ফুঁসছে দেশ 0 বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ 0 জামায়াত অফিস ভাংচুর আগুন, সংঘর্ষ 0 নিষিদ্ধের দাবি 0 লক্ষ্মীপুরে ৩ ছাত্র-যুবলীগ কর্মী ছুরিকাহত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কমর্ী হত্যা এবং বিভিন্ন ছাত্রাবাসে শিবিরের সশস্ত্র হামলা ও নারকীয় তা-বের প্রতিবাদে সারাদেশে ছাত্রসমাজ ফুঁসে উঠেছে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা, দোষী বক্তিদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবি জানিয়ে বুধবার দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ বিৰোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। বহু এলাকায় উত্তেজিত ছাত্রলীগ কমর্ীদের হামলা, জামায়াত-শিবির কার্যালয় ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্মীপুরে শিবির ক্যাডারদের হামলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের তিন কমর্ী ছুরিকাহত হয়।গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় জামায়াত অফিস ভাংচুর করা হয়। কুমিলস্নার বুড়িচং ও পিরোজপুরেও জামায়াত অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। এদিকে বুধবার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে জাবি ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্র ও সাংস্কৃতিক জোট। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও শহরের শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে। পটুয়াখালীর সব শিৰা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজেও বুধবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিবির পরিচালিত আরবিডিসি কার্যালয় ভাংচুর করে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পাবনায় শিবিরের দুটি মেসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিৰুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ রিপোর্ট লেখার সময় বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবাদ বিৰোভের আরও খবর আসছিল। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের পাঠানো।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ১০টায় শিবির ক্যাডারদের হামলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তিন কমর্ী মোর্শেদ (২৮), রাকিব (১৫) ও জাহিদ (২৫) গুরম্নতর আহত হয়। জেলা শহরের উত্তর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
শিবিরের তা-বের খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে বিৰুব্ধ ছাত্রলীগের নেতা কমর্ীরা বিৰোভ মিছিল বের করে এবং উপজেলা জামায়াত অফিস ভাংচুর করে। এ সময় উভয় পৰে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগের ৭ জন ও শিবিরের তিন কমর্ী আহত হয়।
নেত্রকোনার কুড়পাড় এলাকায় বিৰুব্ধ ছাত্রজনতা জেলা জামায়াতের অফিসে হামলা ও ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জের উপজেলা জামায়াত শিবির অফিস গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অন্যদিকে, জেলার সৈয়দপুরে বুধবার বিৰুব্ধ ছাত্রজনতা লাঠি মিছিল বের করে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিবির পরিচালিত আরবিডিসি কার্যালয় ভাংচুর করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ মেডিক্যাল কলেজ শাখা। ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে, জেলার কারমাইকেল কলেজে আশ্রয় নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ক্যাডাররা। এ জন্য ছাত্রলীগ হোস্টেল ছাত্রাবাস তলস্নাশীর জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও বুধবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিৰোভ মিছিল করে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সরকারী হরগঙ্গা কলেজের ছাত্রলীগ কমর্ীরা শহরে বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সিলেটে বিৰোভ মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ নেতাকমর্ী ও বিৰুব্ধ জনতা জামায়াতের মালিকানাধীন আল হামরা শপিং সিটিতে হামলা ও ভাংচুর করে।
এছাড়া গভীর রাত পর্যনত্ম খবর আসতে থাকে যে, মাগুরা, পঞ্চগড়, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, চট্টগ্রামের পটিয়া, পটুয়াখালী, খুলনা শহর ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পিরোজপুর এবং নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে রাবিতে শিবিরের বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় ছাত্র-জনতা বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
উত্তাল রাজশাহী স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ক্যাডারদের তা-ব ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নকের নৃশংস হত্যাকা-ের প্রতিবাদে মহাজোটের প্রতিবাদ বিােভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী শহর। তা-বে জড়িত শিবির ক্যাডারদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবিতে বুধবার বিকালে নগরীতে মহাজোট বিােভ-সমাবেশ কর্মসূচীর আয়োজন করে। সমাবেশ থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রম্নজ্জামান লিটন বলেন, ধর্মকে পুঁজি করে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত শিবির চক্রের হাত-পায়ের রগ কাটার রাজনীতি সহ্য করা হবে না। তারা জামায়াত শিবির চক্রকে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করার জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রত্যদর্শীরা জানান, বিকালে কুমারপাড়াস্থ মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মহাজোটের বিােভ মিছিল শুরম্ন হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মোঃ স্বপন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রম্নজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন আহমেদ, অধ্য শফিকুর রহমান বাদশা ও আখতার জাহানের নেতৃত্বে বিােভ মিছিলে মহাজোটের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে। মিছিলটি নগরীর সাহেব বাজার প্রদীণ করে জিরো পয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড় ও বাটার মোড় হয়ে পুনরায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এসে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিক উদ্দীনের সভাপতিত্বে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে আবু সাঈদ মোঃ স্বপন, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রম্নজ্জামান লিটন, ফজলে হোসেন বাদশা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সমাবেশে রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম, জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দুরম্নল হুদা, ওয়ার্কার্স পার্টির নগর সম্পাদক লিয়াকত হোসেন লিকুসহ স্থানীয় মহাজোট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র লিটন ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেনের নৃশংস খুনের ঘটনায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমানকে দায়ী করে বলেন, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে, ঠিক তখন শিাঙ্গন থেকে দেশকে তারা অস্থিতিশীল করতে ওঠে পড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, '৭১ এর এই পরাজিত শক্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক ড. এস তাহের আহমেদকে হত্যার পর যেভাবে লাশ গুম করেছিল, ঠিক সেভাবেই তারা ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেনের লাশ গুম করে রেখেছিল। মতিউর রহমান নিজামী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডারদের রাজশাহীতে এনে পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগ কর্মীদের খুনের নীলনক্সা প্রণয়ন করেছে। কোন কারণ ছাড়াই শানত্ম ক্যাম্পাসে শিবির হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ কাটাসহ বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। ধর্মকে ব্যবহার করে যারা রগ কাটার রাজনীতি করে তাদের কেউ সহ্য করবে না। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের পরে লোকজনকে নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে ঘোষণা দেন। ওই কমিটি সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত শিবির ক্যাডার ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করবে। বহিরাগতরা যাতে ক্যাম্পাস পাশর্্ববর্তী ছাত্রবাসে না থাকতে পারে সেজন্য তিনি মেস মালিকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া জামায়াত-শিবির চক্র যাতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, একাত্তরের ঘাতক জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা ফারম্নককে হত্যাই করেনি, এই মহাজোটের সরকারের আমলে আবারো ছাত্রদের হাত-পায়ের রগ কাটার রাজনীতি শুরম্ন করেছে।
No comments