ইমরানের লংমার্চের সাফল্য-ব্যর্থতা
ওয়াজিরিস্তানমুখী আলোচিত লংমার্চের চূড়ান্ত গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা সাবেক নন্দিত ক্রিকেটার ইমরান খান। তবে যেটুকু করতে পেরেছেন, তাকে তাঁর জয় হিসেবেই দেখছেন বেশির ভাগ লোক।
তাঁরা বলছেন, এটা অন্তত বলা যায় যে লংমার্চের প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন ইমরানের গণমানুষকে কাছে টানার ক্ষমতারই প্রমাণ।
এ লংমার্চের সাফল্য-ব্যর্থতা ছাড়াও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা নিয়ে পাকিস্তানে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। নিন্দুকেরা বলেছেন, নেতিয়ে পড়া জনপ্রিয়তার পালে হাওয়া লাগাতেই ড্রোন (চালকবিহীন গোয়েন্দা বা বোমারু বিমান) নিয়ে পড়েছেন ইমরান। আর সমর্থকদের দাবি, ইমরানের এ উদ্যোগ প্রমাণ করে, তিনি দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে সচেতন।
অনেকেই বলছেন, উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকার প্রাণকেন্দ্রে পৌঁছতে না পারলেও অন্তত আবার রাজনীতির মঞ্চে আলো ছড়াতে পেরেছেন ইমরান। হাজার হাজার সমর্থক তাঁর সঙ্গে লংমার্চে যোগ দিয়েছে। এ ঘটনা তাঁর তারকাখ্যাতিকে পোক্ত করেছে আরও।
তবে ইমরানের লংমার্চের ওপর যাঁরা নজর রেখেছিলেন, তাঁরা বলছেন, লক্ষ্য যা-ই থাকুক, এতে আগামী নির্বাচনের প্রচারণার একটা ছায়া ছিল স্পষ্ট। ড্রোন হামলাবিরোধী ব্যানার, পোস্টার আর স্লোগান প্রায় চাপাই পড়ে গিয়েছিল স্থানীয় পিটিআই নেতাদের ছবি, ব্যানার আর তাঁদের নামে ওঠা স্লোগানে। যদিও সব বিশ্লেষকেরই একমত, লংমার্চ ব্যাপক প্রচার পাওয়ার পরও ইমরানের আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্য হলো, আপনি একটি ইস্যুকে তুলে ধরতে চান; চান খবরে থাকতে। কয়েক দিন ধরে লংমার্চের বিষয়টি পাকিস্তানের রাজনীতি ও প্রচারমাধ্যমে একটি বড় খবর ছিল।
ইউসুফজাইয়ের মতে, লাহোর ও করাচির গত বছরের দুই বিশাল সভার পরিপ্রেক্ষিতে এ লংমার্চ ইমরানের সুনাম বাড়াবে।
কেউ কেউ মনে করেন, ইমরান খান সে অর্থে পরীক্ষিত নেতা না হলেও তিনি হয়তো পাকিস্তানের পঙ্কিল হয়ে ওঠা রাজনীতিতে তাজা হাওয়া নিয়ে আসতে পারবেন।
দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের উপজাতীয় নেতা নূর খান মাসুদ তাঁদেরই একজন। তিনি মনে করেন, অন্য দলগুলোর নেতারা এত দিন কেবল জাতীয় সম্পদ লুটপাটই করেছেন।
আর্থিক সততার নিরিখে ব্যক্তি ইমরান খানের এ মূল্যায়ন হয়তো সঠিক।
কিন্তু পাকিস্তানের অনেক উদার মানুষই রাজনীতিক ইমরানের নামে আতঙ্কিত। তাঁরা মনে করেন, ইমরান যে তালেবানের কোনো সমালোচনা করতে চান না, তা জঙ্গিবাদকে আশকারাই দেবে। ড্রোন নিয়ে তাঁর কথাবার্তাও সব সময় যৌক্তিক নয়। সম্প্রতি ইমরান বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে মার্কিন ড্রোন গুলি করে নামাতেন।
