বিশ্ব ইজতেমা- শান্তি ও কল্যাণের অনুপ্রেরণা
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম সমাবেশ হিসেবেই শুধু নয়_ শান্তির ধর্ম হিসেবে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাস্থল হিসেবে কাজ করছে বিশ্ব ইজতেমা। এ প্রক্রিয়াটি চলছে যুগের পর যুগ। উপমহাদেশের আলেম ও চিন্তাবিদদের হাতেই ইজতেমা ও দাওয়াতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এ অঞ্চল থেকেই তবলিগ ও দাওয়াতের কর্মসূচি সারাবিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী যখন উগ্রতা, জঙ্গিবাদ, সংঘর্ষ-সংঘাতের পথ বহু মুসলিমকে বিভ্রান্ত করেছে তখনও কোথাও তবলিগ ও ইজতেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়নি। সমাজে তাদের গঠনমূলক ভূমিকার পরিবর্তন ঘটেনি এবং তাদের নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের কারণও ঘটেনি। বরং বিপথগামী মুসলিম যুবকদের ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরিয়ে শান্তির পথে আস্থা জ্ঞাপন করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তবলিগ অনুসারী আলেমরা। তাই বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তবলিগ ও ইজতেমার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আস্থার একটি দৃঢ় মনোভাব তৈরি হয়েছে। তবলিগ ও ইজতেমার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহও বেড়েছে। প্রতি বছর ইজতেমা এলে বাংলাদেশের তবলিগ অনুসারীদের মধ্যে ধর্মভাবের নতুন প্রেরণা সৃষ্টি হয়। দাওয়াতের কাজে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দুই-ই বেড়ে যায়। আর শ্রেণী-পেশা-দলমত নির্বিশেষে লাখো মানুষ তুরাগতীরের ইজতেমাস্থলে সমবেত হন মুরবি্ব ও আলেমদের বয়ান শোনার জন্য। সেখানে তারা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনের শিক্ষালাভ করেন এবং তা অনুসরণ করার প্রেরণা লাভ করেন। আর আখেরি মোনাজাতের দিন ইজতেমা ময়দানকে কেন্দ্র করে রাজধানীর উপকণ্ঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়ে বিশ্বমানবতার কল্যাণ কামনায় আল্লাহর উদ্দেশে হাত তুলে মোনাজাত করেন। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়েই ইজতেমার কর্মসূচি সমাপ্ত হয়ে যায়। ভিড়ের কথা মনে রেখে ইজতেমার আয়োজকরা গত বছর থেকে দুই পর্বে ইজতেমাকে বিভক্ত করেছেন। এখন অভ্যাগত পুণ্যার্থীরা অনেক স্বস্তির সঙ্গে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত করে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারেন। এবার দুই পর্বের ইজতেমায় প্রথম পর্ব ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। শীতের কষ্ট সহ্য করে সারাদেশ ও বিশ্বের নানা স্থান থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষরা যেভাবে ইজতেমা ময়দানকে সরব করে রেখেছেন, সুশৃঙ্খলভাবে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিয়ে যেভাবে একে সফল করে তুলেছেন তা যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি অনুসরণীয়। সৌহার্দ্য, শান্তি ও সহাবস্থানের যে বাণী নিয়ে ইজতেমা বছরের পর বছর মুসলমানদের সততা, ন্যায়পরায়ণতা, একতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জীবনযাপন ও ধর্মপালনে উৎসাহিত করে চলেছে তা এককথায় প্রশংসনীয়। দাওয়াতের মাধ্যমে তবলিগ জামাতের অনুসারীরা মানুষকে মহানবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) প্রদর্শিত পথে আহ্বান করছেন, ইসলামের মৌল শিক্ষাকে সর্বোপরি তুলে ধরছেন। বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদ ও ভাবুকদের একই শামিয়ানার তলে নিয়ে এসে পরস্পরের কথা শোনা ও বোঝার তাগিদ দিয়ে চলেছেন। বিশ্ব ইজতেমা অনাগত দিনগুলোতেও আমাদের শান্তি, কল্যাণের পথ দেখিয়ে যাক।
No comments