প্রশ্নপত্র ফাঁস-সিন্ডিকেটের কবজায় বিজি প্রেসের গোপনীয় শাখা by আপেল মাহমুদ
বিজি প্রেসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন একজন উপপরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা। গত দেড় বছরে এ পদে তিনজন কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। আবার তাঁরা বদলিও হয়ে গেছেন। বিজি প্রেসের বর্তমান উপপরিচালক আবদুল বারী এ তথ্য জানিয়েছেন কালের কণ্ঠকে।
অথচ সহকারী পরিচালক হিসেবে মো. আলমগীর হোসেন একই স্থানে বহাল আছেন দীর্ঘ এক যুগ ধরে। প্রায় ছয় বছর আগে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মমতাজ বেগম তাঁকে বদলি করলেও রহস্যজনক কারণে সেটা কার্যকর হয়নি। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে বিশেষ যোগাযোগ থাকার সুবাদে সেই বদলির আদেশ বাতিল করান বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, বদলির আদেশ দেওয়ার কিছুদিন পর উল্টো ওই মহাপরিচালককেই অধিদপ্তর থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। এরপর কয়েকজন মহাপরিচালকের দায়িত্বে এলেও আলমগীর হোসেনকে কেউ ঘাঁটাতে যাননি।
এভাবেই আলমগীর হোসেন বিজি প্রেসে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তাঁর বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়।
সূত্র জানায়, তিনি নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য বিজি প্রেসের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ভাই, শ্যালক ছাড়াও নিজ জেলার লোকদের গোপনীয় শাখায় বদলি করে এনেছেন। তাদেরকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে আলমগীর হোসেন নিজের খেয়াল মতো চালাচ্ছেন বিজি প্রেস। বিশেষ করে গোপনীয় শাখার সবকিছুই তাঁর কুক্ষিগত। বিজি প্রেসে একটি কথা চালু রয়েছে- 'বিজি প্রেস সরকারের নিয়মে চলে না, চলে সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেনের কথায়।' তবে গোপনীয় শাখা তাঁর কথায় চলে এমন অভিযোগ স্বীকার করেননি আলমগীর। যদিও ওই শাখায় আত্মীয়স্বজন এবং নিজ এলাকার লোকদের আধিক্য থাকার কথা তিনি মেনে নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের শ্যালক আকমল হোসেন গোপনীয় শাখার একজন কপি হোল্ডার। তাঁর কাজ হলো প্রুফ কপি পড়ে শোনানো। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই আকমল হোসেনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহিরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র এবং ছাত্রলীগের একজন নেতার মাধ্যমে ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। পরে তা বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছাত্রলীগ নেতার বাড়িও আকমল হোসেনের এলাকায়। আলমগীরের ছোট ভাই রুবেল হোসেন একই শাখার বাইন্ডার পদে কর্মরত। তাদের সহযোগী হিসেবে নাম এসেছে গোপনীয় শাখার রিডার নাসির উদ্দিন আহমেদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন তালুকদার, রিভাইজার মো. রফিকুল ইসলাম-১, মো. রফিকুল ইসলাম-২, কম্পিউটার কম্পোজিটর মো. কবিরুল ইসলাম, মো. আবদুল মোতালেব, প্রসেস কম্পোজিটর মো. আনসার উদ্দিন, মেশিনম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম, মো. হেলালউদ্দিন মোল্লা, মো. রিয়াজ উদ্দিন শিকদার, মো. ছানাউল্লা খান, মেশিন ইংকম্যান মো. মোতালেব মোল্লা, বাইন্ডার শহিদুল ইসলাম প্রমুখের। তাদের বেশির ভাগের বাড়িই একই জেলায়। তবে গোপনীয় শাখার ইনচার্জ মো. আবদুল কাদের মৃধা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে গোপনীয় শাখার কোনো কর্মচারী জড়িত নয় বলে দাবি করেন।
শুধু আত্মীয়স্বজনই নয়, আলমগীর হোসেনের নিজ জেলার অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিজি প্রেসে কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর গোপনীয় শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো তাঁদের দেওয়া হয়েছে। বিজি প্রেসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলমগীর হোসেন নিজের লোক দিয়ে গোপনীয় শাখাটি এমনভাবে সাজিয়েছেন যে, বিজি প্রেসের প্রধান হিসেবে কেউ বদলি হয়ে এলেও তাঁর পক্ষে করার কিছুই থাকে না। উপপরিচালক পদমর্যাদাসম্পন্ন বিজি প্রেসের বর্তমান প্রধান আবদুল বারী এই প্রতিবেদককে জানান, নতুন এসেছেন বলে অফিসের সবকিছু তাঁর এখনো জানা হয়ে ওঠেনি।
