আবার গৃহযুদ্ধের পথে আফগানিস্তান? by মনিরুল ইসলাম
আফগানিস্তানের নিকট-ভবিষ্যৎ নিয়ে যে গভীর নিরাশা আর উদ্বেগ অনেকের মনে, সে কথাই কাঠখোট্টা ভাষায় বলে দেওয়া হলো আবার। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ইতিহাসের আরেকটি ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছানো আফগানিস্তান নিয়ে সম্প্রতি গুরুতর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)।
তারা বলছে, এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ২০১৪ সালে ন্যাটো বাহিনী সরে যাওয়ার পরই দেশটির সরকারব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। আফগান সেনাবাহিনীও দেশ রক্ষা করার মতো যোগ্যতা এখনো অর্জন করেনি।
আইসিজির মতে, অনিশ্চয়তার অতলে আফগানিস্তানের পতন ঠেকাতে হলে এখনই একটি স্থিতিশীল হস্তান্তর-প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিস্থিতি যদি এ রকমই থাকে, তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও বড় ধরনের বিপর্যয় হবে, তা নিশ্চিত। আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা-পরিস্থিতি এমনিতেই ক্রমশ নাজুক হচ্ছে। ২০১৪ সালের পর পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রতিবেদনে আইসিজি আরও বলেছে, কারজাই সরকার আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে জরুরি অবস্থা জারি করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
আইসিজির বিশেষজ্ঞ ক্যানডেস রনডিঅক্স বলেন, ‘আমি মনে করি, সরকারের পতন হওয়ার আগে এই গৃহযুদ্ধ শুরু কেবলই সময়ের ব্যাপার। এটি অনিবার্যভাবেই ঘটবে।’
রনডিঅক্সের মতে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কাবুলে চলবে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতারই রাজত্ব। অস্ত্রের ব্যাপকতা ও নৃশংসতার মাত্রা হবে নজিরবিহীন। আর তা ঘটবে মূলত তালেবানের নতুন করে উত্থান ঘটার জন্য। বহুধাবিভক্ত আফগান সমাজের অন্য পক্ষগুলোও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।
আফগান সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য আইসিজির প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন, বাজে কথা’ আখ্যা দিয়ে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। নবগঠিত জাতীয় পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ২০১৪ সালের পর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকবে বলে দাবি করেছে সরকার। কারজাই সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভবিষ্যতে আমাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখে, তা হলে ২০১৪ সালে ন্যাটো বাহিনী সরে যাওয়ার পরও আফগানিস্তানের পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।’
ন্যাটো মহাসচিব অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেনও উড়িয়ে দিয়েছেন আইসিজির ‘নেতিবাচক’ ভবিষ্যদ্বাণীকে। কিন্তু ন্যাটো কর্মকর্তার এই অভিমত কতটা আত্মবিশ্বাসজনিত আর কতটা অসহায়ের সান্ত্বনা, তা ভেবে দেখার বিষয়।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর দীর্ঘ উপস্থিতি এবং ব্যাপক অভিযানের মুখেও তালেবান বাহিনী নিজের অস্তিত্ব ভালোভাবেই টিকিয়ে রেখেছে। এ ছাড়া দেশটিতে সহিংসতা কমারও বিশেষ লক্ষণ নেই। এরই মধ্যে সেখান থেকে ন্যাটো বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহারের সময় ঘনিয়ে আসছে।
শীর্ষস্থানীয় সমর পরিকল্পনাকারীদের পরামর্শে তালেবানকে শেষ আঘাত হানতে প্রায় তিন বছর আগে আফগানিস্তানে অতিরিক্ত ৩৩ হাজার সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে তাৎক্ষণিকভাবে ভালো ফল মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে কী লাভ হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। গত মাসে ওই বাড়তি মার্কিন সেনাদের শেষ দলটিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এখন আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাসহ ন্যাটো বাহিনীর এক লাখ ১২ হাজারের মতো সদস্য রয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যে তাঁদেরও প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। শুধু সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বিদেশি সেনাদের একটি ছোট দল রয়ে যাবে।
