ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ডঃ ত্রাণ নেই, ধকল কাটানোর চেষ্টা উপকূলবাসীর
নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে আকস্মিক দুর্যোগের ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার
হাতিয়ার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু ঝড়ে আঘাত হানা অন্য দুই
উপজেলা সুবর্ণচর ও কোম্পানীঞ্জের মূল সড়কে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যান
চলতে শুরু করলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এসব এলাকায় এখনো রয়ে গেছে
ঝড়ের স্পষ্ট চিহ্ন।
এই
দুই উপজেলার অন্য সড়কগুলোতে পড়ে রয়েছে ঝড়ে উপড়ে যাওয়া হাজার হাজার
গাছ। এসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে উদ্ধার কাজ পরিচালিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ
থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এলোপাতাড়ি পড়ে
থাকা গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে বেগ
পেতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের।
বাংলানিউজের টিম শুক্রবার সকালে
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখতে পায়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার
মোহাম্মদপুর, চরক্লার্ক ও চরবাটা ইউনিয়নের উপর দিয়ে যাওয়া সোনাপুর-
চেয়ারম্যান ঘাট সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়ে আছে।
সড়কগুলোর ওপর থেকে কোনোমতে গাছ সরানো হলেও পাশের অন্য সড়কগুলো এখনো যান
চলাচলের উপযোগী হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, বুধবার ভোররাতে
ঝড় আঘাত হানার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো সাড়া পাওয়া
যায়নি। এলাকাবাসীরা কোনমতে ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও কোন ত্রাণ কিংবা সহায়তা নিয়ে আসেনি কেউ। এমন
অবস্থায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
এদিকে
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ইউনিয়নেরও একই দশা। এই উপজেলার
চর কাঁকড়া, চর এলাহী, চর হাজারী ও মুছাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক ও গ্রাম
এখনো বিধ্বস্ত হয়ে আছে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে ইউনিয়নগুলোর দুয়েকটি সড়ক
কোনোমতে যান চলাচলের উপযোগী করা হলেও অন্য সড়কগুলোর দশা একেবারেই বেহাল।
তবে
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল বাংলানিউজকে বলেন,
“দূর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ কিছু ত্রাণ ও
নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। এগুলো দুর্গতের হাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা
চালাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারে ত্রাণ পাঠানো হবে।”
এদিকে
নোয়াখালী ভূখণ্ডের সঙ্গে হাতিয়ার নৌ যোগাযোগ আগের মতো স্বাভাবিকভাবে
শুরু হয়েছে। নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নির্দিষ্ট নিয়মে শুক্রবার
সকাল সাড়ে ৯টায় একটি সি-ট্রাক (নৌযান) হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এতে ৩ শতাধিক যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা থাকলেও তা ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে
হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বলে জানান সি-ট্রাকের মাস্টার আল আমিন।
তিনি বলেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে বৃহস্পতিবার সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিল। একদিন পরে চালু হওয়ায় যাত্রীর এই চাপ।”
তাছাড়া অনেকে ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনদের দেখতে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি
আরও জানান, এই সি-ট্রাকে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম
হাতিয়ার দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে থানা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ও চরকিং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদও রয়েছেন।
জেলা
প্রশাসক সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
পরিদর্শনে গিয়ে দুর্গতদের জন্য নগদ টাকা ও ত্রাণ বিতরণ করবো।”
এদিকে
হাতিয়ার বয়ারচর ইউনিয়নে ২৬টি মাছ ধরার নৌকা নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান
বয়ারচর মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক আক্তার মিয়া। তিনি বলেন,
“বৃহস্পতিবার রাতে মিয়া সারেংয়ের দু’টি ট্রলার নিখোঁজ হয়। ট্রলার দুটি
উদ্ধারে মাঝ নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে অজ্ঞাত আরো একজনের লাশ উদ্ধার করেছেন তারা। এ নিয়ে নোয়াখালী জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৪ জনে দাঁড়ালো।
একই
রাতে আরো ৩টি ট্রলার বিধ্বস্ত অবস্থায় নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার
করা হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা বলে দাবি করা হয়েছে।
মুনিফ আম্মার, নূর মোহম্মদ, মহিউদ্দিন, ছোটন সাহা ও রহমত উল্লাহ
No comments