কল্যাণ ঐক্য শান্তি কামনায় শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমা by মাহবুবুল আলম
দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য ও কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে গতকাল রবিবার শেষ হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। রাজধানী ঢাকার পাশে গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে দুপুর পৌনে ১টা থেকে প্রায় ১৭ মিনিট এ আখেরি মোনাজাত চলে।
এ সময় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির কণ্ঠে 'আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন' ধ্বনিতে মুখরিত হয় ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা। মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ মারকাজের মজলিশে শুরার প্রবীণ সদস্য মাওলানা যোবায়রুল হাসান।
৪৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয় গত ১১ জানুয়ারি। চার দিন বিরতির পর ১৮ জানুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। দুই পর্বে প্রায় ১৪ হাজার বিদেশি মেহমানসহ আনুমানিক ৭৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দেন বলে আয়োজকদের ধারণা।
গতকালের আখেরি মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা অংশ নিতে টঙ্গীতে আসেননি। তাঁরা প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন।
গতকাল বাদ ফজর থেকে হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে পাঠানো নতুন জামাতের করণীয় ও দিকনির্দেশনামূলক এই হেদায়েতি বয়ান করেন মুরব্বি মাওলানা সায়'দ আহমাদ।
মোনাজাতে মানুষের ঢল : ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানের দিকে মানুষের ঢল নামে। সকাল ৭টার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ও টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। আগের দিন রাত ১০টার পর থেকে মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাজীপুর চৌরাস্তা, বিমানবন্দর, মাজুখান ব্রিজ পর্যন্ত পুরো এলাকা শুধু মানুষ আর মানুষ। হেঁটে ও মোটরসাইকেলে করে মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন ময়দানের দিকে। সকাল ৯টার দিকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশ ও মহাসড়ক মানুষে পূর্ণ হয়ে যায়। পাটি, হোগলা, পুরনো খবরের কাগজ, পলিথিন বিছিয়ে যে যেখানে এতুটুকু জায়গা পেয়েছেন বসে গেছেন মোনাজাতে শরিক হতে। এ সময় মিলগেট থেকে টঙ্গী বাজার, কামারপাড়া পর্যন্ত পুরো এলাকায় মানুষ বসে থাকে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়।
আখেরি মোনাজাত : আবেগময় এ মোনাজাতে 'ইয়া আল্লাহ্ ...' সম্মোধন করে করুন ফরিয়াদে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় শুধু ভেসে আসে কান্নার ধ্বনি। আমিন আমিন ধ্বনি আর নীরব অশ্রুপাতের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার করুণা কামনায় মনের আকুতি ব্যক্ত করেছেন সবাই।
ঘরে ফেরার পালা : আখেরি মোনাজাত শেষে শুরু হয় ঘরে ফেরার পালা। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে ফিরতি জনস্রোত। যে জনসমুদ্র এতক্ষণ ছিল অচল, নিস্তব্ধ; হঠাৎ তা হয়ে ওঠে গতিশীল, সচল। মহাসড়কে লাখো মানুষের ভিড়ে যানবাহন চলাচল ছিল অসম্ভব। ধারণা করা হয়েছিল, দ্বিতীয় পর্বে লোকসংখ্যা কিছু কম হবে হয়তো। কিন্তু না, মনে হয়েছে মুসল্লি আগের চেয়ে আরো বেশি। কাঁথা, বালিশ, পুঁটলি, লাকড়ির বোঝা আর ডেকচি-পাতিলের ভার বহন করে মুসল্লিরা হেঁটে সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন যানবাহনের আশায়। আবদুল্লাহপুর থেকে বোর্ডবাজার পর্যন্ত সাত-আট কিলোমিটার পথজুড়ে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ। বিকেল ৪টার দিকে সড়কে চাপ কিছুটা কমে এলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ছয় দিনের কর্মসূচিতে যা ছিল : দুই পর্বে ছয় দিনের কর্মসূচিতে ছিল আম ও খাসবয়ান। তালিম, আমল, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, ছয় উছুলের হকিকত, যৌতুকবিহীন বিয়ে, নতুন জামাত তৈরি, চিল্লায় নাম লেখানো। বিভিন্ন দেশে জামাত পাঠানো এবং এক বছরের করণীয় নির্ধারণ। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুরব্বিরা বয়ান করেন। বিভিন্ন খেত্তা, লোকাল গেস্ট কামরা, প্রতিবন্ধী কামরা ও খেদমত জামাতে খাসবয়ান করেন স্থানীয় মুরব্বিরা।