উদারপন্থী সমালোচকেরা বলছেন, পিটিআইয়ের লংমার্চ এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যেমন, উপজাতীয় অঞ্চলের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও নিরাপত্তা বিষয়ের অতিজটিল চিত্র দলটি কতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বলা হচ্ছে, মার্কিন ড্রোন হামলা এবং পাকিস্তানের জনগণ ও খোদ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তালেবানের যুদ্ধ দুটি পৃথক বিষয়, যা পিটিআই গুলিয়ে ফেলেছে। একজন কলাম লেখক বলেছেন, একটি সুস্পষ্ট ও বৃহত্তর সন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতি ছাড়া এ ধরনের লংমার্চ আন্দোলন সফল হবে না। ইমরান সে রকম কোনো নীতি তুলে ধরতে পারেননি। এ লেখক আরও বলেন, মার্কিন ড্রোন হামলায় কথিত সন্ত্রাসবাদীদের পাশাপাশি প্রায়ই নিরীহ লোকজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হলেও সেটাই পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকার মূল সমস্যা নয়। যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালুর আগে থেকেই তালেবান ও অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীরা সেখানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হচ্ছে।
সেই ১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে নেমে ইমরান খান এ পর্যন্ত খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তাঁর নীতি প্রায়ই বদলেছে। কখনো কখনো তা অস্পষ্ট। ইমরান উদারনৈতিকতার পক্ষে কথা বলেন। আবার একই সঙ্গে গোঁড়া ইসলামি মূল্যবোধ ও পাশ্চাত্যবিরোধিতার বুলি আওড়ান। তাঁর ‘তেহরিক-ই- ইনসাফ, অর্থাৎ কিনা ‘ন্যায়বিচারের আন্দোলন’ দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রকট। এসব কারণে পাকিস্তানে অনেকেই তাঁকে এ পর্যন্ত তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেননি। ইমরান দেশবাসীকে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ‘নিষ্কলুষ’ নেতা উপহার দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে তাঁর জনপ্রিয়তায় জোয়ার এলে গৎবাঁধা রাজনীতি করা অনেক পুরোনো নেতাই পিটিআইতে যোগ দেন। আগামী নির্বাচনই তাঁদের লক্ষ্য বলে মনে করা হয়।
হারুন-অর-রশীদ
এ লংমার্চের সাফল্য-ব্যর্থতা ছাড়াও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা নিয়ে পাকিস্তানে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। নিন্দুকেরা বলেছেন, নেতিয়ে পড়া জনপ্রিয়তার পালে হাওয়া লাগাতেই ড্রোন (চালকবিহীন গোয়েন্দা বা বোমারু বিমান) নিয়ে পড়েছেন ইমরান। আর সমর্থকদের দাবি, ইমরানের এ উদ্যোগ প্রমাণ করে, তিনি দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে সচেতন।
অনেকেই বলছেন, উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকার প্রাণকেন্দ্রে পৌঁছতে না পারলেও অন্তত আবার রাজনীতির মঞ্চে আলো ছড়াতে পেরেছেন ইমরান। হাজার হাজার সমর্থক তাঁর সঙ্গে লংমার্চে যোগ দিয়েছে। এ ঘটনা তাঁর তারকাখ্যাতিকে পোক্ত করেছে আরও।
তবে ইমরানের লংমার্চের ওপর যাঁরা নজর রেখেছিলেন, তাঁরা বলছেন, লক্ষ্য যা-ই থাকুক, এতে আগামী নির্বাচনের প্রচারণার একটা ছায়া ছিল স্পষ্ট। ড্রোন হামলাবিরোধী ব্যানার, পোস্টার আর স্লোগান প্রায় চাপাই পড়ে গিয়েছিল স্থানীয় পিটিআই নেতাদের ছবি, ব্যানার আর তাঁদের নামে ওঠা স্লোগানে। যদিও সব বিশ্লেষকেরই একমত, লংমার্চ ব্যাপক প্রচার পাওয়ার পরও ইমরানের আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্য হলো, আপনি একটি ইস্যুকে তুলে ধরতে চান; চান খবরে থাকতে। কয়েক দিন ধরে লংমার্চের বিষয়টি পাকিস্তানের রাজনীতি ও প্রচারমাধ্যমে একটি বড় খবর ছিল।
