রুশ রস- সংকলন ও অনুবাদ: মাসুদ মাহমুদ
masud328@gmail.com আয়েশের আশায় ভিতালি কভাল শুনুন সকলে! আমি অবশেষে বিয়ে করেছি। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম ব্যাচেলর থাকতে থাকতে। একটু পারিবারিক উষ্ণতা, নিস্তব্ধতা আর আয়েশের জন্য প্রাণ আঁকুপাঁকু করছিল।
জানেন, একাকী জীবনে সত্যিই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পড়েছিল মারিয়াও। আমার জীবনযাপনের ধরনটা ছিল যাচ্ছেতাই! সবকিছু এলোমেলো, ছড়ানো-ছিটানো, ওলট-পালট। একেবারে টিপিক্যাল ব্যাচেলর। আর ওর, অর্থাৎ আমার মারিয়ার, ঘরদোর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, গোছানো। মিথ্যা বলব না, দেখে আমার শখ জাগল ও রকম জীবনযাপনের।
আমার সঙ্গে বাস করতে শুরু করেই আমার ব্যাচেলরসুলভ ঘরের গোছগাছ আর ধোয়ামোছা নিয়ে পড়ল মারিয়া। তবে খুব দ্রুত সে সফল হতে পারল, সেটা বলব না। তার লক্ষ্য সাধনে যখন-তখন বাগড়া দিলাম আমি। যেমন ঘরে ঢোকার সময় পা মুছতে ভুলে যাই।
‘আবার নোংরা নিয়ে ঘরে ঢুকেছ!’ মারিয়া ভারি রাগ করে।
প্রথম দিকে শুধু অভিযোগ করত। পরে সরাসরি ও কঠোরভাবে বলতে শুরু করল, ‘পা মুছতে কখনো শিখবে বলে মনে হয় না। তাই পইপই করে বলে রাখি, জুতো বাইরে খুলে রেখে আসবে।’
কী আর করা! জুতো খুলে ঘরে ঢোকায় অভ্যস্ত হতে হলো। কিন্তু আমার বন্ধুরা অভ্যস্ত হতে পারল না কিছুতেই।
‘এভাবে আর সম্ভব নয়,’ মারিয়া কঠিন স্বরে অনুযোগ করে বলল একদিন। ‘তোমার বন্ধুরা আবার ঘরের মেঝে নোংরা করে দিয়ে গেছে। তুমি ওদের ডাকো কেন?’
ওদের আর ডাকি না। তাই বলে যে আমার জীবন সহজতর হয়ে উঠল, তা কিন্তু নয়।
অফিস শেষে বাসায় ফিরে ডিভানে একটু কাত হতে না-হতেই মারিয়ার চিৎকার, ‘জায়গা পেলেই শুয়ে পড়তে হবে? দেখছ না, ঝেড়েমুছে টিপটপ করে রেখেছি? ওখানে শুলে কাভারটা কুঁচকে যাবে না! ওঠো বলছি!’
ডিভান থেকে উঠে শুয়ে পড়লাম খাটে।
‘তোমার মাথায় কি ঘিলু বলে কিছু নেই? কত খাটনি করে সব পরিষ্কার করেছি, বদলেছি বিছানার চাদর। আর তুমি দিব্যি শুয়ে পড়লে!’
উঠে গিয়ে বসলাম আর্মচেয়ারে।
‘আর বসার জায়গা পেলে না? ওই শরীর নিয়ে ওটা ভেঙে ফেলবে তো!’
বাধ্য হয়ে হাঁটু ভাঁজ করে মেঝের ওপরে বসা শিখে নিয়েছি। প্রাচ্যীয় ধাঁচে। আমার কিন্তু বেশ লাগে। কিন্তু স্ত্রীর সেটা পছন্দ নয়।
‘একেবারে ঘরের মাঝখানে গেড়ে বসেছ!’ গজগজ করে বলে সে। ‘ঘরে নড়াচড়ার উপায়ও নেই।’ বলে যোগ করে, ‘কেন যে গাধার মতো তোমাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম!’
