আর নয় প্রীতিদের অপ্রীতিকর চলে যাওয়া by মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমান
মামুন বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে ফেসবুকে
আমার ওয়ালে লিখেছে, ‘ভাইয়া, আপনাকে খুব প্রয়োজন ছিল। অনেকবার কল করেছি।
কিন্তু, ফোন বন্ধ পেয়েছি। প্লিজ, আমাকে কি একটা কল দেবেন?’
ছোট
ভাই মামুনের কথাগুলো আকূতির মতো শুনালো। ও আমাকে ফোনে পাচ্ছে না। পুরো
রমজান মাসে নাকি পায়নি। কথাটি পুরোপুরি সত্য। বিভিন্ন জায়গায় ইফতারের
দাওয়াত এড়ানোর জন্যই মোবাইল বন্ধ রাখতাম। আব্বা, ড. অনুপম সেন স্যার, বড়
ভাই ডা. মোস্তাফিজ, হেলাল স্যার, আসাদ স্যার, জাকিয়া, আবু হান্নান ভাই এবং
আরও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আমার ওজন বাড়া নিয়ে খুব চিন্তিত। রোজার পুরো
মাসে সিয়ামের ফাঁকে ওজন কমানোর সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম। কাজেই বেশিরভাগ সময়
ফোন বন্ধ রাখতাম।
অতি প্রিয় ছোট ভাই মামুনকে সত্য স্বীকারোক্তি দিলাম তার ফেসবুকের ইনবক্সে। ও খুব দ্রুত রেসপন্স করলো। খুব আবেগ নিয়ে বললো, ‘ভাইয়া, আপনি নিশ্চয় প্রীতির ব্যাপারটা জানেন?’ বললাম, ‘আমি বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরডটকমে পড়েছি’। তাছাড়া তেহসিনের স্ট্যাটাসটা কয়েক লাইনের বেশি পড়তে পারিনি। ইদানিং নার্ভ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অতো লোড নিতে পারছি না’।
মামুন ইনবক্সে লিখলো, ‘ভাইয়া, ওটা আমার স্ট্যাটাস ছিল। সবাইকে শেয়ার করার অনুরোধ করেছি। ঘটনার সময় আমি পাশে ছিলাম’।
মামুন আবেগী মানুষ। মানুষকে সম্মান দেয়। তীব্রভাবে ভালোবাসে। মামুন লিখে চলে, ‘ভাইয়া, রেলপথে পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আরম্ভ করে দিয়েছি সাইবার যুদ্ধ। ‘রেলপথে আর কোনো দুর্ঘটনা নয় - প্রীতি দাশ হত্যার বিচার চাই’ এ দাবিতে ১৭ আগস্ট শনিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধনও করবো আমরা সবাই মিলে। এখানে আমরা ড. অনুপম সেন স্যারের মতো একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষকে পেলে ভালো হতো। স্যার যদি আসেন, তবে আমাদের আয়োজনের মেসেজটা সমাজে ভালোভাবে পৌঁছাতো। ভাইয়া, দয়া করে স্যারকে একটু দাওয়াত দেন’।
আমি মামুনকে বললাম, ‘স্যার আসবেন, তুমি নিশ্চিত থাকো। আগামীকাল আমি কথা বলবো স্যারের সঙ্গে’।
প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম। কারণ, স্যারকে যতোটুকু জানি, সময় পেলে এবং শরীর সুস্থ থাকলে তিনি যেকোনো মহৎ কাজে এগিয়ে যান এবং উৎসাহ দেন। এটা তার মজ্জাগত।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানালো মামুন। সেই সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপ এবং ইভেন্ট শেয়ার করতে বললো। ও ইনবক্সে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে লিখছে, ‘http://www.facebook.com/groups/justiceforpritidas/ যদি সম্ভব হয় এই গ্রুপটা একটু শেয়ার করবেন... http://www.facebook.com/events/708028025890150/ এটি ইভেন্ট...’।
ক্লিক করে দেখলাম, দু’টিতেই কভার পিকচারে লেখা আছে... ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড/এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’।
হঠাৎ করে খেয়াল করলাম, মামুন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ও কাভার ছবি পরিবর্তন করেছে। বোঝার চেষ্টা করলাম, বন্ধুপত্নীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ওকে কতোটা শোকাহত করেছে। মামুনের সঙ্গে চ্যাট শেষ করে প্রীতির মৃত্যু নিয়ে দেওয়া ওর স্ট্যাটাসটা পড়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিলাম । ক্লিক করে ওর ওয়ালে ঢুকলাম।
নিঃশ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ও গড়িয়ে পড়া অশ্রু
মামুন লিখেছে, ‘প্রচণ্ড কষ্ট এবং ক্ষোভ থেকে লিখছি। গত পরশু চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম আমি, জুয়েল, মিন্টু এবং প্রীতি বউদি। বউদি বসেছিলেন জানালার পাশে। মিন্টু তার পাশে। দেখা হওয়া মাত্রই বৌদি শুভেছা বিনিময় করেছিলেন আমার সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমার বাচ্চা কেমন আছে, পরিবার কেমন আছে?’
