বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি by জাকিয়া আহমেদ, জেসমিন পাঁপড়ি ও মেহেদী হাসান পিয়াস
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আবুল কালাম আজাদ
ওরফে বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল-২।
দেশে এই প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় ঘোষণা হলো। সোমবার
দুপুর পৌনে ১২টায় জনাকীর্ণ আদালতে এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করা হয়।
সকাল পৌনে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রায় পাঠ করা শুরু করেন। রায় ঘোষণা শেষ হয় দুপুর
পৌনে ১২টায়। ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থান সংকুলান না হওয়ায় আজকের আদালত বসে
ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
রায় শুরুর আগেই চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সকলের সহযোগিতা কামনা
করেন। তিনি বলেন, “দেশে এই প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় হতে যাচ্ছে।
আমি এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।”
পরে জনার্কীর্ণ আদালতকক্ষে তিনি ১১২ পৃষ্ঠার রায় রায় পড়তে শুরু করেন।
সঙ্গে ছিলেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর অপর দুই বিপারপতিও। ৩৩৪টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত
রায়টি সংক্ষেপ করে পাঠ করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে জানায়, বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মহান
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট আটটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তার
মধ্যে সাতটিতেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তিনটিতে বাচ্চু রাজাকারকে
মৃত্যুদণ্ড, ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১টি অভিযোগ প্রসিকিউশন
প্রমাণ করতে না পারায় সেটি খারিজ করা হয়েছে।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে ১৪ জনকে হত্যা, তিন নারীকে
ধর্ষণ, নয়জনকে অপহরণ, ১০ জনকে আটক রাখা, পাঁচ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ১৫টি
বাড়ির মালামাল লুণ্ঠনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামি দলটির
প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে- এই দলটি সংগঠন হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
সঙ্গে নয় মাসব্যাপী ধারাবাহিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে সক্রিয় অংশগ্রহণ
করে।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ঘোষিত এ রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
তবে পলাতক থাকায় বাচ্চু রাজাকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব হয় নি। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগেই পালিয়ে ভারত হয়ে তিনি পাকিস্তানে চলে যান বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে পলাতক থাকায় বাচ্চু রাজাকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব হয় নি। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগেই পালিয়ে ভারত হয়ে তিনি পাকিস্তানে চলে যান বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে দেওয়া এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য
হাইকোর্টে পাঠানোর প্রয়োজন হবে না। নিম্ন আদালতে কোনো মামলার রায় হলে তা
যেমন উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়, যুদ্ধাপরাধের এই রায়ে তার প্রয়োজন নেই বলে
সাংবাদিকদের জানান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।
তিনি বলেন, যেহেতু ট্রাইব্যুনাল উচ্চ-আদালতের সমপর্যায়ের বিচারপতিদের
সমন্বয়ে গঠিত সেহেতু তাদের রায়ে উচ্চ আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন নেই। তবে এই
রায়ে আসামি অখুশি থাকলে তিনি রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। আর তা
না করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগই এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ
করবেন।
অন্যদিকে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান বলেছেন, পলাতক বাচ্চু রাজাকারকে
গ্রেপ্তার করা হলে কিংবা তিনি আত্ম-সমর্পণ করলে তার পরবর্তী ৩০ দিনের
মধ্যেও তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
জেয়াদ আল মালুম আরও বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে সকল যড়যন্ত্রের অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। খুন, ধর্ষণ করে পার পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। ৪০ বছর পরে হলেও অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিজস্ব আইনে পরিচালিত ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে বিচার সম্পন্ন করেছে।
এদিকে এই রায়ে অখুশি আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুস শুকুর খান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘ন্যয়বিচার পাই নি। আসামির পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা পেলে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্য প্রমাণ করা যেতো।’’
জেয়াদ আল মালুম আরও বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে সকল যড়যন্ত্রের অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। খুন, ধর্ষণ করে পার পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। ৪০ বছর পরে হলেও অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিজস্ব আইনে পরিচালিত ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে বিচার সম্পন্ন করেছে।
এদিকে এই রায়ে অখুশি আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুস শুকুর খান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘ন্যয়বিচার পাই নি। আসামির পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা পেলে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্য প্রমাণ করা যেতো।’’
২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ
করার মাধ্যমে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়। এরপর এ মামলার রায়
অপেক্ষমান (সিএভি) রেখে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ শুরু হয় একাত্তরে
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের
বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা।
No comments