ল্যাপটপ থেকে আগুন লাগতেই পারে! by মাহমুদুল হাসান
কয়েক দিন আগে ঢাকার মিরপুরের এক ব্যবসায়ী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে বলা হয়েছে, ল্যাপটপ বিস্ফোরণে বিছানায় আগুন ধরে যায় এবং এ দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনো অনুসন্ধানে জানা যায়নি, তবে ল্যাপটপ কম্পিউটার বিস্ফোরণের ব্যাপারটি চলে এসেছে।
আসলেই কি ল্যাপটপে আগুন ধরে যেতে পারে বা এটা বিস্ফোরিত হতে পারে?
বেশ কিছুদিন ধরে সারা বিশ্বে ল্যাপটপ কম্পিউটার বিস্ফোরণ এবং এ বিষয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। তবে ল্যাপটপ কম্পিউটারে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা একেবারে নতুন নয়। এ ধরনের দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার নজিরও আছে। যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকের মৃত্যুও হয়েছে।কানাডা ও ভারতেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সারা বিশ্বে এ ধরনের যে কয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই ছিল ডেল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কম্পিউটার। এমন আগুন ধরে যাওয়ার বা বিস্ফোরণের যত ঘটনা ঘটেছে, তার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশের জন্য দায়ীত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি।কয়েক বছর আগে ডেল ল্যাপটপ কম্পিউটারের ব্যাটারি প্রত্যাহার নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক আন্দোলনও হয়েছে। ডেলের এই ব্যাটারিগুলোর বেশির ভাগই ছিল সনির তৈরি। ২০০৫ সালে ডেল ২২ হাজার ল্যাপটপ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারির কারণে ল্যাপটপ প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিলসনি ও আইবিএমের মতো বড় প্রতিষ্ঠানকেও।(সূত্র: www.thisismoney.co.uk/ money/news/article-1601452/ Could-your-laptop-burst-into-flames.html এবং http://indiatoday.intoday.in/ story/ overheated-laptop-batteries-a-fire-hazard/1/159486.html)
আসল কথা
ইতিহাস ছেড়ে এবার মূল কথায় আসা যাক। ল্যাপটপে আগুন ধরে যাওয়া বা বিস্ফোরণ ঘটার মূল কারণব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া (ওভারহিটিং)।আর এ কারণেব্যাটারিতে শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লেগে যেতে পারে বা বিস্ফোরিত হতে পারে। বর্তমানে প্রায় সব ল্যাপটপে ব্যবহূত হয় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, যা কম জায়গায় বেশি শক্তি জমা করে রাখতে পারে।জায়গার সাশ্রয় হলেও এটি বিপদের আশঙ্কা বাড়ায়।কারণ, এতে ব্যবহূত তড়িৎ-বিশ্লেষ্য (ইলেকট্রোলাইট) হিসেবে যে পদার্থ ব্যবহার করা হয়,তা দাহ্য ধরনের।ব্যাটারি উৎপাদনের সময় এই তড়িৎ-বিশ্লেষ্যে একধরনের ধাতব গুঁড়া (মেটালিক পার্টিকল) রয়ে যায়। যে ব্যাটারি যত ভালো, সেটিতে ধাতব গুঁড়া থাকবে তত কম।ব্যাটারির অ্যানোড ও ক্যাথোড, অর্থাৎ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের মধ্যে একটি বিভাজক থাকে। ব্যাটারি বেশি গরম হয়ে গেলে ওই ধাতব গুঁড়াগুলোর ছোটাছুটির গতি বেড়ে যায়।এর ফলে ধাতব গুঁড়াগুলোর আঘাতে বিভাজক ফুটো হয়ে যেতে পারে;আর তখনই ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ পরস্পরের সংস্পর্শে চলে আসে, অর্থাৎ শর্টসার্কিট হয়। এই শর্টসার্কিটই হলো ল্যাপটপের ব্যাটারিতে আগুন ধরে যাওয়া বা বিস্ফোরণের মূল কারণ।
এ ছাড়া ল্যাপটপের প্রচলিত ব্যাটারিগুলো অনেক ছোট আকারে বানানো হয়। এতে ব্যাটারির ভেতরে অনেক বেশি চাপ থাকে। কোনো ব্যাটারির তাপমাত্রা বাড়লে সেটির ভেতরের চাপও বাড়ে। এ কারণেও একপর্যায়ে ল্যাপটপের ব্যাটারি বিস্ফোরিত হতে পারে।