‘মিন্টু ঘুমানোর কথা বলে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয় এবং এয়ারপোর্ট স্টেশনে দেখা হবে বলে জানায়। মিন্টুর কর্মস্থল ঢাকা। বউদিকে নিয়ে যাচ্ছিল। ঢাকায় ভালো লাগে না বউদির। তারপরও সপ্তাহ দুয়েক থাকার ইচ্ছে আছে। নিতান্তই মন না টিকলে ১৪ তারিখেই ফিরে আসবেন। রাত আনুমাণিক সোয়া এগারোটা কিংবা এগারোটা বিশ মিনিটের দিকে ট্রেন ভাটিয়ারি ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে পৌঁছায়। আমি জুয়েলের সঙ্গে গল্প করছিলাম’।
‘হঠাৎ ‘ঠাস’ করে একটা শব্দ শুনি। সঙ্গে সঙ্গে একটা পাথর চোখের সামনে ছিটকে পড়ল। কোচের মাঝখানে সামনা-সামনি আসনগুলোর মধ্যবর্তী ফ্লোরে নিষ্ঠুর পাথরটিকে পড়ে থাকতে দেখলাম। বউদি শুধু একটা আর্তনাদ করে নুইয়ে পড়েন। মিন্টু কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে বউদিকে ধরে। বুঝতে পারি, পাথরটা বউদির মাথার বাম পাশে আঘাত করেছে। বউদির বাম গালে একটু লাল দাগ লক্ষ্য করি। মিন্টু মাথায় পানি ঢালে। সম্ভব সব রকমের চেষ্টা করা হয় বউদির জ্ঞান ফেরানোর জন্য’।
‘কিন্তু আমাদের এতো চেষ্টার পরেও বউদি কোনো কথা বলছিলেন না। চোখ দু’টো বন্ধ ছিল। চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। ২/৩ মিনিট পর পর হেঁচকি তুলছিলেন। নিঃশ্বাস নেওয়ার নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন’।
‘এতোটা খারাপ কিছু আমি তখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি চলে যাই ট্রেনের শেষ মাথায় কোনো ডাক্তার থাকলে আসতে বলার জন্য। আমি আশাহত হয়ে ফিরে আসি। এসে দেখি, বউদি অসাড় হয়ে পড়েছেন। মিন্টু বলছে, আমি পাল্স পাচ্ছি না। আমিও চেক করি, পাইনি। মনে করেছিলাম, অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে পাচ্ছি না। হয়তো মৃদু ভাবে আছে। আমি ধরতে পারছি না’।
হে প্রভু, তুমি বউদিকে নিও না
মামুন আরও লিখেছে, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সীতাকুণ্ড নেমে যাওয়ার। কোনোমতে মিন্টু, আমি মিলে বউদিকে ধরাধরি করে নামাই। জুয়েল সব ব্যাগ নামায়। বউদিকে বেঞ্চে শুইয়ে আমি দৌঁড়াই একটা ট্যাক্সি ঠিক করার জন্য। পথে একটা রিকশা পাই যাত্রীসহ। তাদেরকে অনুরোধ করলে তারা রিকশাটা ছেড়ে দেন। আমি মিন্টু বউদিকে নিয়ে মূল রাস্তায় পৌঁছে ট্যাক্সি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল, সীতাকুণ্ডে পৌঁছাই’।
‘আল্লাহ্র কাছে শুধু কায়মনোবাক্যে একটা প্রার্থনা করছিলাম। হে আল্লাহ , হে প্রভু, আমি যদি একটাও ভালো কাজ করে থাকি, আমার যদি একটা এবাদতও তুমি কবুল করে থাকো, যদি একটাও ন্যায়বিচার করে থাকি, তবে তুমি প্রীতি বউদিকে নিও না। ফিরিয়ে দাও। এটা ওর যাওয়ার সময় নয়’।
