গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব- আত্মবিশ্বাস থাকলে সফল হওয়া যায়

‘আমার বিশ্বাস ছিল আই-জিনিয়াস হব। অনুষ্ঠানের শুরুতে নিবন্ধন-প্রক্রিয়া চলার সময় অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়েই বন্ধুদের এ কথা বলেছিলাম। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে যে সফল হওয়া যায়, আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয়ে উপলব্ধি করলাম।’


কথাগুলো টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের আই-জিনিয়াস সাইফুল ইসলামের। সে মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইন্টারনেট উৎসব হয়।
একইভাবে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চাঁদপুরের হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ ও যশোরের কেশবপুর কলেজ প্রাঙ্গণেও ইন্টারনেট উৎসব হয়।
সকালে প্রতিটি কেন্দ্রে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জনকে আই-জিনিয়াস প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয়ে একজন পায় মেডেল ও প্রথম আলোর উপহার। অন্য নয়জনকে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। উৎসবের কেন্দ্রপ্রধানকে দেওয়া হয় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একটি স্মারক ঘড়ি ও মগ।
যেসব শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি, তাদের জন্য ছিল হ্যাপিনেস মেশিন, ম্যাজিক মিরর ও এক্সপেরিয়েন্স জোন। ছিল প্রথম আলো, গ্রামীণফোন, নকিয়া, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের স্টল।
উৎসবের খবর জানাচ্ছেন ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা।
মির্জাপুর: উৎসবের উদ্বোধন করে শপথবাক্য পাঠ করান মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ মামুন, প্রথম আলোর মির্জাপুর প্রতিনিধি সোহেল মোহসীন, মির্জাপুর বন্ধুসভার সভাপতি মনজুর কাদের। সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ মণ্ডল।
উৎসবে মির্জাপুরের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমস, মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মির্জাপুর এস কে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, সিয়াম একাডেমি, দেওহাটা এ জে উচ্চবিদ্যালয়, বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চবিদ্যালয়, রাজাবাড়ি কলেজ, রাজাবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় ও খলিলুর রহমান কলেজ।
সৈয়দপুর: ‘সবখানে ডিজিটালাইজড হলে দেশ অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হবে। আমি দেখি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন।’ এই প্রতিক্রিয়া সৈয়দপুরের আই-জিনিয়াস সামির হাসানের। সে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।
এর আগে ওই কলেজ চত্বরে উৎসবের উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম। শপথবাক্য পাঠ করান কলেজের সহকারী অধ্যাপক অসীত কুমার। বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা নূরুন্নবী সরকার, প্রথম আলোর সৈয়দপুর প্রতিনিধি এম আর আলম, সৈয়দপুর বন্ধুসভার সভাপতি প্রভাষক আবদুল হাফিজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বন্ধুসভার ওমর ফারুক ও সামিউল হক।
উৎসবে যোগ দেয় সৈয়দপুর শহরের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে চার হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর কলেজ, সৈয়দপুর মহিলা কলেজ, ভোলাহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়, সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সৈয়দপুর হাইস্কুল।
চাঁদপুর: শুরুতে পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক মাসুদা নূর খান শপথবাক্য পাঠ করান। পরে চাঁদপুর হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহামঞ্চদ হোসেন উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা ইন্টারনেটের ভালো দিকটাই ব্যবহার করব। খারাপটা বর্জন করব। তা হলে যুগের সঙ্গে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারব।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব, প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ, চাঁদপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক জাহিরুল ইসলাম। কুইজ পরিচালনা করেন গ্রামীণফোন কর্মকর্তা এনামুল হক।
উৎসবে যোগ দেয় চাঁদপুর শহরের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে: চাঁদপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ, আল আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গনি মডেল উচ্চবিদ্যালয়, পুরান বাজার মধুসূদন উচ্চবিদ্যালয়, নুরিয়া গার্লস হাইস্কুল ও বাবুরহাট উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ।
উৎসবে দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদপুরের আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাফিয়া ফেরদৌস।
নড়াইল: সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চের সামনে সকাল থেকে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সুলতান-মঞ্চে স্থাপিত শিল্পীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। উৎসবের উদ্বোধন ও সভাপতিত্ব করেন সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শফিকুর রহমান। শপথবাক্য পাঠ করান কালিয়া উপজেলার মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ তাপসী কাপুড়িয়া।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গোবরা মিত্র মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন, শিল্পকলা একাডেমীর সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সাইফুল হাসান, গ্রামীণফোনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক শেখ মাহিউল ইসলাম, প্রথম আলোর নড়াইল প্রতিনিধি কার্ত্তিক দাস। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার আশরাফুল আলম।
উৎসবে যোগ দেয় জেলার ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো: সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ, মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজ, নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নড়াইল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, পৌর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিটি কলেজ, ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট হাইস্কুল, শিব শংকর বালিকা বিদ্যালয়, পার্বতী বিদ্যাপীঠ, তোলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি মহিলা কলেজ, মাইজপাড়া মহাবিদ্যালয়, আশার আলো মহাবিদ্যালয়, বরাশুলা ক্যাডেট মাদ্রাসা ও আউরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মেহেদী হাসান।
কেশবপুর: প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেশবপুর কলেজে উৎসব হয়। উৎসব উদ্বোধন করে শপথবাক্য পাঠ করান ওই কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল বারী। বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা শামীমুজ্জামান, প্রথম আলোর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান, কেশবপুর প্রতিনিধি দিলীপ মোদক, বন্ধুসভার দীপ সরকার।
আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র শেখ আলভী তাসনিম। উৎসবে কেশবপুর কলেজ, কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কেশবপুর হাজী মোতালেব মহিলা কলেজ, কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল কলেজ, পাঁজিয়া কলেজ, পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজ, হাসানপুর মুক্তিযোদ্ধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বুড়িহাটি মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়, আবু শারাফ সাদেক বাণিজ্য মহাবিদ্যালয় ও মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বন্ধুসভার কেশবপুর সভাপতি উজ্জ্বল ব্যানার্জী।
এ বছর সারা দেশে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব করা হচ্ছে। গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর যৌথ আয়োজনে এ উৎসবের সহযোগী হিসেবে রয়েছে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি। সহায়তা দিচ্ছে গুগল, অপেরা, নকিয়া, ফেসবুক, চ্যানেল আই ও রেডিও ফুর্তি। উৎসবের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করছে এশিয়াটিক ইভেন্ট মার্কেটিং লিমিটেড। সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
কাল উৎসব চার স্থানে: আজ শুক্রবার ইন্টারনেট উৎসব হবে না। আগামীকাল শনিবার উৎসব হবে চার স্থানে। এগুলো হলো: মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, কুমিল্লা জিলা স্কুল, সিরাজগঞ্জের কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও পঞ্চগড়ের বিপি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে।

No comments

Powered by Blogger.