'আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে' by তোফাজ্জল হোসেন রুবেল
বড় দুই বোন রয়েছে মেয়েটির। বাবা শ্রমজীবী গরিব মানুষ হলেও আত্মীয়স্বজন আছে ভালো অবস্থানে। আর এ কারণেই দুই বোনের বিয়ে হয়েছে ভালো পরিবারে। তাঁদের একমাত্র ভাইটি সহজ সরল। রিকশা চালিয়ে কিছু টাকা আয় করা শুরু করেছে সে।
অভাবের সংসারের চাকা তবু হয়নি সচল। তাই আদরের ছোট মেয়েকে সবার অগোচরেই গৃহকর্মীর কাজ করতে পাঠান মা-বাবা।
কিছুদিন পর মেয়েটি কাজ ছেড়ে ফিরে আসে। কিন্তু বিপর্যস্ত চেহারার মেয়েকে দেখে চিনতেই পারলেন না মা-বাবা। মেয়ের হাল দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। মেয়েটি মা-বাবাকে বলে ফেলে তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করার কথা। মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যান বাবা। বিচার চাইতে পুলিশের কাছে যাবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতে আপত্তি মেয়েটির। মা-বাবাকে সে বোঝায়, ধর্ষণ আর নির্যাতনের কথা প্রকাশ হলে তার দুই বোনের সংসারে অশান্তি হতে পারে। কিন্তু বাবা মান-সম্মান সব খোয়া গেলেও তাঁর আদরের মেয়ের ওপর পৈশাচিক নির্যাতনকারীর বিচার চাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তাঁর সাফ কথা, 'আমি বিচার চাই। তুই মিথ্যা কথা বলবি না। মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে আমি আত্মহত্যা করমু।'
কিন্তু প্রভাবশালী নির্যাতনকারীর ভয়ে বাবার কথা শুনল না মেয়ে। আর এ কারণে মেয়ে পুলিশের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বাবা বাড়িতে উপস্থিতই থাকেননি। কাপাসিয়ার নির্যাতিত মেয়ে ও তার বাবা গতকাল কালের কণ্ঠের কাছে তাদের এ কঠিন বাস্তবতার বর্ণনা দেন। ধর্ষিতা কিশোরী বলে, 'পরে আমি বুঝলাম, আমার বাপে যা কইছে তাই ঠিক। মান-সম্মান তো যা যাওয়ার গেছেই। আমি যদি বিচার না পাই, আমার মতো দেশের হাজার হাজার মেয়ে বিচার চাইব না।'
গতকাল রবিবার বিকেলে পুলিশ হেফাজতে যাওয়ার আগে মেয়েটি কালের কণ্ঠকে বলে, 'কাজল মোল্লা ও তার বউ বলছে, এসব কথা কাউরে কবি না। কইলে তোর সমস্যা হইব। তোরা এলাকায় থাকতে পারবি না। আমাদের ক্ষমতা তো জানিস। তারা আমার বাপেরে মাইরা ফালাইব বইলাও হুমকি দিছে।'
বাড়িতে ফেরার পর দেওয়া হুকমি-ধামকির বর্ণনায় মেয়েটি বলে, কানিজ ফাতেমা রুহিতা তাকে বাড়িতে নিয়ে হুমকি দিয়ে সত্য কথা বলতে নিষেধ করেন। আসাদও একইভাবে তাকে হুমকি দেন। দুই দফায় তুলে নিয়ে তাকে একইভাবে হুমকি দেওয়া হয়। গতকাল কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর রুহিতা বাড়িতে গিয়ে আবারও হুমকি দেন। নির্যাতিতা কিশোরী বলে, 'আমার বাবা গরিব। তবে আমার আত্মীয়দের অবস্থা ভালো। দুই বোনের ভালা জায়গায় বিয়া হইছে। তাই মান-সম্মানের ভয়ে প্রথমে তাদের মতো কথা কইছি। তারা বলছে কিছু টাকা দিব। কিন্তু পরে বুঝলাম, আমি ভুল করতেছি।'
মেয়েটির মা ও বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাবা বলেন, 'আমি বিচার চাই। আমি মিথ্যা কথা কইতে পারুম না। তাই মাইয়ারে কইছি, তুমি সত্য কথা বলবা। তোমার ওপরে যেই নির্যাতন চালানো হইছে তা বলবা।' মেয়েটির মা বলেন, 'বাবা আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি না। বাড়িতে কত মানুষ আইতাছে। কে যে কী চায় বুঝি না। আনেকে কয় কোনো কথা বইলেন না, ক্ষতি হইব। আমাগো ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হইছেই। অভাবে পইড়া ছেমরিরে (মেয়ে) কাজে দিছিলাম। তহন তো বুঝি নাই যে আমার এই সর্বনাশ হইব।'
মেয়েটির পাশের বাড়ির এক তরুণী বলেন, 'ঢাকা থেকে আনার পর রাস্তার পাশে পইড়া ছিল ও। আমি ওর সঙ্গে কথা বলছি। ওকে ধর্ষণ করা হইছে। এমনভাবে নির্যাতন করা হইছে তা ভাষায় বলা যাবে না। আমি একটি মেয়ে হয়ে এইটা সহ্য করতে পারছি না। এইটা চাপা দেওয়ার কাজ এখন শেষ!'