অতিরিক্ত কষ্টে-আবেগে মামুন লিখেছে, ‘হয়তো প্রার্থনা করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। হয়তো বা আমি এতোটাই পাষণ্ড, পাপী যে আল্লাহ শোনেননি। মিন্টু তখন শুধু বউদির হাত ধরে বসেছিল। আর কান্নাভেজা কণ্ঠে আকুতি জানাচ্ছিল, প্রিয়তমার কাছে- প্রীতি, ও প্রীতি... কথা বলো, কথা বলো। বউদি নিশ্চুপ- নির্বাক। দৃষ্টি যেন কোথায়! হয়তো অপার্থিব দৃষ্টি, আমি চিনতে পারছিলাম না’!
‘ডাক্তার পরীক্ষা করে যখন অক্সিজেন মাক্স লাগাচ্ছিলেন মিন্টু তখনো বউদির হাত ধরেছিল। আর বলছিল, আমি শক্ত আছি। ডাক্তার সাহেব, আপনি বলেন কি অবস্থা। পৃথিবীর সমস্ত অসহায়ত্ব যেন ডাক্তারের চোখে জমা হয়েছে। ডাক্তার শুধু আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর কি যেন বলতে চেয়েও বলতে পারছিলেন না। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদেরকে হৃদয়বিদারক সংবাদটি দিলেন। প্রীতি বউদি আর নেই!
মিন্টুর চোখের পানি প্লাবিত করেছে পুরো পৃথিবীকে
মামুন ওর স্ট্যাটাসে আরো লিখেছে, ‘মিন্টু হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে। বলে, আমি ওর বাবা মাকে কি জবাব দেবো! এই মেয়েটা শুধু আমার সঙ্গে থাকার জন্য কি না করেছে। একটা বাবু, শুধু একটা বাবুর জন্য তার সে কি আকূতি! হায়রে ঢাকা! হায়রে চাকুরী! আমি কি জবাব দেবো!’
আমি পড়ছি আর দেখছি, মিন্টুর চোখের পানি মামুনের ওয়ালকে ছাপিয়ে সমস্ত ওয়েবপেজকে ভিজিয়ে পুরো পৃথিবীকে প্লাবিত করছে।
এক পর্যায়ে মামুন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অসংখ্য ডট দিয়ে নিজের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করেছে। অনেকটা গ্যাপ দিয়ে মামুন আবার লিখছে, ‘না । আমরা কেউ ওকে সান্ত্বনা দেইনি। সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা কারো জানা ছিল না। আমরা তখনো আশাবাদী ছিলাম। ডাক্তারকে বলে বউদিকে নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেলের দিকে রওনা দেই। পুরো যাত্রা পথে আমার বন্ধু বউদির হাত ধরে নির্বাক বসেছিল।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে পৌঁছার পর ডাক্তারের মুখে একই কথা শুনে সবার মাঝে নেমে আসে শোকাতুর নিস্তব্ধতা। আহাজারি করে ওঠেন বউদির মা, বাবা, ভাই, মিন্টুর বাবা-মাসহ উপস্থিত সকলে। আমি হতবাক। আমার বুক যেন ভেঙে যাচ্ছিল। মুহূর্তেই একটা মানুষের জীবন কিভাবে শেষ হয়ে যায়!’