পাশ্চাত্যের রাজনীতিকেরা জোর দিয়ে দাবি করছেন, বহুজাতিক ন্যাটো বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাঘোষিত ‘ন্যায়ের যুদ্ধের’ও পরিসমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ন্যাটো বাহিনীর জন্য অজনপ্রিয় লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটলেও কাবুলের পাশ্চাত্য-সমর্থিত সরকারও পতনের মুখে পড়তে পারে। শুরু হতে পারে সাবেক সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর বেধে যাওয়া গৃহযুদ্ধের চেয়েও মারাত্মক সংঘাত। ১০ বছর থাকার পর ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায় সোভিয়েত বাহিনী।
গিলেস ডরোনসরো ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’-এর আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ। তিনিও নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করছেন। তবে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে আফগানিস্তানে তালেবানের শাসন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা বলেন। সম্প্রতি বিশ্লেষণধর্মী এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর আফগান সরকারের জন্য মার্কিন সমর্থন সীমিত হয়ে আসবে। তখন আরেকটি গৃহযুদ্ধ শুরু হবে এবং এতে বিজয়ীর বেশে ক্ষমতায় আসবে তালেবান।
আইসিজির প্রতিবেদন পড়ে নিশ্চয়ই তৃপ্তির হাসি হাসছেন তালেবান কমান্ডাররা। যৌথবাহিনীর অভিযানের ১১ বছর পুর্তির দিন গত ৭ অক্টোবর তালেবান এক বিবৃতিতে বিদ্রুপ করে বলেছে, ন্যাটো বাহিনী অপমান ও অসম্মানের সঙ্গে আফগানিস্তান ছেড়ে পালাচ্ছে।
অথচ কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল তালেবান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, তারা এই মুহূর্তে আলোচনায় বসতে চায় না। বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে তালেবানের মতো একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো ঝুঁকি নিতে চায় না ওবামা প্রশাসন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তালেবান কিন্তু মার্কিন-ন্যাটো বা আফগান সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালানো বন্ধ করেনি। পশ্চিমা বাহিনীর দীর্ঘ অভিযানের পরও তাদের সামরিক সমতা যে তেমন কমেছে, তা মনে করার কারণ নেই। অব্যাহতভাবে ন্যাটো বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দুঃসাহসী হামলা চালিয়েছে তালেবান। এর মধ্যে বিশেষভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে হেলমান্দ প্রদেশের ক্যাম্প ব্যাস্টিয়নের ওপর হামলা। খুুবই সুরক্ষিত বিশাল ওই ঘাঁটিতে তালেবান হামলায় ছয়টি যুদ্ধবিমান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। এভাবে তালেবান মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার-পরিকল্পনাকে নতুন চাপের মুখে ফেলেছে।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক প্রতিরক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ স্টিফেন বিডল সম্প্রতি বলেছেন, তালেবান বাহিনীর এখনো জটিল ও সূক্ষ্ম অভিযানের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা আছে। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্প ব্যাস্টিয়নে হামলা যদি একটা আচমকা বিচ্ছিন্ন হামলা হতো, তা হলে চিন্তার কিছু থাকত না। কিন্তু যে পরিকল্পনা করে ওই দুর্ভেদ্য দুর্গে হানা দিয়েছে তারা, সে কথা ভাবলে বলতেই হবে, আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীর সামনে বিরাট সমস্যা আসছে।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন আফগানিস্তানের বিশ্লেষক ওয়াহিদ মুজদা। তিনি বলেছেন, যে নিখুঁতভাবে ক্যাম্প ব্যাস্টিয়নে অভিযান চালানো হয়েছে, তাতে প্রায় যে কেউ বুঝতে পারবে, বেশ কয়েক সপ্তাহ এমনকি মাসের পরিকল্পনা, মহড়া লেগেছে এর জন্য। অর্থাৎ সেই সক্ষমতা এখনো বহাল তবিয়তে আছে তালেবানের।
