নোবেলজয়ী পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান - হাসিনা : ‘রনি মীরজাফর : রাস্তা থেকে এনে এমপি বানিয়েছি’ by এমরান হোসাইন
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। একজন নোবেল বিজয়ীও এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পদ্মা সেতু যাতে না হয়, তার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদবির করছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ রয়েছে ওই নোবেল বিজয়ীর—বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজ দলের সংসদ সদস্যদের সব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলেন, তার সরকারের সময়ই পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হবে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করে রোডমার্চ করছেন।
গতকাল সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই সময়ের আলোচিত ও বিতর্কিত এমপি গোলাম মাওলা রনিকে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, ও (রনি) মীরজাফর, ও শাস্তি পাবে।
সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে টানা তিন ঘণ্টার বৈঠকে সরকারদলীয় এমপিরা দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। বৈঠকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইসরাফিল আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আতিউর রহমান আতিক, আবদুল মান্নান, নুরুল ইসলাম সুজন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ টকশোতে আওয়ামী লীগের নেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি রনির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, অনেক জুনিয়র এমপি দেখা যাচ্ছে টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, যা দলের জন্য ক্ষতিকর। তাদের বক্তব্যে দলের চেইন অব কমান্ড থাকে না। আরও কয়েকজন সংসদ সদস্যও রনির সমালোচনা করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উত্তেজিত হয়ে বলেন, ওটা (রনি) একটা স্টুপিড। সব সময় সে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গেরও অভিযোগ তোলা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রনির শ্বশুরগোষ্ঠী বিএনপি করে। ও চিন্তা করছে পরে বিএনপিতে যোগ দেবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে শ্বশুররা তাকে শেল্টার দেবে। শেখ হাসিনা এ সময় আরও বলেন, এরা তো মীরজাফর। এদের বিচার হবে। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ওকে রাস্তা থেকে ধরে এনে এমপি বানিয়েছি। ওর মনে রাখা উচিত, সে একটি দলের নমিনেশন পেয়ে এমপি হয়েছে। দলের বিরুদ্ধে কথা বলার সময় চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। অবশ্য ওর কী যায়-আসে। ও ব্যবসা করে পার্থের (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ) সঙ্গে। নিজের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, পার্থের খালা প্রধানমন্ত্রী। এই কথাগুলো বলে বৈঠকে উপস্থিত শেখ হেলাল উদ্দিনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পার্থের শ্বশুর বড় নেতা। প্রধানমন্ত্রী সাবের হোসেনের নাম উল্লেখ করে বলেন, সেই চীন সফরে তো সাবের হোসেন চৌধুরীও ছিল। কই আমি তাকে তো মন্ত্রী বানাইনি।
উল্লেখ্য, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই’তে গত সোমবার রাতে প্রচারিত টকশো ‘তৃতীয় মাত্রা’য় পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি দাবি করেন, একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় জিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অফিসের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে রনির এ বিতর্কিত বক্তব্য ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। এ বক্তব্য নিয়ে ফেসবুক ও ব্লগে আলোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুকে অনুষ্ঠানের ভিডিওটি অসংখ্যবার ‘শেয়ার’ হয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত রনি তার আলোচিত বক্তব্যটি একজন সিনিয়র সাংবাদিকের কাছ থেকে শুনেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এসব বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে এরকম কিছু বলেননি। শি ওয়াজ স্মাইলিং অ্যান্ড জোকিং।
রনি আরও বলেন, তোফায়েল আহমেদ টকশোর বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে জানতে চান আমি এ রকম কথা বলেছি কি-না। আমি বলি, জ্বি আমি বলেছি।
সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদককে পাওয়া যায় না। সকাল-বিকাল-রাত কোনো সময়ই ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায় না। স্থানীয় নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা এসে না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে যান। এভাবে দল চলতে পারে না। মন্ত্রীরাও জেলা পর্যায়ে সফরে যান না বলে তিনি অভিযোগ করেন। ইসরাফিল আলম তার বক্তব্যে অবৈধ ভিওআইপি নিয়েও কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে বসেন। অবৈধ ভিওআইপি কেন হচ্ছে তা চিহ্নিত করুন।
সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক বলেন, সারের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের প্রান্তিক কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছে। এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো উচিত হয়নি। জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব সারের দাম বাড়ানো হয়নি। শুধু ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেটাও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি প্রসঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগাযোগমন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির বিষয়ে যে দুটি ডকুমেন্ট দিয়েছে তা বিএনপির আমলের। বিএনপির যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতির ডকুমেন্ট তারা দিয়েছে। আমাদের কোনো মন্ত্রীর নামে বিশ্বব্যাংকে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। যেখানে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য কোনো তহবিলই হয়নি, সেখানে দুর্নীতি হয় কী করে। তিনি বলেন, ধারণার ওপর কথা বললে তো হবে না। আমি বিশ্বব্যাংককে চিঠি দিয়েছি কোথায় কী দুর্নীতি হয়েছে তার তথ্য-প্রমাণ চেয়েছি। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর না পেলে আমি বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও দাতাগোষ্ঠীকে আহ্বান জানাব সেতুতে অর্থায়ন করতে। মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থায়ন নিয়ে কথা চলছে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ সময় জানান। বর্তমান সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলেন, এটা আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা। এ ওয়াদা পূরণ করতেই হবে। প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু আমরা নির্মাণ করব। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিতের পেছনে একটি চক্র কাজ করছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, একজন নোবেল বিজয়ী এর (পদ্মা সেতুর) বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
স্বাস্থ্য খাত ও শিক্ষক নিয়োগে দলীয় নেতাকর্মীদের চাকরি দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে বৈঠকে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গণশিক্ষামন্ত্রীর বিষোদগার করেন।
বৈঠকে রোডমার্চে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র জানিয়েছেন, নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদ যুদ্ধাপরাধী নয়, বিরোধীদলীয় নেতার এ বক্তব্যের জবাবে গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বক্তব্যে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজ ও অস্ত্র পাচার মামলার আসামিদের রক্ষা করা।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেনি বেগম জিয়ার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি মুক্তি যুদ্ধ না করে থাকে, তাহলে যে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল তাতে কারা ছিল। প্রবাসী সরকার কি জামায়াতের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল?
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সব সংসদ সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিরোধী দলের অপরাজনীতির জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশবাসীর কাছে তুলে ধরে জনমত গঠনের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্থপতি লুই আই কানের চিত্রিত সংসদ ভবনের মূল নকশা তুলে ধরেন। পরিবেশবাদীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংসদ ভবনের ভেতরে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও দুই হুইপের জন্য ৪টি ভবন নির্মাণের বিষয়টি মূল নকশায় থাকা সত্ত্বেও এটা নিয়ে পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হয়ে উঠেন। অথচ সংসদ ভবনের পাশে শাহ আজিজ ও খান এ সবুরের কবর ও জিয়ার মাজার এবং মাজারে যাতায়াতের স্টিলের ব্রিজ নকশাবহির্ভূতভাবে করা হয়েছে তা নিয়ে পরিবেশবাদীরা নিশ্চুপ রয়েছেন।
বৈঠকের পর চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ সাংবাদিকদের জানান, রেওয়াজ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সংসদীয় দলের বৈঠক হয়েছে। এখানে সমসাময়িত রাজনীতি, বিরোধী দলের ভূমিকা, সরকারের উন্নয়ন, নির্বাচনী ইশতেহারসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। বৈঠকে বিরোধী দলের সংসদে না আসার সমালোচনা করা হয়েছে। তারা সংসদে না এসে যুদ্ধারপরাধীদের রক্ষায় যুদ্ধ ঘোষণা করে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এটা নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার নামে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনে। বর্তমান সরকারের কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকে দুর্নীতির অভিযোগ যায়নি।