বিচার সবকিছু ফিরিয়ে দিতে পারে না
মামুন প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে লিখছে, ‘মামলা হয়েছে।পুলিশ চেষ্টা করছে আসামিদেরকে গ্রেফতার করার। হয়তো আসামি ধরা পড়বে। বিচার হবে’।
বিচারক মামুনকে হয়তো মানুষ মামুন প্রশ্ন করছে, ‘মিন্টু কি ফিরে পাবে তার প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীকে ? বউদির ভাইয়েরা কি ফিরে পাবেন তাদের একমাত্র বোনকে? মা-বাবা কি ফিরে পাবেন তাদের আদরের কন্যাকে? মিন্টুর বাবা-মা কি ফিরে পাবেন তাদের প্রিয় কন্যাসম পুত্রবধূকে?’
মামুনের কম্পিউটারের বাটনগুলো অবশেষে ভাষা খুঁজে পেয়েছে, ‘এটা নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়। মানুষের জীবন কোনো ছেলেখেলা নয়। কারো নিছক খেয়ালের কারণে অন্য কারো জীবন প্রদীপ থেমে যেতে পারে না।
ইতোমধ্যেই পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে। আমরা চাই, আর কারো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়, কোনো ভাই যেন তার বোনকে, স্বামী যেন তার স্ত্রীকে, বাবা-মা যেন তার মেয়েকে, শ্বশুর-শাশুড়ি যেন তাদের আদরের বউমাকে না হারান। জীবন শুরু করার বা মেহেদির দাগ মুছে যাওয়ার আগেই যেন কারো জীবনে নেমে না আসে নির্বাক দুঃসহ নির্মম নির্জনতা। আমার বন্ধুর মতো কারো জীবন যেন শ্মশানের চিতার আগুনে দাউ দাউ করে না জ্বলে’।
রুখে দাঁড়াতে হবেই
মামুনের কি-বোর্ডে প্রতিবাদের কথা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলছে, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা তৈরি করেছি এই গ্রুপ। বন্ধুরা, আপনারা সবাই আপনাদের বন্ধুদের এই গ্রুপের সদস্য করে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আগামী শনিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আমরা সবাই সমবেত হবো এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। সেখানে এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন, কালোব্যাজ ধারণ, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। বন্ধুরা, এই সামাজিক আন্দোলনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা এবং সবান্ধব অংশগ্রহণ চাই। এই পোস্টটি সকল বন্ধুকে শেয়ার করার অনুরোধ করছি’।
আর নয় প্রীতিদের অপ্রীতিকর চলে যাওয়া
শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে সেন স্যারকে ফোন করলাম। কুশল বিনিময়ের পর স্যারকে মানববন্ধনের কথা বললাম খুব সংকোচের সঙ্গে। বললাম, ‘খুব কম সময়ে ফ্রি করে দেবো’। স্যার খুব দরদী গলায় বললেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। যতোক্ষণ দরকার হয় থাকবো।’
ফেসবুকের চ্যাট অপশনে প্রিয় ভাই রমেনকে পেলাম। তার সঙ্গেও শেয়ার করলাম। তিনি ব্যাপারটি আগে থেকেই অবগত আছেন। আমি জানি, রমেন এই মহৎ কাজের জন্য যতোখানি সম্ভব করবেন। জহুর ভাই, বিশুদা, বাহার ভাই, শামসু ভাই, তপনদা, আরিফ ভাই, রিয়াজ ভাই, বুলবুল ভাই, সরওয়ার ভাই, সবুর ভাই, কমল, রেজা ভাই, পারভেজ ভাই, ফারুক ভাই, ফরিদ ভাই, উজ্জ্বল, নজরুল ভাই, মামুন ভাই, আসিফ ভাই, মিন্টুদা, ইমরান ভাই, বোন লিপি, বোন এমেলিয়া খানম এবং আরও অনেকের কথা মনে পড়ছে। তারাও নিশ্চয়ই জানেন। মানুষের অধিকার রক্ষায় এই ভালো মানুষগুলো ইতোমধ্যে সমাজে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, বীর চট্টলার সমস্ত মানব নিজেদেরকে ‘প্রীতি’র বন্ধনে আবদ্ধ করে স্লোগান তুলবেন, ‘রেলপথে আর কোনো দুর্ঘটনা নয়, প্রীতি দাশ হত্যার বিচার চাই’। বীর চট্টলার সন্তানেরা এই স্লোগান বাস্তবায়ন করেও দেখাবেন। আমরা আর প্রীতিদের অপ্রীতিকর মৃত্যু দেখতে চাই না।
মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমান: যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সচিব (প্রেষণ), পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা
অতি প্রিয় ছোট ভাই মামুনকে সত্য স্বীকারোক্তি দিলাম তার ফেসবুকের ইনবক্সে। ও খুব দ্রুত রেসপন্স করলো। খুব আবেগ নিয়ে বললো, ‘ভাইয়া, আপনি নিশ্চয় প্রীতির ব্যাপারটা জানেন?’ বললাম, ‘আমি বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরডটকমে পড়েছি’। তাছাড়া তেহসিনের স্ট্যাটাসটা কয়েক লাইনের বেশি পড়তে পারিনি। ইদানিং নার্ভ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অতো লোড নিতে পারছি না’।
মামুন ইনবক্সে লিখলো, ‘ভাইয়া, ওটা আমার স্ট্যাটাস ছিল। সবাইকে শেয়ার করার অনুরোধ করেছি। ঘটনার সময় আমি পাশে ছিলাম’।
মামুন আবেগী মানুষ। মানুষকে সম্মান দেয়। তীব্রভাবে ভালোবাসে। মামুন লিখে চলে, ‘ভাইয়া, রেলপথে পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আরম্ভ করে দিয়েছি সাইবার যুদ্ধ। ‘রেলপথে আর কোনো দুর্ঘটনা নয় - প্রীতি দাশ হত্যার বিচার চাই’ এ দাবিতে ১৭ আগস্ট শনিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধনও করবো আমরা সবাই মিলে। এখানে আমরা ড. অনুপম সেন স্যারের মতো একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষকে পেলে ভালো হতো। স্যার যদি আসেন, তবে আমাদের আয়োজনের মেসেজটা সমাজে ভালোভাবে পৌঁছাতো। ভাইয়া, দয়া করে স্যারকে একটু দাওয়াত দেন’।
আমি মামুনকে বললাম, ‘স্যার আসবেন, তুমি নিশ্চিত থাকো। আগামীকাল আমি কথা বলবো স্যারের সঙ্গে’।
প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম। কারণ, স্যারকে যতোটুকু জানি, সময় পেলে এবং শরীর সুস্থ থাকলে তিনি যেকোনো মহৎ কাজে এগিয়ে যান এবং উৎসাহ দেন। এটা তার মজ্জাগত।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানালো মামুন। সেই সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপ এবং ইভেন্ট শেয়ার করতে বললো। ও ইনবক্সে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে লিখছে, ‘http://www.facebook.com/groups/justiceforpritidas/ যদি সম্ভব হয় এই গ্রুপটা একটু শেয়ার করবেন... http://www.facebook.com/events/708028025890150/ এটি ইভেন্ট...’।
ক্লিক করে দেখলাম, দু’টিতেই কভার পিকচারে লেখা আছে... ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড/এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’।
হঠাৎ করে খেয়াল করলাম, মামুন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ও কাভার ছবি পরিবর্তন করেছে। বোঝার চেষ্টা করলাম, বন্ধুপত্নীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ওকে কতোটা শোকাহত করেছে। মামুনের সঙ্গে চ্যাট শেষ করে প্রীতির মৃত্যু নিয়ে দেওয়া ওর স্ট্যাটাসটা পড়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিলাম । ক্লিক করে ওর ওয়ালে ঢুকলাম।
নিঃশ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ও গড়িয়ে পড়া অশ্রু
মামুন লিখেছে, ‘প্রচণ্ড কষ্ট এবং ক্ষোভ থেকে লিখছি। গত পরশু চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম আমি, জুয়েল, মিন্টু এবং প্রীতি বউদি। বউদি বসেছিলেন জানালার পাশে। মিন্টু তার পাশে। দেখা হওয়া মাত্রই বৌদি শুভেছা বিনিময় করেছিলেন আমার সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমার বাচ্চা কেমন আছে, পরিবার কেমন আছে?’
