৪৪, ৬১, ৯৪......২২৫

ক্রিকেট নাকি গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। ওয়ানডেতে এই অনিশ্চয়তা আরো বেশি। দলে তারার ছড়াছড়ি থাকলেও একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। সেদিন রাজা হয়ে যায় অন্য কেউ। এমন রাজা হওয়ার দিন খুব বেশি আসেনি বাংলাদেশের, তবে মাঝে মাঝে তো আসেই। এই যেমন কদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তারা বেঁধে ফেলল ৬১ রানে। এ বছর ১০০ রানের কমে অল আউট হওয়ার মাত্র পঞ্চম ঘটনা এটা। ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশ ১০০ রানের নিচে প্রতিপক্ষকে বেঁধে রাখতে পেরেছে মাত্র তিনবার। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট-ওয়ানডে খেলা সব দলের সর্বনিম্ন রানের ইনিংসগুলো নিয়েই আজকের এই আয়োজন।অস্ট্রেলিয়া : সূর্য ডুবেছে অস্ট্রেলিয়ান সাম্রাজ্যের।


শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ম্যাথু হেইডেন, অ্যাডাম গিলক্রিস্টদের অবসরে টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে তারা নেমে গেছে চার নম্বরে। ওয়ানডের মুকুটটা অবশ্য হারায়নি। টানা তিন বিশ্বকাপ জয়ের পর এবার শিরোপা হারালেও ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের এভারেস্টেই আছে মাইকেল ক্লার্কের দল। তাদের বিপক্ষে ১৯ ওয়ানডের মধ্যে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। ২০০৫-এ কার্ডিফের ঐতিহাসিক সেই ম্যাচটিতেও অবশ্য তারা করেছিল ৫ উইকেটে ২৪৯। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কম রানের ইনিংস ৫ উইকেটে ১৯৮। ২০০৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ডারউইনে সেবারই প্রথম বাংলাদেশের সঙ্গে ২০০ রানের নিচে থেমে গিয়েছিল তারা। কৃত্রিম পিচে (প্রতিস্থাপিত পিচ) খেলা সেই ম্যাচে অবশ্য পরে বাংলাদেশ অল আউট হয়ে যায় ১২৫-এ। এ ছাড়া ২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার সিঙ্ ে২২ ওভারে নেমে আসা অ্যান্টিগার ম্যাচটিতে হাবিবুল বাশারের দলের ১০৪ রানের চ্যালেঞ্জ কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৩.৫ ওভারে টপকে পন্টিংরা করেছিলেন ১০৬। রান তাড়া করতে নেমে এটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন, তবে সেটা মোটেই অগৌরবের নয়, কৃতিত্বের। ওয়ানডে ইতিহাসে মাত্র চারবারই ১০০ রানের নিচে অল আউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তাদের সবচেয়ে কম রানের ইনিংসটি ৭০ রানের। ১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ড আর ১৯৮৬-তে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুবার ৭০ রানে থেমেছিল তাদের ইনিংস।
ইংল্যান্ড : ব্রিটিশ সিংহদের দুবারই খাঁচা-বন্দি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুই দলের ১৫ ওয়ানডের মধ্যে গত বছর জুলাইয়ে ব্রিস্টলের পর এবারের বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে জয় পেয়েছে তাদের বিপক্ষে। চট্টগ্রামের সেই ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ২২৫ রানে গুটিয়ে যাওয়াটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন স্কোর। জবাবে ১ ওভার আর ২ উইকেট হাতে রেখে জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ১০০ রানের নিচে ইংল্যান্ড অল আউট হয়েছে পাঁচবার। এর মধ্যে ২০০১ সালে ম্যানচেস্টারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৬ রান তাদের সর্বনিম্ন।
ভারত : ১৯৮৩ ও ২০১১-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৩ ওয়ানডেতে হেরেছে দুবার। সেই দুই ম্যাচের একটিতে, পোর্ট অব স্পেনে ২০০৭ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে ১৯১ রানে গুটিয়ে যাওয়াটাই বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সর্বনিম্ন। সৌরভ গাঙ্গুলীর ১২৯ বলে ৬৬, যুবরাজের ৫৮ বলে ৪৭-এ করা ১৯১ রানের চ্যালেঞ্জ হাবিবুল বাশারের দল ৪৮.৩ ওভারে পেরিয়ে যায় ৫ উইকেট হারিয়ে। ওয়ানডেতে ভারতের সর্বনিম্ন স্কোর ৫৪। শারজায় ২০০০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই লজ্জা পেতে হয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর দলকে।
