আফ্রিকার ‘রাজার রাজা’ গাদ্দাফির করুণ বিদায়
মুয়াম্মার গাদ্দাফি। প্রকৃত নাম মুয়াম্মার মোহাম্মদ আবু মিনায়ার আল-গাদ্দাফি। কর্নেল গাদ্দাফি নামেই সর্বাধিক পরিচিত। নিজেকে জাহির করতেন ‘দ্য ব্রাদার লিডার’, কখনো ‘গাইড অব দ্য রেভল্যুশন’, কখনো আবার ‘কিং অব দ্য কিংস অব আফ্রিকা’ নামে। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী নয়, নিজেকে লিবিয়ার নেতা হিসেবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন তিনি। তবে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গাদ্দাফি মানেই একগুঁয়ে ও জেদি ‘স্বৈরশাসক’ আর সন্ত্রাসবাদী।
৪২ বছর ধরে শক্ত হাতে লিবিয়া শাসনকারী সেই ‘রাজার রাজা’ গাদ্দাফির জীবনের শেষ পরিণতি হলো অত্যন্ত করুণ। রাজধানী ত্রিপোলির পতনের পর প্রায় তিন মাস ধরে আত্মগোপনে থাকা গাদ্দাফি গতকাল বৃহস্পতিবার ধরা পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের অনুগত যোদ্ধাদের হাতে। যোদ্ধাদের দাবি অনুযায়ী, গুরুতর আহত অবস্থায় ধরা পড়ার পর তিনি গতকালই মারা গেছেন।
গাদ্দাফির জন্ম উপকূলীয় সিরত্ এলাকায়, ১৯৪২ সালে। বাবা-মা ছিলেন বেদুইন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। শিক্ষাজীবনে ভূগোল বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন বেনগাজি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ আর শেষ করতে পারেননি।
১৯৬৯ সালে ২৭ বছরের তরুণ গাদ্দাফি সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল। অল্প কিছু সহযোগী নিয়ে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে হটিয়ে দেন রাজা ইদ্রিসকে। ক্ষমতা দখলের পরই গাদ্দাফি নিজেকে আরব বিশ্বের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর হন। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভাবাদর্শ গ্রহণ করে দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। মিসরের নেতা জামাল আবদেল নাসের এবং তাঁর আরব সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুরাগী ছিলেন তিনি। লিবিয়া, মিসর ও সিরিয়াকে নিয়ে একটি ফেডারেশন গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১৯৭৭ সালে তিনি দেশের নাম বদলে ‘গ্রেট সোশ্যালিস্ট পপুলার লিবিয়ান আরব জামাহিরিয়াহ’ করেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে তাঁর বিরোধিতা শুরু করেন সমালোচকেরা। সুশীল সমাজ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠে। গত শতকের সত্তরের দশকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের দায়ে ত্রিপোলি, বেনগাজিসহ অনেক শহরে ছাত্রদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেন গাদ্দাফি। আশির দশকে বিরোধীরা অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। গাদ্দাফির সবচেয়ে ভয়ংকর নৃশংসতা ছিল সম্ভবত আবু সালিম কারাগারের এক হাজার ২০০ বন্দীকে হত্যা করা। নিরস্ত্র ওই বন্দীদের তিন ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হত্যা করা হয়।
১৯৭৮ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে মিসরের শান্তিচুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল গাদ্দাফির। এ ঘটনার পর আরব বিশ্বের অনেক দেশ তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তখন তিনি নজর দেন আফ্রিকার দিকে। তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্র করার। তাতে ব্যর্থ হলেও আফ্রিকান ইউনিয়ন গঠনে তাঁর অসামান্য ভূমিকা ছিল। ২০০৮ সালে আফ্রিকান শাসকদের এক সম্মেলনে গাদ্দাফিকে ‘আফ্রিকার রাজাদের রাজা’ ঘোষণা করা হয়।
তবে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গাদ্দাফি মানে ‘স্বৈরশাসক’ ও ‘সন্ত্রাসবাদী’। ১৯৮৬ সালে বার্লিনে একটি নাইট ক্লাবে বোমা হামলার জন্য দায়ী করা হয় লিবিয়াকে। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ‘মধ্যপ্রাচ্যের পাগলা কুকুর’ হিসেবে অভিহিত করেন গাদ্দাফিকে। এ ছাড়া ১৯৮৮ সালে লকারবি বিমান হামলার জন্য দায়ী করা হয় গাদ্দাফিকে। পরে ওই হামলায় নিহত ২৭০ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে গণ-অভ্যুত্থানে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলী ও মিসরের হোসনি মোবারকের পতনে উদ্বুদ্ধ হয়ে গাদ্দাফিকে হটাতে রাজপথে নেমে পড়ে লিবিয়ার জনগণ। দীর্ঘ আট মাসের আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে লিবিয়া এখন গাদ্দাফির স্বৈরশাসনমুক্ত।
