রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-পুলিশের এ কেমন আচরণ?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মিছিলে লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের বেধড়ক পিটিয়েছে পুলিশ। শুধু পুলিশ সদস্যরাই নন, কর্মকর্তারাও মাঠে নেমে মারপিট করেছেন_ এমন দৃশ্য বৃহস্পতিবারের দৈনিকগুলোতে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন থানার পুলিশ কেন হঠাৎ শান্তিপূর্ণ মিছিল দমন করতে মারমুখী হয়ে উঠল সে প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। প্রগতিশীল ছাত্রজোট বামপন্থি দলগুলোর ছাত্র সংগঠন। বাহুবল, অস্ত্রবল নেই এসব সংগঠনের। আকারে ছোট এ সংগঠনগুলোর জোট মিছিল করলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কারও ক্ষতিবৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া এ ছাত্রজোট বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি সৃষ্টি করেছে এমন নজিরও কম। তবু পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিপেটা করে নেতাকর্মীদের আহত করেছে, গ্রেফতার করেছে। পুলিশের এমন উগ্র আচরণে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। পুলিশ বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছাত্রজোটের কর্মীরা মিছিল বের করায় তারা লাঠিচার্জ করেছেন। পুলিশের এ বক্তব্যে বিস্ময় আরও বেড়েছে। কেননা গত ২ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের আচরণ অনেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসীও বিষয়টি সম্যক অবগত। সে ঘটনায় দেখা গেছে, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের অস্ত্রবাজি, অস্ত্রে গুলি ভরার ছবিও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ মিছিল দমাতে এতই সক্রিয় হলো! অথচ সেদিন তারা এমন নিষ্ক্রিয় ছিল কেন? তবে কি মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি, হামলা, সংঘর্ষ নিষিদ্ধ নয়? অস্ত্র হাতে ক্যাডারদের প্রশ্রয় দিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিচার্জ কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে পুলিশ কর্মকর্তা হাত উঁচিয়ে মারপিট করেছেন, তাও অনাকাঙ্ক্ষিত। এভাবে মারপিট করার পর ওই পুলিশ কর্মকর্তাই দাবি করেছেন, ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরাই তাকে মারধর করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য পুলিশের এমন আচরণ ক্ষতিকর। অস্ত্রবাজিকে অনুৎসাহিত করা, অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ যেমন তাদের দায়িত্ব, তেমনি শান্তিপূর্ণ মিছিলের নিরাপত্তা দেওয়াও তাদের কর্তব্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর যে প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে আছে তা প্রশমিত করতে হলে সুস্থ, সুন্দর, প্রগতিশীল কর্মকাণ্ড জরুরি। সাংস্কৃতিক আন্দোলনও প্রয়োজনীয়। কিন্তু সেসব প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়ে অস্ত্রের জোরে ধর্মান্ধ শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। এ সত্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যেমন বুঝতে হবে, তেমনি পুলিশকেও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ করে তুলতে হবে।
No comments