ইসলামে আয়-রোজগারের বিধান by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
মানবজীবনে সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থনৈতিক বিষয়াদি মানুষের কাছে বেশ কাঙ্ক্ষিত ও আবেগপূর্ণও বটে। কেননা মানবজীবনের তাবৎ কর্মকাণ্ডের চাকা অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। ইসলাম মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে সুষ্ঠুরূপে গঠন করার জন্য এক নির্ভুর্ল ও উজ্জ্বল অর্থ ব্যবস্থার রূপরেখাও পেশ করেছে; যে ব্যবস্থায় নেই অন্যকে বঞ্চিত করার পদ্ধতি।
জায়গা নেই কোনো ধরনের শঠতা ও চাতুর্যের। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে বা অবৈধ পন্থায় ভক্ষণ করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারো।' (সূরা নিসা : ২৯)
আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের সূরা বাকারার ১১৮ নম্বর আয়াতে আরও বলেন, 'তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে ঘুষ দিয়ো না।' মানুষ হিসেবে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনের লক্ষ্যে প্রত্যেকেই কমবেশি আয়-রোজগারের পেছনে ছোটে। এটাই মনুষ্য প্রবৃত্তি। কিন্তু সেই আয়-রোজগার হতে হবে বৈধ পন্থায়। অন্যের সম্পদ বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে নয়। হাল সময়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে হলমার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি মানুষের গচ্ছিত টাকা নিয়ে সটকে পড়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় 'হায় হায় কোম্পানি' কর্তৃক সাধারণ জনগণের সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়। এভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা হারাম। এ বিষয়ে ওপরে বর্ণিত আয়াতে কারিমায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ইসলামের বিধানও তাই। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রতিটি টাকায় রয়েছে সাধারণ মানুষের হক। ফলে ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকা মূলত দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সম্পদ। সুতরাং এ টাকা আত্মসাৎ করাও ইসলামবিরোধী কাজ। এই অপকর্মের সঙ্গে যারা যেভাবে যুক্ত তাদের প্রত্যেকেই সমান অপরাধী। তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। ইসলাম মানুষকে হালাল পথে উপার্জনের কথা বলে। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) 'হালাল রুজির সন্ধানকে প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য ফরজ সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।' অন্য হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, 'ইবাদতের সত্তরটি অংশ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে হালাল রিজিকের সন্ধান।' মূলত ইসলাম মানুষকে উপার্জনক্ষম হওয়ার আহ্বান জানায়। ইসলামে নিজ হাতের উপার্জনকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'হালাল রুজি সংগ্রহ করা ফরজের পর ফরজ।' হজরত রাসূূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, 'তাদের জন্য সুসংবাদ, যারা সৎ পথে অর্থ রোজগার করে এবং তা থেকে ব্যয় করে।'
মুসলমানরা তাদের আয়-রোজগার করবে ইসলাম নির্দেশিত পথে। এটাই ইমানের দাবি। যেমন_ হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগে সব ধরনের বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। আল্লাহর রাসূল নিজে উপার্জন করেছেন। সাহাবারা উপার্জন করেছেন। এমনকি নারী সাহাবারাও সাধ্যমতো উপার্জন করেছেন। তাদের উৎপাদন, বিনিয়োগ, আয়, ব্যয় ও ভোগ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে ইসলামের মৌল চেতনার প্রভাব কার্যকরভাবে বিদ্যমান ছিল। সে সময় উৎপাদনের প্রতি এতটা গুরুত্ব আরোপ করা হয় যে, জমি পতিত অবস্থায় রাখতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। জমি পতিত অবস্থায় ফেলে রাখার দায়ে হজরত উমর (রা.) সাহাবি হজরত বিলাল বিন হারেছের কাছ থেকে বন্দোবস্তকৃত জমি ফেরত নিয়েছিলেন। মোটকথা, ইসলাম সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়।
লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, অন্যায়ভাবে কারও অর্থ-সম্পদ গ্রাস অথবা আত্মসাৎ করা ইসলাম সমর্থন করে না। এ জন্য ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমিন গ্রহণ করবে কিয়ামতের দিন সাত স্তবক জমিন তার ঘাড়ে শিকলরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে।' (বুখারি ও মুসলিম) সমকালীন বিশ্ব একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। এমনিতেই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা ভাব। এমতাবস্থায় গুটিকয়েক লোক এভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করলে এই দুর্ভোগ কেবল বাড়বেই। ইসলাম শোষণকে চিরতরে বন্ধ করার জন্য এসব বিধান দিয়েছে। কেননা ইসলামী অর্থনীতি মূল্যবোধনির্ভর একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থা নৈতিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং যে ব্যবস্থায় মানবকল্যাণের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ইসলামে আয়-রোজগারের বিধান, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ব্যয়সহ সামগ্রিক বিষয়কে বর্তমান যুগের পরিভাষায় ব্যাখ্যা-বিশেল্গষণ সহকারে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। জনগণের সামনে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে উপস্থাপনের অভাবেই এভাবে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামের দর্শন ও শিক্ষার আলোকে কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিতভাবে ধর্মীয় নেতাদের ও অর্থনীতিবিদদের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার।
