কিন্নরী’র বন্ধু বলছি by তুষার আবদুল্লাহ
ঈদের ছুটির পর কিন্নরীর স্কুল খুলেছে। ওকে স্কুলে দিতে যাচ্ছি। শরতের বাতাসের আদর নিচ্ছি বাবা-মেয়ে। ঝিরঝির
বৃষ্টিও হচ্ছে। রিকশা নেই পুরো এলাকা জুড়ে।
হাঁটতে শুরু করি উদয়ন স্কুলের
পানে। দেখি অনেক বাবা-মা আমার মতোই ছেলে-মেয়েকে বুকে আগলে চলছে। রিকশা
চালকদের অনেকেই ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরেনি, তাই রিকশা সংকট।
আমি, কিন্নরী হাঁটছি। আশপাশের ফুলগুলোকেও দেখছি। বলছি বাবা-মা’য়ের আংগুল ধরে হেঁটে চলা ফুলগুলোর কথা। দু’দিন ধরে একটি ঝরা ফুল দেখছি। এবং তার ঝরে যাওয়ার কষ্টটা আগলে আছি বুকে। কিন্নরী’র দিকে গত বারো বছরে হয়তো এভাবে তাকাইনি। ও আমার শিউলী ফুল। কখনো বকুল, কখনো কৃষ্ণচুড়া। সেই ফুলটি অনাগত দিনে হয়ে উঠতে পারে একটি বিষন্ন ফুল। ঝরে পড়তে পারে অযত্নে। নাকি বলবো ভুল যত্নে? প্রশ্নটি এখানেই, আমরা যে চারা গাছ রোপন করি। ফুলদানিতে সাজাই যে ফুল।তার যত্নটি কি করছি ঠিকমতো। চারা গাছে প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি পানি, সার যাই দেইনা কেনো, তা সইতে না পেরে অপমৃত্যু ঘটে চারাগাছটির। সেভাবেই কিন্নরীদেরকেও হয়তো আমরা লালন করতে শিখিনি।
আমার অবারিত টাকায় ভাসিয়ে দিচ্ছি মেয়েকে, ছেলেকে। যোগ্যতার চেয়ে টাকার প্লাবণ যখন ঘর উপচে পড়ে, তখন সেই জোয়ারের উৎসটা ছেলে-মেয়ে’র কাছে গোপন থাকছে না। গোপন কথাটি যখন তারা জেনেই যায়, তখন তাদের সাধ মেটানোর আকাশ-কুসুম বায়না’য় না বলা’র নৈতিকটাও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এমনিতেই। সমাজে নিজের চকচকে অবস্থান জানান দিতে মডেল বদলে যায় গাড়ি’র। পোশাক বদলে যায় পরিবারের সদস্যদের। এমনি ভাবে ছেলে-মেয়ে’কেও কোকিল বানাতে ভিন্ন ভাষার মাধ্যমের স্কুলে কড়কড়ে টাকায় ঢুকিয়ে দেওয়া। তারা ভুল-ভাল ইংরেজি বললে বুক প্রশস্ত হয়ে যাওয়া। এদেরই আবার শিক্ষা’র বড় শপিং মল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি’তে পাঠানো। বিদেশি চ্যানেলের নট-নটীদের ঢঙ’এ ছেলে-মেয়ে’দের চলন-বলন দেখে ভেবে নেওয়া, বাড়ছে সামাজিক উচ্চতা। কিন্তু এই সামাজিক উচ্চতা যে কখন বিপদসীমা অতিক্রম করে চলে যায়, তা দেখার হুঁশ থাকে না অনেক বাবা-মায়েরই।যখন ছেলে-মেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে তখন তাদের উচ্ছৃংখল ও বেপরোয়া জীবনে ডুবে মরা ছাড়া আর সেই নির্বোধ বাবা-মায়েদের কোন উপায়ন্তর থাকে না। যেমনটি আমরা দেখতে পেলাম ঐশী’র পরিবারে।
একজন পুলিশ পরিদর্শকের বেতন স্কেল কতো তা আমাদের অজানা নয়। সেই জানা মতে ঐশী’কে ইংরেজী মাধ্যমে পড়ানো’র খরচের যোগান কোথা থেকে আসতো? খবর আছে অনেক সহকারী পুলিশ পরিদর্শক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ছেলে- মেয়েরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আরো পদস্থদের বেলাতে গেলাম না। অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের বেলাতেও একই উদাহরণ প্রযোজ্য।