মাঝেমধ্যে ক্যাপাসিটর বিস্ফোরিত হয়েও ল্যাপটপে আগুন লাগতে পারে।ল্যাপটপের ডিভিডি-রম ড্রাইভের পাশে বড় আকারের ক্যাপাসিটর থাকে।
ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে
দেশে সাধারণত অফিস ও বাসয় যে ধরনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে কাঠজাতীয় পদার্থের আগুন ছাড়াও তড়িৎ ও রাসায়নিক পদার্থ থেকে সৃষ্ট আগুন নেভানো বা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু ল্যাপটপে যে ধরনের আগুন ধরে যায়, তার জন্য দায়ীহলো তড়িৎ, রাসায়নিক ও ধাতব পদার্থ। ধাতব আগুন নেভানোর জন্য বালু বা বিশেষ নির্বাপক ব্যবহার করতে হবে।
হঠাৎ ল্যাপটপে আগুন ধরে গেলে পানি ব্যবহার করা ঠিক হবে না।এতে আগুন না নিভে বাড়তে পারে।
অনেকে সরাসরি বিছানার ওপর ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। বিছানায়ল্যাপটপ রাখলেএর নিচ ও পাশ দিয়ে সহজে তাপ বের হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে ল্যাপটপের চার কোনায় কিছু দিয়ে বিছানা থেকে উঁচু করে নিয়ে তাপ বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সারা রাত ল্যাপটপের ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে রাখলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেক ল্যাপটপেই বাড়তি চার্জ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে না।
ল্যাপটপ চালিয়ে বিছানার পাশে রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়।
অনেক সময় কুলিং ফ্যান ঠিকভাবে কাজ না করলে ব্যাটারি গরম হয়ে যেতে পারে।ল্যাপটপের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেড়ে গেলেই সতর্ক হওয়া উচিত।
আতঙ্কের কিছু নেই
ল্যাপটপের ব্যাটারিতে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা খুব বেশিঘটেছে, এমন নয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এ আশঙ্কা আরও অনেক কমে এসেছে।তাই আতঙ্কিত না হয়ে, সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করাই যথেষ্ট।
মাহমুদুল হাসান: তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলী এবং চেয়ারম্যান, অন্য রকম গ্রুপ
বেশ কিছুদিন ধরে সারা বিশ্বে ল্যাপটপ কম্পিউটার বিস্ফোরণ এবং এ বিষয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। তবে ল্যাপটপ কম্পিউটারে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা একেবারে নতুন নয়। এ ধরনের দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার নজিরও আছে। যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকের মৃত্যুও হয়েছে।কানাডা ও ভারতেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সারা বিশ্বে এ ধরনের যে কয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই ছিল ডেল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কম্পিউটার। এমন আগুন ধরে যাওয়ার বা বিস্ফোরণের যত ঘটনা ঘটেছে, তার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশের জন্য দায়ীত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারি।কয়েক বছর আগে ডেল ল্যাপটপ কম্পিউটারের ব্যাটারি প্রত্যাহার নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক আন্দোলনও হয়েছে। ডেলের এই ব্যাটারিগুলোর বেশির ভাগই ছিল সনির তৈরি। ২০০৫ সালে ডেল ২২ হাজার ল্যাপটপ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটারির কারণে ল্যাপটপ প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিলসনি ও আইবিএমের মতো বড় প্রতিষ্ঠানকেও।(সূত্র: www.thisismoney.co.uk/ money/news/article-1601452/ Could-your-laptop-burst-into-flames.html এবং http://indiatoday.intoday.in/ story/ overheated-laptop-batteries-a-fire-hazard/1/159486.html)
আসল কথা