muftianaet@gmail.com
আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের সূরা বাকারার ১১৮ নম্বর আয়াতে আরও বলেন, 'তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থসম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে ঘুষ দিয়ো না।' মানুষ হিসেবে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনের লক্ষ্যে প্রত্যেকেই কমবেশি আয়-রোজগারের পেছনে ছোটে। এটাই মনুষ্য প্রবৃত্তি। কিন্তু সেই আয়-রোজগার হতে হবে বৈধ পন্থায়। অন্যের সম্পদ বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে নয়। হাল সময়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে হলমার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি মানুষের গচ্ছিত টাকা নিয়ে সটকে পড়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় 'হায় হায় কোম্পানি' কর্তৃক সাধারণ জনগণের সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়। এভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা হারাম। এ বিষয়ে ওপরে বর্ণিত আয়াতে কারিমায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ইসলামের বিধানও তাই। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রতিটি টাকায় রয়েছে সাধারণ মানুষের হক। ফলে ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকা মূলত দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সম্পদ। সুতরাং এ টাকা আত্মসাৎ করাও ইসলামবিরোধী কাজ। এই অপকর্মের সঙ্গে যারা যেভাবে যুক্ত তাদের প্রত্যেকেই সমান অপরাধী। তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। ইসলাম মানুষকে হালাল পথে উপার্জনের কথা বলে। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) 'হালাল রুজির সন্ধানকে প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য ফরজ সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।' অন্য হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, 'ইবাদতের সত্তরটি অংশ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে হালাল রিজিকের সন্ধান।' মূলত ইসলাম মানুষকে উপার্জনক্ষম হওয়ার আহ্বান জানায়। ইসলামে নিজ হাতের উপার্জনকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'হালাল রুজি সংগ্রহ করা ফরজের পর ফরজ।' হজরত রাসূূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, 'তাদের জন্য সুসংবাদ, যারা সৎ পথে অর্থ রোজগার করে এবং তা থেকে ব্যয় করে।'
মুসলমানরা তাদের আয়-রোজগার করবে ইসলাম নির্দেশিত পথে। এটাই ইমানের দাবি। যেমন_ হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগে সব ধরনের বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। আল্লাহর রাসূল নিজে উপার্জন করেছেন। সাহাবারা উপার্জন করেছেন। এমনকি নারী সাহাবারাও সাধ্যমতো উপার্জন করেছেন। তাদের উৎপাদন, বিনিয়োগ, আয়, ব্যয় ও ভোগ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে ইসলামের মৌল চেতনার প্রভাব কার্যকরভাবে বিদ্যমান ছিল। সে সময় উৎপাদনের প্রতি এতটা গুরুত্ব আরোপ করা হয় যে, জমি পতিত অবস্থায় রাখতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। জমি পতিত অবস্থায় ফেলে রাখার দায়ে হজরত উমর (রা.) সাহাবি হজরত বিলাল বিন হারেছের কাছ থেকে বন্দোবস্তকৃত জমি ফেরত নিয়েছিলেন। মোটকথা, ইসলাম সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়।
লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, অন্যায়ভাবে কারও অর্থ-সম্পদ গ্রাস অথবা আত্মসাৎ করা ইসলাম সমর্থন করে না। এ জন্য ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমিন গ্রহণ করবে কিয়ামতের দিন সাত স্তবক জমিন তার ঘাড়ে শিকলরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে।' (বুখারি ও মুসলিম) সমকালীন বিশ্ব একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। এমনিতেই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা ভাব। এমতাবস্থায় গুটিকয়েক লোক এভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করলে এই দুর্ভোগ কেবল বাড়বেই। ইসলাম শোষণকে চিরতরে বন্ধ করার জন্য এসব বিধান দিয়েছে। কেননা ইসলামী অর্থনীতি মূল্যবোধনির্ভর একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থা নৈতিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং যে ব্যবস্থায় মানবকল্যাণের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ইসলামে আয়-রোজগারের বিধান, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ব্যয়সহ সামগ্রিক বিষয়কে বর্তমান যুগের পরিভাষায় ব্যাখ্যা-বিশেল্গষণ সহকারে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। জনগণের সামনে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে উপস্থাপনের অভাবেই এভাবে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামের দর্শন ও শিক্ষার আলোকে কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিতভাবে ধর্মীয় নেতাদের ও অর্থনীতিবিদদের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার।
muftianaet@gmail.com
No comments