খুলনায় বহু বিয়ের হোতা বুরুজকে নিয়ে আওয়ামী লীগ বেকায়দায় by রাশিদুল ইসলাম
‘আমার নাম বুরুজ। আমি যা কই তা-ই করি। তার
বাইরে কেউ কিছু করলে পরিণতি হবে বিথারের মতো। বিথারও আমার সঙ্গে বাড়াবাড়ি
করে টিকে থাকতে পারেনি। বিথার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ার পরেও
কেউ আমার কিছু করতে পারেনি।
আর কেউ পারবেও না।’ এ ধরনের
হুঙ্কার দিয়ে খুলনা দাপিয়ে বেড়ান যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক
সম্পাদক এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ। নিজেকে কখনও প্রধানমন্ত্রী কখনও শেখ
সেলিমের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে খুলনার সড়ক ভবন, সিএমএমইউ ও গণপূর্ত ভবনে গত
সাড়ে বছর একক আধিপত্য বিস্তার করে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা
হাতিয়ে নিয়ে বিত্তবৈভবের মালিক হন। আলোচিত এ যুবনেতা বহু বিয়ের হোতা।
প্রকৌশলী ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ভাগিয়ে নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও
স্বর্ণালঙ্কারের মালিক হয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। খুলনার নিউ মার্কেট,
আকতার চেম্বার, গণপূর্ত ভবন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ শেখ আবু নাসের
বিশেষায়িত হাসপাতাল এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে বারবার আলোচনায় এলেও
থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার এসব কর্মকাণ্ডে খুলনা আওয়ামী লীগ বিব্রতকর
অবস্থায় পড়লেও কেন্দ্রীয় নেতাদের আশীর্বাদ থাকায় এতদিন কেউ কোন প্রতিবাদ
করতে সাহস পাননি। তবে সর্বশেষ গত শনিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা ডা.
মাহবুবুল আলম ফারাজীকে জীবননাশের হুমকির ঘটনায় জিডি হওয়া এবং পত্র-পত্রিকায়
প্রকাশের পর খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক
ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করেছে। এমনকি বিষয়টি তদন্ত করে
পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
কে এই বুরুজ: গোপালগঞ্জ জেলার শিবপুর গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক জহুর শেখ ও মাতা উজিরুন নেছার ঘরে ১৯৬৭ সালে এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ৬ষ্ঠ। অভাবের সংসারে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডিও পার হতে পারেননি। পরিবারের অপর সদস্যরা গ্রামে থাকলেও মেজভাই পুলিশ কনস্টেবল রকিব শেখের কর্মস্থল খুলনায় হওয়ার সুবাদে বুরুজ আশির দশকে খুলনায় আসে এবং ১১নং বাগমারা মেইন রোডে বসবাস করে। একই এলাকায় বরুজ ও তার ভাই বালা একটি রিকশার গ্যারেজ দেখাশোনা শুরু করেন। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাদে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দলের নাম ভাঙিয়ে নেমে পড়েন ব্যাপক চাঁদাবাজিতে। আর চাঁদাবাজির টাকা নগরীর ক্লে রোডস্থ জব্বার মার্কেটে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে সুদে বিনিয়োগ করেন। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের মাঝামাঝি সময়ে একটি ঠিকাদারি ফার্মের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব পান বুরুজ। এ সময় সড়ক বিভাগের এক প্রকৌশলীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১০ লক্ষাধিক টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কারসহ তাকে ভাগিয়ে নিয়ে যান। তার ভাই পুলিশে চাকরি করায় প্রকৌশলী স্থানীয় বাসিন্দা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েও স্ত্রীকে উদ্ধার করতে পারেননি। এ স্ত্রী থাকাকালে তার আমেরিকা প্রবাসী এক বন্ধুর স্ত্রীকেও ফুঁসলিয়ে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও বসতবাড়ি দখল করে নেন। এই দু-দু’জন স্ত্রী থকতেও নগরীর শিববাড়ী মোড়স্থ এক পুলিশের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন। পরে প্রকৌশলী ও পুলিশের স্ত্রীদের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। এছাড়া ছাত্রলীগের নেত্রীদের সঙ্গে হোটেলে রাতযাপন ও লং ড্রাইভে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় খুলনা ছেড়ে তিনি গোপালগঞ্জে আশ্রয় নেন।
বুরুজের উত্থান: বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বুরুজ খুলনায় নিজের অবস্থান সুসংগঠিত করতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শহীদ ইকবাল বিথারের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। এক পর্যায়ে নগরীতে বিথারের ডান হাত হিসেবে পরিচিতি পান। পরে টেন্ডার নিয়ে বিথারের সঙ্গে বুরুজের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ সময় তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আশ্রয় আসেন। ২০০৯ সালের ১১ই জুলাই রাতে গুলি করে শহীদ ইকবাল বিথারকে হত্যা করার পর এনিয়ে ব্যাপক আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়। এক পর্যায়ে বিথার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হিরু (পরে ক্রসফায়ারে নিহত), তার শ্যালক রাজু, আকাশ ও শবে কাদির পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তারা নিজেরা হত্যার সঙ্গে সরাসরি অংশ নিয়েছে উল্লেখ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এতে তারা বিথার হত্যাকাণ্ডের অর্থ যোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে বুরুজের নাম উল্লেখ করে। পরে বুরুজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তবে তাকে বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি। জামিনে মুক্তি পেয়ে বিথারের আত্মস্বীকৃত খুনি হিসেবে দাবি করে আরও বেপরোয়া হয় ওঠেন বুরুজ। খুলনার সড়ক ভবন, সিএমএমইউ ও গণপূর্ত ভবনে গত সাড়ে বছর একক আধিপত্য বিস্তার করে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ২০১২ সালের ঈদের আগের রাতে সশস্ত্র অবস্থায় নিউ মার্কেটের অভ্যন্তরে মহড়া দিলে ব্যবসায়ীরা আতংকে মার্কেটের গেট বন্ধ করে দেয়। এ সময় সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান তাকে অস্ত্রসহ আটক করলে বুরুজ মোবাইল করে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যকে ধরিয়ে দিলে ওসি তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে বলেন। এনিয়ে ওই সময় পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। বুরুজ গণপূর্ত বিভাগের ১ ও ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীদের মারধর করেছেন। এছাড়া দলের একাধিক নেতা তার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। সমপ্রতি বয়রাস্থ পিএমজি কলোনির এক কর্মচারীর মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ায় উত্তম-মাধ্যম দেয়া হয়। আলোচিত এ যুবলীগ নেতা প্রধানমন্ত্রী, শেখ ফজলুল হক মনি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ও প্যানা লাগিয়েছে গোটা শহরে। তার এসব কর্মকাণ্ডে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ চরম বেকায়দায় পড়েছে।
বুরুজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি: যুবলীগ নামধারী মেজবাহ উদ্দিন বুরুজের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে তারা বলেন, যারা দলের নাম ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, অফিস আদালতসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কেউ হতে পারে না। যারা সব সময়ই আর্ত মানবতার কাজে নিয়োজিত থাকে তাদের উপর ন্যক্কারজনক হামলা চালায় সে তো হতেই পারে না। সুতরাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর হামলার দায় কেবল বুরুজকেই বহন করতে হবে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় কোন অবস্থায়ই দল বহন করবে না। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের কাছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিরত থাকার জন্য বুরুজসহ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হলো। চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। জনগণ যাতে আপনাদের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন কেন্দ্রীয় নেত্রী ও শ্রম কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজান।
এ ব্যাপারে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। ব্যাপারটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আমাকে ভুল বুঝেছেন। মহানগর সেক্রেটারি মিজান ভাই ডাক্তারদের ডেকেছেন। তিনি বলেন, শেখ হেলাল ও শেখ সেলিমের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। আমি কোন চাঁদাবাজি করি না। আমি ঠিকাদারি নিয়ে ব্যস্ত।
কে এই বুরুজ: গোপালগঞ্জ জেলার শিবপুর গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক জহুর শেখ ও মাতা উজিরুন নেছার ঘরে ১৯৬৭ সালে এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ৬ষ্ঠ। অভাবের সংসারে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডিও পার হতে পারেননি। পরিবারের অপর সদস্যরা গ্রামে থাকলেও মেজভাই পুলিশ কনস্টেবল রকিব শেখের কর্মস্থল খুলনায় হওয়ার সুবাদে বুরুজ আশির দশকে খুলনায় আসে এবং ১১নং বাগমারা মেইন রোডে বসবাস করে। একই এলাকায় বরুজ ও তার ভাই বালা একটি রিকশার গ্যারেজ দেখাশোনা শুরু করেন। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাদে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দলের নাম ভাঙিয়ে নেমে পড়েন ব্যাপক চাঁদাবাজিতে। আর চাঁদাবাজির টাকা নগরীর ক্লে রোডস্থ জব্বার মার্কেটে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে সুদে বিনিয়োগ করেন। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের মাঝামাঝি সময়ে একটি ঠিকাদারি ফার্মের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব পান বুরুজ। এ সময় সড়ক বিভাগের এক প্রকৌশলীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১০ লক্ষাধিক টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কারসহ তাকে ভাগিয়ে নিয়ে যান। তার ভাই পুলিশে চাকরি করায় প্রকৌশলী স্থানীয় বাসিন্দা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েও স্ত্রীকে উদ্ধার করতে পারেননি। এ স্ত্রী থাকাকালে তার আমেরিকা প্রবাসী এক বন্ধুর স্ত্রীকেও ফুঁসলিয়ে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও বসতবাড়ি দখল করে নেন। এই দু-দু’জন স্ত্রী থকতেও নগরীর শিববাড়ী মোড়স্থ এক পুলিশের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন। পরে প্রকৌশলী ও পুলিশের স্ত্রীদের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। এছাড়া ছাত্রলীগের নেত্রীদের সঙ্গে হোটেলে রাতযাপন ও লং ড্রাইভে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় খুলনা ছেড়ে তিনি গোপালগঞ্জে আশ্রয় নেন।
