ভোগান্তির নাম পুরান ঢাকা-সুস্থ পরিবেশের জন্য চাই সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনা
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রশাসনের দায়িত্ব মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানো, কমানো নয়। উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্ত করা, ত্বরান্বিত করা নয়। প্রশাসনের এই অদ্ভুত আচরণের সবচেয়ে নির্মম শিকার হচ্ছেন পুরা ঢাকার অধিবাসীরা। প্রতি মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের বসবাস করতে হচ্ছে।
দূষিত পরিবেশে আয়ু ক্ষয় হচ্ছে। আর প্রতিকারহীনভাবে কেবল বেড়েই চলেছে অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনা। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে পুরান ঢাকাবাসীর এমন অনেক বঞ্চনার কথাই উঠে এসেছে। কিন্তু পুরান ঢাকাবাসীর দুঃখ-কষ্ট তাতে কিছুটা লাঘব হবে কি?
বুড়িগঙ্গা নদী একসময় ছিল ঢাকার প্রাণ। এখন সেখানে কালো কুচকুচে বিষাক্ত পানি। ভয়ানক দুর্গন্ধ। তদুপরি দখলদারদের উৎপাতে বুড়িগঙ্গা শীর্ণ হতে হতে কোথাও কোথাও খালের রূপ নিয়েছে। আর এ দখলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে নদীপথের রক্ষক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডাবি্লউটিএ। এর সঙ্গে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তার নেতা-কর্মীরা আছেন। আছেন প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাঁরা দখলদারদের নানাভাবে সহায়তা করেন। দখলদারদের হাতে শুধু নদী নয়, ঐতিহাসিক স্থাপনা, ব্যক্তিগত জমি, এমনকি রাস্তার জমিও বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
এর আগে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছিলেন, ঢাকায় ৭০ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো কিছুটা শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ধসে পড়বে। বলাবাহুল্য, এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার একটি বড় অংশ রয়েছে পুরান ঢাকায়। ভূমিকম্প ছাড়াই শাঁখারীবাজারের শোকাবহ ভবনধসের ঘটনা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। পুরান ঢাকায় এ রকম হাজার হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বহু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন ও মৃত্যুর অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ, তারা চাইলেও সেই ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে পারবে না। 'সংরক্ষিত' এবং 'ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ' এলাকা হওয়ায় সেখানে নিজ বাড়ির সংস্কার করতেও তাদের সরকারি সংস্থার অনুমতি নিতে হবে। অনেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের অফিসে বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও সেই অনুমতি সংগ্রহ করতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় অনেকে খালি জায়গায় ভবন তৈরি করতে চাইলেও অনুমতি পায় না- এমন অভিযোগও করেছে অনেকেই। আবার অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সরকারের এ ধরনের ভ্রান্ত নীতির কারণে। সদরঘাট এলাকায় রয়েছে ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের একাধিক স্থাপনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ভবনসহ এসব স্থাপনা আজ ধ্বংসের পথে। অনুমতি না থাকায় বিদ্যমান ট্রাস্টি বোর্ডও এসবের সংস্কার করতে পারছে না, আবার সরকারও কিছু করছে না। এ রকম ঘটনা একটি-দুটি নয়, অসংখ্য। আমরা এই নির্মম রসিকতার অবসান চাই।
অন্যদিকে উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকায় পুরান ঢাকার রাস্তাঘাটে যানজট লেগেই থাকে। অধিকাংশ রাস্তাঘাট এতটাই অপ্রশস্ত যে অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেসব রাস্তা বা গলিতে ঠিকমতো ঢুকতে পারে না। নিমতলী ট্র্যাজেডির সময় আমরা সেই করুণচিত্রটি দেখেছি। বেশির ভাগ এলাকায় পয়ঃপ্রণালি বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং এক পূতিগন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ভোগান্তি পুরান ঢাকার নিত্যসঙ্গী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকার জনজীবন। এক কথায়, পুরান ঢাকা মানেই চরম ভোগান্তি (ভোগান্তির নরকবিশেষ)। আমরা চাই, সরকার পুরান ঢাকাবাসীর নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেখানে সুস্থ, মানবিক ও আধুনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে কিছুটা হলেও আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।
বুড়িগঙ্গা নদী একসময় ছিল ঢাকার প্রাণ। এখন সেখানে কালো কুচকুচে বিষাক্ত পানি। ভয়ানক দুর্গন্ধ। তদুপরি দখলদারদের উৎপাতে বুড়িগঙ্গা শীর্ণ হতে হতে কোথাও কোথাও খালের রূপ নিয়েছে। আর এ দখলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে নদীপথের রক্ষক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডাবি্লউটিএ। এর সঙ্গে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তার নেতা-কর্মীরা আছেন। আছেন প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাঁরা দখলদারদের নানাভাবে সহায়তা করেন। দখলদারদের হাতে শুধু নদী নয়, ঐতিহাসিক স্থাপনা, ব্যক্তিগত জমি, এমনকি রাস্তার জমিও বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
এর আগে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছিলেন, ঢাকায় ৭০ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো কিছুটা শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ধসে পড়বে। বলাবাহুল্য, এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার একটি বড় অংশ রয়েছে পুরান ঢাকায়। ভূমিকম্প ছাড়াই শাঁখারীবাজারের শোকাবহ ভবনধসের ঘটনা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। পুরান ঢাকায় এ রকম হাজার হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বহু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন ও মৃত্যুর অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ, তারা চাইলেও সেই ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে পারবে না। 'সংরক্ষিত' এবং 'ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ' এলাকা হওয়ায় সেখানে নিজ বাড়ির সংস্কার করতেও তাদের সরকারি সংস্থার অনুমতি নিতে হবে। অনেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের অফিসে বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও সেই অনুমতি সংগ্রহ করতে পারেনি। শুধু তা-ই নয়, সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় অনেকে খালি জায়গায় ভবন তৈরি করতে চাইলেও অনুমতি পায় না- এমন অভিযোগও করেছে অনেকেই। আবার অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সরকারের এ ধরনের ভ্রান্ত নীতির কারণে। সদরঘাট এলাকায় রয়েছে ১৮৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের একাধিক স্থাপনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ভবনসহ এসব স্থাপনা আজ ধ্বংসের পথে। অনুমতি না থাকায় বিদ্যমান ট্রাস্টি বোর্ডও এসবের সংস্কার করতে পারছে না, আবার সরকারও কিছু করছে না। এ রকম ঘটনা একটি-দুটি নয়, অসংখ্য। আমরা এই নির্মম রসিকতার অবসান চাই।
অন্যদিকে উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকায় পুরান ঢাকার রাস্তাঘাটে যানজট লেগেই থাকে। অধিকাংশ রাস্তাঘাট এতটাই অপ্রশস্ত যে অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেসব রাস্তা বা গলিতে ঠিকমতো ঢুকতে পারে না। নিমতলী ট্র্যাজেডির সময় আমরা সেই করুণচিত্রটি দেখেছি। বেশির ভাগ এলাকায় পয়ঃপ্রণালি বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং এক পূতিগন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ভোগান্তি পুরান ঢাকার নিত্যসঙ্গী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পুরান ঢাকার জনজীবন। এক কথায়, পুরান ঢাকা মানেই চরম ভোগান্তি (ভোগান্তির নরকবিশেষ)। আমরা চাই, সরকার পুরান ঢাকাবাসীর নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেখানে সুস্থ, মানবিক ও আধুনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে কিছুটা হলেও আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।
No comments