‘মিন্টু ঘুমানোর কথা বলে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয় এবং এয়ারপোর্ট স্টেশনে দেখা হবে বলে জানায়। মিন্টুর কর্মস্থল ঢাকা। বউদিকে নিয়ে যাচ্ছিল। ঢাকায় ভালো লাগে না বউদির। তারপরও সপ্তাহ দুয়েক থাকার ইচ্ছে আছে। নিতান্তই মন না টিকলে ১৪ তারিখেই ফিরে আসবেন। রাত আনুমাণিক সোয়া এগারোটা কিংবা এগারোটা বিশ মিনিটের দিকে ট্রেন ভাটিয়ারি ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে পৌঁছায়। আমি জুয়েলের সঙ্গে গল্প করছিলাম’।
‘হঠাৎ ‘ঠাস’ করে একটা শব্দ শুনি। সঙ্গে সঙ্গে একটা পাথর চোখের সামনে ছিটকে পড়ল। কোচের মাঝখানে সামনা-সামনি আসনগুলোর মধ্যবর্তী ফ্লোরে নিষ্ঠুর পাথরটিকে পড়ে থাকতে দেখলাম। বউদি শুধু একটা আর্তনাদ করে নুইয়ে পড়েন। মিন্টু কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে বউদিকে ধরে। বুঝতে পারি, পাথরটা বউদির মাথার বাম পাশে আঘাত করেছে। বউদির বাম গালে একটু লাল দাগ লক্ষ্য করি। মিন্টু মাথায় পানি ঢালে। সম্ভব সব রকমের চেষ্টা করা হয় বউদির জ্ঞান ফেরানোর জন্য’।
‘কিন্তু আমাদের এতো চেষ্টার পরেও বউদি কোনো কথা বলছিলেন না। চোখ দু’টো বন্ধ ছিল। চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। ২/৩ মিনিট পর পর হেঁচকি তুলছিলেন। নিঃশ্বাস নেওয়ার নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন’।
‘এতোটা খারাপ কিছু আমি তখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি চলে যাই ট্রেনের শেষ মাথায় কোনো ডাক্তার থাকলে আসতে বলার জন্য। আমি আশাহত হয়ে ফিরে আসি। এসে দেখি, বউদি অসাড় হয়ে পড়েছেন। মিন্টু বলছে, আমি পাল্স পাচ্ছি না। আমিও চেক করি, পাইনি। মনে করেছিলাম, অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে পাচ্ছি না। হয়তো মৃদু ভাবে আছে। আমি ধরতে পারছি না’।
হে প্রভু, তুমি বউদিকে নিও না
মামুন আরও লিখেছে, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সীতাকুণ্ড নেমে যাওয়ার। কোনোমতে মিন্টু, আমি মিলে বউদিকে ধরাধরি করে নামাই। জুয়েল সব ব্যাগ নামায়। বউদিকে বেঞ্চে শুইয়ে আমি দৌঁড়াই একটা ট্যাক্সি ঠিক করার জন্য। পথে একটা রিকশা পাই যাত্রীসহ। তাদেরকে অনুরোধ করলে তারা রিকশাটা ছেড়ে দেন। আমি মিন্টু বউদিকে নিয়ে মূল রাস্তায় পৌঁছে ট্যাক্সি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল, সীতাকুণ্ডে পৌঁছাই’।
‘আল্লাহ্র কাছে শুধু কায়মনোবাক্যে একটা প্রার্থনা করছিলাম। হে আল্লাহ , হে প্রভু, আমি যদি একটাও ভালো কাজ করে থাকি, আমার যদি একটা এবাদতও তুমি কবুল করে থাকো, যদি একটাও ন্যায়বিচার করে থাকি, তবে তুমি প্রীতি বউদিকে নিও না। ফিরিয়ে দাও। এটা ওর যাওয়ার সময় নয়’।
অতিরিক্ত কষ্টে-আবেগে মামুন লিখেছে, ‘হয়তো প্রার্থনা করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। হয়তো বা আমি এতোটাই পাষণ্ড, পাপী যে আল্লাহ শোনেননি। মিন্টু তখন শুধু বউদির হাত ধরে বসেছিল। আর কান্নাভেজা কণ্ঠে আকুতি জানাচ্ছিল, প্রিয়তমার কাছে- প্রীতি, ও প্রীতি... কথা বলো, কথা বলো। বউদি নিশ্চুপ- নির্বাক। দৃষ্টি যেন কোথায়! হয়তো অপার্থিব দৃষ্টি, আমি চিনতে পারছিলাম না’!
