ডেসটিনি ও এর পরিচালকদের প্রতারণার আরও তথ্য পেয়েছে দুদক- গ্রাহকদের টাকায় বিপুল সম্পত্তি রফিকুলের by অনিকা ফারজানা
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে অর্থ পাচারেরও প্রমাণ পেয়েছে।
এর পাশাপাশি ডেসটিনি গ্রুপের প্রতারণার নতুন নতুন তথ্যও দুদক অনুসন্ধান করে পেয়েছে। বিক্রি করা ছয় কোটি গাছের মধ্যে মাত্র ৪২ লাখ গাছ খুঁজে পাওয়া গেছে। অথচ প্রতিটি গাছের জন্যই অর্থ নিয়েছে ডেসটিনি। ফলে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গাছ বিক্রি হলেও এর সামান্যই ফেরত পাবেন গ্রাহকেরা।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, রফিকুল আমীনের বাংলাদেশ ছাড়া কানাডারও নাগরিকত্ব রয়েছে। পাসপোর্টও দুই দেশের দুটি। কানাডায় তিনি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেন। আবার রাজধানী ঢাকায় নিজের নামেই আছে ১৯টি ফ্ল্যাট।
প্রতারণার জন্য অভিযুক্ত ডেসটিনি গ্রুপের ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ ও ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা অবৈধ ব্যবহারের (মানি লন্ডারিং) প্রমাণ পায় দুদক। এ অভিযোগে গত বছরের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় দুটি মামলা দায়ের করে কমিশন। এতে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশিদসহ ডেসটিনির শীর্ষ ২২ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ডেসটিনির এমডি, পরিচালকসহ চারজনকে। এর পরই বিস্তারিত তদন্ত শুরু করে দুদক। এতেই আরও অনেক তথ্য পায় সংস্থাটি। দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান এ বিষয়ে গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, এটি এখনো তদন্তাধীন বিষয়। কাজ চলছে। আর এত বিপুল পরিমাণ অর্থের বিষয়ে তদন্ত শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা অভিযোগপত্র হাতে পেতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
৪১টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ: এদিকে ডেসটিনির ২২ কর্মকর্তার ৪১টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জহুরুল হক এই আদেশ দেন। এর আগে দুই দফায় ৬০৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গত বছরের ২৭ নভেম্বর রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ফারাহ দীবা আমিন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ২২ কর্মকর্তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত।
আবেদনে বলা হয়, রফিকুল আমীন, মোহাম্মদ হোসেন ও অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জনগণকে বেশি লোভ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তাঁরা আত্মসাৎ করা অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকের ৪১টি হিসাবে মোট চার কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা জমা রেখেছেন। তা জব্দ করা প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেন।
জমি ও গাড়ির হিসাব: জানা গেছে, দুদকের তদন্ত দল ডেসটিনির নামে ৫৯২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অর্থমূল্যের জমির তথ্য পেয়েছে দুদক। এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দলিলের ওপর ভিত্তি করে। এসব জমি পাওয়া গেছে রাঙামাটি ছাড়া চট্টগ্রামের সব জেলা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ফেনী, কুমিল্লা, সাভার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে। এসব জমির বেশির ভাগের মালিক রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ও মোহাম্মদ হোসেন। এ ছাড়া গ্রুপের ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামেও জমি রয়েছে।
তা ছাড়া এখন পর্যন্ত ১০৯টি গাড়ির তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রফিকুল আমীন ও তাঁর স্ত্রীর নামে পাঁচটি, অন্যান্য পরিচালকের নামে আরও পাঁচটি এবং বাকিগুলো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন করা। রাখার জায়গা না থাকায় আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সেগুলো জব্দ করা যাচ্ছে না বলে জানায় দুদক সূত্র।
