সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা প্রতিহত করা হবে: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ

দেশে সম্প্রীতি নষ্টের যেকোনো ধরনের চেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা বলেছেন, কোনো ধরনের উস্কানিতে পা দেয়া যাবে না। সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা যে বা যারাই করবে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত শোক ও সম্প্রীতি সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসাউদ বলেন, ইসকন মানে সনাতনী নয়, ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন। যার অপকর্মের বিরুদ্ধে হাজার হাজার সনাতনী ভাইয়েরা ভারত ও বাংলাদেশে রাজপথে নেমেছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী এই সংগঠন সাধারণ শান্তিময় মুসলমানদের ওপর নয়, বিভিন্ন সময়ে অনেক সনাতনী মন্দিরেও তারা হামলা চালিয়েছে, রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে। চিন্ময় দাশ ও ইসকনকে হিন্দুদের মূল প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে প্রচার করার কারণে আজকে এ ঘটনা এত দূর গড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন মাসউদ। বলেন, দেশের লাখো লাখো হিন্দু ভাইয়েরা চিন্ময় দাশকে তাদের প্রভু হিসেবে স্বীকার করে না।

বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী সফল গণঅভ্যুত্থানকে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন,পতিত শেখ হাসিনার শেষ ট্রাম্পকার্ডই  ছিল দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ। সে ও তার দল দেখাতে চায় দেশে একটি ইসলামী বিপ্লব হয়েছে ও এদেশের মুসলমানরা এখন সংখ্যালঘুদের বিপদে ফেলবে এবং এই সামপ্রদায়িক প্লট সৃষ্টির পেছনে প্রতিনিয়ত প্রোপাগান্ডা চালিয়ে ভূমিকা রেখেছে ভারতীয় কিছু মিডিয়া।

সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় উমামা ফাতেমা বলেন, যেভাবে ক্রমাগত সামপ্রদায়িক সংঘাত ও সংঘর্ষের কথা বাংলাদেশে হয়েছে বলে ক্রমাগত অপপ্রচার করা হচ্ছে তার কিছুই বাস্তবে হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল ক্ষমতায় এসেই এ বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বকে জানানো। এ ছাড়া ভারত ক্রমাগত যে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যাচ্ছে সেটিও বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে। কিন্তু সরকারের অবস্থা দেখেছি, তারা ভারতকে ছাড় দিতে চাইছিল।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার হয় নাই, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় নাই। যদি তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হতো তাহলে আ জ ম নাসিরের লোক কীভাবে ইসকনের পেছনে কলকাঠি নাড়ে? তাদের তো আজ জেলখানায় থাকার কথা ছিল।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর ইস্যুটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ফিরতে চায়। হয়তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই কিন্তু তারা সংখ্যালঘু কার্ড আজীবন খেলে যাবে। আমাদের রাজনীতিতে এই বিষয়টা সবসময় রাখতে চাইবে তারা।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহীন সরকার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সমপ্রীতি বজায় রেখে আবহমানকাল থেকে একত্রে বসবাস করে আসছে। এই সমপ্রীতির বন্ধনকে নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বাইরে বসে আওয়ামী লীগের পতিত নেতারা ষড়যন্ত্র করছে। তারই অংশ হিসেবে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্মিলিতভাবে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে। তাদের পাতানো ফাঁদে আমরা পা দেবো না। যত চেষ্টাই করুক এই দেশে আওয়ামী লীগ আর রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। আইন অনুযায়ী সব ঘটনার বিচার করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই চিন্ময় একজন রাষ্ট্রদ্রোহী। তিনি এদেশের ধর্মীয় সমপ্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। নানা মহল সমপ্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের জনগণকে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র-জনতা কেউ অপরাধীদের ছাড় দেবে না। যে সংগঠন বাংলাদেশের সমপ্রীতি নষ্ট করতে চায় তাদেরকে এদেশ থেকে বিদায় নিতে হবে।
সমাবেশে সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার বিচারের দাবি ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে বিভিন্ন স্ল্লোগান দিতে শোনা যায়। ইসকন নিষিদ্ধেরও দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.