‘ডাক্তার পরীক্ষা করে যখন অক্সিজেন মাক্স লাগাচ্ছিলেন মিন্টু তখনো বউদির হাত ধরেছিল। আর বলছিল, আমি শক্ত আছি। ডাক্তার সাহেব, আপনি বলেন কি অবস্থা। পৃথিবীর সমস্ত অসহায়ত্ব যেন ডাক্তারের চোখে জমা হয়েছে। ডাক্তার শুধু আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর কি যেন বলতে চেয়েও বলতে পারছিলেন না। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদেরকে হৃদয়বিদারক সংবাদটি দিলেন। প্রীতি বউদি আর নেই!
মিন্টুর চোখের পানি প্লাবিত করেছে পুরো পৃথিবীকে
মামুন ওর স্ট্যাটাসে আরো লিখেছে, ‘মিন্টু হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে। বলে, আমি ওর বাবা মাকে কি জবাব দেবো! এই মেয়েটা শুধু আমার সঙ্গে থাকার জন্য কি না করেছে। একটা বাবু, শুধু একটা বাবুর জন্য তার সে কি আকূতি! হায়রে ঢাকা! হায়রে চাকুরী! আমি কি জবাব দেবো!’
আমি পড়ছি আর দেখছি, মিন্টুর চোখের পানি মামুনের ওয়ালকে ছাপিয়ে সমস্ত ওয়েবপেজকে ভিজিয়ে পুরো পৃথিবীকে প্লাবিত করছে।
এক পর্যায়ে মামুন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। অসংখ্য ডট দিয়ে নিজের কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করেছে। অনেকটা গ্যাপ দিয়ে মামুন আবার লিখছে, ‘না । আমরা কেউ ওকে সান্ত্বনা দেইনি। সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা কারো জানা ছিল না। আমরা তখনো আশাবাদী ছিলাম। ডাক্তারকে বলে বউদিকে নিয়ে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেলের দিকে রওনা দেই। পুরো যাত্রা পথে আমার বন্ধু বউদির হাত ধরে নির্বাক বসেছিল।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে পৌঁছার পর ডাক্তারের মুখে একই কথা শুনে সবার মাঝে নেমে আসে শোকাতুর নিস্তব্ধতা। আহাজারি করে ওঠেন বউদির মা, বাবা, ভাই, মিন্টুর বাবা-মাসহ উপস্থিত সকলে। আমি হতবাক। আমার বুক যেন ভেঙে যাচ্ছিল। মুহূর্তেই একটা মানুষের জীবন কিভাবে শেষ হয়ে যায়!’
বিচার সবকিছু ফিরিয়ে দিতে পারে না
মামুন প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে লিখছে, ‘মামলা হয়েছে।পুলিশ চেষ্টা করছে আসামিদেরকে গ্রেফতার করার। হয়তো আসামি ধরা পড়বে। বিচার হবে’।
বিচারক মামুনকে হয়তো মানুষ মামুন প্রশ্ন করছে, ‘মিন্টু কি ফিরে পাবে তার প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীকে ? বউদির ভাইয়েরা কি ফিরে পাবেন তাদের একমাত্র বোনকে? মা-বাবা কি ফিরে পাবেন তাদের আদরের কন্যাকে? মিন্টুর বাবা-মা কি ফিরে পাবেন তাদের প্রিয় কন্যাসম পুত্রবধূকে?’