বিজি প্রেসের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আগে ডিপার্টমেন্টের প্রবীণ এবং পরীক্ষিত সৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গোপনীয় শাখায় বদলি করা হতো। বিজি প্রেসের উপপরিচালক অনেক খোঁজখবর করে কর্মী বাছাই করতেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কারো সুপারিশ গ্রহণ করতেন না। এমনকি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সুপারিশেও কাউকে গোপনীয় শাখায় রাখতেন না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ রীতি-নীতি পালন করা হচ্ছে না। যাচাই-বাছাই ছাড়াই যাকে-তাকে গোপনীয় শাখায় আনা হচ্ছে। এতে শাখার নিরাপত্তা বিঘি্নত হচ্ছে। বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো স্পর্শকাতর ঘটনা সে কারণেই ঘটছে।'
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, 'বর্তমানে ঘুষ দিয়ে অনেকে গোপনীয় শাখায় বদলি হচ্ছেন। কী কারণে ঘুষ দিয়ে তাঁরা বদলি হচ্ছেন- তা অনুসন্ধান করলেই অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। শুধু ঘুষ দিয়েই নয়, বিজি প্রেসের সংঘবদ্ধ চক্র নিজেদের আত্মীয়স্বজন এবং নিজ জেলার লোক এনে গোপনীয় শাখায় জড়ো করেছেন। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। তাঁর সহযোগী হিসেবে নাম এসেছে গোপনীয় শাখার ইনচার্জ (গোপনীয় মুদ্রণ পরিদর্শক) আবদুল কাদের মৃধা ও ব্যবস্থাপক (প্রেস) সরদার মহিতুল ইসলাম রিপনের। মূলত এই তিন ব্যক্তিই বিজি প্রেসের হর্তাকর্তা। তাঁদের সবার বাড়ি একই জেলায়।' অনুসন্ধানকালে এই সিন্ডিকেটের পরামর্শদাতা হিসেবে নাম এসেছে বিজি প্রেসের প্ল্যানিং সুপারভাইজার আবদুল বারী সুলতানীর। তবে তিনি এ কথা অস্বীকার করেন।
বিজি প্রেসের একাধিক সাবেক কর্মচারী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, যেদিন থেকে এই সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়েছে, সেদিন থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। বিগত দিনে যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা কেউ চুপ করে বসে নেই। সারা দেশে তাঁদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাঁরা সম্মিলিতভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নতুন কর্মচারীরাও টাকার লোভে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এই সিন্ডিকেট নির্মূল করা না গেলে প্রশ্নপত্র ফাঁস কখনো ঠেকানো যাবে না।
বিজি প্রেসের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করে, গত বছর খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর সন্দেহজনক হিসেবে আলমগীর হোসেনকে সিআইডি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দুদকের একজন কর্মকর্তার তদবির কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের ওই কর্মকর্তা আলমগীরের সহযোগী আবদুল বারী সুলতানীর ভায়রা। বিজি প্রেসের একটি সূত্র জানায়, মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে তাঁরা তখন খাদ্য অধিদপ্তরের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা থেকে রেহাই পেয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু আত্মীয়স্বজন এবং নিজ জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীই নয়, বিজি প্রেসের বেশির ভাগ কর্মচারীর কাছে সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন জনপ্রিয়। কারণ এই সহকারী পরিচালকের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের বেতনের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি আয় করেন ওভারটাইমের পারিশ্রমিক হিসেবে। তিনি এই ওভারটাইম পাওয়ার জন্য কৌশলে কর্মচারীদের দিয়ে অফিস সময়ের অতিরিক্ত কাজ করান। এর ফলে সরকারি তহবিল থেকে প্রতিবছর কোটি-কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। কর্মচারীরাও বিশেষ সুবিধা পান বলে কেউ আলমগীর হোসেনের কোনো কাজেরই বিরোধিতা করেন না। তদন্ত করলেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান।
অভিযোগ উঠেছে, আলমগীর হোসেনের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। যে কারণে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না। তিনি একই জায়গায় এক যুগ ধরে দাপটে চাকরি করে যাচ্ছেন। এ কথা তিনি গর্বের সঙ্গে বলেও বেড়ান।
বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আ ল ম আবদুর রহমান এনডিসি বিজি প্রেসে বিশেষ সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করেননি। তবে তিনি বলেন, তদন্তে গোপনীয় শাখায় যদি একই জেলার লোক বেশি থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হবে। আলমগীর হোসেনের একই জায়গায় প্রায় এক যুগ ধরে বহাল থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, অচিরেই তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে।
এভাবেই আলমগীর হোসেন বিজি প্রেসে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তাঁর বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়।
সূত্র জানায়, তিনি নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য বিজি প্রেসের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ভাই, শ্যালক ছাড়াও নিজ জেলার লোকদের গোপনীয় শাখায় বদলি করে এনেছেন। তাদেরকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে আলমগীর হোসেন নিজের খেয়াল মতো চালাচ্ছেন বিজি প্রেস। বিশেষ করে গোপনীয় শাখার সবকিছুই তাঁর কুক্ষিগত। বিজি প্রেসে একটি কথা চালু রয়েছে- 'বিজি প্রেস সরকারের নিয়মে চলে না, চলে সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেনের কথায়।' তবে গোপনীয় শাখা তাঁর কথায় চলে এমন অভিযোগ স্বীকার করেননি আলমগীর। যদিও ওই শাখায় আত্মীয়স্বজন এবং নিজ এলাকার লোকদের আধিক্য থাকার কথা তিনি মেনে নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের শ্যালক আকমল হোসেন গোপনীয় শাখার একজন কপি হোল্ডার। তাঁর কাজ হলো প্রুফ কপি পড়ে শোনানো। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই আকমল হোসেনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহিরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র এবং ছাত্রলীগের একজন নেতার মাধ্যমে ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। পরে তা বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছাত্রলীগ নেতার বাড়িও আকমল হোসেনের এলাকায়। আলমগীরের ছোট ভাই রুবেল হোসেন একই শাখার বাইন্ডার পদে কর্মরত। তাদের সহযোগী হিসেবে নাম এসেছে গোপনীয় শাখার রিডার নাসির উদ্দিন আহমেদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. নাসির উদ্দিন তালুকদার, রিভাইজার মো. রফিকুল ইসলাম-১, মো. রফিকুল ইসলাম-২, কম্পিউটার কম্পোজিটর মো. কবিরুল ইসলাম, মো. আবদুল মোতালেব, প্রসেস কম্পোজিটর মো. আনসার উদ্দিন, মেশিনম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম, মো. হেলালউদ্দিন মোল্লা, মো. রিয়াজ উদ্দিন শিকদার, মো. ছানাউল্লা খান, মেশিন ইংকম্যান মো. মোতালেব মোল্লা, বাইন্ডার শহিদুল ইসলাম প্রমুখের। তাদের বেশির ভাগের বাড়িই একই জেলায়। তবে গোপনীয় শাখার ইনচার্জ মো. আবদুল কাদের মৃধা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে গোপনীয় শাখার কোনো কর্মচারী জড়িত নয় বলে দাবি করেন।
শুধু আত্মীয়স্বজনই নয়, আলমগীর হোসেনের নিজ জেলার অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিজি প্রেসে কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর গোপনীয় শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো তাঁদের দেওয়া হয়েছে। বিজি প্রেসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলমগীর হোসেন নিজের লোক দিয়ে গোপনীয় শাখাটি এমনভাবে সাজিয়েছেন যে, বিজি প্রেসের প্রধান হিসেবে কেউ বদলি হয়ে এলেও তাঁর পক্ষে করার কিছুই থাকে না। উপপরিচালক পদমর্যাদাসম্পন্ন বিজি প্রেসের বর্তমান প্রধান আবদুল বারী এই প্রতিবেদককে জানান, নতুন এসেছেন বলে অফিসের সবকিছু তাঁর এখনো জানা হয়ে ওঠেনি।
বিজি প্রেসের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আগে ডিপার্টমেন্টের প্রবীণ এবং পরীক্ষিত সৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গোপনীয় শাখায় বদলি করা হতো। বিজি প্রেসের উপপরিচালক অনেক খোঁজখবর করে কর্মী বাছাই করতেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কারো সুপারিশ গ্রহণ করতেন না। এমনকি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সুপারিশেও কাউকে গোপনীয় শাখায় রাখতেন না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ রীতি-নীতি পালন করা হচ্ছে না। যাচাই-বাছাই ছাড়াই যাকে-তাকে গোপনীয় শাখায় আনা হচ্ছে। এতে শাখার নিরাপত্তা বিঘি্নত হচ্ছে। বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো স্পর্শকাতর ঘটনা সে কারণেই ঘটছে।'