গাছ নিয়ে প্রতারণা: ডেসটিনির দাবি করা ছয় কোটি ১৮ লাখ ৬৩০টি গাছের মধ্যে অস্তিত্ব রয়েছে মাত্র ৪২ লাখ গাছের। অর্থাৎ, মাত্র ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আবার ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকারও কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি তদন্ত দলের সদস্য আখতার হামিদ ভূঁইয়া, মোজাহার আলী সরদার, মাহমুদুল হাসান, বেনজীর আহমেদ এবং অডিট প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তা চট্টগ্রামে যান। তাঁরা কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী এলাকায় ডেসটিনির ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের আওতায় ৪২টি বাগান সরেজমিন ঘুরে এই তথ্য পান। এ কাজে তাঁরা বন ও ভূমি বিভাগের সাহায্য নেন।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ সূত্র জানায়, দুদকের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকল্পের গাছের সংখ্যা প্রায় সাত কোটি থেকে ৮১ লাখে নেমে আসে। সর্বশেষ জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল আমীন জানান, চট্টগ্রামের চারটি জেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৮১ লাখ গাছ লাগিয়েছেন, যে গাছ বিক্রি করে সাধারণ মানুষের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব। কিন্তু সরেজমিনে উল্টো চিত্র পাওয়া যায়।
বিদেশে অবৈধ অর্থ লেনদেন: ডেসটিনির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাঁচটি দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগেরও সত্যতা পেয়েছে দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাহায্যে দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, হংকং ও কানাডায় ডেসটিনি ও তাদের কর্মকর্তাদের নামে বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ সিঙ্গাপুরে দুটি হিসাবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি হিসাব রফিকুল আমীনের নামে। অন্যটি ডেসটিনি সিঙ্গাপুরের নামে। ওই দুই হিসাবে প্রায় ৭৭ হাজার ৬০০ সিঙ্গাপুর ডলার পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৯ টাকা ৫০ পয়সা।
রফিকুল আমীনের হিসাবে ৬৪ হাজার ৫৮১ সিঙ্গাপুর ডলার (৪২ লাখ এক হাজার ৮৫০ টাকা) এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ১৩ হাজার ২৭ দশমিক ৭৮ সিঙ্গাপুর ডলার (আট লাখ ৪৭ হাজার ৬১২ টাকা ৬১ পয়সা) পাচার করা হয়েছে। রফিকুল আমীন কানাডার জাতীয়তা (কানাডা পাসপোর্ট বিএ ৬৬৫৬৪৯) নিয়ে সেখানে ডেসটিনি সিঙ্গাপুর নামে ব্যবসা চালু করেছেন।
আবার হংকংয়ের একটি ব্যাংকে সফটক অনলাইন (হংকং) লিমিটেডের নামে ৫০ কোটি টাকার মালামাল আমদানি দেখিয়েও অর্থ পাচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে হংকংয়ের নাগরিক নোয়েল জি ক্যারির সঙ্গে ৫০ শতাংশ শেয়ারে ব্যবসা করতেন রফিকুল আমীন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ২০১১ সালে ডেসটিনি গ্রুপের বেস্ট এভিয়েশন লিমিটেডের পক্ষ থেকে ফ্রান্সের ইটিওপিএস ট্রেনিং এভিয়েশন অ্যান্ড সার্ভিসেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৮৪ হাজার ৬০০ ইউরো অবৈধভাবে পাঠানো হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯০ লাখ সাত হাজার ৫২ টাকা ৮৩ পয়সা।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল আমীন জানিয়েছেন, কানাডার নভাস্কশিয়ার ব্যাংকে একটি হিসাব এবং মালয়েশিয়ায় একটি লোন (ঋণ) হিসাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জেপি মর্গান চেজ ব্যাংকে (হিসাব নম্বর ৩০৩০৬১০০৪৬) ডেসটিনির রফিকুল আমীনের নিজ নামের আরেকটি হিসাবে বেশ কিছু অর্থ পাচারেরও প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
এ বিষয়ে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ সূত্র জানায়, এসব হিসাবের মাধ্যমে মোট কত টাকা পাচার হয়েছে, সে হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) মাধ্যমে অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কমিশনের কাছে একটি আবেদন করেছে তদন্ত দল।
রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন, পরিচালক দিদারুল আলম দুদকের রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন হারুন-অর-রশিদ। অন্যদের পলাতক ঘোষণা করেছে দুদক। ২৪ জানুয়ারি পলাতক আসামিদের আদালতে হাজির করতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, রফিকুল আমীনের বাংলাদেশ ছাড়া কানাডারও নাগরিকত্ব রয়েছে। পাসপোর্টও দুই দেশের দুটি। কানাডায় তিনি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেন। আবার রাজধানী ঢাকায় নিজের নামেই আছে ১৯টি ফ্ল্যাট।
প্রতারণার জন্য অভিযুক্ত ডেসটিনি গ্রুপের ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ ও ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা অবৈধ ব্যবহারের (মানি লন্ডারিং) প্রমাণ পায় দুদক। এ অভিযোগে গত বছরের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় দুটি মামলা দায়ের করে কমিশন। এতে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশিদসহ ডেসটিনির শীর্ষ ২২ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ডেসটিনির এমডি, পরিচালকসহ চারজনকে। এর পরই বিস্তারিত তদন্ত শুরু করে দুদক। এতেই আরও অনেক তথ্য পায় সংস্থাটি। দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান এ বিষয়ে গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, এটি এখনো তদন্তাধীন বিষয়। কাজ চলছে। আর এত বিপুল পরিমাণ অর্থের বিষয়ে তদন্ত শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে। ফলে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা অভিযোগপত্র হাতে পেতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
৪১টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ: এদিকে ডেসটিনির ২২ কর্মকর্তার ৪১টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জহুরুল হক এই আদেশ দেন। এর আগে দুই দফায় ৬০৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গত বছরের ২৭ নভেম্বর রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ফারাহ দীবা আমিন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ২২ কর্মকর্তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত।
আবেদনে বলা হয়, রফিকুল আমীন, মোহাম্মদ হোসেন ও অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জনগণকে বেশি লোভ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তাঁরা আত্মসাৎ করা অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকের ৪১টি হিসাবে মোট চার কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা জমা রেখেছেন। তা জব্দ করা প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেন।
জমি ও গাড়ির হিসাব: জানা গেছে, দুদকের তদন্ত দল ডেসটিনির নামে ৫৯২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অর্থমূল্যের জমির তথ্য পেয়েছে দুদক। এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দলিলের ওপর ভিত্তি করে। এসব জমি পাওয়া গেছে রাঙামাটি ছাড়া চট্টগ্রামের সব জেলা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ফেনী, কুমিল্লা, সাভার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে। এসব জমির বেশির ভাগের মালিক রফিকুল আমীন, তাঁর স্ত্রী ও মোহাম্মদ হোসেন। এ ছাড়া গ্রুপের ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামেও জমি রয়েছে।
তা ছাড়া এখন পর্যন্ত ১০৯টি গাড়ির তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রফিকুল আমীন ও তাঁর স্ত্রীর নামে পাঁচটি, অন্যান্য পরিচালকের নামে আরও পাঁচটি এবং বাকিগুলো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন করা। রাখার জায়গা না থাকায় আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সেগুলো জব্দ করা যাচ্ছে না বলে জানায় দুদক সূত্র।