আর সহ্য হলো না আমার। থাকতে শুরু করলাম মুরগির ঘরে। এখানে সব সুযোগ-সুবিধা আছে আমার। সব এলোমেলো, ছড়ানো-ছিটানো, যেখানে খুশি বসো, শোও, পা মুছো না হাজার বছর...
আমার স্ত্রীও খুশি। এখন সে বলে, ‘অবশেষে ঘরদোর আমার ছিমছাম, পরিষ্কার, গোছানো।’
স্ত্রী যা বলে
ভ্লাদলেন বাখনোভ
জীবন সম্পর্কে আমার স্ত্রীর অপরিমেয় অজ্ঞতা ও চূড়ান্ত যুক্তিহীনতা আমাকে নিরন্তর বিস্মিত করে।
একবার আমাকে অফিস থেকে ওম্স্ক নামের শহরে বিজনেস ট্রিপে পাঠানো হয়েছিল। সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি বুঝে নেওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে স্ত্রী বলল, ‘খুব ভালো হলো। ওখানে গিয়ে তুমি হোটেলে থাকতে না চাইলে কেশার বাসায় উঠতে পারবে।’
‘শোনো, আমি যাচ্ছি ওমেস্ক, আর তোমার ভাই কেশা থাকে তোমেস্ক। আমি কীভাবে তার বাসায় গিয়ে উঠব? নাকি তোমার ধারণা, ওম্স্ক আর তোম্স্ক একই শহর?’
‘রাগ করছ কেন!’ সে বলল। ‘আমি স্রেফ মনে করিয়ে দিলাম। যদি কাজে লাগে!’
আমি নীরবে কাঁধ ঝাঁকালাম।
ওমেস্ক পৌঁছানোর পর আমাকে জানানো হলো, আমাদের অর্ডার অনুয়ায়ী যন্ত্রপাতি সব প্রস্তুত, তবে ডিরেক্টরের স্বাক্ষর ছাড়া সেসব আমার হাতে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। আর ডিরেক্টর এখন নভোসিবিরস্কে। দুই সপ্তাহের সেমিনারে। একটু ভেবে নিয়ে আমি নিজেই রওনা দিলাম নভোসিবিরস্কের উদ্দেশে। ওখানে গিয়ে জানা গেল, সেমিনারের স্থান পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তোমেস্কর অত্যন্ত অগ্রসর এক কারখানায়। এভাবেই কেশার বাসায় অতিথি হতে হলো আমাকে।
‘দেখলে তো,’ স্ত্রী বলল তৃপ্তির সুরে, ‘অথচ তুমি বলেছিলে ওম্স্ক নাকি তোম্স্ক নয়। তুমি শুধু তর্ক করার সুযোগ খোঁজো!’
কিছুদিন আগে ফ্রান্সে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার, টুরিস্ট হিসেবে।
‘ইশ্! কী যে ঈর্ষা হচ্ছে আমার!’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আমার স্ত্রী। ‘ফ্রান্সে যাওয়ার কী যে স্বপ্ন আমার! একটা অনুরোধ করি, পিসার বিখ্যাত সেই হেলানো টাওয়ারের সামনে অবশ্যই একটা ছবি তুলো।’
‘তুমি মনে হয় আইফেল টাওয়ারের কথা বলতে চেয়েছিলে, তাই না?’ নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলাম তাকে।
‘আইফেলের টাওয়ারও হেলানো নাকি?’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল সে।
‘না। হেলানো টাওয়ার আছে পিসায়। আর পিসা ইতালিতে। এবং আমি যাচ্ছি ফ্রান্সে। তাহলে পিসায় কী করে ছবি তুলব, বলো?’
‘তোমাকে কোনো অনুরোধও করা যায় না!’