২৪ মুসল্লির মৃত্যু : এবার দুই পর্বে ২৪ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়। তাঁদের বেশির ভাগের বয়স সত্তরের কোঠায়। তাবলিগের সাথীরা জানান, প্রচণ্ড শীতে শ্বাসকষ্ট ও বার্ধক্যজনিত রোগে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। ইজতেমা মাঠে জানাজা শেষে তাঁদের লাশ নিজ নিজ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক নিবাস সূত্রে জানা যায়, বিদেশি কেউ এবারের ইজতেমায় মারা যাননি।
আয়োজন ছিল সাদামাটা : দুই পর্বে আনুমানিক ৭৫ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণ থাকলেও বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। তাবলিগের মুরব্বিরা জানান, তাবলিগের নিয়মানুসারে কোনো বাহুল্য খরচ অথবা অপচয় নেই ইজতেমার আয়োজনে। মুসল্লিদের জন্য ছিল নাইলন কাপড়ে তৈরি প্যান্ডেল। বিদেশিদের জন্য ছিল টিন ও চটের তৈরি নিবাস। দেশ-বিদেশের ওলামায়েকেরামদের বসার ব্যবস্থা ছিল হোগলা পাটিতে। যে মঞ্চ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করা হয় তাতে ছিল না কোনো ব্যানার, ডায়াস, চেয়ার-টেবিল অথবা বর্ণিল কোনো বাতি। বক্তার নাম-পরিচয় ছিল গোপন। ছিল না কোনো পোস্টার অথবা প্রচারমাধ্যমে পাঠানো হয়নি কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। আন্তর্জাতিক এই মহাসম্মেলনে ছিল না কোনো মিডিয়া বিভাগ।
আবারও স্বেচ্ছাশ্রম : দীর্ঘ তিন মাসের স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেল, আন্তর্জাতিক নিবাসসহ অন্যান্য অস্থায়ী স্থাপনা এবার খুলে নির্মাণসামগ্রী ফেরত দেওয়ার পালা। দুই-এক দিনের মধ্যেই আবার স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু হবে। পাঁচ শতাধিক মুসল্লি এ কাজে যোগ দেবেন। ইজতেমার প্রস্তুতিবিষয়ক জিম্মাদার আবদুল কুদ্দুস জানান, বিদেশি মেহমানদের খেদমতে থাকা তৈজসপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্মাণ ও বৈদ্যুতিকসামগ্রী আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। দাতাদের কাছে সব কিছু অক্ষত ও পরিচ্ছন্ন করে দেওয়ার কাজ শুরু হবে। কিছু নির্মাণসামগ্রী ইজতেমার জন্য দানকৃত। সেগুলো সংরক্ষিত থাকবে। ময়দানের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে অনেকে স্বেচ্ছায় যোগ দিতে আগ্রহী।
৪৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয় গত ১১ জানুয়ারি। চার দিন বিরতির পর ১৮ জানুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। দুই পর্বে প্রায় ১৪ হাজার বিদেশি মেহমানসহ আনুমানিক ৭৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দেন বলে আয়োজকদের ধারণা।
গতকালের আখেরি মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা অংশ নিতে টঙ্গীতে আসেননি। তাঁরা প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন।
গতকাল বাদ ফজর থেকে হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে পাঠানো নতুন জামাতের করণীয় ও দিকনির্দেশনামূলক এই হেদায়েতি বয়ান করেন মুরব্বি মাওলানা সায়'দ আহমাদ।
মোনাজাতে মানুষের ঢল : ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানের দিকে মানুষের ঢল নামে। সকাল ৭টার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ও টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। আগের দিন রাত ১০টার পর থেকে মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাজীপুর চৌরাস্তা, বিমানবন্দর, মাজুখান ব্রিজ পর্যন্ত পুরো এলাকা শুধু মানুষ আর মানুষ। হেঁটে ও মোটরসাইকেলে করে মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন ময়দানের দিকে। সকাল ৯টার দিকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশ ও মহাসড়ক মানুষে পূর্ণ হয়ে যায়। পাটি, হোগলা, পুরনো খবরের কাগজ, পলিথিন বিছিয়ে যে যেখানে এতুটুকু জায়গা পেয়েছেন বসে গেছেন মোনাজাতে শরিক হতে। এ সময় মিলগেট থেকে টঙ্গী বাজার, কামারপাড়া পর্যন্ত পুরো এলাকায় মানুষ বসে থাকে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়।
