অন্ধজনে প্রযুক্তির আলো by নুরুন্নবী চৌধুরী
বিভিন্ন কারণে প্রতিবন্ধী হওয়া অনেক মানুষই আছেন, যাঁরা সাধারণ মানুষের মতোই চান সবকিছু করতে। নানা কারণে যেসব কাজ করা তাঁদের জন্য সহজ নয়, সেসব কাজকে সহজ করতে রয়েছে প্রযুক্তি। আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণে বিশেষ স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যার তৈরি করেছেন বাংলাদেশের তরুণেরা।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি এ সফটওয়্যার দুটি হচ্ছে ‘মঙ্গলদ্বীপ’ ও ‘সুবচন’। সম্প্রতি ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে সফটওয়্যারগুলো উদ্বোধন করা। মঙ্গলদ্বীপ নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে (সিএসই) গবেষণা শুরু হয় ২০০৯ সালে এবং সুবচন নিয়ে গবেষণা শুরু হয় ২০০৮ সালে। সফটওয়্যার দুটি নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সফটওয়্যার দুটি তৈরিতে সহযোগিতা ও সহায়তা করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ভিজ্যুয়ালি ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস)।
মঙ্গলদ্বীপ
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণে তৈরি বিশেষ সফটওয়্যার মঙ্গলদ্বীপ। এটি একই সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা সমর্থন করে। এর সহায়তায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যেকোনো মানুষ খুব সহজেই কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। এ সফটওয়্যার তৈরির সঙ্গে জড়িত শাবিপ্রবির শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘একজন সাধারণ ও সুস্থ মানুষ কম্পিউটারে যা যা করতে পারেন, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষও তাঁর দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সব কাজ খুব সহজে করতে পারেন। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চাইলেই কারও সাহায্য ছাড়া মঙ্গলদ্বীপ ব্যবহার করে খুব সহজে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্ট ডকুমেন্ট সম্পাদনা করতে পারবেন।’ এ ছাড়াও গান শোনা, ই-বুক পড়া, ই-মেইল পাঠানো ও গ্রহণ করা থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ইনস্টল, আন-ইনস্টল করাসহ মোটামুটি দরকারি প্রায় সব কাজই করা যাবে এ সফটওয়্যার দিয়ে।
মঙ্গলদ্বীপ নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন শাবিপ্রবির শিক্ষক মারুফা রাহমি, প্রাক্তন শিক্ষার্থী আলমগীর কবির, সাজ্জাদুর রহমান খান, রুবি পাল, ফয়সাল আহাম্মদ খান, রাশেদ আজাদ চৌধুরী ও অদিতি রায়।
সুবচন
‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবিধার্থে নানা ধরনের সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে আমাদের দেশে। তবে আমাদের দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, সেগুলো দিয়ে তাঁরা সহজে বাংলা পড়তে পারেন না। এ সমস্যার সমাধান করতে তৈরি করা হয়েছে সুবচন সফটওয়্যার।’ বললেন সফটওয়্যারটি তৈরির সঙ্গে জড়িত শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের শিক্ষক আবু নাছের। তিনি জানান, সুবচন সফটওয়্যারের একটি বিশেষ দিক হলো, এর মাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ফাইল একইসঙ্গে পড়া ও লেখা যায়।
শাবিপ্রবির শিক্ষক মো. শহীদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, বিশ্বের অন্য কোনো সফটওয়্যারে এমন সুবিধা নেই।’ কম্পিউটার ব্যবহারে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মূলত মঙ্গলদ্বীপ সফটওয়্যারটিতে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা লেখা থেকে কথা অর্থাৎ টেক্সট টু স্পিচ সিস্টেম (সুবচন) ব্যবহার করা হয়েছে। সুবচন ব্যবহার করায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেকোনো বাংলা ডকুমেন্ট খুব সহজে পড়ে ফেলতে পারবেন। সুবচন নিয়ে গবেষণা করেছেন রুহুল আমিন ও শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেবজ্যোতি আইচ, মো. আক্তার হোসেন ও মো. মাসুদ রশিদ। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন মাহিদুল ইসলাম ও ডেইজি।
ব্রেইল প্রিন্টার
মঙ্গলদ্বীপ ও সুবচন সফটওয়্যার তৈরির নেতৃত্বে ছিলেন শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এর পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন ব্রেইল প্রিন্টার। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি বিশেষ এ প্রিন্টার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন তিনি। এ জন্য ডটমেট্রিকস প্রিন্টারকে ব্রেইল প্রিন্টারে রূপান্তর করা হয়। এ ধরনের প্রিন্টারের দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও অনেক কম খরচে এটি তৈরি করেন তিনি। এতে ব্রেইল-উপযোগী ফন্ট উদ্ভাবন ছাড়াও বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করেছেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সাধারণ অডিও শুনতে পারে কিন্তু যারা লেখাপড়া জানে তাঁদের জন্য প্রিন্টারটা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে তাঁরা শিখতে পারে এবং প্রয়োজনে প্রিন্টও করতে পারবে, যা তাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে দেবে। এটা একটা ছোট উদ্যোগ, যা ছোট কাজ সারার জন্য প্রযোজ্য তবে বড় আকারে করতে হলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।’