মেয়েটি জানায়, মিরপুর নয়, উত্তরা এলাকায় কাজলের ফ্ল্যাট। ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ভবনে ওই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন কাজল। তবে বাড়ির নম্বরটি বলতে পারেনি মেয়েটি। দুই মাস আগে ওই বাসায় কাজ করতে যায় সে। মেয়েটি জানায়, তিন কক্ষের ফ্ল্যাটে কাজল মোল্লার স্ত্রী রেখা, মেয়ে কৃষ্টি, ছেলে সংস্কৃতি, গাড়িচালক ও গৃহকর্মী তানিয়া থাকে। নির্যাতনের বর্ণনায় মেয়েটি গতকাল বলে, 'বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই আমাকে মারধর করা হতো। পিঠা খেতে চাওয়ার কারণে গরম তেলে আমার হাত পুড়ে দেওয়া হয়। আর কাজে দেরি হওয়ার কারণে পায়ে জখম করা হয়। এক শনিবার কাজল মোল্লা আমাকে ধর্ষণ করে। অনেক আকুতি-মিনতি করলেও কাজল তা শোনেনি। হাতে পোড়া ঘা ও আঘাতের জখম থাকা অবস্থায়ই কাজল নির্যাতন চালায়।' গতকাল কয়েক দফায় পুলিশ ও এলাকাবাসীর সামনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চোখের জল ফেলে মেয়েটি। লজ্জায় মাথা নত করে সে বলে, 'আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।'
কিছুদিন পর মেয়েটি কাজ ছেড়ে ফিরে আসে। কিন্তু বিপর্যস্ত চেহারার মেয়েকে দেখে চিনতেই পারলেন না মা-বাবা। মেয়ের হাল দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। মেয়েটি মা-বাবাকে বলে ফেলে তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করার কথা। মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যান বাবা। বিচার চাইতে পুলিশের কাছে যাবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতে আপত্তি মেয়েটির। মা-বাবাকে সে বোঝায়, ধর্ষণ আর নির্যাতনের কথা প্রকাশ হলে তার দুই বোনের সংসারে অশান্তি হতে পারে। কিন্তু বাবা মান-সম্মান সব খোয়া গেলেও তাঁর আদরের মেয়ের ওপর পৈশাচিক নির্যাতনকারীর বিচার চাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তাঁর সাফ কথা, 'আমি বিচার চাই। তুই মিথ্যা কথা বলবি না। মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে আমি আত্মহত্যা করমু।'
কিন্তু প্রভাবশালী নির্যাতনকারীর ভয়ে বাবার কথা শুনল না মেয়ে। আর এ কারণে মেয়ে পুলিশের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বাবা বাড়িতে উপস্থিতই থাকেননি। কাপাসিয়ার নির্যাতিত মেয়ে ও তার বাবা গতকাল কালের কণ্ঠের কাছে তাদের এ কঠিন বাস্তবতার বর্ণনা দেন। ধর্ষিতা কিশোরী বলে, 'পরে আমি বুঝলাম, আমার বাপে যা কইছে তাই ঠিক। মান-সম্মান তো যা যাওয়ার গেছেই। আমি যদি বিচার না পাই, আমার মতো দেশের হাজার হাজার মেয়ে বিচার চাইব না।'
গতকাল রবিবার বিকেলে পুলিশ হেফাজতে যাওয়ার আগে মেয়েটি কালের কণ্ঠকে বলে, 'কাজল মোল্লা ও তার বউ বলছে, এসব কথা কাউরে কবি না। কইলে তোর সমস্যা হইব। তোরা এলাকায় থাকতে পারবি না। আমাদের ক্ষমতা তো জানিস। তারা আমার বাপেরে মাইরা ফালাইব বইলাও হুমকি দিছে।'