পদ্মা সেতুকে নিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ সেতু দেশের জনগণের। সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাই এটা নিয়ে বিশ্বমণ্ডলে নেতিবাচক বক্তব্য দেবেন না।
গতকাল সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই সময়ের আলোচিত ও বিতর্কিত এমপি গোলাম মাওলা রনিকে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, ও (রনি) মীরজাফর, ও শাস্তি পাবে।
সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে টানা তিন ঘণ্টার বৈঠকে সরকারদলীয় এমপিরা দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। বৈঠকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইসরাফিল আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আতিউর রহমান আতিক, আবদুল মান্নান, নুরুল ইসলাম সুজন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ টকশোতে আওয়ামী লীগের নেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি রনির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, অনেক জুনিয়র এমপি দেখা যাচ্ছে টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, যা দলের জন্য ক্ষতিকর। তাদের বক্তব্যে দলের চেইন অব কমান্ড থাকে না। আরও কয়েকজন সংসদ সদস্যও রনির সমালোচনা করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উত্তেজিত হয়ে বলেন, ওটা (রনি) একটা স্টুপিড। সব সময় সে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গেরও অভিযোগ তোলা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রনির শ্বশুরগোষ্ঠী বিএনপি করে। ও চিন্তা করছে পরে বিএনপিতে যোগ দেবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে শ্বশুররা তাকে শেল্টার দেবে। শেখ হাসিনা এ সময় আরও বলেন, এরা তো মীরজাফর। এদের বিচার হবে। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ওকে রাস্তা থেকে ধরে এনে এমপি বানিয়েছি। ওর মনে রাখা উচিত, সে একটি দলের নমিনেশন পেয়ে এমপি হয়েছে। দলের বিরুদ্ধে কথা বলার সময় চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। অবশ্য ওর কী যায়-আসে। ও ব্যবসা করে পার্থের (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ) সঙ্গে। নিজের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, পার্থের খালা প্রধানমন্ত্রী। এই কথাগুলো বলে বৈঠকে উপস্থিত শেখ হেলাল উদ্দিনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পার্থের শ্বশুর বড় নেতা। প্রধানমন্ত্রী সাবের হোসেনের নাম উল্লেখ করে বলেন, সেই চীন সফরে তো সাবের হোসেন চৌধুরীও ছিল। কই আমি তাকে তো মন্ত্রী বানাইনি।
উল্লেখ্য, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই’তে গত সোমবার রাতে প্রচারিত টকশো ‘তৃতীয় মাত্রা’য় পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি দাবি করেন, একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় জিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অফিসের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে রনির এ বিতর্কিত বক্তব্য ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। এ বক্তব্য নিয়ে ফেসবুক ও ব্লগে আলোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুকে অনুষ্ঠানের ভিডিওটি অসংখ্যবার ‘শেয়ার’ হয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত রনি তার আলোচিত বক্তব্যটি একজন সিনিয়র সাংবাদিকের কাছ থেকে শুনেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এসব বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে এরকম কিছু বলেননি। শি ওয়াজ স্মাইলিং অ্যান্ড জোকিং।
রনি আরও বলেন, তোফায়েল আহমেদ টকশোর বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে জানতে চান আমি এ রকম কথা বলেছি কি-না। আমি বলি, জ্বি আমি বলেছি।
সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদককে পাওয়া যায় না। সকাল-বিকাল-রাত কোনো সময়ই ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায় না। স্থানীয় নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা এসে না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে যান। এভাবে দল চলতে পারে না। মন্ত্রীরাও জেলা পর্যায়ে সফরে যান না বলে তিনি অভিযোগ করেন। ইসরাফিল আলম তার বক্তব্যে অবৈধ ভিওআইপি নিয়েও কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে বসেন। অবৈধ ভিওআইপি কেন হচ্ছে তা চিহ্নিত করুন।
সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক বলেন, সারের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের প্রান্তিক কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছে। এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো উচিত হয়নি। জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব সারের দাম বাড়ানো হয়নি। শুধু ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেটাও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি প্রসঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগাযোগমন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির বিষয়ে যে দুটি ডকুমেন্ট দিয়েছে তা বিএনপির আমলের। বিএনপির যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতির ডকুমেন্ট তারা দিয়েছে। আমাদের কোনো মন্ত্রীর নামে বিশ্বব্যাংকে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। যেখানে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য কোনো তহবিলই হয়নি, সেখানে দুর্নীতি হয় কী করে। তিনি বলেন, ধারণার ওপর কথা বললে তো হবে না। আমি বিশ্বব্যাংককে চিঠি দিয়েছি কোথায় কী দুর্নীতি হয়েছে তার তথ্য-প্রমাণ চেয়েছি। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর না পেলে আমি বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও দাতাগোষ্ঠীকে আহ্বান জানাব সেতুতে অর্থায়ন করতে। মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থায়ন নিয়ে কথা চলছে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ সময় জানান। বর্তমান সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলেন, এটা আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা। এ ওয়াদা পূরণ করতেই হবে। প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু আমরা নির্মাণ করব। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিতের পেছনে একটি চক্র কাজ করছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, একজন নোবেল বিজয়ী এর (পদ্মা সেতুর) বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
স্বাস্থ্য খাত ও শিক্ষক নিয়োগে দলীয় নেতাকর্মীদের চাকরি দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে বৈঠকে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গণশিক্ষামন্ত্রীর বিষোদগার করেন।
বৈঠকে রোডমার্চে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র জানিয়েছেন, নিজামী, সাঈদী ও মুজাহিদ যুদ্ধাপরাধী নয়, বিরোধীদলীয় নেতার এ বক্তব্যের জবাবে গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বক্তব্যে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজ ও অস্ত্র পাচার মামলার আসামিদের রক্ষা করা।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেনি বেগম জিয়ার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি মুক্তি যুদ্ধ না করে থাকে, তাহলে যে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল তাতে কারা ছিল। প্রবাসী সরকার কি জামায়াতের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল?
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দলীয় সব সংসদ সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিরোধী দলের অপরাজনীতির জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশবাসীর কাছে তুলে ধরে জনমত গঠনের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্থপতি লুই আই কানের চিত্রিত সংসদ ভবনের মূল নকশা তুলে ধরেন। পরিবেশবাদীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংসদ ভবনের ভেতরে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও দুই হুইপের জন্য ৪টি ভবন নির্মাণের বিষয়টি মূল নকশায় থাকা সত্ত্বেও এটা নিয়ে পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হয়ে উঠেন। অথচ সংসদ ভবনের পাশে শাহ আজিজ ও খান এ সবুরের কবর ও জিয়ার মাজার এবং মাজারে যাতায়াতের স্টিলের ব্রিজ নকশাবহির্ভূতভাবে করা হয়েছে তা নিয়ে পরিবেশবাদীরা নিশ্চুপ রয়েছেন।
বৈঠকের পর চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ সাংবাদিকদের জানান, রেওয়াজ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সংসদীয় দলের বৈঠক হয়েছে। এখানে সমসাময়িত রাজনীতি, বিরোধী দলের ভূমিকা, সরকারের উন্নয়ন, নির্বাচনী ইশতেহারসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। বৈঠকে বিরোধী দলের সংসদে না আসার সমালোচনা করা হয়েছে। তারা সংসদে না এসে যুদ্ধারপরাধীদের রক্ষায় যুদ্ধ ঘোষণা করে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এটা নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার নামে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনে। বর্তমান সরকারের কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকে দুর্নীতির অভিযোগ যায়নি।
পদ্মা সেতুকে নিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ সেতু দেশের জনগণের। সেতু নির্মাণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাই এটা নিয়ে বিশ্বমণ্ডলে নেতিবাচক বক্তব্য দেবেন না।
No comments