নিউজিল্যান্ড : টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ২১ ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচটি জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। গত বছরের অক্টোবরে দুই দলের সর্বশেষ খেলা ওয়ানডেতেই আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় কিউইরা। বাংলাদেশের ১৭৪ রানের জবাবে ১৭১-এ অল আউট হয়ে 'বাংলাওয়াশ'ও হতে হয়েছিল ডেনিয়েল ভেট্টোরির দলকে। ওয়ানডেতে কিউইরা ১০০ রানের নিচে অল আউট হয়েছে ছয়বার। ১৯৮৬ সালে শারজায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৪ রানে গুটিয়ে যাওয়াটাই তাদের সর্বনিম্ন।
পাকিস্তান : ২৬ ওয়ানডের লড়াইয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়েছে মাত্র একবার। নর্দাম্পটনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে আমিনুল ইসলামের দলের ২২৩ রানের জবাবে ওয়াসিম আকরামরা ৪৪.৩ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৬১-তে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই তাদের সবচেয়ে কম রানের ইনিংস। ১৯৯৩ সালে কেপটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়াটা ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন।
দক্ষিণ আফ্রিকা : দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ১৪ ওয়ানডের লড়াইয়ে মাত্র একবারই হারানোর স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। গায়ানায় ২০০৭ বিশ্বকাপ সুপার এইট পর্বের ম্যাচটিতে হাবিবুল বাশারের দলের ২৫১ রানের জবাবে ৪৮.৪ ওভারে তারা অল আউট হয় ১৮৪ রানে। এটাই তাদের সর্বনিম্ন রান বাংলাদেশের বিপক্ষে। ১৯৯৩-এ সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৯ রানে গুটিয়ে যাওয়াটা ওয়ানডেতে তাদের সর্বনিম্ন। শ্রীলঙ্কা : লঙ্কান সিংহদের ২৯ ওয়ানডের লড়াইয়ে পোষ মানানো গেছে দুবার। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মোহাম্মদ আশরাফুলের দলের বিপক্ষে ৩০.৩ ওভারে ১৪৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল মাহেলা জয়াবর্ধনেরা, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। ২৩.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে পাওয়া জয়টা লঙ্কানদের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার সর্বনিম্ন স্কোর ৫৫। ১৯৮৬ সালে শারজায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৪৮ রানের জবাব দিতে নেমে এই লজ্জার রেকর্ডটা গড়েছিল তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ : বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। সেটাও আবার তাদেরই মাঠে! ২০০৯ সালে তিন ম্যাচের সেই সিরিজেও কিন্তু ১৫০ রানের নিচে অল আউট হয়নি দ্বিতীয় সারির দল খেলানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে ৬১ রানে গুটিয়ে যাওয়াটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। এতে বিশ্বকাপে ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার প্রতিশোধও নেয় বাংলাদেশ। এই ৬১ আবার ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর আগে ২০০৪ সালে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল ৫৪-তে।
জিম্বাবুয়ে : ওয়ানডেতে ৫৬ ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ৩০টি জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের সর্বনিম্ন ইনিংসটাও তাদেরই। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে সাকিবের দলের বিপক্ষে ২৪.৫ ওভারে মাত্র ৪৪ রানে অল আউট হয় জিম্বাবুয়ে। এটা আবার ওয়ানডে ইতিহাসেরই পঞ্চম সর্বনিম্ন ইনিংস। সবচেয়ে কম রানের ইনিংসটাও জিম্বাবুয়ের। ২০০৪ সালে হারারেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৩৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা।
আইসিসির সহযোগী দেশ : জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০০ রানের নিচে ইনিংস থেমেছিল কেবল বারমুডার। ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ২১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে তারা করেছিল ৯৪। এ ছাড়া কেনিয়া ২০০৬ সালে নাইরোবিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অল আউট হয়েছিল ১১৮ রানে। ওয়ানডে খেলা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে স্কটল্যান্ডের সর্বনিম্ন স্কোর ১৩২ (২০০৬, চট্টগ্রাম), নেদারল্যান্ডসের ১৬০ (২০১১, চট্টগ্রাম), কানাডার ১৮০ (২০০৩, ডারবান), হংকংয়ের ১০৫ (২০০৪, কলম্বো), আয়ারল্যান্ডের ১৬২ (২০০৮, ঢাকা) ও আরব আমিরাতের ২০৪ (২০০৮, লাহোর)।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বনিম্ন রান

No comments

Powered by Blogger.