বাড়িতে ফেরার পর দেওয়া হুকমি-ধামকির বর্ণনায় মেয়েটি বলে, কানিজ ফাতেমা রুহিতা তাকে বাড়িতে নিয়ে হুমকি দিয়ে সত্য কথা বলতে নিষেধ করেন। আসাদও একইভাবে তাকে হুমকি দেন। দুই দফায় তুলে নিয়ে তাকে একইভাবে হুমকি দেওয়া হয়। গতকাল কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর রুহিতা বাড়িতে গিয়ে আবারও হুমকি দেন। নির্যাতিতা কিশোরী বলে, 'আমার বাবা গরিব। তবে আমার আত্মীয়দের অবস্থা ভালো। দুই বোনের ভালা জায়গায় বিয়া হইছে। তাই মান-সম্মানের ভয়ে প্রথমে তাদের মতো কথা কইছি। তারা বলছে কিছু টাকা দিব। কিন্তু পরে বুঝলাম, আমি ভুল করতেছি।'
মেয়েটির মা ও বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাবা বলেন, 'আমি বিচার চাই। আমি মিথ্যা কথা কইতে পারুম না। তাই মাইয়ারে কইছি, তুমি সত্য কথা বলবা। তোমার ওপরে যেই নির্যাতন চালানো হইছে তা বলবা।' মেয়েটির মা বলেন, 'বাবা আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি না। বাড়িতে কত মানুষ আইতাছে। কে যে কী চায় বুঝি না। আনেকে কয় কোনো কথা বইলেন না, ক্ষতি হইব। আমাগো ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হইছেই। অভাবে পইড়া ছেমরিরে (মেয়ে) কাজে দিছিলাম। তহন তো বুঝি নাই যে আমার এই সর্বনাশ হইব।'
মেয়েটির পাশের বাড়ির এক তরুণী বলেন, 'ঢাকা থেকে আনার পর রাস্তার পাশে পইড়া ছিল ও। আমি ওর সঙ্গে কথা বলছি। ওকে ধর্ষণ করা হইছে। এমনভাবে নির্যাতন করা হইছে তা ভাষায় বলা যাবে না। আমি একটি মেয়ে হয়ে এইটা সহ্য করতে পারছি না। এইটা চাপা দেওয়ার কাজ এখন শেষ!'
মেয়েটি জানায়, মিরপুর নয়, উত্তরা এলাকায় কাজলের ফ্ল্যাট। ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ভবনে ওই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন কাজল। তবে বাড়ির নম্বরটি বলতে পারেনি মেয়েটি। দুই মাস আগে ওই বাসায় কাজ করতে যায় সে। মেয়েটি জানায়, তিন কক্ষের ফ্ল্যাটে কাজল মোল্লার স্ত্রী রেখা, মেয়ে কৃষ্টি, ছেলে সংস্কৃতি, গাড়িচালক ও গৃহকর্মী তানিয়া থাকে। নির্যাতনের বর্ণনায় মেয়েটি গতকাল বলে, 'বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই আমাকে মারধর করা হতো। পিঠা খেতে চাওয়ার কারণে গরম তেলে আমার হাত পুড়ে দেওয়া হয়। আর কাজে দেরি হওয়ার কারণে পায়ে জখম করা হয়। এক শনিবার কাজল মোল্লা আমাকে ধর্ষণ করে। অনেক আকুতি-মিনতি করলেও কাজল তা শোনেনি। হাতে পোড়া ঘা ও আঘাতের জখম থাকা অবস্থায়ই কাজল নির্যাতন চালায়।' গতকাল কয়েক দফায় পুলিশ ও এলাকাবাসীর সামনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চোখের জল ফেলে মেয়েটি। লজ্জায় মাথা নত করে সে বলে, 'আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।'
No comments