সুন্দরবনের জলদস্যু- আতঙ্কের অবসান চাই

সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে সক্রিয় জলদস্যুরা কতটা ভয়ঙ্কর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দুবলাচর ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়েই তা প্রথম প্রমাণ হলো না। রোববারের সমকালের প্রধান প্রতিবেদনেই রয়েছে_ শুধু লুটপাট ও অপহরণ করেই ক্ষান্ত থাকে না জলদস্যুরা।
জেলেদের হাত-পা বেঁধে সাগরে নিক্ষেপের মতো নিষ্ঠুরতাও চলে অহরহ। সুন্দরবন ঘিরে তৎপর ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত কমবেশি ১৪টি দস্যুবাহিনীর হাতে প্রতিবছর গড়ে ৮শ' থেকে এক হাজার জেলে অপহৃত হয়। গত তিন বছরে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে দুই শতাধিক জেলে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সমকালের এই শিরোনাম যথার্থ যে, 'ওরা বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর'। বস্তুত জলদস্যুর নিষ্ঠুরতা নিয়ে এর আগেও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত উপকূল ঘিরে থাকা এসব মূর্তিমান আতঙ্কের অবসান হয়নি। বরং কখনও কখনও পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, জেলেদের কাফনের কাপড় পরে মিছিল-সমাবেশও করতে হয়েছে। কেবল জেলে নয়, সুন্দরবনের বাওয়ালি-মৌয়ালরাও দস্যুতার শিকার। কোথাও কোথাও দস্যুরা নিজস্ব 'কর আদায়' ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে জলে-স্থলে জেলেদের জিম্মিদশা কি চলতেই থাকবে? আমরা জানি, জনাব জিয়াউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরেই বনদস্যু দমনে আন্দোলন করছেন। লুটেরাদের দুঃসাহস এতটাই বেড়েছে যে, তার মতো সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের ওপর হামলা চালাতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। এটা স্বস্তিকর যে, তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উপকূলীয় মৎস্য ও বনজ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার অসম্ভব। বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন ও লুটপাট সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও হতাশাজনক। দস্যুবাহিনীর নামে প্রতিষ্ঠিত অর্থ আদায় ব্যবস্থা সার্বভৌমত্ব ও আইনের শাসনের প্রতি উপহাস ছাড়া আর কী? মনে রাখতে হবে, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, সমুদ্রসীমার বিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি কারণেও উপকূল এখন স্পর্শকাতর অঞ্চল; নিছক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র নয়। কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে কি জলদস্যুর অভয়ারণ্যে পরিণত হবে? আমরা মনে করি, আরও বড় অঘটনের আগেই দুষ্টের দমন অপরিহার্য। আমরা আশা করি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ড জলদস্যুবিরোধী যে অভিযানে নেমেছে, তা সফল হোক। সংস্থাগুলোর শক্তি বৃদ্ধির কথাও ভাবতে হবে। জলদস্যু নিবারণে জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উপকূলে জলদস্যুর রাজত্বের অবসান হোক। সম্ভাবনার সিংহদুয়ার হয়ে উঠুক দেশের দক্ষিণ পাদদেশ।

No comments

Powered by Blogger.