গাছ নিয়ে প্রতারণা: ডেসটিনির দাবি করা ছয় কোটি ১৮ লাখ ৬৩০টি গাছের মধ্যে অস্তিত্ব রয়েছে মাত্র ৪২ লাখ গাছের। অর্থাৎ, মাত্র ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আবার ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশনের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকারও কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি তদন্ত দলের সদস্য আখতার হামিদ ভূঁইয়া, মোজাহার আলী সরদার, মাহমুদুল হাসান, বেনজীর আহমেদ এবং অডিট প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তা চট্টগ্রামে যান। তাঁরা কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী এলাকায় ডেসটিনির ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পের আওতায় ৪২টি বাগান সরেজমিন ঘুরে এই তথ্য পান। এ কাজে তাঁরা বন ও ভূমি বিভাগের সাহায্য নেন।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ সূত্র জানায়, দুদকের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকল্পের গাছের সংখ্যা প্রায় সাত কোটি থেকে ৮১ লাখে নেমে আসে। সর্বশেষ জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল আমীন জানান, চট্টগ্রামের চারটি জেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৮১ লাখ গাছ লাগিয়েছেন, যে গাছ বিক্রি করে সাধারণ মানুষের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব। কিন্তু সরেজমিনে উল্টো চিত্র পাওয়া যায়।
বিদেশে অবৈধ অর্থ লেনদেন: ডেসটিনির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাঁচটি দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগেরও সত্যতা পেয়েছে দুদক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাহায্যে দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, হংকং ও কানাডায় ডেসটিনি ও তাদের কর্মকর্তাদের নামে বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ সিঙ্গাপুরে দুটি হিসাবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি হিসাব রফিকুল আমীনের নামে। অন্যটি ডেসটিনি সিঙ্গাপুরের নামে। ওই দুই হিসাবে প্রায় ৭৭ হাজার ৬০০ সিঙ্গাপুর ডলার পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৯ টাকা ৫০ পয়সা।
রফিকুল আমীনের হিসাবে ৬৪ হাজার ৫৮১ সিঙ্গাপুর ডলার (৪২ লাখ এক হাজার ৮৫০ টাকা) এবং প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ১৩ হাজার ২৭ দশমিক ৭৮ সিঙ্গাপুর ডলার (আট লাখ ৪৭ হাজার ৬১২ টাকা ৬১ পয়সা) পাচার করা হয়েছে। রফিকুল আমীন কানাডার জাতীয়তা (কানাডা পাসপোর্ট বিএ ৬৬৫৬৪৯) নিয়ে সেখানে ডেসটিনি সিঙ্গাপুর নামে ব্যবসা চালু করেছেন।
আবার হংকংয়ের একটি ব্যাংকে সফটক অনলাইন (হংকং) লিমিটেডের নামে ৫০ কোটি টাকার মালামাল আমদানি দেখিয়েও অর্থ পাচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে হংকংয়ের নাগরিক নোয়েল জি ক্যারির সঙ্গে ৫০ শতাংশ শেয়ারে ব্যবসা করতেন রফিকুল আমীন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ২০১১ সালে ডেসটিনি গ্রুপের বেস্ট এভিয়েশন লিমিটেডের পক্ষ থেকে ফ্রান্সের ইটিওপিএস ট্রেনিং এভিয়েশন অ্যান্ড সার্ভিসেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৮৪ হাজার ৬০০ ইউরো অবৈধভাবে পাঠানো হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯০ লাখ সাত হাজার ৫২ টাকা ৮৩ পয়সা।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল আমীন জানিয়েছেন, কানাডার নভাস্কশিয়ার ব্যাংকে একটি হিসাব এবং মালয়েশিয়ায় একটি লোন (ঋণ) হিসাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জেপি মর্গান চেজ ব্যাংকে (হিসাব নম্বর ৩০৩০৬১০০৪৬) ডেসটিনির রফিকুল আমীনের নিজ নামের আরেকটি হিসাবে বেশ কিছু অর্থ পাচারেরও প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
এ বিষয়ে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ সূত্র জানায়, এসব হিসাবের মাধ্যমে মোট কত টাকা পাচার হয়েছে, সে হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) মাধ্যমে অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কমিশনের কাছে একটি আবেদন করেছে তদন্ত দল।
রফিকুল আমীন ও মোহাম্মদ হোসেন, পরিচালক দিদারুল আলম দুদকের রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন হারুন-অর-রশিদ। অন্যদের পলাতক ঘোষণা করেছে দুদক। ২৪ জানুয়ারি পলাতক আসামিদের আদালতে হাজির করতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
No comments