৪২ বছর ধরে শক্ত হাতে লিবিয়া শাসনকারী সেই ‘রাজার রাজা’ গাদ্দাফির জীবনের শেষ পরিণতি হলো অত্যন্ত করুণ। রাজধানী ত্রিপোলির পতনের পর প্রায় তিন মাস ধরে আত্মগোপনে থাকা গাদ্দাফি গতকাল বৃহস্পতিবার ধরা পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের অনুগত যোদ্ধাদের হাতে। যোদ্ধাদের দাবি অনুযায়ী, গুরুতর আহত অবস্থায় ধরা পড়ার পর তিনি গতকালই মারা গেছেন।
গাদ্দাফির জন্ম উপকূলীয় সিরত্ এলাকায়, ১৯৪২ সালে। বাবা-মা ছিলেন বেদুইন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। শিক্ষাজীবনে ভূগোল বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন বেনগাজি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ আর শেষ করতে পারেননি।
১৯৬৯ সালে ২৭ বছরের তরুণ গাদ্দাফি সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল। অল্প কিছু সহযোগী নিয়ে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে হটিয়ে দেন রাজা ইদ্রিসকে। ক্ষমতা দখলের পরই গাদ্দাফি নিজেকে আরব বিশ্বের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর হন। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভাবাদর্শ গ্রহণ করে দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। মিসরের নেতা জামাল আবদেল নাসের এবং তাঁর আরব সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুরাগী ছিলেন তিনি। লিবিয়া, মিসর ও সিরিয়াকে নিয়ে একটি ফেডারেশন গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ১৯৭৭ সালে তিনি দেশের নাম বদলে ‘গ্রেট সোশ্যালিস্ট পপুলার লিবিয়ান আরব জামাহিরিয়াহ’ করেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে তাঁর বিরোধিতা শুরু করেন সমালোচকেরা। সুশীল সমাজ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠে। গত শতকের সত্তরের দশকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের দায়ে ত্রিপোলি, বেনগাজিসহ অনেক শহরে ছাত্রদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেন গাদ্দাফি। আশির দশকে বিরোধীরা অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। গাদ্দাফির সবচেয়ে ভয়ংকর নৃশংসতা ছিল সম্ভবত আবু সালিম কারাগারের এক হাজার ২০০ বন্দীকে হত্যা করা। নিরস্ত্র ওই বন্দীদের তিন ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হত্যা করা হয়।
১৯৭৮ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে মিসরের শান্তিচুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল গাদ্দাফির। এ ঘটনার পর আরব বিশ্বের অনেক দেশ তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তখন তিনি নজর দেন আফ্রিকার দিকে। তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্র করার। তাতে ব্যর্থ হলেও আফ্রিকান ইউনিয়ন গঠনে তাঁর অসামান্য ভূমিকা ছিল। ২০০৮ সালে আফ্রিকান শাসকদের এক সম্মেলনে গাদ্দাফিকে ‘আফ্রিকার রাজাদের রাজা’ ঘোষণা করা হয়।
তবে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গাদ্দাফি মানে ‘স্বৈরশাসক’ ও ‘সন্ত্রাসবাদী’। ১৯৮৬ সালে বার্লিনে একটি নাইট ক্লাবে বোমা হামলার জন্য দায়ী করা হয় লিবিয়াকে। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ‘মধ্যপ্রাচ্যের পাগলা কুকুর’ হিসেবে অভিহিত করেন গাদ্দাফিকে। এ ছাড়া ১৯৮৮ সালে লকারবি বিমান হামলার জন্য দায়ী করা হয় গাদ্দাফিকে। পরে ওই হামলায় নিহত ২৭০ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে গণ-অভ্যুত্থানে তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলী ও মিসরের হোসনি মোবারকের পতনে উদ্বুদ্ধ হয়ে গাদ্দাফিকে হটাতে রাজপথে নেমে পড়ে লিবিয়ার জনগণ। দীর্ঘ আট মাসের আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে লিবিয়া এখন গাদ্দাফির স্বৈরশাসনমুক্ত।
No comments