আমি নীরবে কাঁধ ঝাঁকালাম।
আমাদের প্লেন যখন ফ্রান্সের আকাশে, তখন স্টুয়ার্ডেস হঠাৎ ঘোষণা করল, ফ্রান্সের সব এয়ারপোর্টের কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করছে, অতএব আমাদের ল্যান্ড করতে হবে প্রতিবেশী দেশে, যেখানে ধর্মঘট সবেমাত্র শেষ হয়েছে। এভাবেই আমি পড়লাম গিয়ে ইতালিতে।
পিসার হেলানো টাওয়ারের সামনে তোলা ছবিটা পরে স্ত্রীকে যখন দেখালাম, সে আমাকে চুমু খেয়ে বলল, ‘দেখলে তো! অথচ তুমি বলছিলে, আইফেল টাওয়ার হেলানো নয়!’
(ঈষৎ সংক্ষেপিত)
আমার সঙ্গে বাস করতে শুরু করেই আমার ব্যাচেলরসুলভ ঘরের গোছগাছ আর ধোয়ামোছা নিয়ে পড়ল মারিয়া। তবে খুব দ্রুত সে সফল হতে পারল, সেটা বলব না। তার লক্ষ্য সাধনে যখন-তখন বাগড়া দিলাম আমি। যেমন ঘরে ঢোকার সময় পা মুছতে ভুলে যাই।
‘আবার নোংরা নিয়ে ঘরে ঢুকেছ!’ মারিয়া ভারি রাগ করে।
প্রথম দিকে শুধু অভিযোগ করত। পরে সরাসরি ও কঠোরভাবে বলতে শুরু করল, ‘পা মুছতে কখনো শিখবে বলে মনে হয় না। তাই পইপই করে বলে রাখি, জুতো বাইরে খুলে রেখে আসবে।’
কী আর করা! জুতো খুলে ঘরে ঢোকায় অভ্যস্ত হতে হলো। কিন্তু আমার বন্ধুরা অভ্যস্ত হতে পারল না কিছুতেই।
‘এভাবে আর সম্ভব নয়,’ মারিয়া কঠিন স্বরে অনুযোগ করে বলল একদিন। ‘তোমার বন্ধুরা আবার ঘরের মেঝে নোংরা করে দিয়ে গেছে। তুমি ওদের ডাকো কেন?’
ওদের আর ডাকি না। তাই বলে যে আমার জীবন সহজতর হয়ে উঠল, তা কিন্তু নয়।
অফিস শেষে বাসায় ফিরে ডিভানে একটু কাত হতে না-হতেই মারিয়ার চিৎকার, ‘জায়গা পেলেই শুয়ে পড়তে হবে? দেখছ না, ঝেড়েমুছে টিপটপ করে রেখেছি? ওখানে শুলে কাভারটা কুঁচকে যাবে না! ওঠো বলছি!’
ডিভান থেকে উঠে শুয়ে পড়লাম খাটে।
‘তোমার মাথায় কি ঘিলু বলে কিছু নেই? কত খাটনি করে সব পরিষ্কার করেছি, বদলেছি বিছানার চাদর। আর তুমি দিব্যি শুয়ে পড়লে!’
উঠে গিয়ে বসলাম আর্মচেয়ারে।
‘আর বসার জায়গা পেলে না? ওই শরীর নিয়ে ওটা ভেঙে ফেলবে তো!’
বাধ্য হয়ে হাঁটু ভাঁজ করে মেঝের ওপরে বসা শিখে নিয়েছি। প্রাচ্যীয় ধাঁচে। আমার কিন্তু বেশ লাগে। কিন্তু স্ত্রীর সেটা পছন্দ নয়।
‘একেবারে ঘরের মাঝখানে গেড়ে বসেছ!’ গজগজ করে বলে সে। ‘ঘরে নড়াচড়ার উপায়ও নেই।’ বলে যোগ করে, ‘কেন যে গাধার মতো তোমাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম!’
আর সহ্য হলো না আমার। থাকতে শুরু করলাম মুরগির ঘরে। এখানে সব সুযোগ-সুবিধা আছে আমার। সব এলোমেলো, ছড়ানো-ছিটানো, যেখানে খুশি বসো, শোও, পা মুছো না হাজার বছর...
