জামায়াত মরিয়া- রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে by মামুন-অর-রশিদ
অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের প্রেৰাপটে মরিয়া হয়ে উঠছে জামায়াত। অতীত
অপকর্মের দায় থেকে বাঁচতে জামায়াত এখন হত্যা জিঘাংসা, নির্যাতন আর নাৎসী
বর্বতার পথ ধরেছে।
সশস্ত্র শিবির ক্যাডার ও তাদের 'রগকাটা' বাহিনীকে দেশে
অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে ষড়যন্ত্রে নামিয়েছে জামায়াত। এভাবে বিশেষ পরিস্থিতি
তৈরি করে জামায়াত চক্র যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে আত্মরৰা এবং পঞ্চম সংশোধনী
বাতিলের রায় কার্যকর প্রতিরোধ করতে চায়। প্রসঙ্গত, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের
পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধর্মীয় রাজনীতি রহিত হওয়ার শঙ্কা আর যুদ্ধাপরাধের
বিচারের ব্যাপারে মহাজোট সরকারের কঠোর অবস্থান জামায়াতকে এখন দিশেহারা করে
দিয়েছে। ধর্মীয় রাজনীতির অসত্মিত্ব রৰা এবং যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে জামায়াত
'৭১-এর মতো হত্যা-ষড়যন্ত্রের পথ ধরেছে। জামায়াত এযাত্রা নরহত্যার ভার
দিয়েছে মৌলবাদী জঙ্গী ঘাতক বাংলাভাইয়ের আদি সংগঠন শিবিরকে। বিপুল অস্ত্র
সরবরাহ করে সশস্ত্র তৎপরতায় মাঠে নামানো হয়েছে শিবিরের দুর্ধর্ষ নরঘাতক
বাহিনীকে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশেই শিবিরের 'রগ কাটা' বাহিনী এবার
মরণকামড় দিয়ে মাঠে নেমেছে। শিবিরের রগকাটা বাহিনীর সর্বশেষ কতলের শিকার
হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা
ফারম্নক হোসেন।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ঔদ্ধত্য সরকারের সামনে এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর গত চার দশকে শিবির বিভিন্ন সময় লাশের রাজনীতিতে সহস্রাধিক ছাত্র-যুবককে হত্যা করেছে। গত ৩৯ বছরে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই শিবির হত্যা করেছে ৭২ জনকে। জোট আমলের পাঁচ বছরে সারাদেশে শিবির হত্যা করেছে ৫০ জনকে। সংশিস্নষ্ট বিষয়ে একটি গবেষণা সেল সূত্রে খুনের বীভৎস উন্মাদনায় শিবিরের নরহত্যার এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।
মুখ্যত, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পথ রম্নদ্ধ করে দিতেই শিবিরকে ব্যাপক বিধ্বংসী পরিকল্পনা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। এই পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায়ে সারাদেশে সকল শিৰা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়াই তাদের মূল লৰ্য। এ কারণে শিবির ক্যাডাররা রাতভর সশস্ত্র সংঘর্ষ, রাজনৈতিক প্রতিপৰকে হত্যা, রগ কাটা আর টর্চার সেলে নাৎসী বর্বরতার আদলে নির্যাতনের মাধ্যমে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার মাধ্যমে বিশেষ পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। হত্যা, লাশ আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ভয়ের আগলেই তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দূরভিসন্ধি করছে। অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যনত্মরীণ নিরাপত্তা কর্তৃপৰ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অধিভুক্ত ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর স্টাডি অব টেরোরিজম এ্যান্ড রেসপন্স টু টেরোরিজমের তৈরি ফাইলে ছাত্রশিবিরের কর্মকা-ে সন্ত্রাসী তৎপরতা ছাড়াও শিবির আনত্মর্জাতিক পর্যায়ে কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে উলেস্নখ করা হয়।
আকস্মিক শিবিরের এই হত্যা মিশনের প্রক্রিয়া দেখে অনেকেই জোট শাসনামলে নিজামীর দেয়া বক্তব্য আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। বিএনপি-জামায়াত ৰমতায় থাকতে পল্টনের এক জনসভায় জামায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন, "জামায়াত-শিবির কচু পাতার পানি নয় যে টোকা দিলেই পড়ে যাবে।" নিজামীর সেদিনের বক্তব্যের যথার্থতা শিবির আজ হত্যা-রগ কাটার সংস্কৃতি পুনঃচর্চার মাধ্যমে তুলে ধরছে। নিজামীর সেদিনের বক্তব্য এবং শিবিরের বর্তমান কর্মকা- পর্যবেৰনের পর সাধারণ মানুষের সরল দৃষ্টিতে বলছে, "শিবির হচ্ছে রগ কাটা বাহিনী', 'নরঘাতক', 'হায়েনা' ইত্যাদি।" সাধারণ মানুষের দাবি, "শিৰার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে শিৰাঙ্গন শিবিরমুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের বিরম্নদ্ধে ষড়যন্ত্র রম্নখতে হলে যত শীঘ্র সম্ভব সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় অনুযায়ী জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত।"
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির পর মহাজোট সরকার এখন ধর্মের লেবাসধারী জামায়াত শিবির চক্রের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। '৭৫-এর আগস্ট ট্র্যাজেডির ৩৪ বছর পর জাতি-রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিচারের পরই অজানা আতঙ্কে পেয়ে বসে জামায়াতকে। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গত ৩৪ বছরের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো রথে চলেছে। খুনীরা রাষ্ট্র-সরকারের প্রত্যৰ সাহায্য-সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। খুনী চক্র এবং ৰমতাধর তাদের দোসররা এতই শক্তিশালী বলয় গড়ে তুলে যাতে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে। সকল বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যনত্ম বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হলো এবং কারাবন্দী পাঁচ খুনীর ফাঁসি হয়। এতে টনক নড়ে একাত্তরের ঘাতক রাজাকার আল বদর আল শামস বাহিনীর।
মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার আল বদর, আল শামস বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারম্নজ্জামানসহ অর্ধশতাধিক যুদ্ধাপরাধীর হৃদকম্পন বেড়ে যায়। শুরম্ন করে আত্মরৰার পথ খুঁজতে। চলতি সপ্তাহে জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের একটি দল সাংগঠনিক সফরে রাজশাহী যায়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের টিমটি রাজশাহী থেকে রবিবার ফিরে আসার পর সোমবার রাতে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম (এসএম) হলে সামান্য সিট নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে শিবির ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নককে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, হত্যার পর বাংলাভাইয়ের হত্যা মিশন কিংবা বিডিআর অপারেশনের মতো মৃতদেহ সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেয়। পরদিন মঙ্গলবার পুলিশ সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে এই মরদেহ উদ্ধার করে। একই সঙ্গে শিবির ক্যাডাররা তাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী চার ছাত্রলীগ নেতার পায়ের রগ কেটে দেয়। রগ কাটা চারজনের মধ্যে দু'জনকে বুধবার রাতে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নূ্যনতম নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত ও পেশাদার মিথ্যাবাদী (হেভিচু্যয়াল লায়ার) নিজামী-মুজাহিদের দল জামায়াতের একাত্তরে ঘৃণ্য নিন্দিত অপকর্ম আজ আর কারও অজানা নয়। সেদিনের নারী ধর্ষণ, লুটপাট, গণহত্যা আর অগি্নসংযোগের মতো অপরাধের দায় থেকে বাঁচতেই তারা মহাজোট সরকার হটানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র বাসত্মবায়নে শিবিরকে দিয়ে সশস্ত্র তৎপরতা শুরম্ন করেছে। একের পর এক নরহত্যার নারকীয় উলস্নাসে তারা মেতে উঠেছে। মুখ্যত, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পথ রম্নদ্ধ করে দিতেই জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির ব্যাপক বিধ্বংসী পরিকল্পনা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। এই পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায়ে সারাদেশে সকল শিৰাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়াই তাদের মূল লৰ্য। এ কারণে রাতভর সশস্ত্র সংঘর্ষ, রাজনৈতিক প্রতিপৰকে হত্যা, রগ কাটা আর টর্চার সেলে নাৎসী বর্বরতার আদলে নির্যাতনের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেয়ার মাধ্যমে বিশেষ পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। হত্যা, লাশ আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সারাদেশে ভয়ের আগলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দূরভিসন্ধি করছে।
জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অদৃশ্য ইশারায় শিবির যে এ কাজে নেমেছে তার স্বাৰর বহন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। রাজশাহী থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ঘুরে আসার পরদিনই শিবিরের খুনী বাহিনী শাহ মখদুম (এসএম) হলের ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নককে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা চার ছাত্রলীগ নেতার রগ কেটে দেয় এবং অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে আহত করে। সরকারী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের এভাবে হত্যা, রগ কাটা আর নির্যাতন করে আসলে তারা সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের এহেন ঔদ্ধত্য আর স্পর্ধায় সারাদেশের মানুষ হতবাক। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শিবিরের বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির রাজনৈতিক প্রতিপৰকে নির্মূলে বেছে নিয়েছে হত্যার পথ। সর্বশেষ সোমবার শেষ রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মেধাবী ছাত্র ফারম্নককে 'কতল' করে শিবির ক্যাডাররা। ফারম্নককে হত্যার পর তার মরদেহ সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়ে নারকীয় উলস্নাসে মেতে ওঠে নরঘাতকের দল। বিভিন্ন শিৰাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতার পিছনে কাজ করছে ছাত্রলীগে ঢুকে পড়া ছদ্মবেশী শিবির কর্মীরা। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বিভিন্ন শিৰাপ্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিচ্ছে দিনে ছাত্রলীগ এবং রাতে শিবির কর্মী হয়ে যাওয়া ছদ্মবেশী শিবির ক্যাডাররা।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জামায়াত শিবিরের যুদ্ধাপরাধী চক্র। সর্বশেষ আগামী মার্চ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করার সরকারী ঘোষণায় যুদ্ধাপরাধীদের হৃদকম্পন শুরম্ন হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার হলে দেশে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতকে সবচেয়ে বেশি খেসারত দিতে হবে। তাই জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে।
১৯৪৭ তালে মওদুদী প্রথম এই সংগঠনের জন্ম দেন। ১৯৫৫ সালে এটি ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম ধারণ করে। '৭৫-এর আগস্ট ট্র্যাজেডির পর ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়ার আশীর্বাদে শিবিরের জন্ম হয়। এরপর বিভিন্ন শিৰাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য কায়েম করতে গিয়ে তারা 'রগ কাটা' বাহিনীর 'খ্যাতি' (!) পায়। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে শিবির ব্রাশফায়ার করে ছাত্রলীগের আটজন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। হত্যার রাজনীতিতে শিবিরের পারঙ্গমতা আজ নতুন নয়। শিবির ক্যাডাররাই গত জোট সরকারের আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক অধ্যাপক ইউনুস ও অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করেছিল। শিবির ক্যাডাররা দুর্গম চর ও পাহাড়ী এলাকায় সশস্ত্র ট্রেনিং নেয়, যা অনেকবার আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে এবং গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।
No comments