ইতিহাস ছেড়ে এবার মূল কথায় আসা যাক। ল্যাপটপে আগুন ধরে যাওয়া বা বিস্ফোরণ ঘটার মূল কারণব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া (ওভারহিটিং)।আর এ কারণেব্যাটারিতে শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লেগে যেতে পারে বা বিস্ফোরিত হতে পারে। বর্তমানে প্রায় সব ল্যাপটপে ব্যবহূত হয় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, যা কম জায়গায় বেশি শক্তি জমা করে রাখতে পারে।জায়গার সাশ্রয় হলেও এটি বিপদের আশঙ্কা বাড়ায়।কারণ, এতে ব্যবহূত তড়িৎ-বিশ্লেষ্য (ইলেকট্রোলাইট) হিসেবে যে পদার্থ ব্যবহার করা হয়,তা দাহ্য ধরনের।ব্যাটারি উৎপাদনের সময় এই তড়িৎ-বিশ্লেষ্যে একধরনের ধাতব গুঁড়া (মেটালিক পার্টিকল) রয়ে যায়। যে ব্যাটারি যত ভালো, সেটিতে ধাতব গুঁড়া থাকবে তত কম।ব্যাটারির অ্যানোড ও ক্যাথোড, অর্থাৎ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের মধ্যে একটি বিভাজক থাকে। ব্যাটারি বেশি গরম হয়ে গেলে ওই ধাতব গুঁড়াগুলোর ছোটাছুটির গতি বেড়ে যায়।এর ফলে ধাতব গুঁড়াগুলোর আঘাতে বিভাজক ফুটো হয়ে যেতে পারে;আর তখনই ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ পরস্পরের সংস্পর্শে চলে আসে, অর্থাৎ শর্টসার্কিট হয়। এই শর্টসার্কিটই হলো ল্যাপটপের ব্যাটারিতে আগুন ধরে যাওয়া বা বিস্ফোরণের মূল কারণ।
এ ছাড়া ল্যাপটপের প্রচলিত ব্যাটারিগুলো অনেক ছোট আকারে বানানো হয়। এতে ব্যাটারির ভেতরে অনেক বেশি চাপ থাকে। কোনো ব্যাটারির তাপমাত্রা বাড়লে সেটির ভেতরের চাপও বাড়ে। এ কারণেও একপর্যায়ে ল্যাপটপের ব্যাটারি বিস্ফোরিত হতে পারে।
মাঝেমধ্যে ক্যাপাসিটর বিস্ফোরিত হয়েও ল্যাপটপে আগুন লাগতে পারে।ল্যাপটপের ডিভিডি-রম ড্রাইভের পাশে বড় আকারের ক্যাপাসিটর থাকে।
ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে
দেশে সাধারণত অফিস ও বাসয় যে ধরনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে কাঠজাতীয় পদার্থের আগুন ছাড়াও তড়িৎ ও রাসায়নিক পদার্থ থেকে সৃষ্ট আগুন নেভানো বা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু ল্যাপটপে যে ধরনের আগুন ধরে যায়, তার জন্য দায়ীহলো তড়িৎ, রাসায়নিক ও ধাতব পদার্থ। ধাতব আগুন নেভানোর জন্য বালু বা বিশেষ নির্বাপক ব্যবহার করতে হবে।
হঠাৎ ল্যাপটপে আগুন ধরে গেলে পানি ব্যবহার করা ঠিক হবে না।এতে আগুন না নিভে বাড়তে পারে।
অনেকে সরাসরি বিছানার ওপর ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। বিছানায়ল্যাপটপ রাখলেএর নিচ ও পাশ দিয়ে সহজে তাপ বের হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে ল্যাপটপের চার কোনায় কিছু দিয়ে বিছানা থেকে উঁচু করে নিয়ে তাপ বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সারা রাত ল্যাপটপের ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে রাখলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেক ল্যাপটপেই বাড়তি চার্জ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে না।
ল্যাপটপ চালিয়ে বিছানার পাশে রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়।
অনেক সময় কুলিং ফ্যান ঠিকভাবে কাজ না করলে ব্যাটারি গরম হয়ে যেতে পারে।ল্যাপটপের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেড়ে গেলেই সতর্ক হওয়া উচিত।
আতঙ্কের কিছু নেই
ল্যাপটপের ব্যাটারিতে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা খুব বেশিঘটেছে, এমন নয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এ আশঙ্কা আরও অনেক কমে এসেছে।তাই আতঙ্কিত না হয়ে, সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করাই যথেষ্ট।
মাহমুদুল হাসান: তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলী এবং চেয়ারম্যান, অন্য রকম গ্রুপ
No comments