দাওয়াত দিয়ে উপহারের অপেক্ষা by মুফতি মাহফূযুল হক

বিবাহোত্তর ওয়ালিমা, নবজাতকের আকিকা প্রভৃতি উপলক্ষে আমরা মানুষ দাওয়াত করি। আমাদের এ আয়োজনগুলো হয়ে থাকে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পাওয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে। তাই সামর্থ্য থাকলে এ সময়ে আত্মীয়, প্রতিবেশী, সহকর্মী, বন্ধু ও দুস্থদের দাওয়াত করাটা বড় সওয়াবের কাজ।


তবে এ দাওয়াতগুলো হওয়া উচিত নিজের আনন্দকে অন্যদের মাঝে বিলানোর জন্য মুক্ত মনে।
দিন দিন আমরা সংকীর্ণ মনের হয়ে যাচ্ছি। কোনো কিছু মুক্ত মনে করতে পারি না। সবখানেই স্বার্থ আর উপার্জনের চিন্তা কাজ করে। তাই তো দেখা যায়, অধিকাংশ অনুষ্ঠানে বেছে বেছে ধনীদের দাওয়াত করা হয়। এটা অনুচিত। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'যে দাওয়াতে গরিবদের দাওয়াত করা হয় না তা নিকৃষ্টতম দাওয়াত।' আসলে মেজবানের লক্ষ্য থাকে উপহারের দিকে। আয়োজন দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে লাভবান হওয়া। তাই যারা মেজবানের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে তারাই মাত্র দাওয়াত পায়। অনুষ্ঠানের প্রবেশপথে খাতা-কলম নিয়ে বসে থাকেন মেজবানের লোক। দাওয়াত খেতে আসা মেহমানদের উপহারগুলো বুঝে নেওয়া ও উপহারের বিবরণসহ দাতার পরিচয় টুকে রাখা তার দায়িত্ব। ঠিক যেমন হোটেলের প্রবেশপথে ক্যাশ বাক্সে লোক বসে থাকে। তবে এখানে ব্যাপারটা হোটেলের চেয়ে একটু ভিন্ন। কেননা, হোটেলে মানুষ খেতে ঢোকে নিজের আগ্রহে, খায় নিজের সামর্থ্য অনুপাতে, বিল পরিশোধ করে খাবার গ্রহণের পর বের হওয়ার সময়। পক্ষান্তরে আমাদের দাওয়াতগুলোতে যারা ঢোকেন তাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় আসেন না। বরং সামাজিক চাপে বাধ্য হয়ে আসেন। এখানে উপহার নামের খাবার বিল পরিশোধ করতে হয় ঢোকার আগেই। তাও আবার যুগের রেওয়াজ অনুপাতে, নিজের সামর্থ্য অনুপাতে নয়। এ চিত্র ও দৃষ্টিভঙ্গি আদৌ ইসলামসম্মত নয়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখে সে যেন মেহমানকে সম্মান করে।' নিঃস্বার্থ আতিথেয়তা হজরত ইবরাহিম (আ.) সহ সব নবীর সুন্নত। কথিত আছে, হজরত ইবরাহিম (আ.) মেহমান ছাড়া কোনো বেলায় খেতে বসতেন না। হজরত খাদিজা (রা.) নবীজি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, 'আপনি তো মেহমানদের আপ্যায়ন করেন।' মুসলমানদের অতীত হাজার বছরের ইতিহাসে নেই যে, বিনিময়ের আশায় মুসলমানরা কাউকে দাওয়াত করে।
যেহেতু এখন দাওয়াত অর্থই হলো উপহারপ্রাপ্তি, তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও সমালোচনা থেকে বাঁচতে সেই দাওয়াতে উপহার নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেহেতু বর্তমানের নিমন্ত্রণগুলোতে প্রথাগত দেওয়া উপহার গ্রহণের বৈধতা সন্দেহপূর্ণ। জানার কোনো উপায় নেই যে, দাতা এ উপহার খুশি মনে দিয়েছে, নাকি অখুশিতে দিয়েছে। কারও মাল সে পূর্ণ সন্তুষ্ট চিত্তে না দিলে অন্যের জন্য তা কখনও হালাল হয় না।
 

No comments

Powered by Blogger.