শ্রদ্ধাঞ্জলি-সুরস্রষ্টা বিদিত লাল দাস by ইয়াহইয়া ফজল
সম্মিলিত কোরাস যখন জমে ওঠে না, তখন ঘুরেফিরে আশ্রয় নিতে হয় 'সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী' গানটিতে। বহুল প্রচলিত গানের পরিচিত পঙ্ক্তির সঙ্গে তখন আর ঠোঁট মেলাতে অসুবিধা হয় না কারো। এই গানের সঙ্গে সবাই সুর মেলাতে পারলেও অনেকেরই জানা নেই, কালজয়ী এ গানের সুরকার কিংবদন্তিতুল্য সুরস্রষ্টা বিদিত লাল দাস।
জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেও তিনি সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। সিলেটে নিজের জন্মস্থানে জীবনের চুয়াত্তরটি বসন্ত 'সুরের সুরায়' নিমগ্ন থেকে অনেকটা নিভৃতেই গত ৮ অক্টোবর সোমবার ভোরে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
জমিদার বংশের নবম পুরুষ : ১৯৩৮ সালের ১৫ জুন সিলেটের শেখঘাটের সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারের নবম পুরুষ বিদিত লাল দাস জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিনোদ লাল দাস ও মা প্রভা রানী দাসের ছিল সংগীতের প্রতি অনুরাগ। পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল অল্প বয়সেই তাঁকে সংগীতের দিকে ধাবিত করে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল পঞ্চম। বিদিত লালের পারিবারিক নাম পটল। পরবর্তী সময়ে সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি 'পটলদা' নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
যেভাবে সখ্য হলো লোকগানের সঙ্গে : একসময়ের উভয় বাংলার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর কণ্ঠে তিনি শুনেছিলেন বিখ্যাত মরমি কবি হাছন রাজার গান 'লোকে বলে বলে রে/ঘরবাড়ি বালা নাই আমার'। সেই গানটি দারুণ রেখাপাত করে বিদিত লালের মনে। সেই আকর্ষণ তাঁকে শেষ পর্যন্ত লোকগানের ধারক-বাহক করে তোলে।
গিয়াস উদ্দিনের পাশাপাশি হাছন রাজা, রাধারমণসহ অনেক কিংবদন্তির গানে সুর দিয়েছেন তিনি। তাঁর 'প্রাণ কান্দে মন কান্দে রে' কিংবা 'প্রেমের মরা জলে ডুবে না'-এর মতো জনপ্রিয় গানের সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি', 'ভ্রমর কইও গিয়া...', 'আমি কেমন করে পত্র লিখি রে বন্ধু'-এর মতো গানগুলো সব সময়ের, সব বয়সীর কাছেই এখনো সমান জনপ্রিয়। তাঁর সুর করা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা, দিলরুবা খান, সুবীর নন্দী, শাম্মী আক্তার, বেবি নাজনীন, কুমার বিশ্বজিৎ, শুভ্র দেবসহ অনেক শিল্পী।
ব্যক্তিগত শোকগাথা ও গানের স্কুল : সুরের জাদুতে মানুষকে প্রভাবিত করে যাওয়া বিদিত লালের বুকেও ছিল কষ্টের বসতি। 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়' কিংবা 'কারে দেখাব মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া'-এর মতো বিষাদমাখা সুরের স্রষ্টার বেদনার অলিগলি চেনা থাকারই কথা। ছেলের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বিদিত লাল ২০০২ সালে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'নীলম লোকসংগীতালয়'।
লোকসংগীতের বাতিঘর : শেখঘাটে বিদিত লাল দাসের বাড়ির প্রাচীন অবকাঠামো এখনো রয়ে গেছে। সামনে প্রাসাদসদৃশ ফটক। ফটক পেরোলেই 'নীলম লোকসংগীতালয়'। শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখর থাকে জায়গাটা।
ইয়াহইয়া ফজল
জমিদার বংশের নবম পুরুষ : ১৯৩৮ সালের ১৫ জুন সিলেটের শেখঘাটের সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারের নবম পুরুষ বিদিত লাল দাস জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বিনোদ লাল দাস ও মা প্রভা রানী দাসের ছিল সংগীতের প্রতি অনুরাগ। পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল অল্প বয়সেই তাঁকে সংগীতের দিকে ধাবিত করে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল পঞ্চম। বিদিত লালের পারিবারিক নাম পটল। পরবর্তী সময়ে সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি 'পটলদা' নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
যেভাবে সখ্য হলো লোকগানের সঙ্গে : একসময়ের উভয় বাংলার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর কণ্ঠে তিনি শুনেছিলেন বিখ্যাত মরমি কবি হাছন রাজার গান 'লোকে বলে বলে রে/ঘরবাড়ি বালা নাই আমার'। সেই গানটি দারুণ রেখাপাত করে বিদিত লালের মনে। সেই আকর্ষণ তাঁকে শেষ পর্যন্ত লোকগানের ধারক-বাহক করে তোলে।
গিয়াস উদ্দিনের পাশাপাশি হাছন রাজা, রাধারমণসহ অনেক কিংবদন্তির গানে সুর দিয়েছেন তিনি। তাঁর 'প্রাণ কান্দে মন কান্দে রে' কিংবা 'প্রেমের মরা জলে ডুবে না'-এর মতো জনপ্রিয় গানের সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি', 'ভ্রমর কইও গিয়া...', 'আমি কেমন করে পত্র লিখি রে বন্ধু'-এর মতো গানগুলো সব সময়ের, সব বয়সীর কাছেই এখনো সমান জনপ্রিয়। তাঁর সুর করা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা, দিলরুবা খান, সুবীর নন্দী, শাম্মী আক্তার, বেবি নাজনীন, কুমার বিশ্বজিৎ, শুভ্র দেবসহ অনেক শিল্পী।
ব্যক্তিগত শোকগাথা ও গানের স্কুল : সুরের জাদুতে মানুষকে প্রভাবিত করে যাওয়া বিদিত লালের বুকেও ছিল কষ্টের বসতি। 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়' কিংবা 'কারে দেখাব মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া'-এর মতো বিষাদমাখা সুরের স্রষ্টার বেদনার অলিগলি চেনা থাকারই কথা। ছেলের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বিদিত লাল ২০০২ সালে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'নীলম লোকসংগীতালয়'।
লোকসংগীতের বাতিঘর : শেখঘাটে বিদিত লাল দাসের বাড়ির প্রাচীন অবকাঠামো এখনো রয়ে গেছে। সামনে প্রাসাদসদৃশ ফটক। ফটক পেরোলেই 'নীলম লোকসংগীতালয়'। শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখর থাকে জায়গাটা।
ইয়াহইয়া ফজল
No comments