আমি, কিন্নরী হাঁটছি। আশপাশের ফুলগুলোকেও দেখছি। বলছি বাবা-মা’য়ের আংগুল ধরে হেঁটে চলা ফুলগুলোর কথা। দু’দিন ধরে একটি ঝরা ফুল দেখছি। এবং তার ঝরে যাওয়ার কষ্টটা আগলে আছি বুকে। কিন্নরী’র দিকে গত বারো বছরে হয়তো এভাবে তাকাইনি। ও আমার শিউলী ফুল। কখনো বকুল, কখনো কৃষ্ণচুড়া। সেই ফুলটি অনাগত দিনে হয়ে উঠতে পারে একটি বিষন্ন ফুল। ঝরে পড়তে পারে অযত্নে। নাকি বলবো ভুল যত্নে? প্রশ্নটি এখানেই, আমরা যে চারা গাছ রোপন করি। ফুলদানিতে সাজাই যে ফুল।তার যত্নটি কি করছি ঠিকমতো। চারা গাছে প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি পানি, সার যাই দেইনা কেনো, তা সইতে না পেরে অপমৃত্যু ঘটে চারাগাছটির। সেভাবেই কিন্নরীদেরকেও হয়তো আমরা লালন করতে শিখিনি।
আমার অবারিত টাকায় ভাসিয়ে দিচ্ছি মেয়েকে, ছেলেকে। যোগ্যতার চেয়ে টাকার প্লাবণ যখন ঘর উপচে পড়ে, তখন সেই জোয়ারের উৎসটা ছেলে-মেয়ে’র কাছে গোপন থাকছে না। গোপন কথাটি যখন তারা জেনেই যায়, তখন তাদের সাধ মেটানোর আকাশ-কুসুম বায়না’য় না বলা’র নৈতিকটাও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এমনিতেই। সমাজে নিজের চকচকে অবস্থান জানান দিতে মডেল বদলে যায় গাড়ি’র। পোশাক বদলে যায় পরিবারের সদস্যদের। এমনি ভাবে ছেলে-মেয়ে’কেও কোকিল বানাতে ভিন্ন ভাষার মাধ্যমের স্কুলে কড়কড়ে টাকায় ঢুকিয়ে দেওয়া। তারা ভুল-ভাল ইংরেজি বললে বুক প্রশস্ত হয়ে যাওয়া। এদেরই আবার শিক্ষা’র বড় শপিং মল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি’তে পাঠানো। বিদেশি চ্যানেলের নট-নটীদের ঢঙ’এ ছেলে-মেয়ে’দের চলন-বলন দেখে ভেবে নেওয়া, বাড়ছে সামাজিক উচ্চতা। কিন্তু এই সামাজিক উচ্চতা যে কখন বিপদসীমা অতিক্রম করে চলে যায়, তা দেখার হুঁশ থাকে না অনেক বাবা-মায়েরই।যখন ছেলে-মেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে তখন তাদের উচ্ছৃংখল ও বেপরোয়া জীবনে ডুবে মরা ছাড়া আর সেই নির্বোধ বাবা-মায়েদের কোন উপায়ন্তর থাকে না। যেমনটি আমরা দেখতে পেলাম ঐশী’র পরিবারে।
একজন পুলিশ পরিদর্শকের বেতন স্কেল কতো তা আমাদের অজানা নয়। সেই জানা মতে ঐশী’কে ইংরেজী মাধ্যমে পড়ানো’র খরচের যোগান কোথা থেকে আসতো? খবর আছে অনেক সহকারী পুলিশ পরিদর্শক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ছেলে- মেয়েরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আরো পদস্থদের বেলাতে গেলাম না। অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের বেলাতেও একই উদাহরণ প্রযোজ্য।
এই যে বাড়তি টাকার প্লাবণ, অভিজাত ফ্ল্যাটে বিলাস যাপন। তাতে আমাদের
আশপাশের অনেক পরিবারই বেসামাল। এই পরিবারগুলোতেই মাদকের গন্ধ পাওয়া যায়।
কোন কোনটি বাবা, আজকাল মায়েরাও তরল মাদকে নিমজ্জিত। আর ছেলে-মেয়েরা রকমারি
মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ছেলে-মেয়েদের বন্ধুত্বের একটা বলয় থাকবে। কিন্তু সেই
বলয়টা বেশি ঝকমকে হলে গর্ব করার কিছু নেই। দেখতে হবে যাদের সংগে
ছেলে-মেয়ে’র চলাফেরা তারা কোন পরিবার থেকে আসছে। তাদের আগ্রহের জায়গাটি
কতোটা সৃজনশীল কাজের সংগে যুক্ত। আমরা বাবা-মায়েরা সেই খবরটি রাখতে চাই না।
নাকি ছেলে-মেয়ে’র সংগে পেরে উঠছি না। এই না পারার ব্যর্থতা ঢেকে রাখা যায়
না বেশি সময়।
মাদকের গন্ধ, বখে যাওয়ার শব্দ চারপাশে ছড়াবেই। তাই শুরুতেই যেমনটি বলছিলাম। যে চারাগাছটি বড় করছি তাকে- ট্যাব বা স্মার্টফোন দিয়ে স্মার্ট করার ব্যর্থ চেষ্টা না করে এবং বোকাবাক্সে বন্দি না করে, দেখাতে হবে আকাশ। জীবনটা যে আকাশের মতোই অবারিত। জীবন যে রংধনু রং’এর। ফুল যে নিজের জন্য ফোটে না। জীবনকে যে নদীর মতোই স্বচ্ছ করা যায়। এবং বই’যে আরেকটি পৃথিবী। সেখানে যে নিজেকে জানা যায়। এই খবরগুলো ওকে জানিয়ে রাখতে হবে।তবে যে খবরটি কিন্নরীদের জানিয়ে রাখা দরকার বা নিজেকে ওদের জন্য তৈরি করে নিতে হবে, সেটি হলো-বাবা, মায়ের চেয়ে কাছের বন্ধু আর কেউ হতে পারে না।
