বৌদ্ধপল্লিতে হামলা- পুলিশ ও প্রশাসনের দায়-জটিলতায় তদন্ত কমিটি! by একরামুল হক

রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, উসকানিদাতা তরুণ আবদুল মুক্তাদির (১৯) ও কম্পিউটারের দোকানমালিক ফারুককে গ্রেপ্তার করে রিমন্ডে নেওয়া হয়েছে।


তাঁদের কাছে থেকে ঘটনার সূত্রপাত এবং অনুদ্ঘাটিত কোনো তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ কারণে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে সময় নিচ্ছে।
তবে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ঘটনার দিন পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কার কী দায়, তা নিরূপণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইতিপূর্বে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কারও কোনো অবহেলা আছে কি না, তা নিরূপণ নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। রামুর ঘটনায় দায় নিরূপণ নিয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রামুর ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে যে দূরত্বের অভিযোগ উঠেছে তা ব্যক্তিগত। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনেক পরে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন। কেন তাঁকে দেরিতে জানানো হয়েছে, সেটাও আমরা তদন্ত করছি।’
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) নুরুল ইসলাম রামুর ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম), বান্দরবানের পুলিশ সুপার ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। চার সদস্যের কমিটির দুজন প্রশাসন ক্যাডারের এবং দুজন পুলিশ ক্যাডারের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামুর ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবী চন্দ প্রথম সংবাদ পান ঘটনা শুরুর প্রায় দুই ঘণ্টা পর, ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায়। ওই সময় তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের বিদায় সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন।
ব্যর্থতার দায়ে রামুর ওসি প্রত্যাহার হলে ইউএনওর কি দায় নেই—এমন প্রশ্ন তুলেছেন। এ কারণে তদন্তে প্রশাসনের দায় নিরূপণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রামুর ঘটনায় দায় স্থানীয় প্রশাসন এড়াতে পারে না। ওসি নজিবুল ইসলামের ব্যর্থতা ছিল বলে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু ইউএনও কী দায় এড়াতে পারেন? ইউএনও স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন বলে এই প্রশ্ন ওঠে বলেও দাবি পুলিশ কর্মকর্তাদের। জানতে চাইলে ইউএনও দেবী চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় কক্সবাজার ছিলাম। রাত ১১টায় প্রথম সংবাদ পেয়ে এক সেকেন্ড দেরি করিনি। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নিয়ে একই গাড়িতে রামুর চৌমুহনীতে পৌঁছি এবং উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করার জন্য বক্তৃতা করি, অনুরোধ করি। ওই সময় আমার দিকে জুতা ও ঢিল ছোড়া হয়।’ দেবী চন্দ আরও বলেন, ‘ইউএনও হিসেবে আমি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি। রাত নয়টার ঘটনা আমাকে জানানো হলো ১১টায়। বিষয়টি প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হয়েছে। তবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ দিইনি। তদন্ত কমিটির কাছেও একই বক্তব্য দিয়েছি আমি।’ তবে প্রতিবেদন দাখিলে দেরির কারণ হিসেবে পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে টানাপোড়েনের পরিবর্তে মুক্তাদির ও ফারুকের গ্রেপ্তারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এই দুই আসামির সঙ্গে তদন্ত কমিটি কথা বলে ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইবে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তাদির ও ফারুক গ্রেপ্তার হওয়ায় অনেক তথ্য বের হয়ে আসছে। নিখুঁত তদন্তের স্বার্থে এই আসামিদের সঙ্গে কথা তো বলতে হবে। তাই আমাদের প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বাড়তে পারে।’ তবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. সিরাজুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সদস্যরা রোববার আবার বৈঠকে বসবেন। ওই দিন তাঁরা প্রতিবেদন দাখিল করলে আমি সরকারের কাছে হস্তান্তর করব।’

No comments

Powered by Blogger.