কাজেই সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে তালেবানের তৎপরতা যাঁরা অনুসরণ করে এসেছেন, তাঁরা আইসিজির প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গেই নেবেন।
আইসিজির মতে, অনিশ্চয়তার অতলে আফগানিস্তানের পতন ঠেকাতে হলে এখনই একটি স্থিতিশীল হস্তান্তর-প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিস্থিতি যদি এ রকমই থাকে, তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও বড় ধরনের বিপর্যয় হবে, তা নিশ্চিত। আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা-পরিস্থিতি এমনিতেই ক্রমশ নাজুক হচ্ছে। ২০১৪ সালের পর পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রতিবেদনে আইসিজি আরও বলেছে, কারজাই সরকার আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে জরুরি অবস্থা জারি করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
আইসিজির বিশেষজ্ঞ ক্যানডেস রনডিঅক্স বলেন, ‘আমি মনে করি, সরকারের পতন হওয়ার আগে এই গৃহযুদ্ধ শুরু কেবলই সময়ের ব্যাপার। এটি অনিবার্যভাবেই ঘটবে।’
রনডিঅক্সের মতে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কাবুলে চলবে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতারই রাজত্ব। অস্ত্রের ব্যাপকতা ও নৃশংসতার মাত্রা হবে নজিরবিহীন। আর তা ঘটবে মূলত তালেবানের নতুন করে উত্থান ঘটার জন্য। বহুধাবিভক্ত আফগান সমাজের অন্য পক্ষগুলোও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।
আফগান সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য আইসিজির প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন, বাজে কথা’ আখ্যা দিয়ে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। নবগঠিত জাতীয় পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ২০১৪ সালের পর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকবে বলে দাবি করেছে সরকার। কারজাই সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভবিষ্যতে আমাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখে, তা হলে ২০১৪ সালে ন্যাটো বাহিনী সরে যাওয়ার পরও আফগানিস্তানের পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।’
ন্যাটো মহাসচিব অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেনও উড়িয়ে দিয়েছেন আইসিজির ‘নেতিবাচক’ ভবিষ্যদ্বাণীকে। কিন্তু ন্যাটো কর্মকর্তার এই অভিমত কতটা আত্মবিশ্বাসজনিত আর কতটা অসহায়ের সান্ত্বনা, তা ভেবে দেখার বিষয়।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর দীর্ঘ উপস্থিতি এবং ব্যাপক অভিযানের মুখেও তালেবান বাহিনী নিজের অস্তিত্ব ভালোভাবেই টিকিয়ে রেখেছে। এ ছাড়া দেশটিতে সহিংসতা কমারও বিশেষ লক্ষণ নেই। এরই মধ্যে সেখান থেকে ন্যাটো বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহারের সময় ঘনিয়ে আসছে।
শীর্ষস্থানীয় সমর পরিকল্পনাকারীদের পরামর্শে তালেবানকে শেষ আঘাত হানতে প্রায় তিন বছর আগে আফগানিস্তানে অতিরিক্ত ৩৩ হাজার সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে তাৎক্ষণিকভাবে ভালো ফল মিললেও দীর্ঘ মেয়াদে কী লাভ হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। গত মাসে ওই বাড়তি মার্কিন সেনাদের শেষ দলটিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এখন আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাসহ ন্যাটো বাহিনীর এক লাখ ১২ হাজারের মতো সদস্য রয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যে তাঁদেরও প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। শুধু সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বিদেশি সেনাদের একটি ছোট দল রয়ে যাবে।