বুরুজের উত্থান: বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বুরুজ খুলনায় নিজের অবস্থান সুসংগঠিত করতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শহীদ ইকবাল বিথারের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। এক পর্যায়ে নগরীতে বিথারের ডান হাত হিসেবে পরিচিতি পান। পরে টেন্ডার নিয়ে বিথারের সঙ্গে বুরুজের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ সময় তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আশ্রয় আসেন। ২০০৯ সালের ১১ই জুলাই রাতে গুলি করে শহীদ ইকবাল বিথারকে হত্যা করার পর এনিয়ে ব্যাপক আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়। এক পর্যায়ে বিথার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হিরু (পরে ক্রসফায়ারে নিহত), তার শ্যালক রাজু, আকাশ ও শবে কাদির পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তারা নিজেরা হত্যার সঙ্গে সরাসরি অংশ নিয়েছে উল্লেখ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এতে তারা বিথার হত্যাকাণ্ডের অর্থ যোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে বুরুজের নাম উল্লেখ করে। পরে বুরুজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তবে তাকে বেশি দিন কারাগারে থাকতে হয়নি। জামিনে মুক্তি পেয়ে বিথারের আত্মস্বীকৃত খুনি হিসেবে দাবি করে আরও বেপরোয়া হয় ওঠেন বুরুজ। খুলনার সড়ক ভবন, সিএমএমইউ ও গণপূর্ত ভবনে গত সাড়ে বছর একক আধিপত্য বিস্তার করে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ২০১২ সালের ঈদের আগের রাতে সশস্ত্র অবস্থায় নিউ মার্কেটের অভ্যন্তরে মহড়া দিলে ব্যবসায়ীরা আতংকে মার্কেটের গেট বন্ধ করে দেয়। এ সময় সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান তাকে অস্ত্রসহ আটক করলে বুরুজ মোবাইল করে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যকে ধরিয়ে দিলে ওসি তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে বলেন। এনিয়ে ওই সময় পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। বুরুজ গণপূর্ত বিভাগের ১ ও ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীদের মারধর করেছেন। এছাড়া দলের একাধিক নেতা তার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। সমপ্রতি বয়রাস্থ পিএমজি কলোনির এক কর্মচারীর মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ায় উত্তম-মাধ্যম দেয়া হয়। আলোচিত এ যুবলীগ নেতা প্রধানমন্ত্রী, শেখ ফজলুল হক মনি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ও প্যানা লাগিয়েছে গোটা শহরে। তার এসব কর্মকাণ্ডে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ চরম বেকায়দায় পড়েছে।
বুরুজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি: যুবলীগ নামধারী মেজবাহ উদ্দিন বুরুজের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে তারা বলেন, যারা দলের নাম ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, অফিস আদালতসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কেউ হতে পারে না। যারা সব সময়ই আর্ত মানবতার কাজে নিয়োজিত থাকে তাদের উপর ন্যক্কারজনক হামলা চালায় সে তো হতেই পারে না। সুতরাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর হামলার দায় কেবল বুরুজকেই বহন করতে হবে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় কোন অবস্থায়ই দল বহন করবে না। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের কাছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিরত থাকার জন্য বুরুজসহ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হলো। চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। জনগণ যাতে আপনাদের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন কেন্দ্রীয় নেত্রী ও শ্রম কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজান।
এ ব্যাপারে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। ব্যাপারটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আমাকে ভুল বুঝেছেন। মহানগর সেক্রেটারি মিজান ভাই ডাক্তারদের ডেকেছেন। তিনি বলেন, শেখ হেলাল ও শেখ সেলিমের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। আমি কোন চাঁদাবাজি করি না। আমি ঠিকাদারি নিয়ে ব্যস্ত।
No comments