আখেরি মোনাজাত : আবেগময় এ মোনাজাতে 'ইয়া আল্লাহ্ ...' সম্মোধন করে করুন ফরিয়াদে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় শুধু ভেসে আসে কান্নার ধ্বনি। আমিন আমিন ধ্বনি আর নীরব অশ্রুপাতের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার করুণা কামনায় মনের আকুতি ব্যক্ত করেছেন সবাই।
ঘরে ফেরার পালা : আখেরি মোনাজাত শেষে শুরু হয় ঘরে ফেরার পালা। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে ফিরতি জনস্রোত। যে জনসমুদ্র এতক্ষণ ছিল অচল, নিস্তব্ধ; হঠাৎ তা হয়ে ওঠে গতিশীল, সচল। মহাসড়কে লাখো মানুষের ভিড়ে যানবাহন চলাচল ছিল অসম্ভব। ধারণা করা হয়েছিল, দ্বিতীয় পর্বে লোকসংখ্যা কিছু কম হবে হয়তো। কিন্তু না, মনে হয়েছে মুসল্লি আগের চেয়ে আরো বেশি। কাঁথা, বালিশ, পুঁটলি, লাকড়ির বোঝা আর ডেকচি-পাতিলের ভার বহন করে মুসল্লিরা হেঁটে সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন যানবাহনের আশায়। আবদুল্লাহপুর থেকে বোর্ডবাজার পর্যন্ত সাত-আট কিলোমিটার পথজুড়ে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ। বিকেল ৪টার দিকে সড়কে চাপ কিছুটা কমে এলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ছয় দিনের কর্মসূচিতে যা ছিল : দুই পর্বে ছয় দিনের কর্মসূচিতে ছিল আম ও খাসবয়ান। তালিম, আমল, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, ছয় উছুলের হকিকত, যৌতুকবিহীন বিয়ে, নতুন জামাত তৈরি, চিল্লায় নাম লেখানো। বিভিন্ন দেশে জামাত পাঠানো এবং এক বছরের করণীয় নির্ধারণ। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুরব্বিরা বয়ান করেন। বিভিন্ন খেত্তা, লোকাল গেস্ট কামরা, প্রতিবন্ধী কামরা ও খেদমত জামাতে খাসবয়ান করেন স্থানীয় মুরব্বিরা।
২৪ মুসল্লির মৃত্যু : এবার দুই পর্বে ২৪ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়। তাঁদের বেশির ভাগের বয়স সত্তরের কোঠায়। তাবলিগের সাথীরা জানান, প্রচণ্ড শীতে শ্বাসকষ্ট ও বার্ধক্যজনিত রোগে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। ইজতেমা মাঠে জানাজা শেষে তাঁদের লাশ নিজ নিজ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক নিবাস সূত্রে জানা যায়, বিদেশি কেউ এবারের ইজতেমায় মারা যাননি।
আয়োজন ছিল সাদামাটা : দুই পর্বে আনুমানিক ৭৫ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণ থাকলেও বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। তাবলিগের মুরব্বিরা জানান, তাবলিগের নিয়মানুসারে কোনো বাহুল্য খরচ অথবা অপচয় নেই ইজতেমার আয়োজনে। মুসল্লিদের জন্য ছিল নাইলন কাপড়ে তৈরি প্যান্ডেল। বিদেশিদের জন্য ছিল টিন ও চটের তৈরি নিবাস। দেশ-বিদেশের ওলামায়েকেরামদের বসার ব্যবস্থা ছিল হোগলা পাটিতে। যে মঞ্চ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করা হয় তাতে ছিল না কোনো ব্যানার, ডায়াস, চেয়ার-টেবিল অথবা বর্ণিল কোনো বাতি। বক্তার নাম-পরিচয় ছিল গোপন। ছিল না কোনো পোস্টার অথবা প্রচারমাধ্যমে পাঠানো হয়নি কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। আন্তর্জাতিক এই মহাসম্মেলনে ছিল না কোনো মিডিয়া বিভাগ।
আবারও স্বেচ্ছাশ্রম : দীর্ঘ তিন মাসের স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেল, আন্তর্জাতিক নিবাসসহ অন্যান্য অস্থায়ী স্থাপনা এবার খুলে নির্মাণসামগ্রী ফেরত দেওয়ার পালা। দুই-এক দিনের মধ্যেই আবার স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ শুরু হবে। পাঁচ শতাধিক মুসল্লি এ কাজে যোগ দেবেন। ইজতেমার প্রস্তুতিবিষয়ক জিম্মাদার আবদুল কুদ্দুস জানান, বিদেশি মেহমানদের খেদমতে থাকা তৈজসপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্মাণ ও বৈদ্যুতিকসামগ্রী আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। দাতাদের কাছে সব কিছু অক্ষত ও পরিচ্ছন্ন করে দেওয়ার কাজ শুরু হবে। কিছু নির্মাণসামগ্রী ইজতেমার জন্য দানকৃত। সেগুলো সংরক্ষিত থাকবে। ময়দানের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে অনেকে স্বেচ্ছায় যোগ দিতে আগ্রহী।
No comments