পাশ্চাত্যের রাজনীতিকেরা জোর দিয়ে দাবি করছেন, বহুজাতিক ন্যাটো বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাঘোষিত ‘ন্যায়ের যুদ্ধের’ও পরিসমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ন্যাটো বাহিনীর জন্য অজনপ্রিয় লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটলেও কাবুলের পাশ্চাত্য-সমর্থিত সরকারও পতনের মুখে পড়তে পারে। শুরু হতে পারে সাবেক সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর বেধে যাওয়া গৃহযুদ্ধের চেয়েও মারাত্মক সংঘাত। ১০ বছর থাকার পর ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায় সোভিয়েত বাহিনী।
গিলেস ডরোনসরো ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’-এর আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ। তিনিও নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করছেন। তবে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে আফগানিস্তানে তালেবানের শাসন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা বলেন। সম্প্রতি বিশ্লেষণধর্মী এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর আফগান সরকারের জন্য মার্কিন সমর্থন সীমিত হয়ে আসবে। তখন আরেকটি গৃহযুদ্ধ শুরু হবে এবং এতে বিজয়ীর বেশে ক্ষমতায় আসবে তালেবান।
আইসিজির প্রতিবেদন পড়ে নিশ্চয়ই তৃপ্তির হাসি হাসছেন তালেবান কমান্ডাররা। যৌথবাহিনীর অভিযানের ১১ বছর পুর্তির দিন গত ৭ অক্টোবর তালেবান এক বিবৃতিতে বিদ্রুপ করে বলেছে, ন্যাটো বাহিনী অপমান ও অসম্মানের সঙ্গে আফগানিস্তান ছেড়ে পালাচ্ছে।
অথচ কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল তালেবান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, তারা এই মুহূর্তে আলোচনায় বসতে চায় না। বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে তালেবানের মতো একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো ঝুঁকি নিতে চায় না ওবামা প্রশাসন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তালেবান কিন্তু মার্কিন-ন্যাটো বা আফগান সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালানো বন্ধ করেনি। পশ্চিমা বাহিনীর দীর্ঘ অভিযানের পরও তাদের সামরিক সমতা যে তেমন কমেছে, তা মনে করার কারণ নেই। অব্যাহতভাবে ন্যাটো বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দুঃসাহসী হামলা চালিয়েছে তালেবান। এর মধ্যে বিশেষভাবে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে হেলমান্দ প্রদেশের ক্যাম্প ব্যাস্টিয়নের ওপর হামলা। খুুবই সুরক্ষিত বিশাল ওই ঘাঁটিতে তালেবান হামলায় ছয়টি যুদ্ধবিমান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। এভাবে তালেবান মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার-পরিকল্পনাকে নতুন চাপের মুখে ফেলেছে।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক প্রতিরক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ স্টিফেন বিডল সম্প্রতি বলেছেন, তালেবান বাহিনীর এখনো জটিল ও সূক্ষ্ম অভিযানের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা আছে। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্প ব্যাস্টিয়নে হামলা যদি একটা আচমকা বিচ্ছিন্ন হামলা হতো, তা হলে চিন্তার কিছু থাকত না। কিন্তু যে পরিকল্পনা করে ওই দুর্ভেদ্য দুর্গে হানা দিয়েছে তারা, সে কথা ভাবলে বলতেই হবে, আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীর সামনে বিরাট সমস্যা আসছে।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন আফগানিস্তানের বিশ্লেষক ওয়াহিদ মুজদা। তিনি বলেছেন, যে নিখুঁতভাবে ক্যাম্প ব্যাস্টিয়নে অভিযান চালানো হয়েছে, তাতে প্রায় যে কেউ বুঝতে পারবে, বেশ কয়েক সপ্তাহ এমনকি মাসের পরিকল্পনা, মহড়া লেগেছে এর জন্য। অর্থাৎ সেই সক্ষমতা এখনো বহাল তবিয়তে আছে তালেবানের।
কাজেই সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে তালেবানের তৎপরতা যাঁরা অনুসরণ করে এসেছেন, তাঁরা আইসিজির প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গেই নেবেন।
No comments