সরকারের চার বছর-স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে
বর্তমান মহাজোট সরকার তার পাঁচ বছর মেয়াদের চার বছরই পূর্ণ করেছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারের যেমন অনেক ব্যর্থতা রয়েছে, তেমনি কিছু সাফল্যও আছে। তবে কিছু ব্যর্থতা এতটাই মোটা দাগে জনজীবনকে প্রভাবিত করেছে যে সামগ্রিকভাবে তাতে ব্যর্থতার পাল্লাটাই অনেক বেশি ভারী মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে অনেক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় মানুষের মনে বর্তমান সরকার সম্পর্কে হতাশা বেড়েছে।
মহাজোট সরকারের চার বছরের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে বিরোধ ছিল, তার অবসান। ফলে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বিরোধের ব্যাপারেও আগামী বছর রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে বঙ্গোপসাগরে থাকা তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ঝুঁকিতে পড়েনি, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট স্বাভাবিক ছিল। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাপেক্সকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়ানো হয়েছে। দেশ এ সময়ে তার যথেষ্ট সুফলও পেয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাপেক্স উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পেরেছে। খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও খাদ্যপণ্যের মূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখা গেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দেশের জনশক্তি রপ্তানি কয়েকবার বড় ধরনের হোঁচট খেলেও শেষ দিকে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গেছে। কৃষি খাতেও সরকারের যথেষ্ট সাফল্য রয়েছে। দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া জঙ্গিবাদ দমন করা গেলেও গুম-খুন, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য অপরাধ বেড়েছে। সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হলেও দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। কিন্তু সাময়িক ব্যবস্থার কুইক রেন্টালগুলোর বিকল্প সৃষ্টি না হওয়ায় বারবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়াতে হয়েছে এবং তা জনগণের ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। সুশাসনের প্রশ্নে সরকারের ব্যর্থতা আকাশচুম্বী। সুশাসনের অন্যতম শর্ত স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলোকে সক্রিয় ও শক্তিশালী করা যায়নি। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হলেও সংসদ সদস্যদের বিরোধিতার কারণে সক্রিয় করা যায়নি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বদলে প্রশাসক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে জেলা পরিষদগুলো। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সরকার পিছিয়ে আছে। নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীন ও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার থাকলেও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। লোকবল কিংবা আর্থিক দিক থেকেও দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার পিছিয়ে আছে। প্রশাসনের দলীয়করণ বন্ধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা কিংবা অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সরকারের সাফল্য কম। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এবং সেতুর কাজে সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেশ-বিদেশে সরকারকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত করেছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। বর্তমান সরকারের এমনি অনেক ব্যর্থতাই গত চার বছরে জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে ব্যর্থতা মানুষকে যারপরনাই পীড়া দিয়েছে, সেটি হলো বিরোধী দলকে আস্থায় নিতে না পারা। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে কোনো সমাধানে আসতে না পারা। বরং সরকারে থাকা ব্যক্তিদের লাগামহীন ও উসকানিমূলক কথাবার্তা মানুষকে হতাশ করেছে এবং মানুষের রুচিবোধকে আহত করেছে। এর ফলে জাতীয় সংসদের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়েছে। জবাবে বিরোধী দলও জাতীয় স্বার্থবিরোধী হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও শিল্প-বাণিজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত করেছে। ক্রমাগত সংসদ অধিবেশন বর্জন করেছে। তারাও লাগামহীন বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে রাজনীতির প্রতি মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে।
সরকারের শেষ বছরে অন্তত আমরা আশা করছি, সরকার তার ত্রুটিগুলো সংশোধনে উদ্যোগী হবে। বিরোধী দলের কাছেও আমরা দেশের স্বার্থে অনুরূপ যৌক্তিক রাজনৈতিক আচরণ আশা করছি।
মহাজোট সরকারের চার বছরের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে বিরোধ ছিল, তার অবসান। ফলে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বিরোধের ব্যাপারেও আগামী বছর রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে বঙ্গোপসাগরে থাকা তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ঝুঁকিতে পড়েনি, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট স্বাভাবিক ছিল। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাপেক্সকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়ানো হয়েছে। দেশ এ সময়ে তার যথেষ্ট সুফলও পেয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাপেক্স উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পেরেছে। খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও খাদ্যপণ্যের মূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখা গেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দেশের জনশক্তি রপ্তানি কয়েকবার বড় ধরনের হোঁচট খেলেও শেষ দিকে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গেছে। কৃষি খাতেও সরকারের যথেষ্ট সাফল্য রয়েছে। দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া জঙ্গিবাদ দমন করা গেলেও গুম-খুন, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য অপরাধ বেড়েছে। সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হলেও দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। কিন্তু সাময়িক ব্যবস্থার কুইক রেন্টালগুলোর বিকল্প সৃষ্টি না হওয়ায় বারবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়াতে হয়েছে এবং তা জনগণের ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। সুশাসনের প্রশ্নে সরকারের ব্যর্থতা আকাশচুম্বী। সুশাসনের অন্যতম শর্ত স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলোকে সক্রিয় ও শক্তিশালী করা যায়নি। ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হলেও সংসদ সদস্যদের বিরোধিতার কারণে সক্রিয় করা যায়নি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বদলে প্রশাসক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে জেলা পরিষদগুলো। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সরকার পিছিয়ে আছে। নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীন ও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার থাকলেও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। লোকবল কিংবা আর্থিক দিক থেকেও দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার পিছিয়ে আছে। প্রশাসনের দলীয়করণ বন্ধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা কিংবা অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সরকারের সাফল্য কম। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এবং সেতুর কাজে সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেশ-বিদেশে সরকারকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত করেছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। বর্তমান সরকারের এমনি অনেক ব্যর্থতাই গত চার বছরে জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে ব্যর্থতা মানুষকে যারপরনাই পীড়া দিয়েছে, সেটি হলো বিরোধী দলকে আস্থায় নিতে না পারা। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে কোনো সমাধানে আসতে না পারা। বরং সরকারে থাকা ব্যক্তিদের লাগামহীন ও উসকানিমূলক কথাবার্তা মানুষকে হতাশ করেছে এবং মানুষের রুচিবোধকে আহত করেছে। এর ফলে জাতীয় সংসদের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়েছে। জবাবে বিরোধী দলও জাতীয় স্বার্থবিরোধী হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও শিল্প-বাণিজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত করেছে। ক্রমাগত সংসদ অধিবেশন বর্জন করেছে। তারাও লাগামহীন বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে রাজনীতির প্রতি মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে।
সরকারের শেষ বছরে অন্তত আমরা আশা করছি, সরকার তার ত্রুটিগুলো সংশোধনে উদ্যোগী হবে। বিরোধী দলের কাছেও আমরা দেশের স্বার্থে অনুরূপ যৌক্তিক রাজনৈতিক আচরণ আশা করছি।
No comments