আমার স্ত্রীও খুশি। এখন সে বলে, ‘অবশেষে ঘরদোর আমার ছিমছাম, পরিষ্কার, গোছানো।’
স্ত্রী যা বলে
ভ্লাদলেন বাখনোভ
জীবন সম্পর্কে আমার স্ত্রীর অপরিমেয় অজ্ঞতা ও চূড়ান্ত যুক্তিহীনতা আমাকে নিরন্তর বিস্মিত করে।
একবার আমাকে অফিস থেকে ওম্স্ক নামের শহরে বিজনেস ট্রিপে পাঠানো হয়েছিল। সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি বুঝে নেওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে স্ত্রী বলল, ‘খুব ভালো হলো। ওখানে গিয়ে তুমি হোটেলে থাকতে না চাইলে কেশার বাসায় উঠতে পারবে।’
‘শোনো, আমি যাচ্ছি ওমেস্ক, আর তোমার ভাই কেশা থাকে তোমেস্ক। আমি কীভাবে তার বাসায় গিয়ে উঠব? নাকি তোমার ধারণা, ওম্স্ক আর তোম্স্ক একই শহর?’
‘রাগ করছ কেন!’ সে বলল। ‘আমি স্রেফ মনে করিয়ে দিলাম। যদি কাজে লাগে!’
আমি নীরবে কাঁধ ঝাঁকালাম।
ওমেস্ক পৌঁছানোর পর আমাকে জানানো হলো, আমাদের অর্ডার অনুয়ায়ী যন্ত্রপাতি সব প্রস্তুত, তবে ডিরেক্টরের স্বাক্ষর ছাড়া সেসব আমার হাতে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। আর ডিরেক্টর এখন নভোসিবিরস্কে। দুই সপ্তাহের সেমিনারে। একটু ভেবে নিয়ে আমি নিজেই রওনা দিলাম নভোসিবিরস্কের উদ্দেশে। ওখানে গিয়ে জানা গেল, সেমিনারের স্থান পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তোমেস্কর অত্যন্ত অগ্রসর এক কারখানায়। এভাবেই কেশার বাসায় অতিথি হতে হলো আমাকে।
‘দেখলে তো,’ স্ত্রী বলল তৃপ্তির সুরে, ‘অথচ তুমি বলেছিলে ওম্স্ক নাকি তোম্স্ক নয়। তুমি শুধু তর্ক করার সুযোগ খোঁজো!’
কিছুদিন আগে ফ্রান্সে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার, টুরিস্ট হিসেবে।
‘ইশ্! কী যে ঈর্ষা হচ্ছে আমার!’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আমার স্ত্রী। ‘ফ্রান্সে যাওয়ার কী যে স্বপ্ন আমার! একটা অনুরোধ করি, পিসার বিখ্যাত সেই হেলানো টাওয়ারের সামনে অবশ্যই একটা ছবি তুলো।’
‘তুমি মনে হয় আইফেল টাওয়ারের কথা বলতে চেয়েছিলে, তাই না?’ নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলাম তাকে।
‘আইফেলের টাওয়ারও হেলানো নাকি?’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল সে।
‘না। হেলানো টাওয়ার আছে পিসায়। আর পিসা ইতালিতে। এবং আমি যাচ্ছি ফ্রান্সে। তাহলে পিসায় কী করে ছবি তুলব, বলো?’
‘তোমাকে কোনো অনুরোধও করা যায় না!’
আমি নীরবে কাঁধ ঝাঁকালাম।
আমাদের প্লেন যখন ফ্রান্সের আকাশে, তখন স্টুয়ার্ডেস হঠাৎ ঘোষণা করল, ফ্রান্সের সব এয়ারপোর্টের কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করছে, অতএব আমাদের ল্যান্ড করতে হবে প্রতিবেশী দেশে, যেখানে ধর্মঘট সবেমাত্র শেষ হয়েছে। এভাবেই আমি পড়লাম গিয়ে ইতালিতে।
পিসার হেলানো টাওয়ারের সামনে তোলা ছবিটা পরে স্ত্রীকে যখন দেখালাম, সে আমাকে চুমু খেয়ে বলল, ‘দেখলে তো! অথচ তুমি বলছিলে, আইফেল টাওয়ার হেলানো নয়!’
(ঈষৎ সংক্ষেপিত)
No comments