অঞ্চলে আরো চার বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ রয়েছে। এ ছাড়া জর্দানেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এক বাংলাদেশি বাদশাহর কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.