মালালাকে ঘিরে ঐক্যে ফিরছে পাকিস্তান

২০০৯ সালের কথা। তখনো পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোয়াত উপত্যকা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। ঔদ্ধত্য আর আত্মদম্ভে অন্ধ গোষ্ঠীটি সে সময় একটি ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। সেখানে তুচ্ছ অপরাধে এক কিশোরীকে তালেবান যোদ্ধার বেত দিয়ে নির্দয় মারপিটের দৃশ্য দেখানো হয়।


ভিডিওর নির্মমতার কাহিনী দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। জনমত সৃষ্টি হতে সময় লাগেনি। সময় নেয়নি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও। দ্রুত সোয়াতে অভিযান চালিয়ে তালেবানকে বিদায় করে তারা।
পশ্চিমা বিশ্ব মনে করে, পাকিস্তানের জনগণ কিছুটা তালেবানঘেঁষা। তবে ২০০৯ সালের অভিযানপূর্ব ঘটনাই প্রমাণ করে, জনমত সৃষ্টি বা পরিবর্তনে খুব সময় লাগে না। আবারও এরই প্রমাণ পাওয়া গেল মালালা ঘটনায়। ১৪ বছরের এই শিশুর ওপর তালেবানের নৃশংসতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচিত হচ্ছে। প্রশাসনিক, সামরিক, বিচার বিভাগীয় ও রাজনৈতিক_সবভাবেই বর্তমান পাকিস্তান বহুবিভক্ত মতের এক উর্বর ভূমি। তবে মালালা ঘটনা সব বিভেদকে দূরে ঠেলে তাদের সহাবস্থানে নিয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান, রাজনীতিক_এমন কেউ নেই, যিনি এ ঘটনার নিন্দা জানাননি। বিচারের দাবিতে সোচ্চার হননি। এমনকি জামাত-উদ-দাওয়ার মতো কট্টারপন্থী সংগঠনও 'লজ্জাজনক, নিন্দাজনক ও বর্বরোচিত' বলে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। মালালার আরোগ্য কামনায় আর দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছে সুশীলসমাজ। মতের অমিল থাকলেও মামলা বিষয়ে একই আবেগ আর দাবি তাদের গ্রন্থিত করেছে এক সুতায়। নারী শিক্ষার পক্ষে সোচ্চার কর্মী মালালা ইউসুফজাইকে এখন অনেকেই দেশের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
আর মালালাকে কেন্দ্র করে আবারও পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তালেবানের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার মালালার ওপর হামলা চালিয়ে সগর্বে তার দায় স্বীকার করে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। তাদের দাবি, শরিয়া অনুসারেই কাজ করেছে তারা। মালালা পশ্চিমাঘেঁষা শিক্ষায় আগ্রহী। টিটিপির দৃষ্টিতে অপরাধও কম নেই তার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আদর্শ নেতা বলে মনে করে শিশুটি। নারী শিক্ষার প্রসারে এই বয়সেই তার প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে দুর্গতি ডেকে আনতে পারে_এমন আশঙ্কা থেকেই মালামাকে গুলি করে টিটিপি। তালেবানের ধারণা ছিল, সোয়াতে সেনা অভিযানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, এ অঞ্চলের প্রতি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ তাদের পক্ষে জোরাল জনমত সৃষ্টি করতে সহায়ক হয়েছে। কিন্তু মালালা ঘটনা তাদের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। বুমেরাং পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাদের জন্য।
পাকিস্তানের জনমত এখন তীব্র তালেবানবিরোধী। সোয়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির সদস্য বুশরা গহর বলেন, 'সন্ত্রাসকে সমূলে উৎপাটনের সময় এসেছে।' গতকাল পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক দি এঙ্প্রেস ট্রিবিউনের সম্পাদকীয়তে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, 'সোয়াতে সেনা অভিযানের তিন বছর পর মালালাকে এ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। তাহলে সে সময় সেনাবাহিনী কী করেছিল? সেনা উপস্থিতি সত্ত্বেও তালেবান আবারও উপত্যকায় ফিরল কী করে এবং এখন তাদের বিরুদ্ধে কী করা হবে?' এ সম্পাদকীয়তে বলা হয়, শুধু গোষ্ঠীটির প্রধান নেতাদের আটক করে বিচারের সম্মুখীন করা নয়, পরিবেশ পরিবর্তনে সচেষ্ট হতে হবে। জোর দিতে হবে উদারপন্থী শিক্ষানীতির ওপর। অন্যথায় শুধু সেনা অভিযানের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে না। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.