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, 'বর্তমানে ঘুষ দিয়ে অনেকে গোপনীয় শাখায় বদলি হচ্ছেন। কী কারণে ঘুষ দিয়ে তাঁরা বদলি হচ্ছেন- তা অনুসন্ধান করলেই অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। শুধু ঘুষ দিয়েই নয়, বিজি প্রেসের সংঘবদ্ধ চক্র নিজেদের আত্মীয়স্বজন এবং নিজ জেলার লোক এনে গোপনীয় শাখায় জড়ো করেছেন। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। তাঁর সহযোগী হিসেবে নাম এসেছে গোপনীয় শাখার ইনচার্জ (গোপনীয় মুদ্রণ পরিদর্শক) আবদুল কাদের মৃধা ও ব্যবস্থাপক (প্রেস) সরদার মহিতুল ইসলাম রিপনের। মূলত এই তিন ব্যক্তিই বিজি প্রেসের হর্তাকর্তা। তাঁদের সবার বাড়ি একই জেলায়।' অনুসন্ধানকালে এই সিন্ডিকেটের পরামর্শদাতা হিসেবে নাম এসেছে বিজি প্রেসের প্ল্যানিং সুপারভাইজার আবদুল বারী সুলতানীর। তবে তিনি এ কথা অস্বীকার করেন।
বিজি প্রেসের একাধিক সাবেক কর্মচারী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, যেদিন থেকে এই সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়েছে, সেদিন থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। বিগত দিনে যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা কেউ চুপ করে বসে নেই। সারা দেশে তাঁদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাঁরা সম্মিলিতভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নতুন কর্মচারীরাও টাকার লোভে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এই সিন্ডিকেট নির্মূল করা না গেলে প্রশ্নপত্র ফাঁস কখনো ঠেকানো যাবে না।
বিজি প্রেসের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করে, গত বছর খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর সন্দেহজনক হিসেবে আলমগীর হোসেনকে সিআইডি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দুদকের একজন কর্মকর্তার তদবির কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের ওই কর্মকর্তা আলমগীরের সহযোগী আবদুল বারী সুলতানীর ভায়রা। বিজি প্রেসের একটি সূত্র জানায়, মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে তাঁরা তখন খাদ্য অধিদপ্তরের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা থেকে রেহাই পেয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু আত্মীয়স্বজন এবং নিজ জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীই নয়, বিজি প্রেসের বেশির ভাগ কর্মচারীর কাছে সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন জনপ্রিয়। কারণ এই সহকারী পরিচালকের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের বেতনের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি আয় করেন ওভারটাইমের পারিশ্রমিক হিসেবে। তিনি এই ওভারটাইম পাওয়ার জন্য কৌশলে কর্মচারীদের দিয়ে অফিস সময়ের অতিরিক্ত কাজ করান। এর ফলে সরকারি তহবিল থেকে প্রতিবছর কোটি-কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। কর্মচারীরাও বিশেষ সুবিধা পান বলে কেউ আলমগীর হোসেনের কোনো কাজেরই বিরোধিতা করেন না। তদন্ত করলেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান।
অভিযোগ উঠেছে, আলমগীর হোসেনের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। যে কারণে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না। তিনি একই জায়গায় এক যুগ ধরে দাপটে চাকরি করে যাচ্ছেন। এ কথা তিনি গর্বের সঙ্গে বলেও বেড়ান।
বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আ ল ম আবদুর রহমান এনডিসি বিজি প্রেসে বিশেষ সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করেননি। তবে তিনি বলেন, তদন্তে গোপনীয় শাখায় যদি একই জেলার লোক বেশি থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হবে। আলমগীর হোসেনের একই জায়গায় প্রায় এক যুগ ধরে বহাল থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, অচিরেই তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে।
No comments