মামুনের কম্পিউটারের বাটনগুলো অবশেষে ভাষা খুঁজে পেয়েছে, ‘এটা নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়। মানুষের জীবন কোনো ছেলেখেলা নয়। কারো নিছক খেয়ালের কারণে অন্য কারো জীবন প্রদীপ থেমে যেতে পারে না।
ইতোমধ্যেই পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে আটক করেছে। আমরা চাই, আর কারো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়, কোনো ভাই যেন তার বোনকে, স্বামী যেন তার স্ত্রীকে, বাবা-মা যেন তার মেয়েকে, শ্বশুর-শাশুড়ি যেন তাদের আদরের বউমাকে না হারান। জীবন শুরু করার বা মেহেদির দাগ মুছে যাওয়ার আগেই যেন কারো জীবনে নেমে না আসে নির্বাক দুঃসহ নির্মম নির্জনতা। আমার বন্ধুর মতো কারো জীবন যেন শ্মশানের চিতার আগুনে দাউ দাউ করে না জ্বলে’।
রুখে দাঁড়াতে হবেই
মামুনের কি-বোর্ডে প্রতিবাদের কথা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলছে, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা তৈরি করেছি এই গ্রুপ। বন্ধুরা, আপনারা সবাই আপনাদের বন্ধুদের এই গ্রুপের সদস্য করে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আগামী শনিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আমরা সবাই সমবেত হবো এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। সেখানে এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন, কালোব্যাজ ধারণ, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। বন্ধুরা, এই সামাজিক আন্দোলনে আমরা আপনাদের সহযোগিতা এবং সবান্ধব অংশগ্রহণ চাই। এই পোস্টটি সকল বন্ধুকে শেয়ার করার অনুরোধ করছি’।
আর নয় প্রীতিদের অপ্রীতিকর চলে যাওয়া
শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে সেন স্যারকে ফোন করলাম। কুশল বিনিময়ের পর স্যারকে মানববন্ধনের কথা বললাম খুব সংকোচের সঙ্গে। বললাম, ‘খুব কম সময়ে ফ্রি করে দেবো’। স্যার খুব দরদী গলায় বললেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। যতোক্ষণ দরকার হয় থাকবো।’
ফেসবুকের চ্যাট অপশনে প্রিয় ভাই রমেনকে পেলাম। তার সঙ্গেও শেয়ার করলাম। তিনি ব্যাপারটি আগে থেকেই অবগত আছেন। আমি জানি, রমেন এই মহৎ কাজের জন্য যতোখানি সম্ভব করবেন। জহুর ভাই, বিশুদা, বাহার ভাই, শামসু ভাই, তপনদা, আরিফ ভাই, রিয়াজ ভাই, বুলবুল ভাই, সরওয়ার ভাই, সবুর ভাই, কমল, রেজা ভাই, পারভেজ ভাই, ফারুক ভাই, ফরিদ ভাই, উজ্জ্বল, নজরুল ভাই, মামুন ভাই, আসিফ ভাই, মিন্টুদা, ইমরান ভাই, বোন লিপি, বোন এমেলিয়া খানম এবং আরও অনেকের কথা মনে পড়ছে। তারাও নিশ্চয়ই জানেন। মানুষের অধিকার রক্ষায় এই ভালো মানুষগুলো ইতোমধ্যে সমাজে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, বীর চট্টলার সমস্ত মানব নিজেদেরকে ‘প্রীতি’র বন্ধনে আবদ্ধ করে স্লোগান তুলবেন, ‘রেলপথে আর কোনো দুর্ঘটনা নয়, প্রীতি দাশ হত্যার বিচার চাই’। বীর চট্টলার সন্তানেরা এই স্লোগান বাস্তবায়ন করেও দেখাবেন। আমরা আর প্রীতিদের অপ্রীতিকর মৃত্যু দেখতে চাই না।
মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমান: যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সচিব (প্রেষণ), পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা
No comments