আরেকটি বিষয় নিয়ে বলা দরকার একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবেই। সেটি হলো প্রাপ্ত তথ্যমতে ঐশী অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ অবস্থায় তার ছবিটি গণমাধ্যমে দেখানো নৈতিকভাবে ঠিক হচ্ছে কি না? এ নিয়ে বার্তাকক্ষগুলোতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চলছে। প্রায় সবাই ছবি ব্যবহার করেছে। এক-দু’টি গণমাধ্যম ঐশী’র ছবি ঢেকে দিয়েছে।কিন্তু এই ঢেকে দেওয়াতেই কি ঐশীকে আড়াল করা গেলো বা যাবে। তার পরিবার। তার চারপাশের মানুষগুলোতো ঐশীকে সনাক্ত করতে পারবে গণমাধ্যম না দেখালেও।
ঐশী’র ছবিটি গণমাধ্যমে দেখে ঐশী’র মতো ভুল পথে হাঁটছে যারা, তারা ফিরতে শুরু করবে? কিংবা ঐশী’র ছবিটি দেখে বেসামাল বাবা-মায়েদের কি মনে পড়বে নিজের ঘরের ঐশী’টির কথা? আমি আপাতত: এই বিতর্কের বাইরে থাকতে চাই। গণমাধ্যম কর্মীর বাইরেও আমার একটা পরিচয় আছে। আমি কিন্নরী’র বাবা। আমি এখন কিন্নরী’কে নিয়েই ভাবতে চাই। আমি ছাড়া যে ওর কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নেই।
মাদকের গন্ধ, বখে যাওয়ার শব্দ চারপাশে ছড়াবেই। তাই শুরুতেই যেমনটি বলছিলাম। যে চারাগাছটি বড় করছি তাকে- ট্যাব বা স্মার্টফোন দিয়ে স্মার্ট করার ব্যর্থ চেষ্টা না করে এবং বোকাবাক্সে বন্দি না করে, দেখাতে হবে আকাশ। জীবনটা যে আকাশের মতোই অবারিত। জীবন যে রংধনু রং’এর। ফুল যে নিজের জন্য ফোটে না। জীবনকে যে নদীর মতোই স্বচ্ছ করা যায়। এবং বই’যে আরেকটি পৃথিবী। সেখানে যে নিজেকে জানা যায়। এই খবরগুলো ওকে জানিয়ে রাখতে হবে।তবে যে খবরটি কিন্নরীদের জানিয়ে রাখা দরকার বা নিজেকে ওদের জন্য তৈরি করে নিতে হবে, সেটি হলো-বাবা, মায়ের চেয়ে কাছের বন্ধু আর কেউ হতে পারে না।
আরেকটি বিষয় নিয়ে বলা দরকার একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবেই। সেটি হলো প্রাপ্ত তথ্যমতে ঐশী অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ অবস্থায় তার ছবিটি গণমাধ্যমে দেখানো নৈতিকভাবে ঠিক হচ্ছে কি না? এ নিয়ে বার্তাকক্ষগুলোতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব চলছে। প্রায় সবাই ছবি ব্যবহার করেছে। এক-দু’টি গণমাধ্যম ঐশী’র ছবি ঢেকে দিয়েছে।কিন্তু এই ঢেকে দেওয়াতেই কি ঐশীকে আড়াল করা গেলো বা যাবে। তার পরিবার। তার চারপাশের মানুষগুলোতো ঐশীকে সনাক্ত করতে পারবে গণমাধ্যম না দেখালেও।
ঐশী’র ছবিটি গণমাধ্যমে দেখে ঐশী’র মতো ভুল পথে হাঁটছে যারা, তারা ফিরতে শুরু করবে? কিংবা ঐশী’র ছবিটি দেখে বেসামাল বাবা-মায়েদের কি মনে পড়বে নিজের ঘরের ঐশী’টির কথা? আমি আপাতত: এই বিতর্কের বাইরে থাকতে চাই। গণমাধ্যম কর্মীর বাইরেও আমার একটা পরিচয় আছে। আমি কিন্নরী’র বাবা। আমি এখন কিন্নরী’কে নিয়েই ভাবতে চাই। আমি ছাড়া যে ওর কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নেই।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন, tushar.abdullah@gmail.com
No comments