মঙ্গলদ্বীপ, সুবচন ও ব্রেইলপ্রিন্টার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন কাজে সাধারণ মানুষের মতোই সাহায্য করবে। এগুলো সম্পর্কে আরও জানতে যোগাযোগ করুন:
naseৎ-cse@sust.edu
মঙ্গলদ্বীপ
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণে তৈরি বিশেষ সফটওয়্যার মঙ্গলদ্বীপ। এটি একই সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা সমর্থন করে। এর সহায়তায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যেকোনো মানুষ খুব সহজেই কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। এ সফটওয়্যার তৈরির সঙ্গে জড়িত শাবিপ্রবির শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘একজন সাধারণ ও সুস্থ মানুষ কম্পিউটারে যা যা করতে পারেন, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষও তাঁর দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সব কাজ খুব সহজে করতে পারেন। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী চাইলেই কারও সাহায্য ছাড়া মঙ্গলদ্বীপ ব্যবহার করে খুব সহজে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্ট ডকুমেন্ট সম্পাদনা করতে পারবেন।’ এ ছাড়াও গান শোনা, ই-বুক পড়া, ই-মেইল পাঠানো ও গ্রহণ করা থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ইনস্টল, আন-ইনস্টল করাসহ মোটামুটি দরকারি প্রায় সব কাজই করা যাবে এ সফটওয়্যার দিয়ে।
মঙ্গলদ্বীপ নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন শাবিপ্রবির শিক্ষক মারুফা রাহমি, প্রাক্তন শিক্ষার্থী আলমগীর কবির, সাজ্জাদুর রহমান খান, রুবি পাল, ফয়সাল আহাম্মদ খান, রাশেদ আজাদ চৌধুরী ও অদিতি রায়।
সুবচন
‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবিধার্থে নানা ধরনের সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে আমাদের দেশে। তবে আমাদের দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, সেগুলো দিয়ে তাঁরা সহজে বাংলা পড়তে পারেন না। এ সমস্যার সমাধান করতে তৈরি করা হয়েছে সুবচন সফটওয়্যার।’ বললেন সফটওয়্যারটি তৈরির সঙ্গে জড়িত শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের শিক্ষক আবু নাছের। তিনি জানান, সুবচন সফটওয়্যারের একটি বিশেষ দিক হলো, এর মাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ফাইল একইসঙ্গে পড়া ও লেখা যায়।
শাবিপ্রবির শিক্ষক মো. শহীদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, বিশ্বের অন্য কোনো সফটওয়্যারে এমন সুবিধা নেই।’ কম্পিউটার ব্যবহারে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মূলত মঙ্গলদ্বীপ সফটওয়্যারটিতে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা লেখা থেকে কথা অর্থাৎ টেক্সট টু স্পিচ সিস্টেম (সুবচন) ব্যবহার করা হয়েছে। সুবচন ব্যবহার করায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেকোনো বাংলা ডকুমেন্ট খুব সহজে পড়ে ফেলতে পারবেন। সুবচন নিয়ে গবেষণা করেছেন রুহুল আমিন ও শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেবজ্যোতি আইচ, মো. আক্তার হোসেন ও মো. মাসুদ রশিদ। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন মাহিদুল ইসলাম ও ডেইজি।
ব্রেইল প্রিন্টার
মঙ্গলদ্বীপ ও সুবচন সফটওয়্যার তৈরির নেতৃত্বে ছিলেন শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এর পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন ব্রেইল প্রিন্টার। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি বিশেষ এ প্রিন্টার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন তিনি। এ জন্য ডটমেট্রিকস প্রিন্টারকে ব্রেইল প্রিন্টারে রূপান্তর করা হয়। এ ধরনের প্রিন্টারের দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও অনেক কম খরচে এটি তৈরি করেন তিনি। এতে ব্রেইল-উপযোগী ফন্ট উদ্ভাবন ছাড়াও বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করেছেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সাধারণ অডিও শুনতে পারে কিন্তু যারা লেখাপড়া জানে তাঁদের জন্য প্রিন্টারটা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে তাঁরা শিখতে পারে এবং প্রয়োজনে প্রিন্টও করতে পারবে, যা তাদের দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে দেবে। এটা একটা ছোট উদ্যোগ, যা ছোট কাজ সারার জন্য প্রযোজ্য তবে বড় আকারে করতে হলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।’
মঙ্গলদ্বীপ, সুবচন ও ব্রেইলপ্রিন্টার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন কাজে সাধারণ মানুষের মতোই সাহায্য করবে। এগুলো সম্পর্কে আরও জানতে যোগাযোগ করুন:
naseৎ-cse@sust.edu
No comments