'দল কিছু পেলে আমিও কিছু পাব'

কাঁধে কাঁধ রেখে ক্যারিবীয় দল যখন মাঠে গোল হয়ে দাঁড়ায়, তখন আর কাউকে না চেনা গেলেও একজনকে ঠিকই চিনতে পারেন ফটোগ্রাফাররা। তিনি দেবেন্দ্র বিশু। শারীরিক গঠন এবং গৌর বর্ণের কারণে ক্যারিবীয়দের আর সবার চেয়ে একটু যেন আলাদা। এমনকি তার নামের মধ্যেও কিছুটা বাঙালিয়ানা আছে। বাংলাদেশে খুঁজলেও বিশু নামের অনেককেই পাওয়া যাবে। আপনার নামটি কিন্তু বাঙালিদের মতো? মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথেই কথাটি শুনে দাঁড়িয়ে গেলেন। 'আমার নামের অর্থ জানেন। বিশু মানে ওয়ার্ল্ড। এখানেও কি ওয়ার্ল্ড নামের কেউ আছে?' লাজুক বিশু আর উত্তরটি শোনার অপেক্ষায় থাকলেন না। বোলিং সেশন শেষে ব্যাটিং করতে হবে।


প্যাড পরার তাড়া আছে জানিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে গেলেন। হালকা-পাতলা গড়নের এই লাজুক ছেলেটির মধ্যেই যে লেগ স্পিনের মারণাস্ত্র রয়েছে, তা এতদিনে অনেকেই জেনে গেছেন। মাত্র নয় মাস হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বে 'বিশু' নামটি এসেছে। অথচ এরই মধ্যে আইসিসি এই ছেলের হাতে বছরের উদীয়মান ক্রিকেটারের খেতাব দিয়ে দিয়েছে। মাত্র ৫ টেস্টেই ২১ উইকেট নিয়েছেন। শিকারের সবগুলোই হয় ভারত, না হয় পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। উপমহাদেশের স্পিনবান্ধব ব্যাটসম্যানদের তিনি ঘায়েল করেছেন ক্যারিবীয় মাটিতে। আজই উপমহাদেশে তার টেস্ট অভিষেক হতে যাচ্ছে। একটু কি এক্সাইটেড? 'ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছিলাম ঢাকায়। বিশ্বকাপের সময় আমার ম্যাচ খেলা হয়নি কিন্তু বাংলাদেশ আমার জন্য একটু অন্যরকম অবশ্যই।'
ওয়ানডে সিরিজে অবশ্য অন্যরকম কিছু দেখাতে পারেননি বিশু। দুই ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট পেয়েছিলেন। টেস্টে কি আইসিসির বছরের সেরা প্রতিভাবান ক্রিকেটার পারবেন কিছু করে দেখাতে? প্রশ্নটি করা হয়েছিল ক্যারিবীয় অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিকে। উত্তরে তিনি বিশুর ওপর গোটা দলের একটি ভরসার কথাই বললেন। 'বিশু তো বেশ কয়েকদিন ধরেই লাল বলে অনুশীলন করছে। কেননা আমরা সবাই জানি, আগামী কয়েকদিন তাকে অনেকগুলো ওভার বোলিং করতে হবে।' বিশুকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে স্যামির মধ্যেও ভালোবাসা জড়ানো ছিল। আসলে এই দলটিতে বাবা হারানো ছেলের মতো ভালোবাসা পেয়ে থাকেন বিশু। কেননা ক্রিকেট বল হাতে ধরানোটা শিখিয়েছিলেন বিশুর বাবা। স্বপ্ন ছিল তার, একদিন গায়ানা ছাড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ডাক পাবে তার ছেলে; কিন্তু সেই ডাক যখন এলো, তখন বিশুর বাবা পরলোকগমন করেছেন। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারানো এই ছেলেকে বুকে-পিঠে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছিলেন বিশুর মা। তাই যখন আইসিসি থেকে পুরস্কার এলো, তখন সবার আগে বাবা-মাকেই স্মরণ করেন বিশু। 'এ পুরস্কার আমি আমার বাবাকে উৎসর্গ করছি। তিনিই আমার আদর্শ। এ পুরস্কার পাওয়ার পর আমার মা, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের মধ্যে দারুণ একটা উত্তেজনা ছিল। কিন্তু আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছিলাম। কারণ আমি জানি, এ পুরস্কার আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।' বাংলাদেশে আসার আগেও এ সিরিজ নিয়ে নিজের দায়িত্বের কথাই জানিয়েছিলেন। 'এই সিরিজে দলকে জেতানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। দলকে কিছু দিতে পারলেই মেনে নেব নিজেও কিছু পেয়েছি...।'

No comments

Powered by Blogger.