ইউসুফজাইয়ের মতে, লাহোর ও করাচির গত বছরের দুই বিশাল সভার পরিপ্রেক্ষিতে এ লংমার্চ ইমরানের সুনাম বাড়াবে।
কেউ কেউ মনে করেন, ইমরান খান সে অর্থে পরীক্ষিত নেতা না হলেও তিনি হয়তো পাকিস্তানের পঙ্কিল হয়ে ওঠা রাজনীতিতে তাজা হাওয়া নিয়ে আসতে পারবেন।
দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের উপজাতীয় নেতা নূর খান মাসুদ তাঁদেরই একজন। তিনি মনে করেন, অন্য দলগুলোর নেতারা এত দিন কেবল জাতীয় সম্পদ লুটপাটই করেছেন।
আর্থিক সততার নিরিখে ব্যক্তি ইমরান খানের এ মূল্যায়ন হয়তো সঠিক।
কিন্তু পাকিস্তানের অনেক উদার মানুষই রাজনীতিক ইমরানের নামে আতঙ্কিত। তাঁরা মনে করেন, ইমরান যে তালেবানের কোনো সমালোচনা করতে চান না, তা জঙ্গিবাদকে আশকারাই দেবে। ড্রোন নিয়ে তাঁর কথাবার্তাও সব সময় যৌক্তিক নয়। সম্প্রতি ইমরান বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে মার্কিন ড্রোন গুলি করে নামাতেন।
উদারপন্থী সমালোচকেরা বলছেন, পিটিআইয়ের লংমার্চ এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যেমন, উপজাতীয় অঞ্চলের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও নিরাপত্তা বিষয়ের অতিজটিল চিত্র দলটি কতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বলা হচ্ছে, মার্কিন ড্রোন হামলা এবং পাকিস্তানের জনগণ ও খোদ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তালেবানের যুদ্ধ দুটি পৃথক বিষয়, যা পিটিআই গুলিয়ে ফেলেছে। একজন কলাম লেখক বলেছেন, একটি সুস্পষ্ট ও বৃহত্তর সন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতি ছাড়া এ ধরনের লংমার্চ আন্দোলন সফল হবে না। ইমরান সে রকম কোনো নীতি তুলে ধরতে পারেননি। এ লেখক আরও বলেন, মার্কিন ড্রোন হামলায় কথিত সন্ত্রাসবাদীদের পাশাপাশি প্রায়ই নিরীহ লোকজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হলেও সেটাই পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকার মূল সমস্যা নয়। যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলা চালুর আগে থেকেই তালেবান ও অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীরা সেখানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হচ্ছে।
সেই ১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে নেমে ইমরান খান এ পর্যন্ত খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তাঁর নীতি প্রায়ই বদলেছে। কখনো কখনো তা অস্পষ্ট। ইমরান উদারনৈতিকতার পক্ষে কথা বলেন। আবার একই সঙ্গে গোঁড়া ইসলামি মূল্যবোধ ও পাশ্চাত্যবিরোধিতার বুলি আওড়ান। তাঁর ‘তেহরিক-ই- ইনসাফ, অর্থাৎ কিনা ‘ন্যায়বিচারের আন্দোলন’ দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রকট। এসব কারণে পাকিস্তানে অনেকেই তাঁকে এ পর্যন্ত তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেননি। ইমরান দেশবাসীকে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ‘নিষ্কলুষ’ নেতা উপহার দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে তাঁর জনপ্রিয়তায় জোয়ার এলে গৎবাঁধা রাজনীতি করা অনেক পুরোনো নেতাই পিটিআইতে যোগ দেন। আগামী নির্বাচনই তাঁদের লক্ষ্য বলে মনে করা হয়।
হারুন-অর-রশীদ
No comments